Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্দিদের করুণ দশা

দেশের প্রতিটি কারাগারে নিম্নমানের খাবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ডিসিদের জেল পরিদর্শনের চিঠি

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

দেশে কারাগারের সংখ্যা ৬৮টি। প্রতিটি কারাগারে ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি চলছে। বন্দিদের নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। খোদ সুরক্ষা সেবা বিভাগ এ অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা স্বীকার করেছে। এ জন্য নিয়মিত কারাগার পরিদর্শন করার জন্য জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দিয়ে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
গত ১৮ নভেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিশনার সমন্বয় সভায় বিষয়টি তুলে ধরা হয়। সেখানে সুরক্ষা সে বিভাগের সচিব বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে কার্যপত্রে বলা হয়েছে।

ডিসিদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দেশের কারাগারগুলো ভয়াবহ অনিয়ম-দুর্নীতি এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এ জন্য নিয়মিত কারাগারগুলো পরিদর্শন করতে হবে এবং কিভাবে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয় তা উল্লেখ করে প্রতিবেদনসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাতে হবে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. তমিজুল ইসলাম খান ফোনে ইনকিলাবকে বলেন, কিভাবে কারাগারে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়। নিয়মিত পরিদর্শন করে প্রতিবেদনসহ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়।

জানা গেছে, দেশে মোট করাগারের সংখ্যা ৬৮টি। এর মধ্যে ১৩টি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং বাকি ৫৫টি জেলা কারাগার। প্রতিটি কারাগারে গড়ে প্রতিদিন দেড় থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। যদিও অফিসিয়ালি এই বেচাকেনা অর্ধেকের কম দেখানো হয়। প্রতিটি কারাগার থেকে লভ্যাংশের ৪০% পাঠানো হয় কারা অধিদফতরের তহবিলে। কিন্তু এ অর্থ কোথায়-কিভাবে খরচ করা হয় তার কোনো অডিট হয় না। কথা ছিল, এসব টাকা কারারক্ষী এবং বন্দিদের কল্যাণে ব্যয় করা হবে। কিন্তু বাস্তবে এ টাকা প্রভাবশালীদের পকেটে চলে যায়। এছাড়া টাকা ভাগাভাগি নিয়ে প্রভাবশালী কারা কর্মকর্তাদের মধ্যে সারা বছর অদৃশ্য দ্ব›দ্ব লেগে থাকে। এক সময় কারা ক্যান্টিনের লভ্যাংশের টাকা ভালো কিছু কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়। গড়ে তোলা হয় কারা পরিবার নিরাপত্তা প্রকল্প, প্রিজনার্স অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং প্রিজনস কো-অপারেটিভ সোসাইটি। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই সব থিতু হয়ে পড়ে। দেশের কারাগারগুলো দুর্নীতির এক মহাচক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারা অভ্যন্তরে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের বড় একটি ক্ষেত্র হলো কারা ক্যান্টিন। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ মূল্যে বন্দিদের কাছে খাবার বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়। সারা দেশ থেকে যার একটা অংশ কারা অধিদফতরেও আসে। অথচ এসব অর্থের কোনো অডিট হয় না। এছাড়া কারাগারে আটক বন্দিদের কাছ থেকে বন্দি বেচাকেনা, সাক্ষাৎ বাণিজ্য, সিট বাণিজ্য, খাবার বাণিজ্য, চিকিৎসা বাণিজ্য, পিসি বাণিজ্য, পদায়ন বাণিজ্য, কারা অভ্যন্তরে নিষিদ্ধ মালামাল প্রবেশ বাণিজ্য এবং জামিন বাণিজ্যের নামেও প্রভাবশালী চক্রটি বিপুল অঙ্কের ঘুষ বাণিজ্য করে আসছে। খোদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের তদন্তে এ রকম চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে কাজ পাওয়ার জন্য প্রতিটি আইটেমের বিপরীতে মাছ, মাংস, তরিতরকারিসহ বিভিন্ন পণ্যের খাবারের সাথে পরিবেশন করা হয় তা মানও খুব খারাপ।

সম্প্রতি কুষ্টিয়া জেলা কারাগার নিয়ে তদন্ত করেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সৈয়দ বেলাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি। সেখানে ভয়াবহ সব তথ্য পায়। বিভিন্ন কারাগার পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে কমিটির রিপোর্টে বলা হয়, শুধু কুষ্টিয়া কারাগার নয়, সারা দেশের কারাগারেই একই চিত্র বিরাজ করছে। এজন্য এ দুর্নীতির ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসার কর্মকৌশল নির্ধারণ করতে সুরক্ষাসেবা বিভাগের সচিবের সভাপতিত্বে কারা অধিদফতরের সব পদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সভা আহ্বান করার সুপারিশও করা হয় তদন্তে রিপোর্টে। কিন্তু দুবছর পার হয়ে গেলেও কারা অধিদফতর ওই সভার আয়োজন করেনি। এমনকি যে ১৯টি সুপারিশ করা হয়েছিল তার অধিকাংশ বাস্তবায়ন করা হয়নি। সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় থেকে কয়েক দফা তাগিদপত্র দিয়েও কাজ হয়নি।

কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের অনিয়ম ও দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে গত বছর ২০ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শককে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়। কারা-১ শাখার উপসচিব মো. মনিরুজ্জামান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে তদন্ত কমিটির সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে ৭টি নির্দেশনা দেয়া হয়।

চাঞ্চল্যকর সব অনিয়ম-দুর্নীতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ১৯ দফা সুপারিশ করা হয়। যার সবশেষ সুপারিশে বলা ছিল, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের অনিয়ম তদন্ত টিমের প্রধান কর্তৃক ইতোপূর্বে অপরাপর কর্মকর্তাদের সঙ্গে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার, ঝিনাইদহ জেলা কারাগার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগার এবং রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করা হয়। ওই সব কারাগারেও একই ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি পরিলক্ষিত হয়েছে।

সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের খাবার ও রক্ষীদের রেশনে ব্যাপক দুর্নীতি অভিযোগ অধিদফতর চট্টগ্রাম বিভাগের কারা উপমহাপরিদর্শক একেএম ফজলুল হককে আহ্বায়ক ও মুন্সীগঞ্জের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব ও নেত্রকোনার জেল সুপার আবদুল কুদ্দুসকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি গত ১ অক্টোবর কারা অধিদফতরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশে অনিয়ম-দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরেন।



 

Show all comments
  • Shapon Hassan ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৪ এএম says : 0
    দুপুরের খাবারের ডালটা তুলনামূলক একটু ভালো,রাতের খাবারের মেনু না বলাই ভালো।
    Total Reply(0) Reply
  • Salman Sharafat ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৪ এএম says : 0
    চুরি আর কতো করবি!!
    Total Reply(0) Reply
  • Rakib Talukder ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৪ এএম says : 0
    সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম
    Total Reply(0) Reply
  • Masud Rana Masud Rana ১১ ডিসেম্বর, ২০২১, ৭:২৫ এএম says : 0
    টাকা নেবে ভালো মানের দেবে নিম্ন নির্মাণের
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্দিদের করুণ দশা

১১ ডিসেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ