Inqilab Logo

শনিবার ০২ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ২৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেকে গোলযোগে নিক্ষিপ্ত হতে চলেছে ইথিওপিয়া

প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ৫ অক্টোবর ইথিওপিয়া সরকার রাজধানী আদ্দিস আবাবা থেকে লোহিত সাগর তীরবর্তী জিবুতিকে সংযোগকারী ৩শ’ ৪০ কোটি ডলার ব্যয়সাপেক্ষ নতুন রেললাইন স্থাপনের কথা ঘোষণা করে। এটা হতে যাচ্ছিল চীনা সমর্থনে জনগণের বিপুল অর্থব্যয়ে সরকারের উচ্চাভিলাষী উন্নয়ন ও অবকাঠামো কৌশলের এক চমক লাগানো বিজ্ঞাপন। কিন্তু তার পরিবর্তে বিদেশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা দেশটিতে নিজেদের এক কোণঠাসা অবস্থায় অবস্থায় দেখতে পাচ্ছেন।
মাত্র তিন দিন আগে ২ অক্টোবর রাজধানীর ৪০ কি মি দক্ষিণপূর্বে বাইশোফটু শহরে এক ধর্মীয় উৎসবে পদপিষ্ট হয়ে ৫২ জনের মৃত্যু ঘটে। এর প্রতিবাদে শুরু হয় গণবিক্ষোভ। বিরোধী নেতারা এ ট্রাজেডির জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়ী করেন। তারা সরকারবিরোধী বিক্ষোভের সময় দায়িত্ব পালনকারী পুলিশদের সাথে যোগ দিয়েছিল। কেউ কেউ একে গণহত্যা বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাদের মতে সরকার যা বলছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।  এ ঘটনায় দেশ জুড়ে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে।
বাইশোফটু ঘটনার এক সপ্তাহ পর ক্ষমতাসীন ইথিওপিয়ান পিপলস রেভ্যুলুশনারি ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইপিআরডিএফ) ৬ মাসের জরুরি অবস্থা জারির কথা ঘোষণা করেছে। ১৯৯১ সালে বিপ্লবী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই প্রথম জরুরি অবস্থা জারির ঘটনা। এর কারণ স্পষ্ট নয়। বেশ কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে পুলিশ ও সশস্ত্র গু-াদের মধ্যে সহিংস সংঘর্ষ, বিদেশি মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর উপর সশস্ত্র হামলা ঘটে চললেও গত সপ্তাহান্তে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। ৪ অক্টোবর রাজধানীর বাইরে ভ্রমণের সময় এক আমেরিকান মহিলা নিহত হন। বিক্ষোভকারীরা রাজধানী থেকে আসা ও যাওয়ার কয়েকটি পথ বন্ধ করে দিয়েছে।
সরকারের জরুরি অবস্থা জারির পেছনের একটি কারণ হতে পারে ৫ অক্টোবর লেক লানগানোর অবকাশ কুটিরগুলোতে ও  সেবেতায় তুরস্কের বস্ত্র কারখানাগুলোতে হামলা। উভয়ই রাজধানীর দক্ষিণে অশান্ত ওরোমিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। হামলাকারীরা ছিল সুসংগঠিত ও সশস্ত্র, তাদের কয়েকজন মোটর সাইকেলে করে এসেছিল। কর্মকর্তাদের মতে, এ কাজগুলোই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণের চূড়ান্ত কারণ।
সরকার দেশ থেকে বিনিয়োগ সরে যাওয়ার আশঙ্কায় ভুগছে। সম্প্রতি একটি আমেরিকান মালিকানাধীন ফুল খামার ইথিওপিয়া ছেড়েছে। অন্যরাও সে পথ অনুসরণ করতে পারে বলে সরকার শংকিত। প্রায় এক সপ্তাহের নীরবতার পর জরুরি অবস্থা জারি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের পুনরাশ^স্ত করার বিলম্বিত চেষ্টা যারা এ যাবত ইথিওপিয়ার অর্থনীতির দ্রুত উন্নতির ব্যাপারে আশাবাদ পোষণ করছিলেন।
এখন এক ধরনের শান্তি বিরাজ করছে। ১০ অক্টোবর ইথিওপিয়ার পার্লামেন্টে জরুরি অবস্থার বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। সেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে তা অনুমোদন করা হবে। এ বিলে গ্রেফতারের ব্যাপক ক্ষমতা প্রদান এবং মুক্ত সমাবেশ ও মত প্রকাশের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হাইলেমারিয়াম ডেসালেগন কূটনীতিকদের সম্মুখীন হতে যথেষ্ট আত্মবিশ^াসী। পরের দিন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল এ অঞ্চলের উদ্বাস্তু প্রবাহের ব্যাপারে আলোচনার জন্য রাজধানীতে পৌঁছেন। বিক্ষোভ দমন করতে সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছিল। আবার তা কিছু পরিমাণে চালু হয়েছে। আদ্দিস আবাবার ব্যস্ততা আবার ফিরে এসেছে। তবে আমহারা অঞ্চলের বাহির দার শহরের মত শহরগুলোতে এক অস্বস্তিকর শান্ত অবস্থা বিরাজ করছে যেগুলোতে ধর্মঘটের কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরে রাস্তাগুলো জনশূন্য ছিল। আদ্দিস আবাবায় জনগণের মনোভাব এ রকম, গৃহযুদ্ধের চেয়ে স্বৈরতন্ত্র ভালো।
তারপরও ইথিওপিয়ার ভবিষ্যৎ সমস্যাসংকুল। গত নভেম্বর থেকে ৫শ’রও বেশি লোক নিহত এবং বহু হাজার মানুষ গ্রেফতার হয়েছে। এক বছর আগে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে ওরমো জনগণের সমাবেশের ঘটনা ঘটেছিল। ওরমোরা ইথিওপিয়ার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। তারা তাদের কৃষিজমিতে রাজধানী আদ্সি আবাবার বিস্তৃতি ঘটানোর বিরোধী যা প্রতিবাদের রূপ নিয়েছে। এটা এখন ইপিআরডিএফ-র কর্তত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিদ্রোহের রূপ গ্রহণ করেছে।
ইথিওপিয়ার তরুণ সমাজ হতাশাগ্রস্ত। তারা উপলব্ধি করছে যে সরকার রাজনৈতিক আনুগত্যের বিনিময়ে যে ব্যাপক সমৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছিল তা বাস্তবায়িত হয়নি। বিদেশি সাহায্য, চীনা অর্থসাহায্যে সরকারি ব্যয় এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে ২০১৫ সালে ইথিওপিয়া ছিল আফ্রিকার দ্রুততম প্রবৃদ্ধির অর্থনীতি। ব্যাপকভিত্তিক কৃষিনির্ভর একটি দেশের জন্য এ ছিল উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তবে দেশে শিক্ষিত জনসংখ্যা প্রত্যাশার চেয়েও দ্রুত বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটা সত্ত্বেও ইথিওপিয়ার প্রতি তিনজনের একজন, যাদের মোট সংখ্যা এক কোটি হবে, দৈনিক ১.৯০ ডলারেরও কম আয়ের উপর নির্ভরশীল।
ওরোমোরা একাই শুধু দুর্দশাগ্রস্ত নয়। বহু লোককেই বাণিজ্যিক খামার ও কারখানা নির্মাণের জন্য তাদের জমি থেকে বিতাড়িত করা হয়েছে। ইথিওপিয়ার ঐতিহাসিকভাবে  প্রাধান্য বিস্তারকারী জনগোষ্ঠী আমহারানরা শাসক দল ইপিআর ডিএফের নেতৃত্বে দেশের জনসংখ্যার এক ক্ষুদ্র অংশ (৬ শতাংশ মাত্র) টাইগ্রেয়ানদের প্রাধান্যের কারণে অসন্তুষ্ট। আদ্দিস আবাবার অধিবাসীদের তুলনামূলক নিশ্চলতা এ অসন্তোষ আরো বৃদ্ধি করেছে। দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্রুদ্ধ কৃষকরা রাজধানী অভিমুখে জিনিসপত্র চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। বিরোধীরা বন্দিদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানাচ্ছে, কিন্তু সরকার তাতে কান দিতে অনাগ্রহী। তবে ১০ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এক ধরনের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব চালুর অঙ্গীকার করেছেন যা কার্যকর হলে সকল দলের মধ্যে ক্ষতা ভাগাভাগি হতে পারে।
ইপিআরডিএফ এর আগেও ঝড় মোকাবেলা করেছে। ২০০৫ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর প্রতিবাদ বিক্ষোভে ১৯৩ জন নিহত হয়, হাজার হাজার লোককে আটক করা হয়। কিন্তু এবার ইথিওপীয়রা সংস্কার নয়, শাসক পরিবর্তনের জন্য প্রচ- আন্দোলন শুরু করেছে। সূত্র দি ইকনোমিস্ট।    
       







 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উন্নয়নের অগ্রযাত্রা থেকে গোলযোগে নিক্ষিপ্ত হতে চলেছে ইথিওপিয়া
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ