Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ব্যাংক নগদ অর্থ সঙ্কটে

৭৬ শতাংশ উদ্বৃত্ত তহবিল গুটিকয়েকের হাতে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৬ এএম

বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্যের গল্প এই খাতের সঠিক চিত্র দেখাচ্ছে না। কারণ অতিরিক্ত তহবিলের বেশিরভাগই গুটিকয়েক ব্যাংকের কাছে কেন্দ্রীভূত। গত অক্টোবরে ব্যাংকগুলোর মোট উদ্বৃত্ত তহবিল ছিল ২ লাখ ২০ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা। এর আগের মাসের তুলনায় যা শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। অর্থ সংকটের এই পরিস্থিতিতে ব্যাংকিং খাতে অতিরিক্ত তারল্য বেড়ে যাওয়াটা কিছুটা বিস্ময়কর।

মোট উদ্বৃত্ত তহবিলের মধ্যে ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা কেবল ১ ডজন ব্যাংকের হাতে কেন্দ্রীভূত। যা অতিরিক্ত তারল্যের ৭৬ শতাংশ। এসব ব্যাংকগুলোর কোনো কোনোটি ঋণ আকারে মূল ধারার অর্থনীতিতে অর্থ পাঠানোর পরিবর্তে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করছে।এভাবে তহবিল কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ায় ব্যাংকিং খাতে তারল্যের চাপ তৈরি হয়েছে। কারণ করোনাভাইরাস মহামারির জন্য সৃষ্ট অচলাবস্থা শেষে পুনরায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চালু হওয়ার পর ব্যাংকগুলি ঋণের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে।
ব্যাংক কর্মকর্তাদের ভাষ্য, এর পরেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘স্ববিরোধী অবস্থান’ নিয়েছে। কারণ একইসঙ্গে রেপো (পুনঃক্রয় চুক্তি) ও বাংলাদেশ ব্যাংক (বিবি) বিলের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিলাম আয়োজন করছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত বিবি বিলের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার এই নিলাম স্থগিত ছিল। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবিত করে ৯ আগস্ট থেকে অতিরিক্ত তারল্য বাজার থেকে তুলে নিচ্ছে।
সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত নিলামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৫০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিনিয়োগের আগের অংশ ম্যাচিউর হওয়ার পর বিবি বিলে ১০ হাজার ২২৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ হিসেবে জমা আছে। কিন্তু তারল্য পরিস্থিতি সম্প্রতি পাল্টে যাওয়ায় বিবি বিল নিলামের এই ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু ব্যাংকের নগদ টাকার সঙ্কট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দীর্ঘ বিরতির পর রেপো নিলামের মাধ্যমে আর্থিক খাতে তহবিল সরবরাহ করতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে রেপোর সুদ হার ৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
তারল্যের ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো মরিয়া হয়ে আন্তব্যাংক কল মানি (ব্যাংকগুলোর নিজেদের মধ্যে টাকা ধার প্রক্রিয়া) মার্কেটে যেতে বাধ্য হচ্ছে। সুদ হার রাতারাতি ব্যাপকভাবে বেড়েছে। ১৮ নভেম্বর কল মানি সুদ হার ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশে পৌঁছে। এর আগে ৩১ অক্টোবর এই হার ছিল ২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তার ভাষ্য, যেসব ব্যাংক উদ্বৃত্ত তহবিল নিয়ে বসে আছে তারাই কল মানি মার্কেটের বিনিয়োগকারী। এই ১২টি ব্যাংক হলো-সোনালী, ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী, জনতা, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, পূবালী, ডাচ বাংলা, রূপালী, সাউথ ইস্ট, ট্রাস্ট, ব্যাংক এশিয়া ও যমুনা ব্যাংক।
এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৪টি ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তহবিল আছে ৯৭ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। যা ব্যাংক খাতের মোট উদ্বৃত্ত তহবিলের ৪৪ শতাংশ। ব্যাংকগুলো এখন একইসঙ্গে কল মানি মার্কেট ও বিবি বিলে বিনিয়োগ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিবি বিলের নিলাম বন্ধ হলে এর তহবিল কল মানি মার্কেটে যাবে। এতে চাপ কমবে।
অনেক ব্যাংক এখন ৬ শতাংশ হারে স্থায়ী আমানত সংগ্রহ করছে। ৩ থেকে ৪ মাস আগে এই হার ছিল ২ থেকে ৩ শতাংশ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নগদ অর্থ সঙ্কট

২৩ নভেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ