Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে মির্জা ফখরুল

বিএনপি ভাঙার চক্রান্ত সফল হবে না -ড. মোশাররফ

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান সরকার আজ দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে, গণতন্ত্রও নির্বাসিত। এই কারাগার ভেঙে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে শহীদ জিয়ার আদর্শ বুকে ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স- বাংলাদেশ মিলনায়তনে গতকাল সোমবার বিকেলে এক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করে বিএনপি। আজ শহীদ জিয়ার ৮০তম জন্মবার্ষিকী।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান ছিলেন মহানায়ক। আমাদের নতুন করে বিশ্বের দরবারে পরিচিত করেছিলেন। তিনি গোটা জাতিকে একত্রিত করে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। শুধু রাজনৈতিক হিসেবে নয় তার কাজকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের এমন কোনো জায়গা নেই যেখানে জিয়াউর রহমানের নাম নেই। ১৬ কোটি মানুষের যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে তা জিয়াউর রহমানের আমল থেকেই শুরু হয়েছিল। তিনি সারাদেশে খাল কেটে কৃষিবিপ্লব করেছিলেন। সেই মহানায়ক জিয়াকে এখন খলনায়ক বানানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে সরকার। এখানেই ক্ষান্ত নয় সরকার, জিয়াউর রহমানের মাজারও তুলে ফেলতে চায়।
দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, একটি পত্রিকায় দেখলাম আমি বিএনপিকে ভাঙার জন্য মুক্তি পেয়েছি। ভাঙার কাজ নাকি শেষ করে ফেলেছি। তাহলে আমি প্রশ্ন করতে চাই; আমি যদি সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করি, তাহলে কেন ২২ মাস জেল খাটলাম? তিনি বলেন, জনগণকে ও দলের নেতাকর্মীদের বিভ্রান্ত করার জন্য সরকারের ইন্ধনে এরকম নিউজ করা হচ্ছে। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আব্দুল মান্নান ভূইয়া দলের মহাসচিব পদে দীর্ঘদিন থেকেও দলকে ভাঙতে পারেননি। আমি কী এমন মহাপুরুষ হয়ে গেছি যে, জেল থেকে বের হয়ে দুই দিনের মধ্যেই দলকে ভেঙে ফেলছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দলকে নিয়ে ষড়যন্ত্র চলছে। বিএনপির উচ্চ পর্যায় থেকে সাধারণ কর্মী পর্যন্ত এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যার বিরুদ্ধে মামলা নেই।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, এক ব্যক্তির মধ্যে চারটি সফল জীবন রয়েছে। তিনি হলেন জিয়াউর রহমান। প্রথম সৈনিক জীবন। তিনি শুধু দেশের জন্য যুদ্ধ করেননি। তিনি কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, সফলভাবে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তৃতীয়ত, তিনি সফল প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তার মৃত্যুর পর বিশাল জানাজাই প্রমাণ করে তিনি কত জনপ্রিয় ছিলেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রকে ভালোবাসে। গণতন্ত্র এ দেশের মানুষ আদায় করবে। আমরা গণতন্ত্র হারিয়েছি। এ হারিয়ে ফেলা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সকল রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
তিনি বলেন, বিএনপি আজ মিথ্যাচারের শিকার। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত এ রাজনৈতিক দল একটি মধ্যপন্থী ও উদার রাজনৈতিক দল। এটা মানুষের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় যেতে পারি আর না পারি, এ দলকে বাঁচাতে হবে। দলকে সুসংগঠিত করতে হবে।
জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান দূরদৃষ্টিসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। উনি (জিয়াউর রহমান) অত্যন্ত মিতব্যয়ী ছিলেন। ভোগবিলাসে বিশ্বাস করতেন না। তিনি একজন পরিশ্রমী মানুষও ছিলেন। দৈনিক ১৮ থেকে ১৯ ঘণ্টা পরিশ্রম করতেন তিনি। জিয়াউর রহমান শুধু স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি, নতুন রাজনৈতিক নির্দেশনাও দিয়েছিলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করেননি, দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কোনো পূর্বপরিকল্পনা বা অভ্যুত্থান, ষড়যন্ত্র নয়, সিপাহী-জনতা তাকে ক্ষমতার শূন্যস্থানে বসিয়েছে। তিনি বলেন, এখন হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনাই একমাত্র দায়িত্ব।
‘আসল বিএনপি’ নাম না নিয়ে দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, একটি অনলাইনের দেখলাম রিজভী আহমেদের সাথে কোথাকার আসল বিএনপির নেতার কথা হয়েছে। একটি রূপকথার কাহিনী প্রকাশ করা হয়। ভাই আমি খুব বড় মানুষ না। তারপরও একটা ছাত্র ব্যাকগ্রাউন্ড আছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি ছিলাম। একটা বৃহত্তর ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্ট ছিলাম, একটা বৃহত্তর রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এখন জড়িত। একরম একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকা অবস্থায় কোথাকার পথকলি, রাস্তা-ঘাটের টোকাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হতে পারে। এটা কী বিশ্বাসযোগ্য?
আজকে সাংবাদিক বন্ধু আমাকে বললেন, গতকাল জনতা ধাওয়া খেয়ে চলে যাওয়ার ঘটনায় তাদের নাকি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিপূরণ বাবদ আমার কাছে ৩৩ লাখ টাকা চেয়েছেন। না দিতে পারলে নাকি মামলা করবেন। আমাদের মহাসচিবের যদি একশ’ ওপরে মামলা থাকে, আমার যদি ৫৬-৫৭টা মামলা থাকে। পথকলির মামলায় আমরা ভয় করতে পারি।
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক মোস্তাহিদুর রহমান, সাংবাদিক শফিক রেহমান, অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুবুল্লাহ, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এম আমিনুল ইসলাম প্রমুখ।
এ ছাড়া দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, ডা. জেড এম জাহিদ হোসেন, এডভোকেট আহমেদ আজম খান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সরকার দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে মির্জা ফখরুল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ