পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার : এরশাদের জাতীয় পার্টি আবার দ্বিখন্ডিত হলো। জিএম কাদেরকে দলের কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করার পর গতকাল বেগম রওশন এরশাদকে জাতীয় পার্টির একাংশের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০০৭ সালে ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সরকারের সময় এরশাদ প্রেসিডিয়াম সদস্য আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় পর রওশন এরশাদ পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে নিজেকে দলের একাংশের চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন। অতঃপর মহাসচিব করেন গোলাম মসিহকে। অবশ্য ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ইস্যুতে কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে দলের একাংশ ২০ দলীয় জোটে চলে যান। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণার পর গতকাল সকালে বেগম রওশন এরশাদ মন্ত্রীত্বে ও সংসদে থাকা দলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে দিনে বৈঠক করেন। সন্ধ্যায় তিনি দলের অনুগত কয়েকজন এমপির সঙ্গে গুলশানের বৈঠক করেন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর দলের মহাসচিব জিয়া উদ্দিন আহমেদ বাবলু বেগম রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা দেন। বাবলু জানান, দলীয় এমপি ও প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত থাকা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, চেয়ারম্যান নিষ্ক্রিয় হলে অন্য একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করতে হবে। এর আগে দিনভর চলে দল ভাঙন নিয়ে আলোচনা। তিন মন্ত্রী প্রতিমন্ত্রী ও কয়েকজন এমপি ছাড়া সবাই এরশাদের সঙ্গে থাকবেন বলে জানা গেছে। তারা দিনভর অপেক্ষা করেন রওশন এরশাদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য। কিন্তু তাদের জানানো হয় দু’দিন পর তিনি এ নিয়ে কথা বলবেন। তবে আওয়ামী লীগ পন্থী হিসেবে পরিচিত আনিস-বাবলুর চাপে তিনি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট নিয়ে বিরোধে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত স্বামী এরশাদ ও সংসদে ক্ষমতাসীন বিরোধী দলী নেতা স্ত্রী রওশন এরশাদের বিবাদ এবার দলকে দিখ-িত করলো। এরশাদ চাচ্ছেন সরকার থেকে বের হতে। আর রওশন সরকারের সাথে থেকে হালুয়ারুটির ভাগবাটোয়ারার সুযোগ ছাড়তে নাজার।
রংপুরের এক সভায় জাতীয় পাটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে দলটির কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করায় এরশাদের জাতীয় পার্টিতে আবার শুরু হয় এই গৃহদাহ। দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে শেকড় পর্যায়ের নেতারা এরশাদের এ সিদ্ধান্তে খুশি হলেও আওয়ামী লীগপন্থী হিসেবে পরিচিত ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলু হয়েছেন ক্ষুব্ধ। একই সঙ্গে বেগম রওশন এরশাদও অস্তিত্বের সংকটে পড়ে গেছেন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ আওয়ামী লীগপন্থী নেতারা। তারা চাপ দেন রওশন এরশাদ যেন পদক্ষেপ গ্রহণ করে এরশাদের এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। আলোচনার এক পর্যায়ে এরশাদকে হটিয়ে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করা হয়।
এর আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রবিবার রংপুরের এক কর্মী সম্মেলনে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানানো হয়, আগামী এপ্রিল মাসে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান। পার্টির চেয়ারম্যান জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠানের জন্য গোলাম মোহাম্মদ কাদেরকে আহ্বায়ক ও এবিএম রুহুল আমীন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি ঘোষণা করেছেন। দলের নেতারা এই ঘোষণায় উজ্জীবিত হলেও প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেছেন, ‘এরশাদ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এটা গঠনতন্ত্রে নেই।’ ব্যারিষ্টার আনিসের এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা জানান, ওয়ান/ইলেভেনের পর যে ধারায় এরশাদ দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে নিয়োগ দিয়েছিলেন; সেই একই ধারায় জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছেন।
এইচ এম এরশাদ রংপুরের সভায় বলেছেন, গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যান পদ নেই। তবে ৩৯ ধারায় চেয়ারম্যানের ক্ষমতায় এ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আগামী জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হবে। এরশাদের এই ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করেছেন ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। সূত্রের দাবি দলে আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নিজস্ব কোনো শক্তি নেই। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে খুঁটি হিসেবে ব্যবহার করেই তিনি এমন বক্তব্য দেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রীত্ব করলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন জিএম কাদের। তাছাড়া সরকারের ‘নাচের পুতুলে’ পরিণত হওয়ায় বেগম রওশন এরশাদের কোনো অবস্থানই দলে নেই। কয়েকজন এমপি আর তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সঙ্গে থাকলেও কেন্দ্র থেকে শুরু করে জেলা উপজেলা পর্যায়ে কেউ তার সঙ্গে নেই। কারণ সব নেতাই এরশাদের পক্ষে। আবার জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটি মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুকে পাশ কাটিয়ে এবিএম রুহুল আমিন হওলাদারকে সদস্য সচিব নিয়োগ দেয়ায় বাবলু পদ হারানোর আতঙ্কে পড়ে যান। এরশাদের এ সিদ্ধান্তে আতঙ্কিত হয়ে বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গে তার (বাবলু) সাপে-নেউলে হলেও স্বার্থের কারণে রওশনের বাসায় যান। তাকে বোঝাতে সক্ষম হন আগামী দিনে এখনই পদক্ষেপ না দিলে রওশন শূন্য হয়ে যাবে। ব্যারিষ্টার আনিসের বক্তব্য খ-ন করে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী বলেন, এরশাদের সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী। স্যার (এরশাদ) যে ধারায় ২০০৭ সালে আনিস ভাইকে (ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করেছিলেন; এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে বাদ দিয়ে যে ধারায় জিয়াউদ্দিন আহমদ বাবলুকে মহাসচিব করেছেন সেই একই ধারায় জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করেছেন। আর এরশাদ জানিয়ে দিয়েছেন জাতীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন করা হবে। এটা এরশাদের রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি। দলের বেশ কয়েকজন নেতা জানান, এরশাদের সিদ্ধান্ত ইস্যুতে বেগম রওশন এরশাদ এখনো নীরবতা পালন করলেও তিনিও কোনোভাবেই এমন সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারবেন না। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করার ইস্যুতে স্বার্থের কারণেই বেগম রওশনের সঙ্গে আনিস-বাবলুর দূরত্ব কমে যাবে। সরকারের মাধ্যমে চাপ প্রয়োগ করে এরশাদকে আবার ‘সকালে এক সিদ্ধান্ত বিকেলে আরেক সিদ্ধান্ত’ এর আনপ্রেডিক্টেবল নেতা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হবে। কারণ আকাশের তারা গোনা যেমন দুষ্কর তেমনি এরশাদের মন বোঝা দুষ্কর। আর মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা কোনোভাবেই পদত্যাগ করতে চাচ্ছেন না। প্রয়োজনে তারা দল বদল করতে পারেন বলেও জানা গেছে। তবে জাতীয় পার্টির নেতারা বলছেন, জিএম কাদেরের সঙ্গে কর্মীদের সম্পর্ক নিবিড় না হলেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের ভূমিকায় তিনি কর্মীদের প্রিয় হয়ে যান। তবে স্ত্রীকে ডিঙ্গিয়ে ভাইকে কো-চেয়ারম্যান করা ইস্যুতে অচিরেই এরশাদের জাতীয় পার্টি যে গৃহদাহের মুখোমুখি হচ্ছে তা পরিষ্কার। দলের একাধিক নেতা জানান, অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে জাতীয় পার্টি আরেকবার ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। তবে আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে নেয়ায় জিএম কাদের এখন বেশ জনপ্রিয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাপার প্রেসিডিয়ামের এক সদস্য জানান, জিএম কাদের কো-চেয়ারম্যান হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে এরশাদের অবর্তমানে রওশন এরশাদের দলের চেয়ারম্যান হওয়ার পথ কার্যত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এটা বুঝতে পেরে তিনি নীরব থাকবেন বিশ্বাস হচ্ছে না। এরশাদকে তিনি ঠিকই থামাবেন। জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান করায় আনিস-বাবলুর মধ্যে যে উত্তেজনা উদ্বেগ-উৎকন্ঠা শুরু হয়েছে তা এমনিতেই বন্ধ হবে মনে হয় না। দলের নেতারা যখন এসব নিয়ে জল্পনা-কল্পনায় ব্যস্ত তখন রওশন এরশাদকে ভারপ্রাাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা দিয়ে এরশাদের জাতীয় পার্টি কার্যত আবার দ্বিখ-িত হয়ে গেল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।