পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে গোয়েন্দারা। বুয়েট এবং আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো ৫ জন শিক্ষক-কর্মচারী প্রশ্নফাঁসের সাথে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। গত সাত বছরে প্রশ্নফাঁস চক্রের বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেন করার তথ্য নিয়েও তদন্ত করা হচ্ছে। অবৈধ আয়ের কোটি কোটি টাকার দেশের বাইরে পাচার হয়েছে কিনা তা তদন্তে নেমেছে সিআইডিসহ একাধিক সংস্থা। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁসের টাকা বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ। রাষ্ট্রায়ত্ত পাঁচটি সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের তদন্তে নাম এসেছে অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের। তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এদিকে প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলায় অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার (বরখাস্ত) মানিক কুমার প্রামাণিককে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আবেদনের শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন খাজির করে দিয়ে তাকে আত্মসমর্পণ করতে বলেন। বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন। মানিকের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন। সরকারপক্ষে শুনানিতে অংশ নেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমএম আমিনউদ্দিন মানিক।
সিআইডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রশ্নফাঁস চক্রে যাদের নাম আসছে তাদের সবার বিষয়ে ছায়া তদন্ত হচ্ছে। কারা কীভাবে প্রশ্নফাঁস করতেন, নেপথ্যে কারা ছিলেন, কাদের গাফিলতিতে এসব হতো এবং কারা কারা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন সবাইকেই তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। তদন্তে ‘রাঘববোয়াল’ হিসেবে কারও নাম এলে তাকেও ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ওই কর্মকর্তা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার গতকাল দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রশ্নফাঁসের সাথে জড়িতদের বিষয়ে খুব গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। এর সাথে বুয়েট এবং আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাদের নাম এসেছে তাদের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক অবস্থায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় বিপুল পরিমাণ টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে কিনা তাও তদন্ত করা হচ্ছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত এক আসামির আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বুয়েটের অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের নাম এসেছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তিনি কীভাবে প্রশ্নপত্র তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং তার কী ভূমিকা ছিল, সব খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাকে প্রয়োজনে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। পুরো বিষয়টি তদন্তের পর পরিষ্কার বোঝা যাবে।
ব্যাংকে লেনদেনের বিষয়ে ডিবির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি ওয়াহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের টাকা অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংকে লেনদেন হয়েছে কি না, সেটিও তদন্ত করা হচ্ছে। এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয়া হবে।
তবে ডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাংক হিসাবে ১০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় এ লেনদেন হয়েছে কি না, তদন্তে সে বিষয়ে জোর দেয়া হচ্ছে। বুয়েটের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছিলেন অধ্যাপক নিখিল রঞ্জন ধর। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় তার নাম আসায় সোমবার তাকে ওই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে।
গত ৬ নভেম্বর থকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রথমে চাকরির প্রশ্নফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করে ডিবি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন-মোক্তারুজ্জামান রয়েল, শামসুল হক শ্যামল, জানে আলম মিলন, মোস্তাফিজুর রহামান মিলন এবং রাইসুল ইসলাম স্বপন। এর পরদিন গ্রেফতার করা হয় সোহেল রানা, এমদাদুল হক খোকন ও এবিএম জাহিদকে। তাদের মধ্যে পাঁচ জনই বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মকর্তা। সবশেষ ১৭ নভেম্বর রাতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় এই চক্রের অন্যতম হোতা দেলোয়ার, পারভেজ ও রবিউলকে। তারা তিন জনই আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী। গ্রেফতারের পরদিন সবাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা আক্তারের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে দেলোয়ার জানিয়েছেন, তিনি প্রশ্ন তৈরি থেকে শুরু করে ছাপা হওয়ার বিভিন্ন পর্যায়ের কাজে যুক্ত থাকতেন। সহকর্মী ও অন্যদের প্ররোচনায় অর্থের লোভে প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। জিজ্ঞাসাবাদে দেলোয়ারের দাবি, প্রতিবার প্রশ্ন ছাপা হওয়ার পর তিনি দুই সেট করে প্রশ্ন বুয়েটের শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরের ব্যাগে তুলে দিতেন। নিখিল রঞ্জন ধর দুই সেট প্রশ্নপত্র নেয়া প্রসঙ্গে কাউকে কিছু বলতে নিষেধ করতেন। কাউকে জানালে চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকিও দিতেন।
এ প্রসঙ্গে বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মৌখিক ভিত্তিতে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও পরীক্ষা নেয়ার কাজে কারিগরি সহায়তা দিতেন। এজন্যই তিনি প্রশ্নপত্র ছাপা হওয়ার সময় আশুলিয়ায় আহ্ছানউল্লার ছাপাখানায় যেতেন। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৪ সাল থেকে চাকরির পরীক্ষা নেয়ার দরপত্রে অংশ নেয়া শুরু করে। ২০১৪ সাল থেকে তারা অনেক নিয়োগ পরীক্ষার কাজ করেছে। শুরু থেকেই এতে সম্পৃক্ত ছিলেন বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধর। তবে আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কার্যক্রমে তার যুক্ত হওয়া এবং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে পাঠদান দেয়ার বিষয়ে বুয়েট কর্তৃপক্ষের কোনও অনুমতি ছিল না। এইউএসটি’র ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড. কাজী শরিফুল আলমের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি কাজ করতেন। অধ্যাপক ড. শরিফুল আলমের অফিস পিয়ন হিসেবেই কাজ করতেন প্রশ্নফাঁস চক্রের অন্যতম হোতা দেলোয়ার। আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্র নিয়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও ছাপার যে কাজ করেছে তাতে যথাযথ নিরাপত্তা ছিল না বললেই চলে। গ্রেফতার হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টির চারজন কর্মীও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, যতটা গুরুত্ব দিয়ে স্পর্শকাতর বিষয়টি তত্ত্বাবধান করার কথা ছিল তা করা হয়নি। ছাপাখানায় কাজ করা কর্মী ও পরীক্ষার নিয়োগ কমিটির সদস্য এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অনেকেই এই ছাপাখানায় যাতায়াত করতে পারতো।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ছাপা হওয়ার পর প্রেস থেকে দুই সেট প্রশ্ন নিয়ে আসা বুয়েট শিক্ষক নিখিল রঞ্জন ধরের একটি ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। নিখিল রঞ্জন ও তার স্ত্রী অনুরূপা ধরের সোনালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে গত সাত বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। বিশেষ করে নিয়োগ পরীক্ষার আশেপাশের সময়গুলোতে তার ব্যাংকে অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। সাত বছর ধরেই তিনি আহ্ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।