পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন দেশে যাও’ মুসলিম মনীষীর এ বাণী শত শত বছর ধরে আমাদের সমাজে পাচ্ছে অপরিসীম গুরুত্ব। সেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। উদীয়মান বিশ্বশক্তি এবং সারা দুনিয়ার দ্বিতীয় অর্থনীতির শক্তিধর চীনের কোনো রাষ্ট্রপ্রধানের ৩০ বছর পর ঢাকা সফর বাংলাদেশের অর্থনীতি-রাজনীতি তো বটেই, বিশ্ব রাজনীতির জন্যও তাৎপর্যপূর্ণ। আগামী দিনে বিশ্ব রাজনীতির গতি প্রকৃতি কেমন হবে তার অনেকটাই নির্ভর করে এই গণচীনের ওপর। আর যাদের ডলার ছাড়া বিশ্বের অর্ধেক দেশের অর্থনীতির চাকা ঘোরে না সেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টও এসেছিলেন বাংলাদেশে। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ইস্যুতে ওই ব্যাংকের সঙ্গে বিরোধের পর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের টানাপোড়েনের মধ্যেই দুই দিনের সফর করে গেছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। দু’টি সফর রাজকীয় সফরই ঐতিহাসিক মর্যাদার দাবি রাখে। বিশেষ করে গণচীনের প্রেসিডেন্টকে যেভাবে সংবর্ধনা দেয়া ও সমাদর করা হয়েছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের প্রকল্প সরেজমিন ঘুরে ঘুরে দেখেছেন। তিনি গ্রামীণ জনপদে গাভী পালন-মাছ-সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা নারীদের ‘নতুন জীবনের’ গল্প শুনে ‘অভিভূত’ হয়েছেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দেয়া ‘গণবক্তৃতা’য় বাংলাদেশের ‘উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ’ দেখার কথা উল্লেখ করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষুদ্রঋণে স্বাবলম্বী হওয়া প্রান্তিক মানুষের কাহিনী তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশে এসে আমি নিজের চোখে ইতিহাস দেখেছি’। আর চীনের মহামান্য প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফরের ইতিকথা হলো ‘তিনি এলেন দেখলেন জয় করে চলে গেলেন’ এর মতোই। বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা-ে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের রফা-দফা করেছেন। শি জিনপিং শুধু বাংলাদেশ সরকারের মন জয় করেননি; তিনি মাঠের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত বিএনপিসহ সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করে ফিরে গেছেন।
ইতিহাসে দেখা যায় গণচীন শত শত বছর ধরে বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। সেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ১৪ অক্টোবর সাড়ে ২২ ঘন্টার রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন। শনিবার দুপুর ১২ টায় বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত ঢাকার শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামেন এবং পরের দিন ১০ টার পর তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। দেয়া হয় রাজকীয় সংবর্ধনা। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট মোঃ আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে বঙ্গভবনে নৈশভোজে অংশ নেন। বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে। হোটেলে শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বঙ্গভবনে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে। বৈঠক শেষে চীনের প্রেসিডেন্টের সম্মানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় বঙ্গভবনে। আহা! এ যেন দুই দেশের মধ্যকার সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে চীনের সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরাও ছিলেন। এ সময় দু’দেশের মধ্যে ২৭টি নানা ধরনের চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। প্রাচীন জ্ঞান ভা-ারের তীর্থস্থান চীনা প্রেসিডেন্ট যে বিপুল বিনিয়োগ নিয়ে ঢাকায় আসেন বিনিয়োগ চুক্তির মাধ্যমে সেটা বোঝা যায়। শি জিনপিং-এর কথায় ‘বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক এক নতুন ঐতিহাসিক অধ্যায়ের সূচনায়। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বন্ধু হিসেবে পাশে থাকতে চীন প্রস্তুত। দু’দেশের সম্পর্ক এখন কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কে উন্নীত হবে। ২০১৭ সাল হবে দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের বছর’। চীন বাংলাদেশকে ২৪ বিলিয়ন (২ হাজার ৪শ’ কোটি ডলার) ঋণ দেবে বিভিন্নখাতে। বেশিরভাগই অবকাঠামো খাতে। এর মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম এবং খুলনায় দু’টি বড় তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে একটি টানেল তৈরির প্রকল্পেও অর্থ সহায়তা দিচ্ছে চীন। এছাড়া চীনা অর্থ সাহায্যে একটি সার কারখানা, ন্যাশনাল ডাটা সেন্টার এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট নামে একটি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হচ্ছে। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সফরে আসা ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ব্যবসা সংক্রান্ত ১৩টি চুক্তি হয়েছে। ১৩ চুক্তিতে প্রায় এক হাজার তিনশ’ ষাট কোটি ডলার ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা আছে। চীন বঙ্গোপসাগরে সমুদ্র বন্দরও নির্মাণ করার আগ্রহ দেখিয়েছে।
শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরের সময় ৪০ বিলিয়নে চুক্তির কথা মিডিয়ায় প্রচার হলেও প্রকৃতপক্ষে কত টাকার চুক্তি হয়েছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। চুক্তির মধ্যে চীন কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ হবে, কী পরিমাণ অর্থঋণ হিসেবে দেবে, শর্ত কী থাকবেÑ এসব পরিষ্কার হতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। তবে যেসব প্রকল্প নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক হয়েছে সেসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু অর্থায়ন কীভাবে হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে ক্রয়ের ক্ষেত্রে ‘বেস্ট ডিল’ হচ্ছে কি না সেটা বিবেচ্য বিষয়। জানা যায়, অর্থায়নে ২ শতাংশ সুদের হার, প্রক্রিয়া খরচ, প্রতিশ্রুতি ফি, কত বছরে পরিশোধযোগ্য (গ্রেস পিরিয়ড) ঋণ দেওয়া হচ্ছে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। এসব প্রকল্প অন্য উপায়ে অর্থায়ন করা যেত কি না, সেখানে কী ধরনের শর্ত থাকত। ক্রয়ের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা তো আছেই। প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়নকারী দেশ থেকে কাঁচামাল- ইলেক্ট্রোনিক্স সরঞ্জাম কিনতে বলা হয়। এতে অনেক সময় ১০০ ডলারের পণ্য ৫ থেকে ১০ ডলার বেশি দিয়ে কিনতে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ঠিক সময়ে প্রকল্প বস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হলেও কমিটমেন্ট ফি থাকলে তা তো দিয়েই যেতে হবে। উদীয়মান বিশ্বশক্তি চীন অর্থনৈতিক দিক থেকে এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। তবে ইংরেজদের মতো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর মতো নয়। ইংরেজরা বিশ্বের দেশে দেশে ব্যবসার জন্য গিয়ে কূটচালে দেশ ‘দখল’ করতো। চীন দেশ দখল নয়; ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ফলে বিপুল পরিমাণ অর্থ লগ্নি করা চীন নিজেদের লাভ বিবেচনায় না করে আসেনি এমন নয়। আর এমন এক সময় চীনের প্রেসিডেন্ট ঢাকা সফর করলেন যখন এই অঞ্চলে যুদ্ধের দামামা বাজছে। ভারতের নেতৃত্বে এই অঞ্চলে পাকিস্তানবিরোধী একটি জোট গঠন করার প্রচেষ্টা চলছে। অথচ এই জোট চীনের বিরুদ্ধেই। ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস-বিমসটেক সম্মেলনে সেটার প্রকাশও ঘটেছে। চীনের বাধার কারণে ভারত পাকিস্তানকে একঘরে করার নীতিতে সুবিধা করতে পারেনি। তবে বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে অনুকূলে রাখতে ব্যবসার পাশাপাশি চীন সব সময় নীরব কূটনীতি চালিয়ে যেতে অভ্যস্ত। তারা এখনো সেটাই করছে। দিল্লীর কব্জায় থাকা ঢাকাকে বেইজিং বন্ধুত্বের মাধ্যমে নতুন উচ্চতায় নিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে প্রকাশ্যে যাই বলা হোক ‘ঢাকা-বেইজিং গলাগলি’ দিল্লী কিভাবে নিচ্ছে? কারণ, গত বছর নরেন্দ্র মোদী ঢাকা সফরে ২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রতিশ্রুতি দেন; সেখানে শি জিনপিংয়ের প্রতিশ্রুতি প্রায় ২০গুণ বেশি! বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতিতে শক্তিশালী হলেও চীন ব্যবসা করে, কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় না। যদিও পাকিস্তান ও মায়ানমারের সঙ্গে দেশটির সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের হওয়ায় ওই দেশ দু’টির প্রতি তারা দুর্বল। ঢাকা সফরে এসে গণচীনের প্রেসিডেন্ট একটি রাজনীতির বার্তাও দিয়ে গেছেন বাংলাদেশের মানুষকে। অনেক চেষ্টা তদবির করেও জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে বৈঠকে রাজী হননি চীন প্রেসিডেন্ট। তাহলে কি বর্তমানের বিরোধী দলের প্রতি অবজ্ঞা ! ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর গঠিত সংসদের বর্তমান বিরোধী দলকে চীনের প্রেসিডেন্টের পাত্তা না দেয়ার মধ্যে গণতন্ত্র এবং ভোটের অধিকারের মেসেজ রয়েছে। সেই সঙ্গে তিনি বিএনপির নেত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যে গুরুত্ব দিয়েছেন তা প্রণিধানযোগ্য বটে।
এদিকে ১৬ অক্টোবর দুইদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। তিনি মূলত ‘বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত দিবস’ পালন করতে ঢাকা আসেন। তিনি ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। বাংলাদেশের স্বাবলম্বী নারীদের কাহিনী স্বচক্ষে দেখতে বরিশালে যান। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়ন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন এবং সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা একটি বাড়ি ঘুরে দেখেন। বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং এই ঝুঁকি মোকাবেলায় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ নিজের চোখে দেখেন। দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াইয়ে সাফল্য দেখে অভিভূত বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট সংবাদ সম্মেলন নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেছেন, ‘বাংলাদেশে যা দেখেছি তাতে আমি অভিভূত। দারিদ্র্য বিরোধী লড়াই, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় উদ্ভাবনী উদ্যোগের অনেক দৃষ্টান্ত আমাকে স্বাগত জানায়। মানুষের উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমি বিমোহিত’। তবে নিম্নমধ্যম আয় থেকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৩০ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্য নির্মূলে বাংলাদেশের সামনে ‘অনেক প্রতিবন্ধকতা’ রয়েছে বলে মনে করেন জিম ইয়ং কিম। কাক্সিক্ষত সাফল্য পেতে বাংলাদেশ সরকারের করণীয়ের তিনটি খাত চিহ্নিত করে তিনি পরামর্শ দেন। প্রথমতঃ ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত করতে নীতিতে সংস্কার প্রয়োজন। দ্বিতীয়তঃ প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির করতে হবে। তৃতীয়তঃ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। যার মধ্যে শক্তিশালী বেসামরিক প্রশাসন, বিচার বিভাগ, সরকারি ব্যাংক, রাজস্ব সংগ্রহ ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে ‘নিরপেক্ষ’ ভূমিকায় থাকতে হবে। সুশীল সমাজকেও গুরুত্ব দিতে হবে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশকে ২শ’ কোটি ডলার দেওয়ার ঘোষণা দেন। আগামী তিন বছরে এ অর্থ পাবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকে শিশুর পুষ্টির অভাব দূর করার লক্ষ্যে একশ’ কোটি ডলারের প্রতিশ্রুতি দেন। জিম ইয়ং কিম বলেছেন, ‘উদ্ভাবনী ধারণা দিয়ে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন নতুন উদ্ভাবনী ধারণা দেখেছি। এ ধরনের সাফল্যের ইতিহাস আমি নিজের চোখে দেখেছি। আমি বাংলাদেশের মানুষের সুন্দর ভবিষ্যৎ দেখতে পাচ্ছি।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সম্পর্কে দূরত্বের সৃষ্টি হয় পদ্মা সেতু দুর্নীতি ইস্যুতে। পদ্মা সেতুর ঋণে বাংলাদেশের প্রভাবশালী কয়েকজনের ‘দুর্নীতির অভিপ্রায়’ অভিযোগ তুলে ঋণচুক্তি বাতিল করে। তার আগে দুর্নীতির অভিপ্রায় ইস্যু নিয়ে সারাবিশ্বে তোলপাড় হয়। একজন মন্ত্রীকে দুর্নীতির দায়েই মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। কানাডায় মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের গ্রেফতার অনেক ঘটনা-রটনা ঘটে। পদ্মা সেতুর ভবিষ্যৎ যখন অনিশ্চিত; তখন বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেতু নির্মাণ চলছে। বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে যুগের পর যুগ ধরে দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, আইএমএফের প্রেসক্রিপশনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, পণ্যমূল্য বৃদ্ধি ও জনগণের ওপর করের বোঝা বাড়ানোর অপবাদ ছিল। বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে সেই অপবাদ কিছুটা ঘুচেছে। যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সাপে-নেউলে সম্পর্ক তার প্রধান নির্বাহীর ঢাকা সফর এবং তিনশ’ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের জন্য সাফল্যই।
বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মানুষ অতিথি পরায়ণ হিসেবে পরিচিত। উন্নয়ন সহযোগী দেশ চীন ও উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রেসিডেন্টকে যে ভাবে সমাদর করা হয় তাতে তারা দারুণ খুশি। চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনের গল্প শুনে অভিভূত হয়েছেন। এটা তারা প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি। বিদেশী দুই ‘রাজ অতিথি’কে সমাদর করে বাংলাদেশ যে সাফল্য দেখিয়েছে তা উভয়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরো মজবুত করবে। সম্পর্ককে করবে আরো গাঢ়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।