Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দূরপাল্লার বাসেও যন্ত্রণা

নজরদারি নেই, সব রুটে নেয়া হয় বেশি ভাড়া

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

জ্বালানি তেলের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমলেও কমেনি দেশের বাজারে। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর থেকেই শুরু হয় পরিবহন ভাড়া নিয়ে অস্থিরতা। বেড়ে যায় সব ধননের পরিবহন ভাড়া। শুরু হয় আন্দোলন, প্রতিবাদের ঝড় উঠে রাজপথে। এতো কিছুর পরও ভাড়া কমানোর কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে, সেই অযুহাতে পরিবহন মালিকরাও গাড়িচালানো বন্ধ রেখে প্রথমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেন। ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা।

সরকার ঘোষিত বাড়তি ভাড়ার চেয়ে পরিবহনে আরও বেশি ভাড়া আদায় নিয়ে যাত্রী-শ্রমিকদের মধ্যে চলছে বাক-বিতণ্ডা, হাতাহাতি। শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়েও চলছে আন্দোলন। এদিকে ডিজেলের দাম ও ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগে রাতারাতি রাজধানীর সব গণপরিবহন ডিজেল চালিত পরিবহনে পরিণত হয়েছে। রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে চাপা পড়ে যায় দূরপাল্লার পরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি। এ বিষয়ে নেই কোন নজরদারি।

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পর দূরপাল্লার গাড়িগুলোতে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ টাকা ৮০ পয়সা। ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার দূরত্ব এবং পরিবহনগুলোর বর্ধিত ভাড়ার হিসাব মিলিয়ে দেখা যায়, সেখানে যাত্রীদের পকেট থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ৩৯৫ কিমি ১ টাকা ৮০ পয়সা প্রতি কিমি হিসাবে ভাড়া হওয়ার কথা ৭১১ টাকা। কিন্তু নন-এসি সাধারণ গাড়িগুলোতে নেয়া হচ্ছে ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ির দূরত্ব ২৭২ কিমি, ভাড়া হওয়ার কথা ৪৮৯ টাকা ৬০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৬২০ টাকা। অতিরিক্ত নিচ্ছে ১৩০ টাকা ৪০ পয়সা। ঢাকা থেকে বান্দরবানের দূরত্ব ৩২৩ কিমি ভাড়া হওয়ার কথা ৫৮১.৪০ টাকা কিন্তু নেয়া হয় নন-এসি গাড়িতে ৭৮০ টাকা। অতিরিক্ত নিচ্ছে ১৯৮.৬০ টাকা। ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির দূরত্ব ৩০৫ কিমি ভাড়া হওয়ার কথা ৫৪৯ টাকা কিন্তু নেয়া হয় নন-এসি গাড়িতে ৭৮০ টাকা। ঢাকা থেকে সিলেটের দূরত্ব ২৪২ কিমি ভাড়া হওয়ার কথা ৪৩৫ টাকা ৬০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৫৭০ টাকা। অতিরিক্ত নিচ্ছে ১৩৪ টাকা ৪০ পয়সা। ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে রাজশাহীর দূরত্ব ২৪৩ কিমি, ভাড়া হওয়ার কথা ৪৩৭ টাকা ৪০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৬০০ টাকা। অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে ১৬২ টাকা ৬০ পয়সা। ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে খুলনার দূরত্ব ২২২ কিমি, ভাড়া হওয়ার কথা ৩৯৯ টাকা ৬০ পয়সা। নেয়া হচ্ছে ৬৫০ টাকা। অতিরিক্ত নেয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা ৪০ পয়সা। এভাবেই রাজধানী থেকে জেলাগুলোতে চলাচলকারী সকল যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী পরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

যাত্রীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অযুহাতে বাস ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এই ভাড়া বৃদ্ধি শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ নয়। দূরপাল্লার বাসে ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ নেয়ার অভিযোগ। যাত্রীদের মাঝে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চাইতেও বেশি নেয়ার অভিযোগ তাদের। বাড়তি ভাড়া ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। অনেকের আর্থিক সামর্থ্যেও পড়েছে টান। ভুক্তভোগীরা জানান, জনগণের বিষয়টি দেখা হয়নি। তাদের সুবিধাটাই দেখা হচ্ছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ভাড়া বাড়াটা খুবই অসুবিধার।
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি হয়ে লংগদুগামী যাত্রী সৈয়দ ইবনে রহমত বলেন, জ্বালানির দাম বাড়াতে সরকার জনগণের কোন মতামতের প্রয়োজনকে গুরুত্ব দেয়নি। এখানে আমাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা বাদ দিয়েই নির্ধারিত হলো নতুন ভাড়া। ঠিক করা হলো দূরপাল্লার বাসে নতুন ভাড়া হবে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা। কিন্তু সেই ভাড়াও সঠিকভাবে নেয়া হয় না। বাড়তি ভাড়া নেয়া হয় বাস মালিক ও চাল দের ইচ্ছামতো।
শ্যামলী পরিবহনের আরামবাগ কাউন্টারের এক্সিকিউটিভ অর্পূব জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর দূরপাল্লার সকল বাসের ভাড়া বেড়েছে। সে হিসেবেই তাদের পরিবহনের বিভিন্ন রুটে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। স্থান ভেদে দূরপাল্লার রুটে ১০০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর আন্তর্জাতিক ঢাকা-কলকাতা রুটেও ভাড়া আগের চেয়ে ২০০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার একচেটিয়া নীতি অবলম্বন করে ভাড়া বৃদ্ধি করেছে। পরিবহন মালিকরাও একচেটিয়া নীতিতেই আছেন। কেউ সাধারণ যাত্রীদের কথা বিবেচনা করেননি। দূরপাল্লার পরিবহনগুলোতে স্বল্প দূরত্বের জন্য বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। দূরপাল্লার রুটে কিলোমিটার চুরি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের ভাড়া হওয়ার কথা ৫০০ টাকা কিন্তু নেয়া হচ্ছে অনেক বেশি। চট্টগ্রামে ৩৭ কিমি দূরত্বে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৩০ টাকা। কিন্তু স্বাভাবিক ভাড়া হওয়া উচিত ৭০ টাকা। আর যারা ভাড়া নির্ধারণ করবেন নিয়ন্ত্রণ করবেন তারাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দূরপাল্লার বাসেও যন্ত্রণা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ