পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রফিকুল ইসলাম সেলিম : ভুতুড়ে আর ভুয়া বিলে অতিষ্ঠ চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ গ্রাহকেরা। মিটার রিডিং না দেখেই অফিসে বসে বিল তৈরি করছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবির কর্মীরা। এতে করে অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ভুতুড়ে বিলে অতিষ্ঠ গ্রাহকরা পিডিবি অফিসে ধরনা দিয়েও কোন কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। এতে করে গ্রাহকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
বিগত ৭ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে সরকারি তরফে এমন দাবি করা হলেও বাস্তব চিত্র উল্টো। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে এখনও চলছে অসহনীয় লোডশেডিং। সঞ্চালন ব্যবস্থা ত্রুটির কারণে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ এবং বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। একদিকে বিদ্যুতের ভোগান্তি অন্যদিকে ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।
এ অবস্থায় আগামী মাস থেকে চট্টগ্রামে শুরু হচ্ছে বিদ্যুতের প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ। নগরীর আগ্রাবাদ, খুলশী, স্টেডিয়াম ও পাহাড়তলী এই চার ডিভিশনে বসবে মোট এক লাখ ৩৯ হাজার মিটার। পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, পর্যায়ক্রমে মহানগরীর ৯ লাখ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হবে। আর তখন ভুতুড়ে বিল থেকে নগরবাসী রক্ষা পাবে।
দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও আশপাশের এলাকায় বিদ্যুতের মোট চাহিদা এক হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়ে গেছে। এ অঞ্চলের সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে প্রায় সমানসংখ্যক বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যাওয়ার পর চট্টগ্রামের জন্য যা বরাদ্দ হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আর এ কারণে এ অঞ্চলে লোডশেডিং করা হচ্ছে। পিডিবির কর্মকর্তারা বর্তমানে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ ৫০ থেকে ১০০ মেগাওয়াটের মধ্যে সীমিত রয়েছে দাবি করলেও বাস্তবে লোডশেডিং আরও বেশি।
লোডশেডিংয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রুটি। অতিরিক্ত লোড নিতে না পেরে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিনিয়ত ট্রান্সফরমার বিকল হচ্ছে। একবার কোন এলাকায় ট্রান্সফরমার বিকল হলে তা সারিয়ে তুলতে সময় লাগছে কয়েক দিন। এতে করে এসব এলাকার গ্রাহকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কোথাও বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেলে তা লাগাতে সময় লেগে যাচ্ছে কয়েক ঘণ্টা। মহানগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা জুবিলী রোডে প্রায় প্রতিদিনই সকাল এবং বিকেলে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, অতিরিক্ত লোড নিতে না পেরে ট্রান্সফরমার ক্ষণে ক্ষণে ট্রিপ করছে। এতে করে এলাকা গ্রাহকেরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। একই অবস্থা নগরীর আগ্রাবাদ এলাকায়ও। গ্রাহকরা বলছেন, ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা বিকল হয়ে পড়ায় দিনে কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকছে। এতে করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ছোটখাটো কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
বিদ্যুতের এ লুকোচুরির কারণে মহানগরী ও এর আশপাশের এলাকার গ্রাহকেরা রীতিমত ক্ষুব্ধ। একদিকে বিদ্যুতের লুকোচুরি তার উপর চলছে ভুতুড়ে বিল দেয়া। গ্রাহকদের অভিযোগ মিটার রিডাররা ইচ্ছেমতো বিল তৈরি করে দিচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা গ্রাহকদের পকেট কাটছে। নগরীর হালিশহরে একটি ভাড়া বাসায় থাকেন ব্যবসায়ী কাজিমুর রহমান। আগস্ট মাসে তার বিদ্যুৎ বিল এসেছে ৫০০ টাকা। নিয়মিত এ রকমই বিল দেয়া হয় তাকে। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে এক লাফে বিদ্যুৎ বিল দেয়া হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। তিনি অভিযোগ করেন, মিটার না দেখে ভুয়া বিল ছাপিয়ে দেয়া হয়েছে তার উপর।
আগ্রাবাদ বেপারী পাড়ার বাসিন্দা আনোয়ার হোসেনের বাসায় নিয়মিত বিল আসে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে এক লাফে তা দ্বিগুণ করে ২৩০০ টাকা করা হয়। পিডিবি অফিসে গিয়ে বারবার ধরনা দিয়েও তারা এর প্রতিকার পাননি। আবাসিক গ্রাহকদের পাশাপাশি বাণিজ্যিক গ্রাহকদেরও ভুতুড়ে বিল দেয়া হচ্ছে।
অতিরিক্ত বিল দেয়ায় গ্রাহকরা পিডিবি অফিসে গিয়ে অভিযোগ করছেন। সেখানে গ্রাহকদের সাথে প্রায় বাদানুবাদ হচ্ছে কর্মকর্তাদের। তবে এর কোন সমাধান মিলছে না। পিডিবির কর্মকর্তারা বলেন, কোন এক মাসে অতিরিক্ত বিল দেয়া হলে পরের মাসে তা সমন্বয় করা হচ্ছে। গ্রাহকের তুলনায় মিটার রিডারের সংখ্যা কম হওয়ায় এমন সমস্যা হচ্ছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
অতিরিক্ত এবং ভুতুড়ে বিল দেয়ার ঘটনা চলছে দীর্ঘদিন থেকে। অতিরিক্ত বিল, মিটারের রিডিং না দেখে বিল দেয়াসহ নানা অভিযোগ বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে বেশ পুরনো। নানা উদ্যোগেও মিলেনি মুক্তি। তবে, চট্টগ্রামের গ্রাহকদের ভুতুড়ে বিলের অভিশাপ থেকে মুক্তি দিতে অবশেষে শুরু হচ্ছে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ।
পিডিবির কর্মকর্তারা বলছেন, প্রিপেইড মিটার চালু হলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে পিডিবি। আগামী মাস থেকে নগরীতে প্রিপেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু হচ্ছে। এরই মধ্যে চীন থেকে এসে পৌঁছেছে পাঁচ হাজার দুইশো মিটারের প্রথম চালান। চলমান আছে আরো দেড় লাখ প্রিপেইড মিটার আনার প্রক্রিয়া।
প্রিপেমেন্ট মিটারিং প্রজেক্ট প্রকল্পের আওতায় বন্দর নগরীতে বসানো হচ্ছে এক লাখ ৩৯ হাজার মিটার। এরই মধ্যে চীন থেকে প্রথম চালানে এসেছে পাঁচ হাজার দুইশো মিটার। আর তা স্থাপনে কারিগরি সহায়তা দিতে সংশ্লিষ্ট পিডিবি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে দেশটির একটি প্রতিনিধি দল। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের আশা, বাকি, এক লাখ ৩৬ হাজার মিটারের সবগুলোও আসবে শিগগিরই।
পিডিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নগরীর আগ্রাবাদ, খুলশী, পাহাড়তলী, স্টেডিয়াম এই চার ডিভিশনে বসবে এসব মিটার। এতে করে, বাড়তি বিলের বোঝা দূর হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা বাড়বে বলেও আশা এ কর্মকর্তার। চট্টগ্রাম অঞ্চলে বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় আট লাখ। পর্যায়ক্রমে এই সব গ্রাহককেই প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার কথা বলছে পিডিবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।