পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাবিবুর রহমান : বিনামূল্যের জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধনের সুযোগ নিতে এসে সময় ও অর্থ ব্যয়ের পাশাপাশি হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ নাগরিকরা। ভুক্তভোগীরা বলছেন, নির্বাচন কমিশনের অসতর্কতায় তাদের পকেটের টাকা গচ্চা যাচ্ছে।
উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্রে (স্মার্টকার্ড) বাবার নাম, জন্মতারিখ এবং ঠিকানা সংশোধন করতে গেলেই নির্বাচন কমিশনে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। অন্যদিকে, নির্দিষ্ট এলাকায় ঢাকা দুই সিটি কপোরেশনের থানা নির্বাচন কমিশন অফিস না থাকায় নাগরিকদের নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভোটার তালিকা প্রকল্প কার্যালয় এবং ঢাকা জেলা নির্বাচন অফিস সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শত শত মানুষ নিজেদের পরিচয়পত্রে থাকা ভুল সংশোধন ও ডুপ্লিকেট পরিচয়পত্রের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাদের বেশিরভাগই কমিশনের কাজের ধীরগতি নিয়ে ক্ষুব্ধ। গত বুধবার আগারগাঁওয়ের ওই ভবনের নিচে কয়েকশ’ নাগরিককে লাইনে দাঁড়িয়ে ফরম জমা দিতে দেখা যায়। বিকালে দেখা মিলল আরো কয়েকশ’ জনের, যারা ডুপ্লিকেট কার্ডের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিলেন। তথ্য সংশোধন ও নতুন পরিচয়পত্র নিতে আসা এসব নাগরিকদের আবেদন নিয়েও চলছে এক ধরনের ব্যবসা। দুই অফিসের সামনে ১০-২০ টাকায় ফরম বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফরম পূরণেও ব্যয় করতে হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকা।
লালবাগ থানা এলাকা থেকে এসেছেন শিল্পী রানী। তার নাম ভোটার আইডিতে হয়েছে শিল্পী রানী ভদ্র। শিল্পী জানান, তিনি আদালতে গিয়ে নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে নাম সংশোধন করে ঢাকা জেলার লালবাগ থানা নির্বাচন অফিসে জমা দিয়েছেন। সাত দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর দেখেন তার নাম সংশোধন করা হয়নি। অফিস থেকে বলা হয়, আপনার ছেলের সার্টিফিকেটের ফটোকপিতে সত্যায়িত করা না থাকায় নাম সংশোধন করা হয়নি। অথচ জমা দেয়ার সময় কর্মকর্তাদের দেখানো হলে তখন তারা কিছুই বলেননি বলে জানান শিল্পী রানী। তিনি বলেন, আমি যানজট ঠেলে কয়েক দিন ধরে টাকা খরচ করেও সঠিক কাজ পাচ্ছি না।
রাজধানীর উত্তরা থেকে ঢাকা আগারগাঁও জেলা নির্বাচন অফিসে এসেছেন শহিদুল ইসলাম। তার নাম ভুলে ‘শহদুল’ ইসলাম হয়েছে। এ কারণে সংশোধন করতে এসেছেন। কিন্তু সংশ্লিষ্ট অফিসার স্মার্টকার্ড বিতরণের কাজে থাকায় সংশোধন করতে পারছেন না। তিনি বলেন, উত্তরা থানায় নির্বাচন অফিস না থাকায় নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
রাজধানীর সবুজবাগ থানা এলাকার বাসিন্দা মোছা: বিউটি বেগম। তার স্বামীর নামের বানান ভুল হয়েছে। স্বামীর আসল নাম এনামুল হক আর কার্ডে হয়েছে ইমামুল হক। সংশোধন করতে দুই সপ্তাহ ধরে থানা নির্বাচন অফিসে ঘুরছেন তিনি। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। জানালেন, এখনো ভুল সংশোধন হয়নি।
সূত্রাপুর থানা এলাকার বাসিন্দা মোছা: শারমিন জাহানের নামে ভুল করে হয়েছে শারমিন আক্তার। ভুল সংশোধন করতে গত সাত দিন ধরে আগারগাঁও অফিসে ঘুরছেন বলে জানান তিনি।
রাজশাহী থেকে আসা একজন জানান, এক কর্মকর্তার সুপারিশে এসেছেন, তাই লাইনে না দাঁড়িয়ে ভোটার হওয়ার কাজটি করতে পারছেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন থেকে বিভিন্ন পেশাজীবীদের এমন সুপারিশ প্রতিদিন আসে এখানে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্পের কয়েকজন জানান, প্রকল্পের পরিচালক (অপারেশন) থেকে টেকনিক্যাল পর্যন্ত সবার কাছে প্রতিদিন তদবির আসে। ইতোমধ্যে দুর্নীতি-অনিয়মের জন্য চারজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এখানে অব্যবস্থাপনার শেষ নেই। অব্যবস্থাপনা নিয়ে ভবনের ভেতরে-বাইরে মারামারির ঘটনাও ঘটেছে। প্রকল্পের লোকজন ও নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রায়ই বাগি¦ত-ার ঘটনা ঘটেছে। দালালদের চিহ্নিত করে শাস্তির পাশাপাশি সঠিক ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিলে দুর্ভোগও কমবে বলে জানালেন এক কর্মকর্তা। ইসি কর্মকর্তারা জানান, আইডি কার্ডের সেবা নিতে দরকার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা। বিভাগ, জেলা ও উপজেলাওয়ারি ডেস্ক রাখতে হবে। অনিয়ম রোধে প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অণুবিভাগের কমিউনিকেশন্স অফিসার আশিকুর রহমান জানান, নাগরিকদের স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে। আইডি কার্ডের সংশোধন ও অন্যান্য সেবার জন্য ফি কার্যকর করা হয়েছে। এসব বিবেচনায় নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তাদের পরিচয়পত্র সংশোধনের ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিনের আবেদনকারীর সংখ্যা গত কয়েক মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এখন বিনামূল্যে সেবা প্রদান বন্ধ করা হয়েছে। এখন ভোটাররা যেখানে সংশোধনের সরকারি ফি জমা দিচ্ছে সেখানে সেবার মান ভালো করতে হবে।
সারাবিশ্বে বিভিন্ন দেশের নির্বাচন কমিশন অফিসগুলো আধুনিক এবং ডিজিটাল হলেও রাজধানী ঢাকার দুই সিটি কপোরেশনের নিজস্ব জমি ও ভবন না থাকায় অফিস করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের তালিকা অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৩৬টি। মোট ভোটার সংখ্যা ২৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩৭৪। তাদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ১২ লাখ ২৪ হাজার ৭০১ জন আর নারী ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৩টি।
অপরদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ ওয়ার্ডের সংখ্যা ৫৭টি, মোট ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ৭০ হাজার ৭৫৩টি। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১০ লাখ ৯ হাজার ২৮৬ জন ও নারী ভোটার সংখ্যা ৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৬৭ জন।
ঢাকা জেলার সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শাহ আলম ইনকিলাবকে বলেন, রাজধানীর ১৫টি থানার মধ্যে আটটি থানা নির্বাচন অফিস নিজস্ব ভবনে চলে গেছে। বাকি সাতটি থানা নির্বাচন অফিস জায়গা ও ভবনের অভাবে নেয়া সম্ভব হয়নি। আমরা প্রতিটি এলাকায় নিজস্ব ভবনের জন্য বাড়ি খুঁজছি। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও নিজস্ব অফিস করার জন্য সংশ্লিষ্ট থানা নির্বাচন অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নামের ভুল সংশোধনের জন্য নির্ধারিত ফি জমা দিলেই হয়ে যায়। তবে কিছু সময় লাগে। ফরম জমা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখায় পাঠানো হয়। তারপর তারা সংশোধন করে দিয়ে দেয়। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।
জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রে (স্মার্টকার্ড) এবারে ব্যক্তির নাম (বাংলা ও ইংরেজি), পিতা/মাতার নাম, জন্মতারিখ ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন নম্বর দৃশ্যমান থাকবে। কার্ডের পেছনে থাকবে ব্যক্তির ভোটার এলাকার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান।
এবারের স্মার্টকার্ডের সঙ্গে কাগজের তৈরি লেমিনেটিং করা বিদ্যমান কার্ডের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। প্লাস্টিকের (পলিমার দিয়ে) তৈরি কার্ডটি মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হবে। কার্ডের মেয়াদ হবে ১০ বছর। নারীদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কার্ডে স্বামীর নাম দৃশ্যমান ছিল। পিতার নাম ছিল না। অপরদিকে, পুরুষের কার্ডে স্ত্রীর নাম উল্লেখ ছিল না। একে বৈষম্যমূলক বলে বলা হচ্ছিল। এবার নারীদের স্মার্টকার্ডে স্বামীর নাম দৃশ্যমান থাকবে না। সেখানে পিতার নাম থাকবে।
নির্বাচন কমিশনের এনআইডি শাখার মহাপরিচালক ও আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাক্সেস টু সার্ভিস প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো: সালেহ উদ্দীন ইনকিলাবকে বলেন, অনেকেই মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। এখন এসেছে সঠিক তথ্য দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে। তা সংশোধন করতে অনেক সময় লাগবে। কারণ অনেক কার্ড স্মার্ট হয়েছে। সে জন্য সবকিছু ঠিক করে দিতে হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।