পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের উপকূল ও সন্নিহিত ১৬টি জেলার ৭৫টি উপজেলাসহ সামুদ্রিক নিবিড় অর্থনৈতিক অঞ্চলে জরিপ, মজুদ নিরুপন, সংরক্ষণ ও গবেষণা কার্যক্রমসহ মৎস্য সম্পদের যথাযথ উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের সহাতায় ১৯শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ নামে ৫ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পে বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকেও ৩শ’ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের বিশাল উপকূলভাগের মৎস্য সম্পদের শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণসহ যথাযথ সংরক্ষণ, উন্নয়ন ও গুনগত মান বজায় রাখার পাশাপাশি সুষ্ঠু বাজারজাত ও মানসম্মত রফতানি নিশ্চিত হবে বলে আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে বরিশালে এক অবহিতকরণ কর্মশালায় গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে।
বাংলাদেশ গত দুই দশকে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তায় যে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে তাতে মৎস্য সেক্টরের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক মানে মাথাপিছু দৈনিক মৎস্য গ্রহণের পরিমাপ ৬০ গ্রাম হলেও বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তা ৬২.৫৮ গ্রামে উন্নীত হয়েছে। গত এক দশক ধরে স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান বিশে^ ২য়, ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১ম, তেলাপিয়া উৎপাদনে আমরা বিশে^র ৪র্থ এবং এশিয়ায় ৩য়।
দেশের সাগর উপক‚লে আমাদের নিজস্ব ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬ লাখ ৭০ হাজার টন মৎস্য আহরণ সম্ভব হয়েছে। এসময়ে দেশে মোট মৎস্য আহরণের পরিমাণ ছিল ৪৫ লাখ টনেরও বেশি। সাগরে আহরিত মাছের ৪৫ ভাগ ইলিশ, ৪৯ ভাগ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ির পরিমাণ ৬ ভাগ। ২৫৭টি মৎস্য আহরণকারী নৌযান ছাড়াও প্রায় ৩০ হাজার যন্ত্রচালিত নৌযান বিশাল সাগর উপকূলের নানা প্রজাতির মংস্য আহরণে নিয়োজিত। দেশের প্রায় ৫ লাখ মানুষ তাদের জীবন জীবিকার জন্য এখন মৎস্য সম্পদের ওপর নির্ভরশীল।
আমাদের দেশে মিঠা পানির মাছের প্রজাতি ২৬০টি হলেও সামুদ্রিক প্রজাতির মাছের সংখ্যা ৪৭৫টি। যার মধ্যে চিংড়ি ৩৬ প্রজাতির, কাঁকড়া ১৫, শামুক ৩০১, ঝিনুক ৬, লবস্টার ৮, প্রবাল ১৩ এবং ডলফিন রয়েছে ১১ প্রজাতির। মৎস্যখাতে রফতানি আয়ের একটি বড় অংশই আসছে সাগরের চিংড়ি ও হাঙরের পাখনা, মাছের পটকা ও কাঁকড়াসহ অন্যান্য হিমায়িত মাছ থেকে।
দেশের সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের যথাযথ ব্যবহার ছাড়াও সংরক্ষণ ও উন্নয়নে সরকার ইতোমধ্যে ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ এবং মূল প্রজননকালীন ২২ দিন অভ্যন্তরীণ ও উপকূলীয় এলাকায় ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ১০ মিটারের গভীরতার মধ্যে বেহুন্দি জাল ব্যবহারসহ নদ-নদী মোহনা ও সমুদ্র উপকূলে চিংড়ি পোনা আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সমুদ্র এলাকায় ‘একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ চিহ্নিত করণে প্রতিবেশী মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় আমাদের ‘ব্ল ইকোনমি’ বা ‘সুনীল অর্থনীতি’র বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সে ক্ষেত্রেও এ প্রকল্পটি বিশাল ভ‚মিকা পালন করবে বলে মৎস্য বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন। প্রকল্পটি জুলাই ২০১৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা থাকলেও তার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ২০২০ থেকে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নকাল ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বর্ধিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। উপক‚লীয় ও সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ ব্যবস্থাপনা এবং মৎস্য চাষ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের মজুদ নিরুপন, সংরক্ষণ, সঠিক ব্যবস্থাপনা, টেকসই আহরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন, চিংড়ি ক্লাস্টারসহ উপকূলীয় প্রান্তিক জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমানের উন্নয়নই প্রকল্পটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বলে জানা গেছে।
এ লক্ষ্যে বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, সাতক্ষীরা, যশোর, বাগেরহাট, খুলনা, লক্ষীপুর, ফেনী, নোয়াখালী, কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলার ৭৫টি উপজেলা ও সন্নিহিত এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। ঢাকায় প্রকল্প পরিচালকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রামে ৩ জন উপ-প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছেন।
প্রকল্পটিকে ৪টি কম্পোনেন্টে বিভাজন করা হয়েছে। মৎস্য সেক্টরে টেকসই ব্যবস্থাপনা এবং সে লক্ষ্যে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি, অবৈধ অজানা ও নিয়ন্ত্রণহীন পদ্ধতিতে মৎস্য আহরণ বন্ধে মনিটরিং কন্ট্রোল সার্ভিলেন্স সিস্টেম চালু করা হবে। মৎস্য সেক্টরের বিদ্যমান বিধি-বিধান যুগোপযুগী করা, বাণিজ্যিক ট্রলারে ভ্যাসেল মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন করে নজরদারি জোরদার, যান্ত্রিক নৌকায় স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা চালু করাও প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এছাড়া রিসোর্স ম্যাপিং সমুদ্রে মৎস্য সম্পদের মজুদ নিরুপনসহ নিয়মিত পরিবীক্ষণ, নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের পাশাপাশি মৎস্য আহরণে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনসহ লাইসেন্স পদ্ধতি নিশ্চিত করা হবে। হাইস্পিড পেট্রোল বোটের মাধ্যমে সমুদ্রে নিয়মিত মনিটরিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
প্রকল্পের আওতায় মৎস্য আহরণ ও চাষে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, মৎস্যখাতের জন্য ভ্যালু চেইন এবং নিরাপদ খাদ্য বিধানসহ খামার সুরক্ষা ও সম্প্রসারণ করা হবে। পাশাপাশি মেরিন ভূ-আঞ্চলিক কর্ম পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে হাইড্রোলজিক্যাল জরিপ, স্যালানাইনেজশন ম্যাপিং ও খাল পুনর্বাসনের লক্ষ্যে উপক‚লের ২৯টি খালের ৫শ’ হেক্টর পুনঃখনন করা হবে। চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৫ হাজার প্রান্তিক চাষিকে ৬০০টি ক্লাস্টারে উন্নয়ন করা হবে। এর ফলে উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ির উৎপাদন অন্তত ২০ ভাগ বাড়বে বলে উপ-প্রকল্প পরিচালক কামরুর ইসলাম জানিয়েছেন।
প্রকল্পের আওতায় ফিশারিজ সার্ভিল্যান্স চেকপোস্ট নির্মাণ ও ১৮টি ফিস ল্যান্ডিং সেন্টার বা ফিস হারবার নির্মাণ ছাড়াও ফিস মার্কেট পুনর্বাসন ও আধুনিকায়নের মাধ্যমে আহরণ ও উৎপাদন অপচয় কমিয়ে আনা হবে। এছাড়াও ৩টি করে ফিস কোয়ারেন্টাইন ল্যাব, ফিস ডায়াগনস্টিক ল্যাব প্রতিষ্ঠা ছাড়াও ৩টি পিসিআর ল্যাব নবায়ন ও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। একই সাথে ১টি করে কোয়ারেন্টাইন রেফারেন্স ল্যাব ও ব্রুড ম্যানেজমেন্ট সেন্টার স্থাপন করা হবে।
বরিশালে ২৯০টিসহ উপক‚লীয় সাড়ে ৪শ’ গ্রামে মৎস্যজীবীদের জন্য কমিউনিটি সেভিংস গ্রুপ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ১শ’ মডেল জেলে পল্লী প্রতিষ্ঠা করা হবে। এরমধ্যে ৬০ ভাগ সুবিধাভোগীকে অর্থ সহায়তাও প্রদান করবে মৎস্য বিভাগ। এসব মডেল গ্রামের ১৮ হাজার যুবক ও যুব মহিলাকে ভকেশনাল ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ ১শ’ প্রডিউসর গ্রুপ তৈরি করা হবে। এসব এলাকায় ৯০টি যুব মেলাসহ ৬টি জব ফেয়ারেরও আয়োজন করা হবে। ৪৫টি উপজেলায় জেলে ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করে তাদের জীবনমান উন্নয়নে সহায়তা করা হবে প্রকল্পের আওতায়।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নে যেসব অবকাঠাওমো নির্মাণসহ খাল খনন, বাজার উন্নয়ন সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং ক্লাস্টার ফার্মের উন্নয়ন করা হচ্ছে তার প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিবেশ ও সামাজিক সুরক্ষার বিষয়টিও নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন।
সীমিত তহবিল, স্বল্প সময়ে কাক্সিক্ষত জিডিপি অর্জন এবং ক্রমবর্ধমান জনগোষ্ঠীর আমিষের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রকল্পটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এমনকি দেশের রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যেও যথেষ্ট সহায়ক ভূমিকা পালনে আশাবাদ ব্যাক্ত করেছেন প্রকল্প পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।