Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার জন্য প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান

সংসদের সামনে বিএনপির এমপিদের মানববন্ধন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ৫ দলের আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে তার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য আহবান জানিয়েছেন বিএনপির ৬ এমপি। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় এক মানববন্ধনে তারা এ আহবান জানান।

বগুড়া-৪ আসনের এমপি গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, আমরা অবৈধ সরকারের কাছে আবেদন করছি। কারণ কোন উপায় নেই। আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। যেখানে চিকিৎসক পরিবার এবং দলের আবেদনকে উপেক্ষা করছে সরকার। আইনমন্ত্রী পাগলের প্রলাপ বকছেন। ৪০১ ধারা নিয়ে তিনি পজিটিভ নেগেটিভ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জেলখানায় ঢুকে বেগম জিয়াকে আবার আবেদন করতে হবে। খালেদা জিয়ার বাড়িকে বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে তাকে মুক্তি দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, বেগম জিয়া যেখানে আছেন সেখানেই সাবজেল ঘোষণা করা হোক। সেখান থেকেই তাকে মুক্তি দিয়ে বিদেশ নেয়ার ব্যবস্থা করা হোক। সরকার চাইলে তাকে ২৫ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দিতে পারে। আইনমন্ত্রী বলেছেন, বিদেশ থেকে ডাক্তার আনার অনুমতি তিনি দিতে পারেন। পৃথিবীতে চিকিৎসাব্যবস্থা তো সহজ হয়ে গেছে। আমাদের ডাক্তাররা যা বলছে ইংল্যান্ডের ডাক্তাররাও তাই বলছে। সমস্যা তো হলো চিকিৎসা। দরকার লজিস্টিকস, মেডিকেল ইকুইপমেন্ট। ম্যাডামের যে অবস্থা এদেশের ট্রিটমেন্ট নেই। তার যে সার্জারি লাগবে সেই সার্জারি ইকুইপমেন্ট কোথায়? আইনমন্ত্রীকে বলতে চাই, এর মধ্যে একটা কাজ করেন আপনি জাহাজে করে একটি হাসপাতাল এ দেশে নিয়ে আসুন।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আশাহত জিএম সিরাজ বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আশাকরি না বেগম জিয়াকে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন। তাই প্রেসিডেন্টের কাছে আবেদন করতে চাই আপনি আপনার নিজস্ব ক্ষমতাবলে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। কারণ আপনাকে সেই সাংবিধানিক ক্ষমতা দেয়া আছে।

চাপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের এমপি হারুনুর রশিদ বলেন, ১৯৯৬ এবং ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর এই সরকার এ যাবতকালে ৩০ জনের অধিক মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কে সাজা মওকুফ করেছে। বেআইনিভাবে আইনের বরখেলাপ করে। খুনের আসামী, ইয়াবা সম্রাট, মানবপাচারকারী, টাকা পাচারকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপরে অন্যায় ভাবে সরকার জুলুম-নির্যাতন অব্যাহত রেখেছে। তিনি বলেন, আমার চাই অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক। যদি অনাকাক্সিক্ষত কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় আমাদেরকে বাধ্য করবেন না সংসদ থেকে বেরিয়ে যেতে।

সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি ও বিএনপির বিরোধীদলীয় হুইপ ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, খালেদা জিয়া যখন কারাগারে জান তিনি পায়ে হেঁটে গেছেন কিন্তু গত তিন বছরে তার কি হাল হয়েছে এটা দেশের মানুষ জানে। এর দায় এই সরকারকে নিতে হবে। কারণ গত তিন বছরে তিনি দল, পরিবার এবং নিজের হেফাজতের ছিলেন না। তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের হেফাজতে।

তিনি বলেন, আমরা দেখি সামান্য একটু হাঁচি, কাশি, সর্দি চিকিৎসার এমনকি রুটিন চেকআপের জন্য প্রেসিডেন্ট জার্মানি, ইংল্যান্ডে যান। কিন্তু আমাদের সরকার দলীয় এমপিরা আমাদের শোনায় উনার বেস্ট চিকিৎসা নাকি বাংলাদেশে হচ্ছে। বাংলাদেশে যদি সেরা চিকিৎসাটা হতো তাহলে কেন আমরা দেখি অতি সাধারণ মানুষও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চিকিৎসা জন্য ছুটে যাচ্ছে।

এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উকিল আবদুস সাত্তার, বগুড়া ৪ আসনের মোশাররফ হোসেন, চাপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের আমিনুল ইসলাম।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ২০ দলীয় জোটের ৫ দলের আবেদন: হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ পাঠাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে সরকারপ্রধানের কাছে আবেদন করেছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ৫ শরিক দল। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিমের (বীর প্রতীক) নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের এই প্রতিনিধি দল গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দপ্তরে যান। এসময় প্রতিনিধি দলে ছিলেন- ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপির) চেয়ারম্যান কেএম আবু তাহের, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, আমাদের আসার উদ্দেশ্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা, তাকে বিদেশে পাঠানোর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের নিকট আবেদন করা। লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি, মুখেও ব্যাখ্যা করেছি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তরিকতার সাথে কথাগুলো শুনেছেন। তিনি তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।

পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, তাদের আবেদন আমি যথাযথভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দেব।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, জোটের পক্ষ থেকে নয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে নিজস্ব চিন্তা থেকে তারা খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর আবেদন নিয়ে সরকারের দ্বারস্ত হয়েছেন। বিএনপির ঊর্ধ্বতন মহলও বিষয়টি জানে। বেগম খালেদা জিয়া এত বেশি গুরুতরভাবে অসুস্থ যে দেশে চিকিৎসার মাধ্যমে তার সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা কম। সব প্রকার রাজনৈতিক মতপার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে, রাজনীতির অতীতের ভুল-ভ্রান্তিকে ভুলে গিয়ে একান্তভাবে মানবিকতার দৃষ্টান্ত স্বরূপ, একান্তভাবে সহমর্মিতা প্রদর্শন করে সরকার যেন বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেন। প্রধানমন্ত্রীর নিকট ব্যক্তিগতভাবে আবেদন, তিনি অনুমতি দিলে হয় সরকার বন্দোবস্ত করে পাঠাবে, বা দল বন্দোবস্ত করে পাঠাবে। এই কাজটি যদি করা হয়, আমরা মনে করি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এটা সর্বশ্রেষ্ঠ মানবিকতার, উদারতার ও সৌজন্যবোধের দৃষ্টান্ত হিসেবে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খালেদা জিয়া

২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ