Inqilab Logo

রোববার ০৩ নভেম্বর ২০২৪, ১৮ কার্তিক ১৪৩১, ৩০ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে একাই একশ’

শেয়ারবাজারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেই নতুন নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারাচ্ছে

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৯ এএম

গভর্নরের সঙ্গে সুসম্পর্ক বলে কথা। ব্যাংকার হিসেবে খুবই করিৎকর্মা। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ইচ্ছেমতোই ছড়ি ঘোড়াচ্ছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নতুন নিয়মনীতি যেন তিনি একাই প্রণয়ন করে থাকেন। গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালক ও জিএম’র পরিবর্তন হলেও তার চেয়ার নড়ে না। চাকরির প্রায় দেড় যুগ পার করছেন, একই বিভাগে কর্মরত অবস্থায়। দেশের বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিদের গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিয়ে দিয়ে সুবিধাধি প্রদানসহ বাংলাদেশ ব্যাংকে নিজের কর্তৃত্ব জাহির করেছেন। এমনকি অফিসে কর্মরত ঊর্ধ্বতন কাউকেই তোয়াক্কা করেন না। রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই শক্তিধর ব্যক্তিটি হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব অফসাহট সুপারভিশনের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুর রহমান চৌধুরী।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাদের দফতর পরিবর্তন হলেও পরিবর্তন হয় না আমিনুর রহমানের। অভিযোগ আছে, দীর্ঘদিন একই দফতরে থেকে গভর্নরের মাধ্যমে দেশের শেয়ারবাজারকে অস্থিতিশীল করছেন তিনি। শেয়ারবাজারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেই নতুন কোনো নিয়মনীতি প্রবর্তন করে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করছেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানামুখী উদ্যোগে বাজারের প্রতি মানুষের কিছুটা আস্থা ফিরলেও তা আবার চিড় ধরাচ্ছেন। অথচ বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে যখন ভাটার টান এবং অনিয়ম, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনায় আর্থিক খাতের যখন নাজুক অবস্থা; তখন বিনিয়োগকারীদের আশার আলো দেখিয়েছে একমাত্র শেয়ারবাজার। বিএসইসি, বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভলপমেন্ট অথরিটিসহ (বিডা) সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিনিয়োগ আকর্ষণে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড ও আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী জানুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় রোড শো অনুষ্ঠিত হবে। এ সব কার্যক্রমের ফলে করোনার প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও দেশের শেয়ারবাজারে মানুষের আস্থা ফিরেছে। বিনিয়োগ বাড়ছে। এছাড়া বিএসইসি আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় শেয়ারাবাজারের প্রতি ক্রমান্বয়ে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরতে শুরু করেছে। যা করোনার অভিঘাত কাটিয়ে অর্থনীতিকে চাঙা করতেও সহায়ক ভ‚মিকা পালন করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি স্বার্থান্বেষী গ্রæপের অপতৎপরতায় শেয়ারবাজারে বিএসইসি’র নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বারবার ভেস্তে যাচ্ছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিনিয়োগকারীদের পাশে সব সময়ই আছেন বলে গতকালও জানিয়েছেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, শেয়ারবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। এর অন্যতম কারণ হতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি’র মতপার্থক্য।
পুঁজিবাজারের সাম্প্রতিক খারাপ পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসি’র কমিশনার প্রফেসর ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, পুঁজিবাজার নিয়ে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না। দ্রুতই পুঁজিবাজার পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। অবশ্য পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বর্তমান বিএসইসি’র সুযোগ্য নেতৃত্ব ও সব অংশীজনের সহযোগিতায় দীর্ঘ দিনের মন্দাভাব কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে পুঁজিবাজার। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে পুঁজিবাজার বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্বে বিএসইসি বা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ নেয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।

ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজার বিনিয়োগ নিয়ে গত কয়েক মাস থেকেই অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক; এর নেপথ্যেই রয়েছেন ওই ব্যক্তি। পোর্টফোলিওর শেয়ারের দর বেড়ে বিনিয়োগের নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে জরিমানা গুনতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। এছাড়াও পুঁজিবাজার বিশেষ তহবিলের অর্থ অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ এবং অদাবিকৃত লভ্যাংশের অর্থ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে স্থানান্তর করা নিয়েও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বিএসইসি’র মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। একই সঙ্গে মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনা করা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছেও প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য চায় তারা। দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ মতপার্থক্যের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ প্রভাবে পুঁজিবাজারের সূচক নিম্নমুখী হয়ে উঠেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে দ্রুতই এ সমস্যার সমাধানের কথা বলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, দেশের অর্থনীতির অগ্রযাত্রা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের মধ্যেই কার্যকর সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। বিএসইসি গত দেড় বছরে বাজারে আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করেছে। বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরছিল। এই পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে সতর্কভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।

সূত্রমতে, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. আমিনুর রহমান চৌধুরীর ইন্ধনে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি দীর্ঘদিন বিপর্যস্ত শেয়ারবাজারকে মানুষের আস্থায় নিতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা চালু না করে বরং গত ১ বছর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নানামুখী পদক্ষেপে কিছুটা স্থিতিশীল পরিস্থিতি শেয়ারবাজারে ফিরলেও সেখানে বিপত্তি বাঁধিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংক। একের পর এক নিয়ম-বিধি চালু করে শেয়ারবাজারকে বিপাকে ফেলছে। যখনই কিছুটা আস্থায় ফিরছে তখনই শেয়ারবাজারে বিভিন্ন শর্তারোপ ও নিয়ম বেঁধে দিয়ে বিপাকে ফেলছে বাজারকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একাধিক ভুক্তভোগী কর্মকর্তাদের মতে, গভর্নরের প্রশয়ের কারণেই মো. আমিনুর রহমান চৌধুরী ব্যাংকে একক কর্তৃত্ব স্থাপন করেছেন। দীর্ঘদিন একই বিভাগে বহাল আছেন।
সূত্র মতে, পুঁজিবাজারে বাংলাদেশ ব্যাংকের যখন-তখন হস্তক্ষেপের কারণে কিছুদিন থেকে বিএসইসি’র মধ্যে মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। এ কারণে বড় দরপতনের মধ্য দিয়ে গেল সপ্তাহ পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এতে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর আগে যদিও টানা দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল। অথচ শেয়ারবাজারের অবস্থা কিছুটা স্থিতিশীল হলেই নতুন নিয়ম-নীতি প্রবর্তন করে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বড় বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারাচ্ছে।

এদিকে বিএসইসি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে দেখা দেয়া মতবিরোধের মধ্যেই করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এতে গত রোববার দেশের শেয়ারবাজারে বড় দরপতন হয়েছে। দুই বাজারে সবকটি মূল্যসূচকের বড় দরপতনের সঙ্গে কমেছে লেনদেনের পরিমাণ। লেনদেন কমে ডিএসইতে ৭ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন হয়েছে। সেইসঙ্গে কমেছে লেনদেনে অংশ নেয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম।

চলতি বছরের মার্চে উড়তে থাকা শেয়ারবাজারে হঠাৎ করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানে আলোচনা ছাড়াই বিধিনিষেধ আরোপ করে এতে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দরে বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রথমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলারে ব্যাংক ৩০ শতাংশ এবং ব্যাংকবহির্ভ‚ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিতে পারবে বলে শর্তজুড়ে দেয়া। পরে বিএসইসি এক সভায় প্রতিবাদ করলে ব্যাংকের লভ্যাংশ দেয়ার সীমা ৩৫ শতাংশ বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে বেশকিছু বিষয়ে দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ প্রদানের সর্বোচ্চ সীমা শিথিল করা, বিশেষ তহবিল গঠনের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের উৎসাহিত করা, বিশেষ তহবিলের অর্থ সুকুক, করপোরেট বন্ড, গ্রিন বন্ডে বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করা, সরকারের ট্রেজারি বিল ও বন্ড স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ব্যবস্থা করা, ব্যাংকের ইস্যু করা পারপেচুয়াল বা বেমেয়াদি বন্ডকে স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে দ্রুত লেনদেনের উদ্যোগ গ্রহণ করার বিষয়ে দুই সংস্থার কর্মকর্তারা নীতিগতভাবে একমত পোষণ করেন। পাশাপাশি মিউচুয়াল ফান্ডে উদ্যোক্তা হিসেবে ব্যাংকের বিনিয়োগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পুঁজিবাজার বিনিয়োগ সীমা গণনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকৃত সিকিউরিটিজের বাজার মূল্যের পরিবর্তে ক্রয়মূল্যের ভিত্তিতে গণনা করার বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সে সময় কমিশনের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। যদিও এখনো এ সম্পর্কিত কোনো নির্দেশনা দেয়নি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যখনতখন হস্তক্ষেপের পরও বিএসইসি আইনের শাসন এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করায় গত মে মাসে বিশ্বে শীর্ষ অবস্থানে ছিল দেশের শেয়ারবাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ডিএসই’র ইতিহাসে সাড়ে ১১ বছরের মধ্যে প্রথম ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে। এরই ধারাবাহিকতায় অন্যান্য বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে ফিরতে শুরু করছিলেন। বিদেশি বিনিয়োগ যখন দরজায় কড়া নাড়ছে, দীর্ঘদিন পর শেয়ারবাজার নিয়ে যখন সবাই খুশি। তখনই দৃশ্যমান সাফল্যকে বাধাগ্রস্ত করতে এবং সরকারকে বিব্রত করতে একটি গ্রুপ দেশের পুঁজিবাজারকে আবারও আগের মতো বিপর্যস্ত করতে উঠে পড়ে লেগেছে।

মার্চে লভ্যাংশ নিয়ে বিধিনিষেধের পর সেপ্টেম্বরে হঠাৎ করে আর্থিক খাতের দৈন্যদশার মধ্যে উড়তে থাকা পুঁজিবাজারে আঘাত আসে। ব্যাংকগুলোর পুঁজিবাজার বিনিয়োগ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক হস্তক্ষেপ শুরু করে। নির্ধারিত সীমার বেশি বিনিয়োগ করায় ৮টি ব্যাংককে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি নির্দেশনা লঙ্ঘন করে পুঁজিবাজার বিশেষ তহবিলের অর্থ অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ করার কারণে আরো ১২ ব্যাংককে এ সময় সতর্ক করা হয়। সবমিলিয়ে ২২টি ব্যাংককের ওপর হস্তক্ষেপ করার ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বন্ডে যে বিনিয়োগ করেছে, সেটিও পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমার মধ্যেই ধরার কথা জানায় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড পরিচালনা করা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছেও প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য চায় তারা। এসব ঘটনায় বাজারে অযাচিত বিক্রয় চাপ তৈরি হয়, নতুন বিনিয়োগও আটকে যায়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বড় বিনিয়োগকারীরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকে। ফলে শুরু হয় ধসের মতো পরিস্থিতি।

বাংলাদেশের ব্যাংকের কারণে-অকারণে হস্তক্ষেপে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগসীমা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। আইনের বাধ্যবাধকতায় একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তার মোট মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করতে পারবে না। আর শেয়ারের ধারণকৃত মূল্য নির্ধারণ করা হয় বাজার মূল্যের ভিত্তিতে। ব্যাংকগুলোর ধারণকৃত শেয়ারের মূল্য বাজারে বেড়ে গেলে আইনের বাধ্যবাধকতা অমান্য হয়ে যায়। আর রাতারাতি শেয়ার বিক্রি করে নির্ধারিত সীমার মধ্যে নামিয়ে আনা যায় না। আবার নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলেই ব্যাংকগুলোকে জরিমানা গুনতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। এভাবে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের শেয়ার ধারণের সর্বশেষ সীমা নিয়ে উভয় সঙ্কটে পড়েছে দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো। ব্যাংকের বিনিয়োগ ছাড়াও স¤প্রতি অদাবিকৃত লভ্যাংশের অর্থ পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতা তহবিলে স্থানান্তর করা নিয়েও বিএসইসি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যে মতপার্থক্য তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, এই অর্থ স্থানান্তরের সুযোগ নেই। অন্যদিকে বিএসইসি’র মত হচ্ছে, বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বিনিয়োগকারীর টাকা আর আমানতকারীর টাকা এক জিনিস নয়। আর দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থার এ মতপার্থক্যের প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। যা এখনও চলমান রয়েছে।

সম্প্রতি শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার কারণে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে আইনি সীমালঙ্ঘন করে বিনিয়োগ করার কারণে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংককে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অথচ সোনালী ব্যাংকের বিষয়টি ছিল ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশেকে (আইসিবি) ৫০০ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার। আইসিবি সরকারের পক্ষে প্রয়োজন অনুযায়ী বিনিয়োগ করবে। আবার বিনিয়োগ বেশি হলে উঠিয়ে নিবেন- এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এরই অংশ হিসেবে সোনালী ব্যাংক আইসিবিকে ঋণ দিয়েছেন।

একটি শীর্ষস্থানীয় ব্রোকারেজ হাউজের প্রধান নির্বাহী নাম অপ্রকাশিত রাখার শর্তে বলেন, আর্থিক খাতের যখন নাজুক অবস্থা তখন একমাত্র আশার আলো পুঁজিবাজার। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতের উন্নয়ন ঘটাতে না পেরে নিজেদের অক্ষমতা ঢাকতে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে পুঁজিবাজারে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছে। যা দেশের অর্থনীতিকে আরও বিপর্যস্ত করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। করোনার প্রভাব কাটিয়ে যখন প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছে এবং এর প্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারের সূচক আরও উঠবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আর তখনই নিজেদের কাজ সঠিকভাবে না করে বিএসইসি’র কাজে হস্তক্ষেপ করছে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের তদারকি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংক। বিশেষ করে কিছু পলিসিগত বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অযাচিত হস্তক্ষেপে ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি’র মতবিরোধের কারণে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন।



 

Show all comments
  • ash ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৫:৫০ এএম says : 0
    AI AMINUR RAHMAN JE SHUDHU BANGLADESH BANK E ASE TA NOY !! AI SHOB AMINUR RAHMAN BANGLADESHR PROTITA DPT E ASE, ERA E DESH TAKE PISON DIKE TENE DHORE
    Total Reply(0) Reply
  • Ahad Ahmed ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২১ এএম says : 0
    খুবই দুঃখ জনক এমন আচরণ
    Total Reply(0) Reply
  • Sherena Akter ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৩ এএম says : 0
    বাংলাদেশ ব্যাংক এই দেশীয় মাফিয়াদের সহায়ক । মাফিয়ারা বাংলাদেশ ব্যাংকের নাম ভাঙ্গিয়ে টাকা লুঠ করছে আনন্দের সাথে
    Total Reply(0) Reply
  • Md Saddam Ul Karim ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৪ এএম says : 0
    কিলিয়ার বুজা যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারের পিছনে লেগেছে, কারন শেয়ার বাজারের ক্ষতি হইলে মানুষ সরকারের সমালোচনা করবে, ২০১০ সাল থেকেই লেগে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক শেয়ার বাজারের পিছনে, সরকারের বুজা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • Kazi Maksudur Rahman ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৫ এএম says : 0
    আতঙ্ক হবেন না । মার্কেট তার গন্তব্যে যাচ্ছে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Jamshed Al Zubair ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৫ এএম says : 0
    সবই মোড়লদের ইচ্ছা। ব্যাংক সেক্টর বাড়লে তাদের চুলকানি শুরু হয়ে যায়। ২০১৭ থেকে তা-ই পরিলক্ষিত হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • রাশিদ খান ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
    বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমতে পারে এমন কোনো কর্মকাণ্ড যেন না হয়। কেননা বাজারে এর প্রভাব পড়া অস্বাভাবিক নয়। প্রধানমন্ত্রী দুই সংস্থার মতপার্থক্য দূর করতে কাজ করবেন বলে আশা রাখি।
    Total Reply(0) Reply
  • সুশান্ত কুমার্ ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৭ এএম says : 0
    পুঁজিবাজার দীর্ঘ দিনের মন্দাভাব কাটিয়ে কেবল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। এমন মুহুর্তে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সমন্বয় করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • জ্ঞান সন্ধানী বালক ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৮ এএম says : 0
    করোনার প্রভাব কাটিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছে আর তখনই বাংলাদেশ ব্যাংকের আমিনুরদের এই দাপট মেনে নেয়া যায় না। আশা করি প্রধানমন্ত্রী একটা সমাধান করবেন।
    Total Reply(0) Reply
  • মকবুল হুসাইন ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৮ এএম says : 0
    বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘদিন পর উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শেয়ার কিনছে। নতুন অনেক বিনিয়োগকারী আসছে। কালো শকুনের আর সহ্য হচ্ছে না, তাই কুনজর। প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
    Total Reply(0) Reply
  • সত্যিকার ফুডস ২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৬:২৯ এএম says : 0
    ইনকিলাবকে ধন্যবাদ। বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ তুলে ধরায়। আশা করি প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে নজর দেবেন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কেন্দ্রীয় ব্যাংক

২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ