Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘বাংলাদেশ তার পথ হারিয়েছে?’

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ভারতীয় পার্লামেন্টে উচ্চ কক্ষের মনোনীত সদস্য, বর্ষীয়ান সাংবাদিক, কলামিস্ট, মানবাধিকার কর্মী ও লেখক কুলদীপ নায়ারের ‘হ্যাজ বাংলাদেশ লস্ট ইট্্স ফোকাস?’ শীর্ষক একটি নিবন্ধ গতকাল ভারতীয় দ্য স্টেটসম্যান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকার পাঠকদের জন্য সেই নিবন্ধের অনুবাদ প্রকাশ করা হ’ল:
“ঢাকায় পৌঁছার পর আপনার বুঝতে খুব বেশি সময় লাগবে না যে, এটাই সেই দেশ, যা তার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। দূরবর্তী ও শোষণকারী পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে পূর্ব পাকিস্তানিদের যে বৈপ্লবিক চেতনা উদ্দীপ্ত করেছিল তার বিন্দুমাত্রও এখন নেই।
আরও খারাপ বিষয় হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠেছেন! তার বিরোধী দল বিএনপির প্রধান খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা কমেছে।
যদি কোন দেশ তার পায়ের বেঁড়ি ছিড়তে চায় তাহলে তাদেরকে পরাধীন করে রাখতে পারবে না কোন দেশÑ এটা প্রমাণ করতে ৪৫ বছর আগে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জেগেছিল এ দেশের মানুষ ও মুক্তিবাহিনী। তাদের তেমন অস্ত্রশস্ত্র ছিল না। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বিরাট মাপের একজন নেতা ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কায়দে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ছিলেন তার নেতা। কিন্তু তিনি যখন ঢাকা সফর করলেন এবং ঘোষণা দিলেন উর্দুই হবে রাষ্ট্রীয় ভাষা তখনই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন শেখ মুজিব।
পাকিস্তানে বসবাসকারী বাঙালিদের পরিচয় ছিল পশ্চিমাদের আধিপত্যের অধীনে। তারা বুঝতে পারলেন তাদের বাস্তবধর্মী পরিচয়ের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হচ্ছে পাঞ্জাবি সংস্কৃতি। যখন তারা তাদের সংস্কৃতিকে হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করলেন তখনই পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের ওপর শুরু করে নৃশংসতা।
এমনকি, শেখ মুজিব যখন পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন তখন তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন এটা সহ্য করতে পারেননি তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানের মূলশক্তি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো। পূর্ব পাকিস্তানের পতনের জন্য যদি কাউকে দায়ী করা হয় তাহলে তিনি হলেন ভুট্টো। তিনি এককভাবে ক্ষমতা হাতে রাখতে চেয়েছিলেন।
শেখ হাসিনার মূল বিরোধিতা আসে জামায়াতে ইসলামীর দিক থেকে, যারা এখনও ধর্মের কার্ড ব্যবহার করছে। জামায়াতকে দেখা হয় পাকিস্তানের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে। বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে পাকিস্তানিরা যে নৃশংসতা চালিয়েছিল সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত জামায়াত পরোক্ষভাবে হলেও নিন্দা জানায়নি।
আমি মনে করেছিলাম জামায়াতে ইসলামীর বয়স্ক নেতাদের ফাঁসি দেয়াতে মনোভাবে বিরাট কোন পরিবর্তন আসবে। কিন্তু আমার বিস্ময়ের বিষয় হলো, আমি দেখলাম যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের ফাঁসি দেয়াতে জনগণ খুশি। পাকিস্তান একটি ইসলামিক দেশ এবং ইসলামিক উম্মার একটি অংশ। তাই হয়তো পাকিস্তানের ভূমিকার বিষয়ে নীরব জামায়াত।
একসময় বামদের একটি শক্তি হিসেবে দেখা হতো। তারা তাদের ক্যাডারসহ সেই আবেদন হারিয়েছে। পেশাদারিত্ব আকর্ষণ করছে তরুণদের। ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করছেন। কারণ, সরকারের প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে ঘুষ দুর্নীতি। এই ধারা সারা বাংলাদেশে বিদ্যমান।
তবু মন্দের ভাল যে, জনগণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পছন্দ করে। প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের মাধ্যমে তারা তাদের বিশ্বাসের প্রকাশ ঘটায়। বেশি দিন আগের কথা নয়, জনগণের অসন্তোষ এক সময় রাজপথে বিক্ষোভে রূপ নিতো। তাতে স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হতো। বিলম্বে হলেও এর প্রভাব পড়তো জনগণের ওপর। বাজারঘাটে দোকানপাট বন্ধ হয়ে যেত। কলকারখানা বন্ধ হয়ে যেত। এতে শুধু তাদেরই ক্ষতি হতো। তারা বুঝতে পেরেছে যে, তৈরি পোশাক উৎপাদনের পরিবেশ ধ্বংস করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে না। এই শিল্পটি হলো রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একমাত্র বড় উৎস। চালিকাশক্তি হলো সম্পদ, যা গুটিকয় হাতে জমা থাকে। তারা শুধু ব্যবসায়ই নির্দেশনা দেয় তা নয়। একই সঙ্গে রাজনীতিতেও নির্দেশনা দেয়। অনেক শিল্পপতি রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিবিশেষকে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য অর্থ দিয়ে থাকেন, যাতে তারা রাজনীতিতে তাদের প্রভাব বজায় রাখতে পারেন। সরকারের গৃহীত কর্মসূচিতে তারা প্রভাব ধরে রাখতে পারেন।
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মতো বাংলাদেশে মিডিয়ার স্বাধীনতা শুধু নামমাত্রই। সম্পাদকদের স্বাধীনতা আছে এতটুকুই যে, তাদের মালিক তাদের কাছে কী চান। আদর্শগতভাবে, অর্থনৈতিকভাবে ও সামাজিকভাবে বাংলাদেশ কোন পথে ধাবিত হচ্ছে এ প্রশ্নটি আমি অনেকজনকে করেছিলাম। রাজনীতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এক শিক্ষাবিদ আমাকে বললেন, বাংলাদেশ তার পথ হারিয়েছে এবং তিনি জানেন না কোন পথে ধাবিত হচ্ছে দেশ।
শেখ হাসিনার প্রধান শক্তি হলো নয়া দিল্লি, যারা তাদের পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন তার প্রতি। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) প্রকাশ্যে বলছে যে, নিজের কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের কারণে ভারতের ভাবমর্যাদাও নষ্ট করছেন হাসিনা। তিনি কোন সমালোচনা সহ্য করেন না। তার সমালোচকরা ক্ষতির মুখে পড়ে, যাতে তারা বুঝতে পারেন তিনি ও ভারত সমার্থক হয়ে উঠেছেন। বাংলাদেশে কখনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না। তা সত্ত্বেও যদি নির্বাচন হয় তাহলে আগেভাগেই বলে দেয়া যায় যে, শেখ হাসিনা পরাজিত হবেন না। জামায়াতের সঙ্গে আঁটঘাট বাঁধার কারণে বেগম খালেদা জিয়াও নিজের জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারেননি। প্রকৃত অর্থে তিনি শাস্তির মুখোমুখি, যা তিনি এড়াতে পারবেন বলে মনে হয় না।   
যা হোক একটি বিষয় নিশ্চিত যে, যখনই নির্বাচন হোক খালেদা এবার তা বর্জন করবেন না। বিএনপি বুঝতে পেরেছে যে, জাতীয় সংসদে যদি তাদের সামান্য সংখ্যক সদস্যও থাকেন তাহলে তারা জনগণের কাছে শেখ হাসিনার ভুলভ্রান্তিগুলো তুলে ধরতে পারবেন। দেশের স্বার্থ এখন যেভাবে দেখা হয় আগে কখনো সেভাবে দেখা হয়নি। কারণ, এখন হাসিনা ও খালেদা দু’জনের বিষয়েই মানুষের মোহমুক্তি ঘটেছে। তবে এ দু’বেগমই বাংলাদেশের জন্য অনিবার্য পরিণতি। তাতে জনগণের কাছে তারা যতটাই অজনপ্রিয় হোন না কেন।”



 

Show all comments
  • রেজাউল করিম মুকুল, ২৩ আগস্ট, ২০২১, ৯:৪৯ এএম says : 0
    ভারতীয় লেখক ও দৈনিক হিন্দুস্হান টাইমসের বর্ষিয়ান সাংবাদিক করণ থাপা লিখেছেন, “ভারতীয় নাগরিক হওয়ার চেয়ে বাংলাদেশে উইপোকা হয়ে বেঁচে থাকা হাজার গুণ ভালো। ভারতীয় অর্থনীতি এখন ক্ষয়িষ্ণু প্রবণতায় ভুগছে। এই অবস্থার মধ্য দিয়েই গত বছরের শেষ নাগাদ বার্ষিক উৎপাদন প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ৫ শতাংশে, এবছর শেষে দাড়াবে -৯। অর্থনীতির এমন বিপর্যয়ে জনতার নজর নিজেদের ব্যর্থতা থেকে দূরে সরাতেই সাম্প্রদায়িক রাজনীতির নতুন কৌশল‘বাংলাদেশি’ অনুপ্রবেশের হুজুগ তুলেছে বিজেপিসহ হিন্দুত্ববাদী বেশ কিছু রাজনৈতিক দল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ‘বাংলাদেশ তার পথ হারিয়েছে?’

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ