Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নেতিবাচক প্রভাব মৎস্য খাতে

ইলিশ রফতানি বন্ধ

প্রকাশের সময় : ২১ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইখতিয়ার উদ্দিন সাগর : বাংলাদেশে প্রতি বছর মৎস্য উৎপাদনের পাশাপাশি এ খাতে রফতানি আয়ও বাড়ছে। তবে এই খাতের রফতানি আয় অনেকটাই এখন চিংড়িনির্ভর হয়ে পড়ছে। বর্তমানে ৯০ ভাগ আয় আসে চিংড়ি থেকে। গত চার বছর ধরে ইলিশ রফতানি বন্ধ থাকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মৎস্য খাতের বহির্বাণিজ্যের আয়ে। বর্তমানে দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৬৫ ভাগ আসে এই খাত থেকে। তার মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) ইলিশের অবদান ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। বর্তমানে ইলিশ বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্যতম অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ইলিশ অবৈধভাবে পাচার হওয়ায় রফতানি আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। বৈধভাবে এ ইলিশ রফতানি হলে দেশের অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে, এমন মত বিশেষজ্ঞদের।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইলিশ রফতানি আবার চালু হলে মাছ থেকে রফতানি আয় দ্বিগুণ বেড়ে যাবে। তবে এখনো এ ব্যাপারে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কোনো পরিকল্পনা নেয়নি বলে জানা গেছে। মৎস্য মন্ত্রণালয় প্রতি বছর বিশেষ সময়ে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখে। তাদের মতে, ওই সময় মা ইলিশ ও জাটকা ধরা বন্ধ থাকলে দ্রুত রফতানির সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।
ফিশারিজ পদ্ধতিতে মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান চতুর্থ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, বিশ্বে প্রতি বছর ৫ লাখ মেট্রিক টন ইলিশ আহরিত হয়। এর ৬০ শতাংশই বাংলাদেশে। এখানে তিন প্রজাতির ইলিশের মধ্যে অধিক সুস্বাদু ‘টি ইলিশা’ প্রজাতির ইলিশই অধিক পরিমাণে পাওয়া যায়। অন্যদিকে দেশে মোট মৎস্য উৎপাদনে এককভাবে ইলিশের অবদানই প্রায় ১৫ শতাংশ। ইলিশ আহরণে পাঁচ লাখ জেলে এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। এবার প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ায় সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, চলতি অর্থবছরে ৫০ হাজার টন বেশি ইলিশ উৎপাদন হতে পারে। ইলিশ সংরক্ষণ যথাযথভাবে মানা হলে এর উৎপাদন প্রতি বছর পাঁচ লাখ টনের বেশি হবে।
এদিকে ইলিশ পাওয়া যায় বিশ্বের এমন ১১টি দেশের মধ্যে ১০টিতেই উৎপাদন কমছে। কিন্তু বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ শতাংশ হারে ইলিশ উৎপাদন বাড়ছে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে ইলিশ উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ৭৫ হাজার টন। গত ১১ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। গত অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল চার লাখ টনের বেশি, যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা।
ইলিশ উৎপাদনে গত ১৮ বছরের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এ বছর। এর আগে ১৯৯৮ সালে দেশে প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছিল। চলতি বছরে ৪ লাখ টন ইলিশ আহরণের কর্মসূচি পালন করেছিল সরকার। ইতোমধ্যে ছাড়িয়ে গেছে। মৎস্য অধিদফতর ধারণা করছে, বছর শেষে তা সাড়ে ৪ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে। ফলে বিশ্লেষকদের ধারণা, চলতি বছরে ইলিশের বাণিজ্য ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
জানা যায়, ২০১২ সালের ৩১ জুলাই থেকে চিংড়ি ছাড়া সব মাছ রফতানি নিষিদ্ধ করে সরকার। পরে ওই বছরের অক্টোবরে ইলিশ ছাড়া অন্য মাছ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে  নেয়া হয়। গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নতুন রফতানি নীতিতে শর্তসাপেক্ষে রফতানি পণ্যের তালিকায় যুক্ত হয় ইলিশ। কিন্তু চার বছর ধরে বন্ধ আছে ইলিশ রফতানি। ২০১০-১১ অর্থবছরে হিমায়িত প্রায় আট হাজার ৫৩৯ টন ইলিশ ৩৫২ কোটি টাকায় রফতানি হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় ছয় হাজার ১৭৪ টন ইলিশ ২৮২ কোটি টাকায় রফতানি হয়েছিল।
রফতানিকারক সমিতির নেতারা জানান, ২০১২ সালের পর থেকে রফতানি নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা ইলিশের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এখন ইলিশ রফতানির সুযোগ দেয়া হলে বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ মৎস্য রফতানি এবং আমদানিকারক সংগঠনের সভাপতি  মো: নাজিম উদ্দিন বলেন, ইলিশ রফতানির বিষয়ে  বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনেক চিঠি দিয়েছি। কিন্তু ইতিবাচক কোনো সাড়া পাইনি। ইলিশ রফতানি বন্ধের পর  থেকে পিছিয়ে পড়েছে হিমায়িত মৎস্য রফতানি। রফতানির সুযোগ দেয়া হলে এ খাতে আয় অনেক বাড়বে। তিনি আরো বলেন, এ বছর চাহিদা পূরণের পরও অনেক ইলিশ নষ্ট হয়েছে। এগুলো রফতানি হলে দেশের অর্থনীতির জন্য অনেক ভালো হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেতিবাচক প্রভাব মৎস্য খাতে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ