Inqilab Logo

শনিবার, ২৫ মে ২০২৪, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মর্যাদার জায়গায় নেই বিচারপতিগণ : আইনমন্ত্রীর মন্তব্য

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শেখ জামাল : মর্যাদার জায়গায় নেই বিচারপতিগণ। বিচারপতিগণ সম্মানিত ব্যক্তি, তাদের আচার-আচরণ অনুসরণীয় হওয়া উচিত। কিন্তু বর্তমানে এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের আচরণবিধি থাকার প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারপতিদের আচরণবিধি প্রণয়নের এখতিয়ার প্রধান বিচারপতির। সরকার শুধু প্রধান বিচারপতিকে পরামর্শ দিতে পারে এবং সরকারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে এ পরামর্শ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরী গত মঙ্গলবার বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের প্রশ্ন যখন আসবে তখন আইনজীবীদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমি ১৫ বছর যখন হাইকোর্টের বিচারক ছিলাম। তখন কেউ কখনও অন্যায় অনুরোধ নিয়ে আমার সামনে আসেননি। কারণ অনুরোধ করলে উল্টো ফল হবে। হাইকোর্টের বিচারক নিয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, নিমগাছ থেকে ফজলি আম আশা করা বাতুলতা মাত্র। ফজলি গাছ রোপণ করেন, তাহলে ফজলি আমই পাবেন। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর ‘নিম গাছে আম ধরে না’, এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, পিআরএলে থাকা সাবেক বিচারপতি সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের একটি সেমিনারে বক্তব্য দিয়েছিলেন। যাদের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ করা উচিত, সে ব্যাপারে একটা আইন থাকা উচিত। যদি ওনার কমেন্টটা সঠিকভাবে পত্রিকায় লিখে থাকেন, তাহলে উনি বলেছিলেন, নিমগাছে আম ধরে না। ওনার কর্মকা-ে উনি প্রমাণ করেছেন নিম গাছে আম ধরে না। আজ বোধ হয় বিচারপতিদের কোড অব কন্ডাক্ট খুবই প্রয়োজন।
আইনমন্ত্রী বলেন, বিচারপতিরা তাদের বিবেক দ্বারা চালিত হবেন। যেহেতু বিজ্ঞ বিচারপতি, সম্মানিত বিচারপতি- তাই বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই তারা কী আচরণ করবেন। এজন্যই এতোদিন কোনো রুলস ছিলো না। রায় লেখার ব্যাপারে নয়, আজ যে ঘটনা ঘটেছে সে ব্যাপারে কিছু বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় যেটা হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিত আর নেই। সে কারণেই আমার মনে হয় এটার ব্যাপারে রুলস করে দেওয়া উচিত।
বিচারপতিরা সমাজের দৃষ্টান্ত। আমরা মনে করি তারা এমন কাজ করবেন যা অনুসরণীয়। সে জন্যই আমি মনে করি এখন সময় এসেছে রুলস করার।
সচিবালয়ে বাংলাদেশ সফররত ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরো বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যার বিচার পেতে আশা ছাড়বেন না। তিনি এক প্রশ্নের জাবাবে বলেন, ‘এ কথাটা মন্ত্রী নয়, আইনজীবী হিসেবে জিজ্ঞেস করলে ভাল হত। তদন্ত জিনিসটা বড় কঠিন। যখন ক্লুলেস (প্রমাণবিহীন) মার্ডার হয়, তখন তদন্তকারী সংস্থার জন্য এ মামলা সলভ (সমাধান) করা ডিফিকাল্ট (কঠিন) হয়ে যায়।’ তিনি বলেন, ‘আটচল্লিশ মাস চলে গেছে বলে এ হত্যাকা-ের বিচার বা তদন্ত শেষ হয়ে যাবে তা নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত আসামিদের না ধরা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তদন্ত চলবে বলেই আমার বিশ্বাস।’
আনিসুল হক বলেন, ‘এমন হয় এটা বাস্তব। কিছু অপরাধ আছে, কিছু হত্যাকা- আছে যা তাড়াতাড়ি তদন্ত করে বের করা যায়। কিছু আছে দেরি হয়। আপনাদের কাছে আমার এ টুকু আহ্বান থাকবে আশা ছাড়বেন না।’
বাংলাদেশে যে সব অপরাধের জন্য বর্তমানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদ-ের বিধান রয়েছে, সেই দ- বিলোপের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তবে ভবিষ্যতে নতুন আইন করার ক্ষেত্রে শাস্তি হিসেবে প্রাণদন্ড না রাখার ‘চেষ্টা করা হবে’ বলে জানিয়েছেন তিনি। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মতবিনিময়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মন্ত্রী এই তথ্যই দিয়েছেন। মতবিনিময়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মৃত্যুদ- নিয়ে যখন (আলোচনায়) প্রশ্ন উঠেছে, তখন আমি স্পষ্টই বলেছি, যে সব অপরাধের জন্য বর্তমানে মৃত্যুদ- সাজা হিসাবে রয়েছে, সেইগুলো কোনো পরিবর্তন হবে না। “ভবিষ্যতে আমরা যখন নতুন আইন করব, আমরা চেষ্টা করব সেই নতুন আইনে ... যেহেতু মৃত্যুদ- এখন সাজা হিসাবে খুব একটা গ্রহণযোগ্য নয়, সেই জন্য আমরা পরিবর্তন আনব।”
তিনি বলেন, “আজকের বাস্তবতা হচ্ছে, মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কেউ যদি কোনোমতে বাংলাদেশে বর্ডার ক্রস করতে পারেন এবং কোনো পশ্চিমা দেশে যান। তাহলে আর কোনোদিন তাকে ফিরিয়ে আনতে পারব না। কারণ তিনি কেবল দেখাবেন, এইটায় যে বাংলাদেশে ফাঁসির আইন আছে, ফিরিয়ে দিলে ফাঁসি দিয়ে দেবে।”
আইনমন্ত্রী বলেন, “যেমন ফরমালিনের আইনে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- না রেখে যাবজ্জীবন রাখা ভালো। এই রকম আইন করলে আমরা সেখানে মৃত্যুদ- না রাখার চেষ্টা করব। “তবে অপরাধের গুরুত্ব বুঝে যদি আমরা মনে করি, মত্যুদ- রাখাটাই অপরাধ দমনের সবচেয়ে ভালো অস্ত্র, তাহলে (নতুন আইনেও) মৃত্যুদ- থাকবে।” এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, তথ্য-প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়েও বৈঠকে কথা হয়েছে। তিনি ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের বলেছেন, সরকার নতুন ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট’ করে ৫৭ ধারার ‘বিভ্রান্তিগুলো’ দূর করার ব্যবস্থা করছে। তবে কীভাবে তা করা হবে- সে বিষয়ে কোনো তথ্য আনিসুল হক দেননি।
আইনমন্ত্রী বলেন, “ব্লগারদের হত্যার ঘটনা সম্পর্কে আমি বলেছি, একটা মামলার রায় হয়েছে। বাকিগুলোর তদন্ত হচ্ছে।” তিনি বলেন, “আমরা দুটো জিনিস করার চেষ্টা করছি। এই হত্যাগুলোর বিচার ত্বরান্বিত করার চেষ্টা করছি। এই রকম হত্যা যাতে না হয়, সেইভাবে আচরণ করতে এবং সকল পক্ষকে সংযত হতে আমরা অনুরোধ করছি।” তবে কারও বাক স্বাধীনতা হরণ করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নেই বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, “জনগণের সরকার হিসেবে এটাও আমাদের দায়িত্ব, একজনের বাক স্বাধীনতা আরেকজনের বাক স্বাধীনতায় যাতে কোনো আঘাত না লাগে, সেই ভারসাম্যটা যাতে আমরা আনতে পারি। “আমরা মনে করি, যদি সেই চেষ্টায় সফল হই, তাহলে এই রকম হত্যাকা- আর হবে না।”
আনিসুল হক জানান, ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে কোম্পানি আইন, বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কর্মকান্ড নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্ট সদস্য জিন ল্যাম্বার্ট প্রতিনিধি দলে নেতৃত্ব দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মর্যাদার জায়গায় নেই বিচারপতিগণ : আইনমন্ত্রীর মন্তব্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ