Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বহুমাত্রিকভাবে ২৪.১ শতাংশ মানুষ দরিদ্র

বাংলাদেশ নিয়ে ইউএনডিপি ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা প্রতিবেদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০০ এএম


দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্য উল্লেখযোগ্য হলেও দেশের ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ১ শতাংশ বা ৩ দশমিক ৯২ কোটি মানুষ ‘বহুমাত্রিক’ দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাস করছেন। এ ধরনের দারিদ্র্যের কারণেই মোট জনসংখ্যার ২৪ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ রয়েছেন দারিদ্র্যসীমার নিচে। তবে, বহুমাত্রিক দারিদ্রতার হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য অর্জনের মাত্রা বেশ ভালো। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) ও যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক যৌথ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য। গত মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে ‘দ্য ২০২১ গেøাবাল মাল্টিডাইমেনশনাল পোভার্টি ইন্ডেক্স (এমপিআই)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দারিদ্র্য বিমোচনের মাত্রা সমান নয়; ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পরিসংখ্যান ব্যবহার করে বানানো এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুমাত্রিক দারিদ্র্তার হার হ্রাসে পিছিয়ে রয়েছে সিলেট।

প্রতিবেদনে ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র বলতে বোঝানো হয়েছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও জীবনযাত্রার মানদÐে একটি পরিবারের সার্বিক পরিস্থিতি। এ তিনটি বিষয়ে মোট দশটি সূচক রয়েছে। যদি কোনো পরিবারে দশটি সূচকের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ঘাটতি থাকে, তাহলে তাকে বহুমাত্রিক দরিদ্রতার শিকার বা গরিব পরিবার বলে বিবেচনা করা হবে।

স্বাস্থ্য সূচকের মধ্যে রয়েছে পুষ্টি ও শিশুমৃত্যুর হার। মানসম্পন্ন জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন, নিরাপদ পানি, বিদ্যুৎ ও সম্পদের মালিকানা। আর শিক্ষার মধ্যে রয়েছে স্কুলে উপস্থিতির হার ও প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করা। প্রতিবেদনে, এগুলোর ভরযুক্ত (ওয়েটেড) গড় নির্ণয় করে দারিদ্র্যের হার নির্ধারণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দারিদ্র্যের গভীরতাও নির্দেশ করা হয়েছে এমপিআই’র মাধ্যমে।

সানেম’র গবেষণা পরিচালক ড সায়েম হক বিদিশা বলেন, দারিদ্র্য পরিমাপের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। আমাদের দেশে সাধারণত মানুষের আয়ের পরিবর্তন দিয়েই দরিদ্রতার হার নির্ধারণ করা হয়। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টিগ্রহণের হার ও জীবনযাত্রার মান যথাযথভাবে বোঝা যায় না। দারিদ্রতার মাত্রাগুলো প্রকাশ পায় না।

তিনি বলেন, সামগ্রিক গড় আয় বাড়লেও কিছু মানুষ খারাপ পরিস্থিতে থাকে। মালটিডাইমেশনাল প্রভার্টি ইনডেক্সের মাধ্যমে তাদের অবস্থা জানা যায় না। সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো ও দারিদ্রতার মাত্রাগুলোকে চিহিৃত করে কাজ করলে এ ধরনের দারিদ্রতা কমানো সম্ভব।

বাংলাদেশের ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ১০টি মানদন্ডের মধ্যে স্কুলে ভর্তির হার ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ, স্কুলে উপস্থিতির হার ৯ দশমিক ৫ শতাংশ, যা আরও কম। দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর শিশুমৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩ শতাংশ ও পুষ্টি গ্রহণের হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ।

এর মধ্যে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ও ১ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পানি সুবিধা পেয়ে থাকেন। পাশাপাশি দরিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ২২ দশমিক ৮ শতাংশ রান্নার কাজে জ্বালানি তেল বা গ্যাস ব্যবহার করেন, ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ স্যানিটেসশন সুবিধা পায় ও ১৫ দশমিক ৯ শতাংশের কিছু পরিমাণে সম্পদ রয়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের ১২ শতাংশ ছাত্র ‘বহুমাত্রিক’ দরিদ্র পরিবেশে বসবাস করছে। এই জনগোষ্ঠীর প্রায় সবাই স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। প্রতিবেদনে ১৩০ কোটি মানুষের ওপর গবেষণা চালানো হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, বহুমাত্রিক দরিদ্রতার শিকার মানুষের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বা ৮৩ দশমিক ৬ কোটি মানুষ এমন পরিবারে বাস করেন যেখানে কোনো নারী সদস্য স্কুলের ছয় বছরের প্রামথিক শিক্ষা শেষ করেনি। বিশ্বের এই ৮৩ দশমিক ৬ কোটি মানুষের বেশিরভাগই আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে (৩৬ দশমিক ৩ কোটি) ও দক্ষিণ এশিয়ায় (৩৫ কোটি) বাস করে। এরমধ্যে মাত্র সাতটি দেশেই রয়েছে ৫০ কোটির বেশি মানুষ, যারা বহুমাত্রিক দারিদ্রতার শিকার। ভারত রয়েছে ২২ দশমিক ৭ কোটি, পাকিস্তানে ৭ দশমিক ১ কোটি, ইথিওপিয়ায় ৫ দশমিক ৯ কোটি, নাইজেরিয়ায় ৫ দশমিক ৪ কোটি, চীনে ৩ দশমিক ২ কোটি ও বাংলাদেশে রয়েছে ৩ কোটি।

বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সূচকে পাকিস্তানের স্কোর শূন্য দশমিক ১৯৮, সেখানে বাংলাদেশের স্কোর শূন্য দশমিক ১০৪। এছাড়া, ইন্টেন্সিটি অফ ডিপ্রাইভেশন ইনডেক্সেও পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। এই সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ৪২ দশমিক ৭ এবং পাকিস্তানের ৫১ দশমিক ৭। বিশ্বের ১০১টি দেশের তথ্য-উপাত্ত নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

 

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ