পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঞ্চ ও সাজসজ্জা, খাদ্য, অভ্যর্থনা এবং প্রচার-প্রকাশনা উপ-কমিটির যা ব্যয় হচ্ছে সেটিই মূল বাজেটের চারগুণেরও বেশি। এই বাড়তি টাকা বহন করছেন দলের কয়েকজন প্রতিষ্ঠিত নেতা ও মন্ত্রীরা।
আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলেছেন, আমরা দলীয় বাজেটের মধ্যেই ব্যয় রাখতে চাই। কিন্তু বিভিন্ন প্রয়োজনে বাড়তি যে খরচগুলো হচ্ছে, এসব ব্যয় আমাদের দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও শুভাকাক্সক্ষীরা নির্বাহ করছেন তারা বলেন, এগুলো আমরা চেয়ে নিচ্ছি না। তারা যেচেই দিচ্ছেন। নীতি-নির্ধারণী নেতারা আরও জানান, দলের সম্মেলনের মতো বড় একটি উৎসবে সবাই আর্থিক যোগান দিতে স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই রাজি। এখানে কাউকে বাধ্য করে কিছু আদায় করা হচ্ছে না।
সম্মেলনে আসা অতিথিদের খাবারের জন্য ব্যয় হচ্ছে সম্মেলনের মোট বাজেটের সমান অর্থ। এ কমিটির বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হচ্ছে বিদেশি অতিথিদের পেছনে। প্রচার ও প্রকাশনায় ইতোমধ্যে ব্যয় হয়েছে দুই কোটি টাকার ওপরে। মঞ্চ ও সাজসজ্জার ব্যয় মূল বাজেটের দ্বিগুণ বেশি হচ্ছে। তবে বাজেটের বাইরে যেসব টাকা খরচ হচ্ছে তা দলের প্রতিষ্ঠিত নেতা ও কোনও কোনও মন্ত্রী ব্যয় নির্বাহ করছেন বলে জানিয়েছেন সিনিয়র নেতারা।
দলের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন, ব্যয়ের সঠিক পরিমাণ এখনই জানানো সম্ভব হবে না। ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকার দলীয় যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে, তা কোনও উপ-কমিটিকেই ভাগ করে দেয়া হয়নি। কোষাধ্যক্ষের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ নিয়ে কাজ চালাচ্ছে এসব উপ-কমিটি। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, এমন অনেক উপ-কমিটি রয়েছে যেগুলো দলীয় বাজেট থেকে কোনও বরাদ্দ এখনও নেয়নি।
আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বেশি ব্যয় হচ্ছে মঞ্চ ও সাজসজ্জায়। মঞ্চ ও সাজসজ্জার দায়িত্বে রয়েছেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে জমকালো আয়োজন করতে চাই আমরা। এখানে আলোকসজ্জা, মঞ্চ নির্মাণ, ঢাকার মূল সড়কে তোরণ নির্মাণ মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়েছে ইতোমধ্যেই। এই অর্থ দলের নেতারা দিয়েছেন। তবে দলীয় ফান্ড থেকে সামান্য কিছু টাকা আমরা নিয়েছি। তিনি বলেন, সপ্তাহজুড়ে পুরো ঢাকায় আলোক সজ্জার খরচই প্রায় তিন কোটি টাকা হয়েছে। নৌকা প্রতীকের আদলে একটি মঞ্চ নির্মাণ করা হয়েছে। যেটা স্মরণকালের সবচেয়ে সুন্দর ও আকর্ষণীয় মঞ্চ হবে। এছাড়া সম্মেলনস্থলে আসন বিন্যাসেও আমাদের বড় একটি ব্যয় যাচ্ছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ২৫টি এলইডি মনিটর চলবে ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। তিনি বলেন, প্রায় কয়েক কোটি টাকা মঞ্চ ও সাজসজ্জায় ব্যয় হচ্ছে।
এ বিষয়ে সাজসজ্জা উপ-কমিটির সদস্য সচিব মির্জা আজম বলেন, খরচের পরিমাণ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না। তিনি বলেন, শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে এয়ারপোর্ট, মানিক মিয়া এভিনিউ পর্যন্ত আমাদের কমিটি আলোকসজ্জা করেছে। ঢাকা শহরের বাকি জায়গাগুলো বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা করছেন। মঞ্চ নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছেন চারুকলার ছাত্র ফরিদউদ্দিন। তিনি বলেন, মঞ্চ সুন্দর ও আকর্ষণীয় করার দায়িত্ব পালন করছি শুধু। ব্যয় সম্পর্কে কোনও তথ্য আমার কাছে নেই।
সম্মেলনে পর্যবেক্ষণে বিদেশি প্রায় ৫৫ জন অতিথি বাংলাদেশে আসছেন। এদের সবাই সোনারগাঁও হোটেলে দুই রাত যাপন করবেন। অভ্যর্থনা উপ-কমিটির এক সদস্য জানান, সোনারগাঁও হোটেলে বেশ কিছু রুম তাদের জন্যে ইতিমধ্যে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে। তাছাড়া তাদের আতিথেয়তা বাবদ মোটা অংকের অর্থ ব্যয় হচ্ছে। তিনি বলেন, দলীয় ফান্ড থেকে আমাদের ত্রিশ লাখ টাকার মতো দেয়ার কথা রয়েছে। বাকি ব্যয় দলের যারা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী রয়েছেন তারা এবং দুইজন মন্ত্রী করছেন। তাদের নাম জানতে চাইলে বলতে রাজি হননি ওই নেতা। এ প্রসঙ্গে অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাসিম বলেন, খরচের পরিমাণ এখন নিশ্চিত করে বলা যাবে না। আগে অনুষ্ঠান সম্পন্ন করি। তারপর বসে হিসাব করবো কতো খরচ করেছি।
প্রচার ও প্রকাশনার জন্যে দলীয় ফান্ড থেকে ৪০ লাখ টাকার মতো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অথচ সূত্রে জানা গেছে, এক্ষেত্রে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দুই কোটি টাকা। প্রচার ও প্রকাশনা কমিটির দায়িত্বে থাকা একজন নেতা বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় আমাদের ক্রোড়পত্র যাবে। বেসরকারি টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন চিত্র প্রচার হবে। এছাড়াও প্রত্যেক অতিথি ও কাউন্সিলরের জন্য তৈরি করা ব্যাগে থাকছে বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াওয়ের একটি ভিডিও সিডি, আওয়ামী লীগের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- নিয়ে একটি ডিভিডি, একটি পানির বোতল, কলম, একটি মাথার ক্যাপ ও দুটি করে চকলেট। এসব বাবদ খরচ যাচ্ছে মোটা অংকের টাকা। তাছাড়াও ছাপাখানার কাজে যাচ্ছে ৪০/৫০ লাখ টাকা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতির বক্তব্য, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট, একটি স্মরণিকা ও সারাদেশে বিভিন্ন জায়গায় কিছু পোস্টার করতে হচ্ছে ছাপাখানায়। এগুলোর ব্যয় ৫০ লাখ টাকা হবে। আর অন্য ব্যয়গুলোর খরচ যোগান দিয়েছেন দলের নেতারা। ওই নেতা বলেন, যেমন ব্যাগ ও মাথার ক্যাপের যে খরচ গিয়েছে তা সম্পূর্ণ দিয়েছেন পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম। ডিভিডির খরচ দিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, বাড়তি যে খরচ যাচ্ছে তা আমরা দলের প্রতিষ্ঠিত নেতাদের কাছ থেকে নিচ্ছি।
ব্যয়ের আর একটি বড় খাত খাদ্য। এ উপ-কমিটির আহ্বায়ক ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সদস্য সচিব খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
জানা গেছে, দুই দিনব্যাপী সম্মেলনে সর্বমোট পঞ্চাশ হাজার প্যাকেট খাবারের ব্যবস্থা করেছে এই উপ-কমিটি। প্রথম দিন দুপুরে ৩৫ হাজার লোকের জন্য খাবারের আয়োজন রয়েছে। মেন্যুতে রয়েছেÑ মোরগ-পোলাও, ফিরনি, সফট ড্রিঙ্কস, পানি (বোতলজাত) এবং পান ও জর্দ্দা। ওই দিন রাত্রে সাড়ে সাত হাজার লোকের জন্যে কাচ্চি বিরিয়ানি ও পরের দিন দুপুরের জন্যে আরও সাড়ে সাত হাজার কাচ্চি বিরিয়ানির আয়োজন রয়েছে। প্রতি বেলার প্যাকেটের মূল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৪শ’ টাকা। এতে মোট ব্যয় হচ্ছে ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।
জানা গেছে, এ তিন বেলায় সর্বমোট ৫০ হাজার প্যাকেটজাত খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তিনটি ক্যাটারিং কোম্পানিকে। এ ৩টি কোম্পানি হলোÑ সোনারগাঁও ক্যাটারিং, ইকবাল ক্যাটারিং ও পি আর সর্দার ক্যাটারিং।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।