পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ভূমি নিবন্ধন আইনে ভূমি খাতের জটিলতা বাড়াচ্ছে। একজনের জমি বিক্রি করে দিচ্ছে অন্যজন। ভুয়া মালিক সাজিয়ে আম-মোক্তারনামার মাধ্যমে সৃজন করা হচ্ছে ভুয়া দলিল। রাজস্ব ফাঁকি দিতে নিবন্ধনে ছল-চাতুরির আশ্রয় নিচ্ছেন খোদ নিবন্ধন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই। এর ফলে একদিকে যেমন দেওয়ানি মামলার হার বাড়ছে-তেমনি সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব।
নিবন্ধন অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জমিজমা সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, ভূমি হস্তান্তরে স্বচ্ছতা আনয়ন, জালিয়াতি রোধ এবং ভূমি ব্যবস্থাপনা সহজিকরণের লক্ষ্যে সরকার ২০০৪ সালে ভূমি রেজিস্ট্রেশন (সংশোধন) আইন-২০০৪ কার্যকর করে। এ আইন তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীদের মহলের প্রশংসা কুড়ায়। কিন্তু কিছুদিন যেতেই আইনটিতে ধরা পড়ে বহু অসঙ্গতি। নতুন নতুন ক্ষেত্র আবিষ্কৃত হয় জালিয়াতি ও রাজস্ব ফাঁকির।
ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সহজিকরণ করা হলেও ভূমি রেজিস্ট্রেশন আরো জটিল হয়ে পড়ে। বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো পুরনো নিয়মে পরিচালিত হওয়ায় হস্তান্তরযোগ্য ভূমির শেষ ২৫ বছরের ইতিহাস, এসএ পর্চা, আরএস পর্চা এবং নাম জারির ক্ষেত্রে আগের জটিলতাই রয়ে গেছে। বরং ভূমি হস্তান্তর প্রক্রিয়ার অর্ধেক অংশ (রেজিস্ট্রেশন) নতুন নিয়মে অর্ধেক সনাতন (নাম জারি, এসএ পর্চা, আরএস পর্চা) নিয়মে করতে হয় বিধায় মানুষ এখনও নতুন রেজিস্ট্রেশন আইনের পূর্ণ সুফল পাচ্ছে না। তাছাড়া নতুন নিয়মে রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া কিছুটা দুর্নীতি মুক্ত হলেও তহসিল অফিস ও ভূমি অফিসগুলো এখনও দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত।
তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে আসা আজিজুল হক নামের ভুক্তভোগী জানান, তার জমির ২৫ বছরের ইতিহাসের এক পর্যায়ে একজন সংখ্যালঘুর নাম চলে আসে। এজন্য তাকে অতিরিক্ত অর্থ দিতে হয়েছে। ভূমি অফিস এবং এসি (ল্যান্ড) কে নতুন রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতির আওতায় না আনায় জমির অনেক প্রকৃত মালিকও জমি হস্তান্তর করতে পারছেন না। আর এসব জটিলতার কারণেই আইন থাকা সত্তে¡ও জালিয়াতি কমেনি।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমান আইনে রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে দাতা-গ্রহিতার ছবি সংযুক্তকরণ বাধ্যতামূলক করা হলেও এর মাধ্যমে জালিয়াতি রোধ করা যাচ্ছে না। ভুয়া ব্যক্তিকে জমির মালিক বানিয়ে বিক্রয় নিবন্ধন চলছে। এ ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশনকালে ভুয়া ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করা হলেও পরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মচারীদের যোগসাজশে জমির প্রকৃত মালিকের ছবি সংগ্রহ করে গোপনে যুক্ত করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে জমির প্রকৃত মালিকের অজ্ঞাতেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে তার জমি। প্রকৃত মালিক জমি ফেরত পাওয়ার জন্য অবলম্বন করতে হচ্ছে মামলা-মোকদ্দমার দীর্ঘ পথ। জমি নিবন্ধনে জালিয়াতি রোধ করা না গেলে দেওয়ানি মামলার হার বাড়তেই থাকবে বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীরা।
নিবন্ধনে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছেন নিবন্ধনকারী সাব-রেজিস্ট্রার স্বয়ং। মানিকগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে এরকম ঘটনা জালিয়াতির বড় এক দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, মানিকগঞ্জ পালপাড়া গ্রামের সফিউদ্দিনের স্ত্রী রহিমা খাতুন। তিনি ভাটভাউর মৌজার ৮১ শতাংশ জমির আমমোক্তার নামা দেন বান্দুটিয়ার মো. ওবায়দুল কবীর এবং পশ্চিম দাশড়ার মো. সালাহউদ্দিনকে। মানিকগঞ্জ সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে পৃথক দুটি দলিলে (নং-৪৪৭৯ ও ৪৪৮০) আমমোক্তারনামা দু’টি নিবন্ধিত হয়। কিন্তু পরের মাসে সিঙ্গাইর থানার জয়মন্ডপের আরেক মহিলাকে রহিমা খাতুন সাজিয়ে প্রকৃত রহিমা খাতুনের আমমোক্তারনামা বাতিল করা হয়। মানিকগঞ্জ সদরের সাব-রেজিস্ট্রার মহসিন মিয়া কমিশনে কথিত রহিমা খাতুনের বাসায় গিয়ে আমমোক্তারনামা বাতিল এবং স্বত্ব দখলীয় ভ‚মির মালিকানা ফিরিয়ে নেয়ার দলিলটি (নং-৫২৯৯ এবং ৫৩০০) নিবন্ধন করেন। পরে একই জমি ভুয়া রহিমা খাতুনকে দিয়ে ৭টি দলিলের (নং-৫৪৩৮ থেকে ৫৪৪৪ পর্যন্ত) মাধ্যমে বিভিন্নজনের কাছে বিক্রি ও দানপত্র নিবন্ধন করেন মহসিন মিয়া। জমির প্রকৃত মালিক রহিমা খাতুনের ছবি সরিয়ে ভুয়া রহিমা খাতুনের ছবি ব্যবহার করা হয় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে। গুরুতর এ জালিয়াতির ঘটনায় মানিকগঞ্জ সদরের তৎকালিন সাব-রেজিস্ট্রার মহসিন মিয়া, পিয়ন বিল্লাল হোসেন এবং অবসরপ্রাপ্ত টি.সি.মোহরার গুরুদাস পালের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ (ডিআর নং-৬৯২/) এনে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে প্রতিকার দাবি করেন রহিমা খাতুন।
নিবন্ধন পরিদপ্তর সূত্র জানায়, জাতীয় রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি খাত নিবন্ধন। দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যেই এ খাতের ১৩টি উপ-খাত থেকে সরকারে রাজস্ব প্রাপ্তি ক্রমে বেড়েই চলেছে। এক যুগে রাজস্ব আয় হয়েছে ৭৫ হাজার ৯৫৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকার বেশি। উপ-খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে, দলিল রেজিস্ট্রেশন ফি, রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের অনুলিপি ফি, অন্যান্য ফি, উৎসে কর, স্ট্যাম্প (নগদ, হলফ ও চালান), স্ট্যাম্প ডিউটি, দলিল লিখকদের লাইসেন্স/নবায়ন ফি, টেন্ডার ও অন্যান্য দলিলপত্র, নিকাহ রেজিস্ট্রার কর্তৃক জমাকৃত ফি, হস্তান্তর নোটিশ/কোর্ট ফি এবং স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর।
নিবন্ধন কর্মকর্তাদের দায়িত্ব আইনের আওতায় থেকে সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধিতে তৎপর থাকা। কিন্তু তা না করে নিজেরাই রাজস্ব ফাঁকির মহোৎসবে মেতে ওঠার অভিযোগ রয়েছে অনেক নিবন্ধন কর্মকর্তার বিরুদ্ধেই। নারায়ণগঞ্জ জেলাস্থ বৈদ্যের বাজার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সরকারি রাজস্ব ও স্ট্যাম্প মূল্য ফাঁকি দেয়ার অভিযোগে তৎকালিন সাব-রেজিস্ট্রার আবু তাহের মোহাম্মদ মোস্তার বিরুদ্ধে মামলার (স্মারক নং ০০.০১.৬৭০০.৬১৩.০১.০০২.২১.১২৭১) প্রস্তুতি নিচ্ছে দুদক। চলতিবছর ১০ জুন সাব- রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। এভাবে গত চার বছরে অন্তত ১৬ সাব- রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে দুদক পৃথক মামলা করে। এসব মামলার প্রধান অভিযোগই ছিলো, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে নিবন্ধন করার মধ্য দিয়ে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি)র প্রেসিডেন্ট অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, শুধুমাত্র আইনগত ব্যবস্থা নিলেই জমি সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হবে না। প্রয়োজন জমির নিবন্ধন এবং ভ‚মি ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন। ডিজিটালাইজ করা এখন সময়ের দাবি। এটি যেমন সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন জাল-জালিয়াতি, দুর্নীতি রোধ এবং মানুষের হয়রানি লাঘবে।
তিনি বলেন, বিচারাধীন মামলার অধিকাংশই জমি-জমা সংক্রান্ত মামলা। যেখান থেকে এসব মামলার উৎপত্তি সেই জায়গাটিতে ব্লক দিতে না পারলে দেওয়ানি মামলার ক্রম:বৃদ্ধি ঠেকানো যাবে না। এটি একটি জাতীয় সমস্যা। শুধু ভূমি সংক্রান্ত বিশাল বিশাল ভবন তৈরি করলেই হবে না। ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস, তহসিল অফিস, এসি (ল্যান্ড) অফিস, ভূমি জরিপ ও রেকর্ড সংরক্ষণকে আধুনিক পদ্ধতির আওতায় নিয়ে আসা। এটি করা গেলে ভূমি বিরোধ বহুলাংশে হ্রাস পাবে। আদালতের ওপর থেকে মামলার চাপও কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।