পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : বর্ণিল সাজ আর উৎসবের আমেজে শুরু হয়েছে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন। সম্মেলন ঘিরে গোটা রাজধানী উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে। সম্মেলনে সারাদেশ থেকে আসা ৬ হাজার ৭শ’র বেশি কাউন্সিলর অংশ নিচ্ছেন। এর পাশাপাশি অতিথি হিসেবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, কূটনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত হন। গতকাল শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের শুভ উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের শ্লোগান হচ্ছে, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা নেতাকর্মীরা ভিড় করছেন সম্মেলন স্থলের আশপাশের এলাকায়।
গতকাল শনিবার সকাল থেকেই রাজধানীর শাহবাগ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, দোয়েল চত্বর, প্রেসক্লাব, শাহবাগ, পল্টন, মৎস্যভবনসহ আশপাশের সমগ্র এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। এলাকায় বিরাজ করতে থাকে উৎসবের আমেজ। সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা ঢোল-তবলা করতাল নিয়ে সম্মেলনের আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়া শুরু করেন। এসব নেতাকর্মীর বেশিরভাগই সম্মেলন স্থলে প্রবেশের অনুমতি পাননি। তবে এতে তাদের উৎসাহ-উদ্দীপনার কমতি দেখা যায়নি। দলীয় প্রধানের বক্তব্য ও দিক-নির্দেশনা জানতে তারা ভিড় করে আছেন। ঢোল-করতাল বাজিয়ে এসব নেতাকর্মী সম্মেলনের আশপাশের এলাকা জমিয়ে রাখেন। অনেকেই স্মৃতির পাতায় আজকের দিনটিকে তুলে রাখার জন্য তুলছেন সেলফি।
মাদারীপুর থেকে আসা মুজিবভক্ত অনিক জানান, আমি জেলার অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ঢাকায় এসেছি। কাউন্সিলে প্রবেশ করতে পারব না জানি, তবু এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার লোভ সামলাতে পারিনি। কুষ্টিয়া থেকে আগত আওয়ামী লীগকর্মী নাসির বলেন, দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের কাউন্সিলে অংশ নিতেই ঢাকায় এসেছি। উদ্যানে প্রবেশের অনুমতি পাইনি। তাতে কি হয়েছে, কাউন্সিল ঘিরে আগত নেতাকর্মীদের তো কাছে পাচ্ছি। সবার সঙ্গে মিশে সম্মেলনের মজা নিতে পারছি। এদিকে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আগত কাউন্সিলরদের সম্মেলনস্থলে প্রবেশের সময় বরণ করে নেন তাদের জেলার কেন্দ্রীয় নেতারা। রজনীগন্ধা ও গোলাপের স্টিকে তাদের বরণ করে নেয়া হয়। দেয়া হয় পানিসহ অন্যান্য হালকা খাবার। সম্মেলনস্থল ঘিরে আগে থেকেই রাজধানীতে নেয়া হয়েছে নিñিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন এবং ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়। সম্মেলনস্থলে লাগানো হয়েছে প্রায় ১৪০টি সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়া উদ্যানের চারপাশের রাস্তা, নগরের সব ক’টি প্রবেশপথ এবং অন্যান্য স্থানেও নেয়া হয় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাতটি গেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত ৫০টি দল কাজ করে।
গতকাল শনিবার দলের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন করতে নির্ধারিত সময় সকাল ১০টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিপুল করতালির মধ্য দিয়ে নেতাকর্মীরা তাদের দলীয় প্রধানের উপস্থিতিকে বরণ করে নেয়।
সম্মেলনকে ঘিরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করা হয়েছে সুশৃঙ্খল ও জমকালো বর্ণিল আয়োজন। ঠিক ১০টায় মঞ্চের সামনের ডানদিকে জাতীয় পতাকার স্ট্যান্ডের পাশে দাঁড়ান প্রধানমন্ত্রী। কাছেই আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকার স্ট্যান্ডের পাশে দাঁড়ান দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। আগে থেকেই ৭৩টি সাংগঠনিক জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একেকটি স্ট্যান্ডের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন।
মঞ্চের সামনে অবস্থান করা লাল-সবুজ পোশাকে সজ্জিত শিল্পীরা যখন গেয়ে উঠে ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’ -আমাদের জাতীয় সঙ্গীত; সঙ্গে সঙ্গে সম্মেলনের হাজারও কণ্ঠেও শোনা যায় এই প্রাণের গান। আর ধীরে ধীরে আকাশের দিকে উঠতে থাকে জাতীয় পতাকা। একই সঙ্গে ৭৪টি স্ট্যান্ডে আওয়ামী লীগের দলীয় পতাকা।
জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া ও পতাকা উত্তোলন শেষে শান্তির পায়রা ও বেলুন আকাশে উড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীসহ সব নেতা। তাতে সম্মেলনের আকাশ নিমেষেই রঙিন হয়ে উঠে। এরপর মঞ্চে আসন নেন সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। জেলা নেতারা মঞ্চের সামনে তাদের নির্ধারিত আসনে বসেন। এরপর শেখ হাসিনা দলের দু’দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। তিনি সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্ব দেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও অসিম কুমার উকিলকে।
এরপর সংস্কৃতিমন্ত্রী ও দলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান নূরের পরিচালনায় সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপস্থাপন করা হয়। নুর বলেন, ‘এই আমাদের আলোর পথে যাত্রা। অনুষ্ঠানের এই আয়োজনের সঙ্গে জাতির পিতার পরম আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনি বাংলার মাটির মানুষদের বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, সেই মাটিতেই আজ তার মেয়ে দলের এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে নেতাকর্মীদের ডেকেছেন। শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন যাত্রার এক ধ্রুবতারা।’
সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায় ‘এখন সময় বাংলাদেশের...এখন সময় আমাদের’-এ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে আওয়ামী সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী। পরিবেশন করা হয়, জয় বাংলা, ‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর’, ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে রক্ত লাল’ আর ‘মোরা একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠ...’।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর সম্মেলনে শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন দলটির দফতর সম্পাদক আব্দুল মান্নান খান। শোক প্রস্তাবে স্মরণ করা হয় আওয়ামী লীগের প্রয়াত সকল নেতাকর্মীদের। ১৫ আগস্টে হারানো জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সকল সদস্য, জেল হত্যাকা-ে হারানো চার জাতীয় নেতা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত দলীয় নেতাকর্মীদের।
সম্মেলনের অভ্যর্থনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম সকলের সামনে আয়োজনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সবাইকে স্বাগত জানান দলের জাতীয় সম্মেলনে।
এরপর সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আবেগীভাষায় বলেন, আওয়ামী লীগ একটি অনুভূতির নাম। আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। তখন কাউন্সিলর মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে তাকে সমর্থন জানান।
এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সম্মেলনে আমন্ত্রিত বিদেশি অতিথিরা।
ফাঁকা নগরীতে উৎসবের আমেজ
এদিকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে ঘিরে নগরীতে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ। গতকাল রাজধানীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাটেই গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত যান খুব কমই দেখা গিয়েছে। বেশিরভাগ রাস্তাঘাটই ছিল অনেকটা ফাঁকা। সম্মেলনের কেন্দ্রস্থল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে কেন্দ্র করে আগে থেকেই ঘোষণা দিয়ে নগরীর প্রায় ১৪টি সড়ক ও পয়েন্টে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বিভিন্ন স্থানে ছিল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ। অন্য যেসব রাস্তা যান চলাচলের জন্য খোলা ছিল সেখানেও তেমন একটা যানজট দেখা যায়নি।
আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দেয়া মিরপুর ১০ এলাকার সাইফুল হক বারি জানান, মিরপুর-১০ নম্বর থেকে শেরাটন হোটেলের সামনে পৌঁছাতে তার সময় লেগেছে মাত্র ২০ মিনিট। যা অন্যকোনো দিন কল্পনা করা যায় না। তিনি বলেন, ঢাকায় মনে হচ্ছে আজকে উৎসব। চারদিকে ফাঁকা। কোথাও কোনো যানজট নেই।
এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপন করা হয়েছে বড় বড় ডিজিটাল স্ক্রিন। এসব স্ক্রিনে সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হচ্ছে। যেমন নগরীর কাওরানবাজার মোড়ে, মতিঝিলের শাপলা চত্বরে, শাহবাগের মোড়ে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল স্ক্রিন। উৎসুক জনতা এসব স্ক্রিনে দেখছে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য। শেখ হাসিনা, জয়সহ দলীয় নেতাকর্মীদের রঙ-বেরঙের পোস্টার ও ব্যানার এবং তোরণে ভরে গেছে নগরী। ফাঁকা নগরী ও উৎসবের রঙ যেন আছড়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। সাড়ে ১২টার সময় শাহবাগ মোড়ে হঠাৎ দেখা গেল সারিবদ্ধভাবে আসছে ১০/১২টা খাবার ভর্তি পিকআপ ভ্যান। দূর-দূরান্ত থেকে অংশ নেয়া কাউন্সিলরদের জন্য খাবার ব্যবস্থা করেছে নগর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন। সব মিলিয়ে পুরো নগরী যেন মিলেছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।