পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকার দুই সিটিতে পাবলিক টয়লেট : ৭৯টি, প্রস্রাব করলেই দিতে হয় ১০ টাকা
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন প্রিয়-অপ্রিয়-প্রাসঙ্গিক-অপ্রাসঙ্গিক-উল্টাপাল্টা কথা বলার জন্য নানা সময় সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। তার বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। তবে মাস দুয়েক আগে তার একটি বক্তব্য ভাইরাল হলে তিনি ‘বাহবা' পান। ভারতের এক টিভি চ্যানেলের সংবাদিক বাংলাদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে জানতে চান, বাংলাদেশের জনস্রোত ভারতমুখী কেন হচ্ছে? জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাহসী জবাব দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের জনগণ ভারতমুখী হওয়ার কারণ নেই। বরং ভারতের অনেকেই বাংলাদেশে বৈধ-অবৈধভাবে চাকরি করছে। বাংলাদেশের লোক ভারতমুখী হবে কোন দুঃখে? ভারতে এখনো ৩০ কোটি মানুষের বাড়িতে টয়লেট নেই। তারা বন-বাদাড়ে কাজ সারেন। সে দেশে যাবে কেন? এ বক্তব্য দেয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রশংসিত হন।
বাংলাদেশে ৩০ বছর আগেও অনেক বাসা-বাড়িতে ল্যাট্রিন ছিল না। এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষ এখন স্বাস্থ্য সচেতন। ঘরে ঘরে টয়লেট সুবিধা। কিন্তু রাজধানী ঢাকা শহরের প্রায় আড়াই কোটি লোকের জন্য দুই সিটি কর্পোরেশন কি শতভাগ টয়লেট সুবিধা নিশ্চিত করতে পেরেছে? রাজধানী ঢাকায় প্রায় অর্ধকোটি লোক প্রতিদিন ঘর থেকে বের হন এবং চলাফেরা করেন। লাখ লাখ নারী কাজ করেন ঘরের বাইরে। তারা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। অথচ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৬৩টি আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। আর দক্ষিণ সিটির ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য বলছে, সংস্থাটিতে ২৮টি পাবলিক টয়লেট রয়েছে। এ ৭৯টি টয়লেট কর্মজীবী মানুষের চাহিদা মেটাতে পারছে? তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এর বাইরে বিভিন্ন এনজিও নির্মিত বেশ কয়েকটি টয়লেটও রয়েছে। বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে গণশৌচাগার রয়েছে। মানুষ সেগুলো ব্যবহার করছে। অথচ রাজধানী ঢাকায় বসবাসকারী মানুষ এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত।
স্থানীয় সরকার সিটি করপোরেশন আইনে বলা হয়েছে, করপোরেশন তার নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় পুরুষ এবং নারীদের জন্য পর্যাপ্ত পৃথক পায়খানা ও প্রস্রাবখানা নির্মাণ এবং তা যথাযথভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা করবে। এ আইনের কোনো কার্যকর দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল ছিল বিশ্ব টয়লেট দিবস। শতভাগ টয়লেট সুবিধা নিশ্চিতকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালিত হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবার সারাবিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়। গেল প্রায় দুই যুগ ধরেই দিবসটি পালন করা হলেও দেশে এখনও শতভাগ মানুষের স্যানিটারি টয়লেট নিশ্চিত করা যায়নি। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকাসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে পর্যাপ্ত পাবলিক টয়লেট নেই। যেগুলো রয়েছে সেগুলোতেও সেবার চেয়ে বেশি ‘ব্যবসা করা’ হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। শুধু প্রস্রাব করলেই কোথাও কোথাও ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। ফলে অতি জরুরি এই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
রাজধানী ঢাকা শহরে ভয়াবহ যানজটসহ নানা কারণে নগরবাসীকে দীর্ঘসময় যানবাহন ও রাস্তাঘাটে অপেক্ষা করতে হয়। বাসা থেকে বের হলেই শৌচাগারের প্রয়োজন হয় পথচারীদের। কিন্তু যে সংখ্যক পাবলিক টয়লেট থাকা প্রয়োজন, তা নেই। ফলে ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারীদের। বিশেষ করে কর্মজীবী নারীদের অবস্থা খুবই করুণ। নারীদের জন্য এই ভোগান্তি খুবই বিরক্তির এবং অস্বাস্থ্যকর। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই বাড়ির বাইরে বেরিয়ে পর্যাপ্ত টয়লেটের সুযোগ নেই।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের প্রফেসর ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, রাজধানীতে যে পরিমাণ মানুষের বসতি রয়েছে সে পরিমাণ পাবলিক টয়লেট নেই। প্রতি আধা কিলোমিটার অন্তর একটি টয়লেট থাকা আবশ্যক। সব মিলিয়ে নগরীতে ১ হাজার পাবলিক টয়লেটের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু সেখানে রয়েছে মাত্র শতাধিক! ইজারাপ্রথা থেকে বের হয়ে পাবলিক টয়লেটগুলোকে স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচালনা করা দরকার।
দুই সিটি করপোরেশন দাবি, নাগরিকদের জন্য তারা পাবলিক টয়লেট নিশ্চিত করতে কাজ করছে। এরই মধ্যে শতাধিক আধুনিক টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণাধীন আরও অর্ধশতাধিক। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে স্থাপিত টয়লেটগুলোতে নারী ও পুরুষদের জন্য আলাদা চেম্বার, হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সুবিধা, স্যানিটারি ন্যাপকিন, উন্নতমানের আয়না, সিসি ক্যামেরাসহ পেশাদার পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও নারী কেয়ারটেকারের ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পরিচ্ছন্নতার স্বার্থে জুতা খুলে ভেতরে রাখা স্যান্ডেল পরে ব্যবহার করতে হয় এসব শৌচাগার।
বাংলাদেশের প্রায় সব বাড়িতেই টয়লেট রয়েছে। তবে বিপত্তি হচ্ছে, ঢাকা মহানগরীতে অবস্থিত টয়লেটগুলো ইজারা দিয়ে রাজস্ব আয় বাড়াচ্ছে সিটি করপোরেশন। দিনদিন টয়লেটের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে, ঠিক সেভাবে সেবার মান বাড়ছে না। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে টয়লেটের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে নগরবাসীর। তা ছাড়া প্রয়োজনের তুলনায় টয়লেটের সংখা খুবই কম।
জানা গেছে, ডিএনসিসির ২০-২১ অর্থবছরে টয়লেট ও ঘাট ইজারা বাবদ রাজস্ব আয় হয়েছিল ৬০ লাখ টাকা। ২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। অন্যদিকে ডিএসসিসির ২০-২১ অর্থবছরে টয়লেট, পার্কিং, কাঁচাবাজার ও ভাগাড় থেকে ইজারা বাবদ আয় হয়েছিল ১১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ২০২১-২২ বাজেটে সম্ভাব্য আয় ধরা হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। জানতে চাইলে সংস্থার মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, ডিএনসিসির উদ্যোগে নাগরিকদের ব্যবহারের জন্য ৬৩টি আধুনিক গণশৌচাগার নির্মাণ করা হয়েছে। ডিএনসিসি এলাকায় ‘সবার ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে খুব সহজেই গণশৌচাগারের অবস্থানসহ সংশ্লিষ্ট তথ্যাদি পাওয়া যায়। যেকোনো নাগরিক প্রয়োজনের সময় তার নিকটস্থ গণশৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন।
নগরীর গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট মোডে অবস্থিত পাবলিক টয়লেটটিতে গিয়ে দেখা গেছে, টয়লেটটি স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরিচালিত হলেও সেখানে আগত সেবাপ্রার্থিদের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেয়া হচ্ছে। ফলে টাকা দেয়ার ভয়ে সাধারণ মানুষের অনেকেই যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করছেন। এরমধ্যে বেশিরভাগই নিম্নআয় ও কর্মজীবী মানুষ। এ ছাড়াও সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মহাখালী ওয়ারলেস গেটের পাবলিক টয়লেটে সরেজমিন দেখা যায়, প্রস্রাব করতেই ১০ টাকা নেয়া হচ্ছে। মানুষ তাই বেশি টাকার ভয়ে টয়লেট ব্যবহার না করে যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগ করছেন।
গত বৃহস্পতিবার দেশের স্যানিটেশন কার্যক্রমকে শতভাগ সফলের দাবি নিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়। ২০০১ সালে বিশ্বে টয়লেট ব্যবহার ও স্যানিটাইজেশন সম্পর্কে ক্যাম্পেইন শুরু করে ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশন। ওয়ার্ল্ড টয়লেট অর্গানাইজেশনের (ডাবিøউটিও) সর্বশেষ তথ্যমতে, বিশ্বে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন মানুষ বর্তমানে সঠিক ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।
দেশে স্যানিটেশন কার্যক্রমকে সফল করতে কাজ করা ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুর (ডরপ্) এর গবেষণা পরিচালক মোহাম্ম যোবায়ের হাসান ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন সেক্টরে যথেষ্ট উন্নতি করলেও এখনো দেশের ৬১ শতাংশ জনগণ নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের বাইরে আছে। অর্থাৎ তারা নিজেদের হাতের নাগালে প্রয়োজন অনুযায়ি মল ত্যাগের সুবিধা পায় না এবং যেখান থেকে পানির উৎস এবং পরিবেশ দূষণমুক্ত থাকছে না। জাতীয়ভাবে যে ৩৯ শতাংশ জনগণ নিরাপদ ব্যবস্থাপনার স্যানিটেশন সুবিধার আওতায় আছে, তাদের মধ্যে ৩২ শতাংশই গ্রামাঞ্চলে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-৬ (এসডিজি) বাস্তবায়নে আমাদেরকে ২২ শতাংশ মানুষকে নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশনের আওতায় আনতে হবে। যা আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
তিনি বলেন, উন্মুক্ত স্থানে মলত্যাগ বন্ধ হলেও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (ফিকাল সøাজ ম্যানেজমেন্ট) এখন স্যানিটেশনের নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। তাই ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য শৌচাগার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে সরকারগুলোকে চারগুণ বেশি গতিতে কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে এই খাতে বাজেট অপ্রতুল। তাই বাজেট বাড়ানোর পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে বলে উল্লেখ করেন মোহাম্ম যোবায়ের হাসান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।