পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : ভোগান্তি কমছেই না পাসপোর্ট অফিসে। রাজধানীরসহ দেশের অধিকাংশ পাসপোর্ট অফিসই এখনো দালালের হাতে জিম্মি। পাসপোর্ট করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার আবেদনকারী নানা হয়রানি আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বাড়তি টাকা না দিলে অনেক সময় আবেদনপত্রও জমা দিতে পারেন না সাধারণ মানুষ। নানা অজুহাতে আবেদনপত্র জমা নেয়া হয় না। তবে দালালের হাতে টাকা দিলে দ্রুত আবেদনপত্র জমা দেয়া যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীসহ দেশের পাসপোর্ট অফিসগুলোতে বাড়ছে দালাল চক্রের তৎপরতা। বিশেষ করে আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য কিছুতেই যেন থামছে না। অফিসের ভেতরে-বাইরে, এমনকি রাস্তার ওপরও দালালদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। মাঝেমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে গুটিকয়েক দালাল ধরা পড়লেও বাকিরা নির্বিঘেœ তাদের কাজ করে যাচ্ছে। পাসপোর্টের ফরম পূরণ জমা দেয়, টাকা জমা দেয়া থেকে শুরু করে তা হাতে পাওয়া পর্যন্ত সব জায়গাতেই রয়েছে দালালদের অবাধ যাতায়াত। উত্তরা, কক্সবাজার সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, রাজশাহী, চট্রগ্রামসহ বিভিন্ন পাসপোর্ট অফিসে রয়েছে শক্তিশালী অসাধু সিন্ডিকেট। আর এই সিন্ডিকেটের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও যোগসাজস থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, রাজধানীর আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্য দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে মানুষ। দালাল, কর্তব্যরত আনসার সদস্য এবং পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে গড়ে তুলেছেন একটি সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের খপ্পরে পড়ে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন আবেদনকারীরা। এই সিন্ডিকেটকে পাশ কাটিয়ে সহজে পাসপোর্ট পাওয়া অনেকটাই অসম্ভব। পাসপোর্ট পেতে কোনো না কোনোভাবে পড়তে হয় দালালদের কবলে। পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা অনেকেই কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার ও অসহযোগিতার অভিযোগ করেন। প্রতিনিয়ত তারা দালালের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ ও প্রতারিত হচ্ছেন। আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে সরজমিন গিয়ে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।
রামপুরার বাসিন্দা ফাহমিদা বেগম জানান, চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার জন্য দ্রুত পাসপোর্ট পেতে দালালের সঙ্গে চুক্তি করতে বাধ্য হয়েছেন তারা। এক সপ্তাহের মধ্যে পাসপোর্ট পাওয়া যাবে এ আশায় তারা এক বন্ধুর পরিচিত দালালের কাছে পাসপোর্ট করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। প্রথমে দালাল হান্নান এজন্য খরচ চায় ৮ হাজার টাকা। পরে ৭ হাজার টাকায় রফা হয় তাদের মধ্যে। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ে পাসপোর্ট না পাওয়ায় তারা খোঁজ করছেন দালাল হান্নানের।
এ প্রসঙ্গে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের আনিসুজ্জামান নামের একজন কর্মকর্তা জানান, আমাদের প্রতিদিন দুই হাজার ২০০টি আবেদন গ্রহণ ও সম্পূর্ণ করার ক্ষমতা রয়েছে, কিন্তু প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার আবেদন পড়ে। ফলে নির্ধারিত সময়ে কিছু আবেদনকারী পাসপোর্ট পান না। ব্যবস্থাপনার এই ঘাটতির সুযোগ নেয় এক শ্রেণীর কর্মচারী ও দালাল।
বিভিন্ন সূত্র মতে, পাসপোর্ট অফিসের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজসে ওই দালাল চক্র বিভিন্নভাবে হয়রানির পাশাপাশি প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। পুরুষ দালালদের পাশাপাশি মহিলা দালালও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অবলীলায় এসব কাজ করে যাচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন পাসপোর্ট আবেদনকারীদের অতিরিক্ত অর্থ খরচ হচ্ছে, তেমনি হয়রানির শিকারও হচ্ছেন তাঁরা। আবার প্রয়োজনের সময় হাতে পাসপোর্ট না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকেই।
সোনালী ব্যাংক আগারগাঁও শাখা বলতে গেলে দালালদেরই আখড়া। এখানেও ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে দালালদের যোগসাজশের প্রভূত অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংকটির এই শাখায় গিয়ে দেখা যায়, যেখানে সাধারণ মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিচ্ছে, সেখানে খুব সহজেই দালালরা এসেই টাকা জমা দিয়ে চলে যাচ্ছে। যেন ক্যাশিয়ারদের সঙ্গেই তাদের যত লেনদেন। যার ফলে টাকা জমা দেয়ার জন্য দালালদের লাইনে দাঁড়াতে হয় না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মহিলা দালাল বলেন, ‘আমরা পাসপোর্টকারীদের টাকা জমা দিয়ে যে বকশিশ পেয়ে থাকি, তা থেকে ৩০ পার্সেন্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের দিতে হয়।’ পাসপোর্ট অফিস ও সোনালী ব্যাংকে পুরুষ দালালদের পাশাপাশি মহিলা দালালরাও পাল্লা দিয়ে কাজ করছে।
এ বিষয়ে আগারগাঁও শাখা সোনালী ব্যাংকের সহকারী ম্যানেজার মো. সালেহ বলেন, ‘পাসপোর্ট করতে আসা ব্যক্তির টাকা জমা দেয়া হলে সেই টাকা ফেরত দেয়ার এখতিয়ার কর্তৃপক্ষের নেই। যদি কেউ ক্ষেত্রবিশেষে টাকা ফেরত দিয়ে থাকেন, তবে এটা অবশ্যই আইনবহির্ভূত।’
সোনালী ব্যাংকের এই চিত্র দেখার পর পাসপোর্ট অফিসের কাছে আসতেই দেখা গেল অদ্ভুত চিত্র। ব্যাংক থেকে কিছুক্ষণ আগে যে লোকটা টাকা ফেরত নিয়ে চলে এলেন, সেই লোক এক দালালের কাছে জমার টাকাসহ যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে দিলেন। পরে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘অতি তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট পাওয়া যাবে বলেই তাঁর কাছে সবই জমা দিলাম।’
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দালালরা এমনিতেই সাধারণ মানুষের কাছ থেকে এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি নেয়। আবার কখনো পাসপোর্ট করে দেয়ার নাম করে টাকা নিয়ে পাসপোর্ট করে দেয় না। এক পর্যায়ে পাসপোর্ট করতে দেয়া লোকজনকে ভয়ভীতি দেখায় তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাসপোর্ট প্রক্রিয়ার শুরতেই সোনালী ব্যাংকের আগারগাঁও শাখায় টাকা জমা দেওয়ার সময় দালালচক্রের সদস্যরা আবেদনকারীকে নানা প্ররোচনায় প্রলুব্ধ করছে। তারা কোনো ঝামেলা ছাড়াই খুব অল্প সময়ে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পাদন করে পাসপোর্ট আবেদনকারীর হাতে তুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। এতে এসব দালালের কথাবার্তায় প্রভাবিত হয়ে অনেকেই তাদের হাতে টাকা-পয়সা তুলে দিচ্ছেন শুধু মুখের কথায়। দালালদের ভাষ্য, প্রকৃত দালালরা প্রতারণা করে না। তারা প্রতিশ্রুতি ঠিক রেখে কাজ করে। যাতে পরবর্তী সময়ে ওইসব লোকজন নতুন আবেদনকারীকে কথিত প্রকৃত দালালের কাছে পাঠান।
জানা গেছে, পাসপোর্ট অফিসে দালালদের খপ্পরে পড়ে আবেদনকারীরা একদিকে যেমন অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করছেন, তেমনি হয়রানির শিকারও হচ্ছেন। প্রয়োজনের সময় আবার হাতে পাসপোর্ট না পেয়ে বিপাকে পড়ছেন অনেকেই। পাসপোর্ট প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি তো দিতেই হয়, আবার কোনো কোনো সময় টাকা নিয়েও পাসপোর্ট না দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে দালালরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নজরদারি সত্ত্বেও পাসপোর্ট অফিসে দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা হওয়ার উপক্রম। অনেক সময় চোখের সামনেই এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বিকার থাকতে দেখা যায়।
কক্সবাজার জেলা পাসপোর্ট অফিসে সাধারণ মানুষদের হয়রানী ও জিম্মি করে টাকা আদায়ের মহোৎসব চলছে। এতে সরাসরি সহযোগিতা করছে পার্সপোট অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী। পুরাতন পাসপোর্ট দালালদের সাথে নতুন নতুন দালাল ও মৌসুমী দালালদের আবির্ভাব ঘটেছে। এতে সাধারণ পাসপোর্ট করতে আসা মানুষের ত্রাহি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দালাল-কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মিথ্যে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে নারী, বৃদ্ধ ও গ্রামের অশিক্ষিত মানুষদের নানাভাবে হয়রানীর শিকার করছে এই দালাল চক্র। সরকারী বিবরণী মতে, বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক সরকারী নির্ধারিত ফি ব্যাংক ড্রাপ করে জাতীয় পরিচয়পত্র/জন্ম সনদ, চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট, ২ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবিসহ নিদিষ্ট ফরম পূরণ করে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় পাসপোর্ট অফিসের চরম অসহযোগিতা এবং দালালচক্রের সক্রিয় অবস্থানের কারণে পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মচারীরা অধিকাংশ সাধারণ মানুষের ফরম জমা নেয় না। নানা রকম সমস্যা এবং সময়ক্ষেপণ করে সাধারণ মানুষদের চরমভাবে মানসিক ও শারীরিক কষ্ট দেয় পাসপোর্ট কর্মকর্তারা। কারণে-অকারণে এবং অযৌক্তিকভাবে সেসব আবেদনপত্রে লাল কালির চিহ্ন দিয়ে আবেদনপত্রগুলো বাতিলও করে দেন। খোদ পাসপোর্ট অফিস থেকেই দালালদের দেখিয়ে দেওয়া হয়। দালালদের কাছে গেলে পাসপোর্ট অফিসের বাবুদের লাল কালির কাঁটা ছেড়ার উপর টাকা কমবেশি বাড়ে বলে জানা যায়। পাসপোর্টের দালালরা ওই একই কাঁটা-ছেড়া ফরম জমা দিয়ে ছবি ও ফিঙ্গার নিয়ে নেন। এ যেন আলাউদ্দিনের আশ্চর্য চেরাগ। দলাল’রা একটু ঘঁষা দিলেই সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। সত্যায়িত করার সীল, জন্মনিবন্ধন ফরম, চেয়ারম্যান সনদসহ যাবতীয় জাল কাগজপত্রের সবকিছুই রয়েছে দালালদের হাতে। প্রয়োজন শুধু টাকার। দালালরা সংঘবদ্ধভাবে প্রকাশ্যে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে লাঞ্ছিত করতেও দ্বিধা করে না এই দালাল চক্র। এই দালাল চক্র পাসপোর্ট অফিসের বিশ্বস্ত সহচর।
সূত্রে জানা যায়, সরকারী হিসাবে সাধারণ পাসপোর্টের জন্য শুধুমাত্র সাড়ে ৩ হাজার টাকা এবং ইমারজেন্সি পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার টাকা ব্যাংক ড্রাপের মাধ্যমে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার কথা থাকলেও এই দালাল’রা সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা এবং ইমারজেন্সী পাসপোর্টের জন্য ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা আদায় করে। আর প্রতিটি সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ১২শ’ এবং ইমারজেন্সী পাসপোর্টের জন্য ২ হাজার থেকে ২২শ’ টাকা পর্যন্ত দালালদের মাধ্যমে পায় পাসপোর্ট অফিসের কর্তাব্যক্তিরা। ফরমের উপর সংকেতিক চিহ্ন দিয়ে দালালের নাম ও টাকার অংকের পরিমাণ দেখানো হয়। সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে এত টাকা নেওয়ার পরও অনেক সময় দালালদের পেট ভরে না। পাসপোর্টে বিভিন্ন সমস্যা, জটিলতা ও টেক্যনিক্যাল বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সুযোগ বুঝে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নেন এ দালাল চক্র। দালালচক্রের রয়েছে সমিতি, শহরের বহুতল ভবনে বিলাসবহুল অফিস। তাদের এই সৌখিনতা আর আরাম-আয়েশের চাহিদাও মিটাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে সরেজমিনে দেখা গেছে নানা অনিয়ম ও হয়রানি। মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ সুতরিয়ার সরোয়ার কামাল জানান, প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র এবং ব্যাংকে ৬ হাজার টাকা জমা দেয়ার রশিদসহ কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে আবেদনপত্রটি জমা দেয়া হয়েছে ৩ বছর আগে। ইতোমধ্যে দুই দফায় থানা পুলিশ বাড়িতে এসে তদন্তও করেছে। পুলিশ ভেরিবিকেশনসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পরেও পাসপোর্ট হাতে মিলেনি গত তিন বছরেও। তিনি আরো জানান, প্রথমে পাসপোর্ট অফিসের জমাগ্রহণকারী কর্মকর্তা একজন দালালের মাধ্যমে ফরম পূরণ করে জমাদিতে বলেছিলেন। পরবর্তীতে দালালের মাধ্যমে জমা না দেয়াতে আর পাসপোর্ট হয়নি বলে তিনি দাবি করছেন।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, দালাল ছাড়া কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিসে কোন কাজই হয়নি। দালালকে টাকা না দিলে আবেদনকারীকে রোহিঙ্গা বলা হয়। টাকা দিলে রহিঙ্গারাও দ্রুত পাসপোর্ট পেয়ে যায়। আর এসব কাজ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায়। তিনি আরো জানান, পাসপোর্ট অফিসের চিহিৃত বেশিরভাগ দালালদের অবস্থান এবং অফিস শহরের লালদিঘীর পাড়স্থ বিভিন্ন মার্কেটে। শহরের জিয়া কমপ্লেক্স, আরমান বোর্ডিং, এ.বি সুপার মার্কেট, পাঁচতারা হোটেল, হোটেল মৌসুমী, ইডেনগার্ডেন সিটি এবং কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মার্কেটসহ অন্যান্য অনেক ব্যয়বহুল মার্কেটে দোকান/অফিস ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছে এই দালাল চক্র। পাসপোর্ট আবেদন ফরম লিখক নামক তাদের রয়েছে একটি সংগঠন।
সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট অফিস থেকেই প্রতি মাসে ১৫ টাকা করে চাঁদা আসে এই সংগঠনের নামে। পাসপোর্ট অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে প্রতি সপ্তাহে বসে গোপন বৈঠক। সন্ধ্যার পর থেকে এসব অসাধু কর্মচারীদের দেখা যায় লালদিঘীর পাড়ের বিভিন্ন দালালদের দোকান কিংবা অফিসে। মূলত দালালরাই নিয়ন্ত্রণ করে এই সমস্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদেরকে দিয়ে জোর করেও কাজ করে নেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে এই দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। এ চক্রের প্রধান হোতা হিসাবে সদর ঈদগাঁহ এলাকার জানে আলম, মহেশখালীর আজিজ, হাসেম, সাইফুল, সোলাইমান, লিংকরোডের নাছির উদ্দিন, চকরিয়ার মৌলভী সোলেয়মান, রাজু, সাইফুল, রিদুয়ান, চৌফলন্ডীর আমিন, পিএমখালীর সানা উল্লাহ, রামু পানিরছড়া এলাকার শাহিন, মিঠাছড়ি এলাকার আমিন, আমান উল্লাহ, গর্জনিয়ার শাহাব উদ্দিনসহ শহিদ, জাহাঙ্গীর আলম, নাজিম উদ্দীন, আবছার উদ্দীন, রনতোষ দে, ফরিদুল আলম, আব্দুল খালেক, হেফাজতুর রহমান আরও ২৫/৩০ জনের সক্রিয় দালাল রয়েছে এ চক্রের।
অভিযোগ রয়েছে, দালালদের অনেকেই জঙ্গিদের পাসপোর্ট পেতে সহায়তা ও মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রয়েছে। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাকে ম্যানেজ করে এবং গুটিকয়েক সাংবাদিকদের মাসিক মাসোহারা দেয়ার জন্য ১ জন কথিত সাংবাদিকের মাধ্যমে এই টাকা বণ্টন করে বলে সূত্রে জানা যায়। দিন দিন মানুষ এই দালালচক্র দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে, দালালরা লাভবান হচ্ছে। আর অন্যদিকে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে গ্রামঞ্চল থেকে আসা সাধারণ মানুষ।
সরেজমিনে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের অভ্যন্তরে কাজ চলছে ঢিলেঢালাভাবে। দুপুর ১২টা পর্যন্তও এনরোলমেন্ট রুমে কাজ করার কোন কর্মকর্তা-কর্মচারী দেখা যায়নি। রুমের বাইরে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সাধারণ মানুষদের অহেতুক দাঁড় করিয়ে রেখেছে। ফিঙ্গার আর ছবি দিতে আসা এই সব মানুষগুলোর সময়ের যেন কোন দাম নেই। লাইনে দাঁড়ানো অনেক মানুষ ক্ষোভ ও কষ্ট প্রকাশ করে ইনকিলাবকে বলেছেন, সকাল থেকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে কিন্তু ফিঙ্গার বা ছবি নেয়ার কোন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। কিছু বললেই আনসার সদস্যরা মারার জন্য তেড়ে আসে এবং দুব্যর্বহার করে।
কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী আবু নাঈম মাসুম বলেন, “আমার হাতে পুলিশি কোন ক্ষমতা নাই, আমি দাওয়া করে দালালদের ধরে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি না। তবে তিনি সাধারণ মানুষদের ভোগান্তির কথা স্বীকার করেন এবং দালালদের মাধ্যমে ফরম পূরণ করার কথাও তিনি অস্বীকার করতে পারেনি। আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে যাতে কোন অনিয়ম না হয় সেজন্য তিনি সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়ে সকলকে নজরদারীতে রেখেছেন বলে জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।