পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত বারবার
মৃদু কম্পন বড় ধরনের ভুমিকম্পের পূর্বাভাস
অতিমাত্রার ভ‚মিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। ভুতত্তাবিদদের মতে, বাংলাদেশের অভ্যন্তর ও চারপাশে বেশ কিছু আছে। একে ভুমিকম্পের উৎসস্থল বলা হয়। ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মিজ-ওই তিন গতিশীল সিসমিক গ্যাপের সংযোগস্থলে বাংলাদেশের অবস্থান। এর মধ্য ইন্ডিয়ান ও বার্মা সিসমিক গ্যাপ সংযোগস্থলে অবস্থিত সিলেট, যার উত্তরে ডাউকি ফল্ট। ওই সিসমিক গ্যাপ সক্রিয় থাকায় এবং পরস্পর পরস্পরের দিকে ধাবমান হওয়ায় এখানে প্রচুর শক্তি জমা হচ্ছে। এতে অতিউচ্চ মাত্রার ভুমিকম্পের ঝুঁকি বাড়ছে। ডাউকি ফল্ট এলাকায় শক্তি বৃদ্ধির ফলে বারবার মৃদু ভ‚কম্পনে কেঁপে উঠছে বাংলাদেশ। এ অবস্থাকে বিশেষজ্ঞরা বড় ধরনের ভুমিকম্পের পূর্বাভাস মনে করছেন।
গতকালও রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫.৮ মাত্রার ভ‚মিকম্প অনুভ‚ত হয়েছে। ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে এ ভ‚মিকম্প অনুভুত হয়। তবে ভ‚মিকম্পে দেশের কোথাও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে ভ‚মিকম্প অনুভুত হয়। এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮। মাঝারি মাত্রার এই ভুমিকম্পের কেন্দ্র ছিল ঢাকার আগারগাঁও ভ‚মিকম্প পরিমাপক কেন্দ্র থেকে ৩৪৭ কিলোমিটার পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ভারত-মিয়ানমার সীমান্তে। ভুমিকম্পের মাত্রা ও উৎপত্তিস্থল সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক সংস্থা ইউএসজিএসের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, বাংলাদেশ সময় ভোর ৫টা ৪৫ মিনিট ৪১ সেকেন্ডে ভুমিকম্পটি সৃষ্টি হয়। উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে এর মাত্রা ছিল ৬.১। চট্টগ্রাম থেকে উৎসস্থলের দূরত্ব ১৭৪ কিলোমিটার। ভ‚মিকম্পে কক্সবাজার, সিলেট, কুড়িগ্রামের মতো জায়গাও কেঁপে উঠেছে।
ভুতত্তাবিদ ও সিসমোলজিস্টদের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে যেকোনো সময় বড় মাত্রার ভুমিকম্প সংঘটিত হতে পারে। মূলত ডাউকি ফল্ট ও সিলেট থেকে চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে গত ৫০০ থেকে ১ হাজার বছরে বড় ধরনের কোনো ভুমিকম্পের উৎপত্তি না হওয়ায় সাম্প্রতিক ভুমিকম্পগুলোকে বড় ধরনের ভুমিকম্পের পূর্বাভাস বিবেচনা করা হচ্ছে। এ জন্য কাঠামোগত এবং অকাঠামোগত প্রস্তুতি এখনই বাড়ানো দরকার। পূর্ব প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে ভুমিকম্প দুর্যোগের ঝুঁকি বহুলাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ৮ মাত্রার ভুমিকম্প হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। আর ওই মাত্রার ভুমিকম্প হলে ঢাকা শহরে প্রায় ১ থেকে ২ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটবে। এমন পরিস্থিতিতে জরুরিভিত্তিতে ভবনগুলোর ভুমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পাশাপাশি ভুমিকম্পের কারণে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি ও ঝুঁকি কমাতে সচেতনতা মহড়া বাড়ানোর ওপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রকৌশলীদের মতে, দেশে ৭ মাত্রার বেশি ভ‚মিকম্প হলে ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন জায়গার স্ট্রাকচার নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ বেশিরভাগ স্ট্রাকচার ৭ মাত্রার বেশি ভ‚মিকম্পের প্রেসার নিতে পারবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্থ অবজারভেটরির পরিচালক ও ভ‚তত্ত¡বিদ অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, হবিগঞ্জ অঞ্চলে ১৯২২ সালে ৭.৬ মাত্রার ভ‚মিকম্প হয়েছিল। ১৯১৮ সালেও ৭.৫ মাত্রার হয়েছিল। ৪ বছরের ব্যবধানে বড় ভ‚কম্পন ছিল শত বছর আগে। গত দুই মাস আগে ডাউকি ফল্টের উত্তরপ্রান্তে আসাম সীমান্তে ৬ মাত্রার ভুমিকম্প হয়। তার মানে ডাউকি ফল্ট খুব সক্রিয়। ডাউকি ফল্ট ও টেকনাফ সাবডাকশন জোনে হাজার বছর ধরে যে পরিমাণ শক্তি ক্রমান্বয়ে সঞ্চয় হয়ে আসছে, তাতে ৮ মাত্রার অধিক ভ‚কম্পন হতে পারে। এ শক্তি একবারেও বের হতে পারে; আবার আংশিকও বের হতে পারে। সেজন্য দেশবাসী ঝুঁকি মুখেও রয়েছে। এ কারণে মানসিক প্রস্তুতি দরকার। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে মহড়া ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, শুধু উচ্চমাত্রারই নয়, মাঝারি ভুমিকম্পনও এদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এদেশের ভবনগুলো দুর্বল এবং ভুমিকম্প সহনশীল নয়। ভ‚মিকম্পের ঝুঁকি হ্রাস করতে প্রথম কাজই হবে ভুমিকম্পে ঝুঁকি কেন তার একটি মানচিত্র তৈরি করা। বিশেষ করে শহর এলাকার কোন জায়গার মাটি দুর্বল, কোন জায়গার শক্তিশালী তা বিবেচনায় নিয়ে অবকাঠামো নির্মাণ করতে হবে। কিন্তু প্রাইভেট যে বাড়িঘর হয়ে গেছে সেগুলো তো পরিবর্তন করা এত সহজ নয়। ব্যক্তির ওপর এটা নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে প্রথম কাজ হলো নগরবাসীকে সচেতন করা।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মাঝারি থেকে প্রবল ধরনের ভুমিকম্পে কেঁপে উঠেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। গতকাল ভোর পৌনে ৬টায় এ ভ‚মিকম্প সংঘটিত হয়। কয়েক সেকেন্ড ধরে স্থায়ী এ ভুমিকম্প চলাকালীন ঘরবাড়ি এবং আসবাবপত্র, দরজা-জানালা শব্দ সহকারে কেঁপে উঠে। পুকুর জলাশয়ে প্রবল ঢেউ ওঠে। তখন অনেকেই আতঙ্কিত হয়ে বাড়িঘরের বাইরে খোলা জায়গায়, আঙিনায় কিংবা বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। ধর্মপ্রাণ মানুষ আল্লাহর রহমত কামনায় জোরে জোরে দোয়া, দরুদ পাঠ করেন।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আলাওল হলের দ্বিতীয় তলা থেকে আতঙ্কে লাফিয়ে পড়ে একছাত্র আহত হয়েছেন। ২০২ নম্বর কক্ষে থাকা রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হোসাইন আহমেদকে চবি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, মিয়ানমার-ভারত সীমান্তে সৃষ্ট ভুমিকম্প সারা দেশের মতো খুলনায়ও অনুভ‚ত হয়েছে। গতকাল সকাল পৌনে ৬টার দিকে হঠাৎ কম্পন অনুভ‚ত হয়। এসময় সাধারণ মানুষের মাঝে কিছুটা আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে ছুটির দিনের সকাল হওয়ায় অনেকেই ঘুমিয়ে থাকায় কম্পন টের পাননি।
সাতক্ষীরা জেলা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় ভ‚মিকম্প অনুভ‚ত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আমিনুর রশিদ, শহিদুল ইসলামসহ অনেকেই জানান, খুব সকালে ভুমিকম্পে ঘুম ভেঙে যায়। বাড়ি ঘর নড়াচড়া শুরু করে। আলমারি ও টেবিলের উপর রাখা জিনিসপত্র নিচে পড়তে থাকে। এসময় ভয়ে বাড়ি ছেড়ে বাইরে চলে আসি। সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী জানান, সকাল ৫টা ৪৫ মিনিটের ভুমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৮। ভ‚মিকম্পটি মূলত চট্টগামের দিক থেকে এসেছে। তবে, কয়েক সেকেন্ডের ভুমিকম্পে জেলার কোথাও কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।