পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বাধীনতা মহান আল্লাহর দান। তার অফুরন্ত এক নিয়ামত। এই নিয়ামত পেয়ে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ঈমানী দায়িত্ব। তবে খুশিতে আত্মহারা হয়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। আবার বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে আল্লাহর নিষিদ্ধ পথও অবলম্বন করা যাবে না। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন। রাজধানীর বিভিন্ন মসজিদে জায়গা সঙ্কুলান না হওয়ায় অনেক মুসল্লিকে রাস্তার ওপর জুমার নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম ও ভারপ্রাপ্ত খতিব মুফতি মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহিল বাকী নদভী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, স্বাধীনতা আল্লাহ তায়ালার একটি বড় নেয়ামত। এই নেয়ামত প্রাপ্তির জন্য বৈধ আনুষ্ঠানিকতা পালনের সাথে সাথে আল্লাহ তায়ালার শুকর ও কৃতজ্ঞতা আদায়কে সর্বাগ্রে রাখতে হবে। আল্লাহ মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য ও চাহিদার উপযোগী ভূখন্ডে তার জন্মের ব্যবস্থা করেছেন বলে আমরা মানুষ সারা বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের অধিবাসী হয়েছি। একটি স্বাধীন ভূখন্ডের স্বাধীনতার প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো নিরাপত্তা। সে জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম যখন মক্কাকে নিজ নগরী হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছিলেন তখন সে ভূখন্ডের জন্য প্রথম যে দোয়াটি করেছিলেন তা হলো নিরাপত্তার দোয়া। এ দোয়া সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন ইবরাহিম বলেছিল ‘হে আমার প্রতিপালক! এই নগরীর তুমি নিরাপত্তা দান কর’। সূরা বাকারা আয়াত ১২৬। নিরাপত্তার অর্থ ব্যাপক।
পেশ ইমাম বলেন, একটি অঞ্চলের চারিদিকে শুধু সেনা সদস্যদের পাহারায় রত থাকার নামই নিরাপত্তা নয় বরং একটি অঞ্চলে বসবাসকারী প্রত্যেক পক্ষ অন্য পক্ষের কাছে নিরাপদ থাকার নামই নিরাপত্তা, অর্থাৎ সন্তান মা-বাবার কাছে, মা-বাবা সন্তানের কাছে, স্ত্রী স্বামীর কাছে, স্বামী স্ত্রীর কাছে, ছাত্র শিক্ষকের কাছে, শিক্ষক-ছাত্রের কাছে, শ্রমিক মালিক এর কাছে, মালিক শ্রমিকের কাছে, শাসক শাসিতের কাছে, শাসিতরা শাসকের কাছে নিরাপদ থাকার মানেই নিরাপত্তা। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঝুঁকি মনে করলে তখন এক পক্ষ অন্য পক্ষকে ঘায়েল করার মিশনে লিপ্ত হয়ে যায়, অন্যদিকে এই ফাঁকে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়ে যায়।
এই স্বাধীনতার সুরক্ষার জন্য দুটি বিষয় খুবই জরুরি, একটি হলো সেই ভূন্ডের জন্য একটি সামগ্রিক ইউনিভার্সেল সংস্কৃতি, তাহজিব তামাদ্দুন যার ভিত্তিতে ওই অঞ্চলের ঐক্য গড়ে উঠবে, যে ঐক্যের ভিত্তিতে সে অঞ্চলের স্বাধীনতা কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হলে তা প্রতিহত করা হবে। স্বাধীনতা রক্ষার জন্য দ্বিতীয় বিষয় যেটি খুবই জরুরি তা হলো- পারস্পরিক জুলুম পরিহার করা, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, আমি এসব জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছি যখন তারা পারস্পরিক জুলুম শুরু করে দিয়েছে। সুরা আল-কাহাফ, আয়াত-৫৯।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম মক্কা বিজয়ের পর মক্কার অধিবাসীদের মধ্যে একে অন্যকে ঝুঁকি মনে করার প্রবণতা সৃষ্টি হওয়া থেকে দূরে রাখা এবং প্রতিশোধস্পৃহা দমন করার নিমিত্তে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টির লক্ষ্যে স্পষ্ট ঘোষণা দেন ‘আজকে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ অর্থাৎ অতীতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনৈক্য সৃষ্টি করে এই ভূখন্ডের ক্ষতিসাধন ও অর্জিত স্বাধীনতার ক্ষতি হয় সেরকম কোনো কাজ করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে তাঁর শোকর আদায় ও জুলুম পরিহার করার মাধ্যমে স্বাধীনতা অটুট রাখার তৌফিক দান করুন।
ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহিম কাসেমী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, ডিসেম্বর মাস আমাদের বিজয়ের মাস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জালিমের হাত থেকে মুক্ত হয় আমাদের দেশ। মাতৃভূমি, দেশের বিজয় আমাদের গৌরব। আমাদের অহংকার। আমাদের হৃদয়ের স্পন্দন। আমরা তাকে জীবন দিয়ে ভালোবাসি। কারণ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) স্বীয় মাতৃভ‚মি মক্কা নগরীকে অনেক ভালোবাসতেন। হিজরতের সময় মাতৃখভ‚মির ভালোবাসায় তাঁর চোখ মুবারক থেকে অশ্রু ঝরছিল। আর জবানে উচ্চারিত হচ্ছিল হে মক্কা! আমি তোমাকে ভালোবাসি। কাফেররা নির্যাতন করে যদি আমাকে বের করে না দিত, কখনো আমি তোমাকে ত্যাগ করতাম না। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, ৩য় খন্ড, ৪০৪ পৃষ্ঠা)। তিনি মদীনা নগরীকেও খুব ভালোবাসতেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, কোনো সফর থেকে প্রত্যাবর্তনকালে মদীনার সীমান্তে উহুদ পাহাড় চোখে পড়লেই নবীজীর চেহারাতে আনন্দের আভা ফুটে উঠত। তিনি বলতেন, এই উহুদ পাহাড় আমাদেরকে ভালোবাসে। আমরাও উহুদ পাহাড়কে ভালোবাসি। (সহীহ বুখারী, ২য় খন্ড, ৫৩৯ পৃষ্ঠা)।
খতিব বলেন, ইসলাম দেশপ্রেম ও মাতৃভূমির অকৃত্রিম ভালোবাসার প্রতি জোর তাকিদ দিয়েছে। তাই মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব তার ভূখন্ড ও মাতৃভ‚মিকে অন্তকরণে ভালোবাসা। আর তার বিজয়, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অক্ষুন্ন রাখা। দেশ ও দশের কল্যাণে সদা সচেষ্ট থাকা। তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার বিজয় মহান আল্লাহর দান। তার অফুরন্ত এক নিয়ামত। এই নিয়ামত পেয়ে মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ঈমানী দায়িত্ব। তবে খুশিতে আত্মহারা হয়ে আল্লাহকে ভুলে গেলে চলবে না। আবার বিজয়ের আনন্দ প্রকাশ করতে গিয়ে আল্লাহর নিষিদ্ধ পথও অবলম্বন করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, যদি আল্লাহর দেয়া রাসুল (সা.) প্রদর্শিত পথ ও পদ্ধতি আচার অনুষ্ঠান ব্যতিত অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন, আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয় তবে তা হবে অতিব দুঃখ ও পরিতাপের বিষয়। যা গোটা জাতির অকল্যাণ বয়ে আনতে পারে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, তোমরা যদি নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করো তাহলে আমি অবশ্যই তোমাদেরকে (নিয়ামত) আরো বাড়িয়ে দেব, আর তোমরা যদি (গুনাহের মাধ্যমে) তা অস্বীকার করো তাহলে আমার আজাব নিশ্চই কঠিন। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত নং-৭)। অতএব আল্লাহর নির্দেশের বাইরে কোথাও কোনো অগ্নি প্রজ্জলন, অশ্লীল গানবাজনা ও যাবতীয় গুনাহের কাজ পরিহার করত: আল্লাহর প্রশংসা ইস্তিগফার তাসবীহ তাহলীল পাঠ এবং বিজয়ের ঘটনায় যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদেরসহ সকলের জন্য কায়মনে দোয়া ও মাগফিরাত কামনা করাই এ দিবসে মু’মিনের কাজ। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করেন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।