Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

দুর্ধর্ষ চার চোর গ্রেফতার

দিনে পরিশ্রমী রাতে অপরাধ ৪২১ জঙ্গি-দস্যুর আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দেয় র‌্যাব : কমান্ডার আল মঈন

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০২ এএম

দিনে পরিশ্রমী মানুষের পরিচয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা রেকি করে রাতে দুর্ধর্ষ চুরিসহ নানা অপরাধে জড়িত সংর্ঘবদ্ধ চক্রের চার জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃতদের কেউ মিস্ত্রী, কেউ ফল বিক্রেতা আর কেউবা অটোরিকশা চালক। গত
শুক্রবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-২ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এবং ঢাকা উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃতরা হলো-নাসির শেখ (২৫), মো. ফরহাদ (২৯), মো. সেলিম (২৬) ও মো. আজাদকে (৩৮)। এ সময় তাদের কাছ থেকে

চুরির কাজে ব্যবহৃত ২টি দেশীয় অস্ত্র, ৪টি মোবাইল, ২টি পরিধেয় বস্ত্র, নগদ ৪ হাজার ৮০০ টাকা এবং বাসা থেকে চুরিকৃত গলিত স্বর্ণের বার এবং ৪টি অলঙ্কার উদ্ধার করা হয়।
কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ধানমন্ডির একটি বাসার জানালার গ্রিল কেটে ভিতরে প্রবেশ করে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় চোর দলের সদস্যরা আলমারি, ওয়ারড্রব ভেঙে প্রায় ২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। চুরির ঘটনাটি প্রবাসে অবস্থানরত বাড়ির মালিক সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পান এবং পরবর্তীতে সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুরুত্ব সহকারে প্রচার করলে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় র‌্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার দিবাগত রাতে র‌্যাব-২ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এবং ঢাকা উদ্যান এলাকায় অভিযান চালিয়ে চারকে গ্রেফতার করে।

তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তারা ধানমন্ডি- মোহাম্মদপুর এলাকা কেন্দ্রিক একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্রের সদস্য। সকলেই বিভিন্ন পেশার আড়ালে দীর্ঘদিন যাবত সংঘবদ্ধভাবে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধ করে আসছিল। জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা র‌্যাবকে জানায়, চুরির পরদিন সকালে তারা চুরিকৃত স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে তাদের পূর্ব পরিচিত গ্রেফতার আজাদের স্বর্ণের দোকানে যায় এবং ৫০ হাজার টাকায় চুরিকৃত স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে সেই টাকা নাসির, ফরহাদ এবং সেলিমসহ দলের আরও ২ জন নিজেদের মধ্যে ভাগবাটোয়ারা করে নেয়। গ্রেফতার আজাদ স্বর্ণালঙ্কার কেনার সাথে সাথে তা গলিয়ে ফেলে।

তিনি আরো বলেন, গ্র্রেফতারকৃত নাসির পেশায় একজন স্যানিটারি মিস্ত্রি। সে ৫/৬ বছর যাবত তার পেশার আড়ালে চুরি, ছিনতাইসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় গ্রিল কাটার পর সর্বপ্রথম সে বাসার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। তার নামে ডিএমপির বিভিন্ন থানায় চুরি ও ছিনতাই এর অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্র্রেফতারকৃত ফরহাদ পেশায় একজন ফল বিক্রেতা। সে এই চোর চক্রের অন্যতম একজন সদস্য। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় তাকে বাসার ভিতর টর্চ লাইট দিয়ে আলো ফেলতে এবং গ্রিল কাটতে দেখা যায়। ইতোপূর্বে তাকে পুলিশ কর্তৃক সন্দিগ্ধ হিসেবে ২০১৭ সালে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত সেলিম পেশায় সবজি বিক্রেতা। সেও চক্রটির একজন নিয়মিত সদস্য। ধানমন্ডির বাসায় চুরির ঘটনায় সে সানশেডে অবস্থান করে গ্রিল কাটতে সহায়তা করে। গ্র্রেফতারকৃত আজাদ একজন স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ী। রাজধানীর বছিলায় তার একটি স্বর্ণের দোকান রয়েছে। এই ব্যবসার পাশাপাশি চোরাই স্বর্ণালঙ্কার ক্রয়-বিক্রয়ের কাজে জড়িত সে। জিজ্ঞাসাবাদে জানায় যে, সে এর আগেও চুরি এবং ছিনতাইকৃত স্বর্ণালঙ্কার কম দামে কিনে বেশি লাভে বিক্রি করেছে।

৪২১ জঙ্গি-দস্যুর আত্মসমর্পণের সুযোগ করে দেয় র‌্যাব. কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, র‌্যাব প্রতিষ্ঠার পর থেকে জঙ্গি ও জলদস্যু মিলিয়ে ৪২১ অপরাধী আত্মসমর্পণ করেছেন। তারা এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। র‌্যাবের এমন মানবিক আত্মসমর্পণের সুযোগ বিশ্বের কোনো বাহিনী দেয়নি। র‌্যাব সবসময় মানবিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। অপরাধীদের আত্মসমর্পণের সুযোগ দিয়ে মানবিকতার নজির স্থাপন করেছে। র‌্যাব মানবাধিকার লুণ্ঠন করেনি বরং মানবাধিকার রক্ষা করে চলছে। র‌্যাবের তথ্য মতে, আত্মসমর্পনকারীদের মধ্যে সুন্দরবনে ৩২৮ ও চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে ৭৭ নৌদস্যু এবং ১৬ জঙ্গি রয়েছেন।

তিনি বলেন, আমাদের নয় হাজারের যে ফোর্স (সদস্য), এই ফোর্সের লে. কর্নেল আজাদসহ ২৮ জন সদস্য জীবন দিয়েছেন। আর মানবাধিকার রক্ষায় এবং আইনশৃঙ্খলা সম্মুন্নত রাখতে আমাদের এক হাজারের বেশি সদস্যের অঙ্গহানি হয়েছে। এছাড়া আমাদের দুই হাজারের বেশি সদস্য আহত হয়েছেন। বিশ্বের এমন কোনো ফোর্স নেই যাদের নয় হাজার সদস্যের মধ্যে, আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকার রক্ষায় এমন আত্মত্যাগ রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দুর্ধর্ষ চার চোর গ্রেফতার

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ