Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবাসিক গ্যাসের বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ হচ্ছে

আজ অবৈধ গ্যাস লাইন অপসারণের সভা

পঞ্চায়েত হাবিব | প্রকাশের সময় : ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে আবাসিক বাসা বাড়ি নামে গ্যাস সংযোগ নিয়ে অবৈধভাবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করার পথ বন্ধ করতে যাচ্ছে সরকার। অবৈধ গ্যাস ব্যবহার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে। এসব গ্রাহকদের খুঁজে বের করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। গত ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ বিষয়ে ১৫১টি সাধারণ জিডি এবং ১২৩টি মামলা করেছে তিতাস। দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরে আবাসিক বাসা বাড়ি নামে গ্যাস সংযোগ নিয়ে বাণিজ্যিক কাজে তিতাসের কর্মকর্তারা জড়িত রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আজ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মু:আ: হামিদ জমাদ্দারের সভাপতিত্বে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও পাইপলাইন অপসারণ কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হবে। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব বেগম সায়মা আক্তার স্বাক্ষরিত পাঠানো চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশে সাতটি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি রয়েছে। ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে পাইপলাইনের সাহায্যে গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে ১৯৬০ সালে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ শুরু হয়। বাসাবাড়িতে গ্যাস সরবরাহ শুরু ১৯৬৭ সালের দিকে। প্রথমে দেওয়া হয় রাজধানী ঢাকায়। এরপর দেশজুড়ে গ্যাসের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশে গ্যাস নেটওয়ার্কের পরিমাণ ২৪ হাজার ২৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে বিতরণ ও সার্ভিস লাইন প্রায় ২০ হাজার কিলোমিটার। এই লাইনের ৭০ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পাইপলাইনের অবস্থা বেশ খারাপ। ঢাকা বিভাগে গ্যাস সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত তিতাস গ্যাসের ১২ হাজার ২৫৩ কিলোমিটার পাইপলাইন রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় রয়েছে সাত হাজার কিলোমিটার, যার অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। তিন-চার দশকের পুরোনো এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লাখ লাখ অবৈধ সংযোগ। একইসঙ্গে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এই গ্যাস নেটওয়ার্ক। এভাবে জরাজীর্ণ গ্যাস পাইপলাইনগুলো দিন দিন হয়ে উঠছে প্রাণঘাতী। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, যাচ্ছে প্রাণ। দগ্ধ অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

আবাসিকে দেওয়া সংযোগ বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা অবৈধ। সেজন্য সম্প্রতি এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। ওই বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আবাসিকে ব্যবহারের জন্য সংযোগ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। এটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, এমনভাবে গ্যাসের অবৈধ কিছু ব্যবহারকারীকে নিয়ন্ত্রণ করা তাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ছে। এই অভিযোগ শুনেই অবৈধ গ্যাস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জ্বালানি বিভাগ। আবাসিকের নাম করে শুধু গ্যাস সংযোগই নেওয়া হয় না। আবাসিক বাড়ি হিসেবে অনেক বাণিজ্যিক স্পেসও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়। এসব বাড়ি আবাসিক গ্যাস সংযোগ পেয়ে থাকে। কিন্তু বিতরণ কোম্পানি অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে বাণিজ্যিক কাজে এসব ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন অলিগলিতে হোটেল রেস্টুরেন্টেও আবাসিক দেখিয়ে গ্যাস সংযোগ নেওয়া হয়েছে। এসব দোকানে নিয়মিত বাণিজ্য চললেও গ্যাস সংযোগের ধরন পরিবর্তন করা হয়নি। এতে বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। যে কারণে এই অবৈধ সংযোগ চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিতাসের মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্যাস কারচুপি ও অবৈধ গ্যাস ব্যবহার রোধকল্পে ডিজিল্যান্স ডিভিশনের মাধ্যমে শিল্প, সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ার, বাণিজ্যিক ও আবাসিক শ্রেণির গ্রাহকের বাড়ি পরিদর্শন করা হয়। এ ২০২০-২১ অর্থ বছরে অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের কারণে ৯টি শিল্প প্রতিষ্ঠান, ৩টি ক্যাপটিভ পাওয়ার, ২টি বাণিজ্যিক ও ৮৯টি আবাসিক গ্রাহকের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। একই অর্থবছরে গ্যাস কারচুরি ও অবৈধ উপায়ে গ্যাস ব্যবহার এবং অনুমোদন অতিরিক্ত গ্যাস ব্যবহারের কারণে ৫৫টি শিল্প, ১টি সিএনজি, ক্যাপটিভ পাওয়ার ১২টি, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ৫৪টি এবং আবাসিক বাসা বাড়ির ২ হাজার ১১৭টি সংগোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তিতাসের বিতরণ ব্যবস্থায় প্রায় ২৫০ কিলোমিটার অবৈধ লাইন রয়েছে। এরমধ্যে শুধু নারায়ণগঞ্জে রয়েছে ১৮০ কিলোমিটার অবৈধ পাইপলাইন। এরপর রয়েছে গাজীপুর, সাভার, নরসিংদী ও ঢাকায়। কুমিল্লা ও চট্টগ্রামেও অবৈধ সংযোগ ও পাইপলাইন রয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রামে দেড় লাখ রাইজারের মধ্যে ১৫ হাজারই ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞদের দাবি কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবেই গ্যাস বিতরণ ব্যবস্থা মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। তারা অভিযোগ করেন, পাইপলাইন লিকেজ সম্পর্কে জানানো হলেও সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এসব অবহেলার ফলেই নারায়ণগঞ্জের মসজিদে ভয়াবহ বিস্ফোরণ হলো। গ্যাসলাইনের লিকেজ থেকে সংঘটিত এ দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের পরিসংখ্যানে বলা হচ্ছে, রাজধানীতে অগ্নিদুর্ঘটনার এক-তৃতীয়াংশ গ্যাসের পাইপলাইনের লিকেজ থেকে হয়।



 

Show all comments
  • তুষার ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২০ এএম says : 0
    এটা খুব জরুরী
    Total Reply(0) Reply
  • কয়ছর আহমদ ২৫ নভেম্বর, ২০২১, ৯:৫৯ পিএম says : 0
    বন্ধ করে লাভ নেই চলতে দিন টাকা দিয়ে বাসা বাড়িতে গ্যাস লাইন পাওয়া যায় না সরকার বন্ধ করে রেখেছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ