পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেয়া নিয়ে বিতর্কের ঢেউ উঠেছে। জাতীয় সংসদ, সংসদের বাইরে সভা-সমাবেশ-সেমিনার-বক্তৃতা-বিবৃতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, ব্লগ, টুইটার সর্বোত্রই এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক।
অসুস্থতার কারণে বর্তমানে ‘সাজা স্থগিত’ খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শ দিয়েছে মেডিক্যাল বোর্ড। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়ার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পরিবার। অন্যদিকে আইনমন্ত্রী বলছেন, সাজা স্থাগিত অবস্থায় বেগম জিয়াকে বিদেশে যেতে দেয়া আইনের ৪০১ ধারা অনুমোদন করে না। তাবে কারাগারে নিয়ে নতুন করে আবেদন করলে বিবেচনা করা যেতে পারে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়ার বিষয়ে আইনমন্ত্রী সংসদে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক নয়। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৪০১ ধারার বিধানমতে, সরকার শর্তহীন বা শর্তযুক্তভাবে কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড মওকুফ করতে পারেন। এ আইনেই বলা হয়েছে, সরকার প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় এটার পরিবর্তন, সংযোজন এবং অন্য কোনো শর্ত আরোপ করতে পারেন। অর্থাৎ এটা সম্পূর্ণভাবে সরকারের এখতিয়ার।
দেশের সংবিধান বিশেষজ্ঞ ও প্রখ্যাত আইনজীবীরা বলছেন, সাজাপ্রাপ্ত আসামির উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেয়ার নজির রয়েছে। ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি আ স ম আবদুর রবকে জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। ২০০৮ সালে প্রায় অভিন্ন অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমকে বিদেশে পাঠানো হয়েছিল। বিএনপির নেতারা অভিযোগ করে বলছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছিল।
রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে গত ১১ নভেম্বর আবেদন করা হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার এই আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। অতপর খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার আবেদন করেছেন। এটি পঞ্চম আবেদন। এর আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়াকে বিদেশ নিতে আরো ৪ দফায় আবেদন করা হয়েছিল। সর্বশেষ গত ৬ মে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানো অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলেন শামীম এস্কান্দার। সেই আবেদন আইন মন্ত্রণালয় গেলে তা নাকচ হয়ে যায়।
জানা গেছে, বেগম জিয়াকে এভার কেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে চিকিৎসা চলছে। কয়েকদিন থেকে তার শারীরিক অবস্থার তেমন কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। হিমোগ্লোবিনও কমে গেছে। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য রক্ত দেওয়া হয়েছে। এছাড়া কিডনির ক্রিয়েটিনিন বর্ডার লাইন ক্রস করেছে। শরীর দুর্বল, খাওয়া-দাওয়ার রুচিও কম। সব বিষয় দেখাশুনা করছেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। গত ১৩ নভেম্বর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৭৬ বছর বয়সি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া অনেক বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। এর আগে অসুস্থতার জন্য টানা ২৬ দিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গত ৭ নভেম্বর তাকে বাসায় নেয়া হয়। তবে করোনা-পরবর্তী জটিলতায় এর আগে ২৭ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সে সময় এক মাসের বেশি সময় হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তি ছিলেন। শারীরিক অবস্থা উন্নতি হলে ১৯ জুন বাসায় ফেরেন তিনি। অতপর একাধিকবার তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।
খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার আবেদনের পর তার বোন সেলিনা ইসলাম বলেছেন, ‘এখানে খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসা আর সম্ভব নয়। আমরা তাকে সিঙ্গাপুর অথবা লন্ডনে নিতে চাই। সেখানে উন্নত চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করা হবে’। তবে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক জানিয়েছেন, বেগম জিয়াকে বিদেশে নিতে হলে আগে কারাগারে গিয়ে নতুন করে আবেদন করতে হবে। সাজা স্থগিত অবস্থায় তার বিদেশ নেয়ার আবেদন করা হয়েছে; আইনের মাধ্যমে এটা অনুমোদন করা সম্ভব নয়। এরপর বেগম জিয়ার বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা ইস্যুতে শুরু হয় তুমুল বিতর্ক।
সরকার সারাপ্রাপ্ত আসামিকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার নজির নেই দাবি করলেও বাস্তবে এমন নজির দেখা গেছে। আদালতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ার পরও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবকে ১৯৭৯ সালে উন্নত চিকিৎসার জন্য জার্মানি পাঠানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে মানবিক বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছিলে সবার আগে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে বলেন, বেগম জিয়াকে বিদেশে যেতে আইনের ব্যত্যয় ঘটলে শেখ হাসিনা (তৎকালীনবিরোধী দলীয় নেতা) কি করে চিকিৎসা নিতে বিদেশ গিয়েছিলেন মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনের আমলে? আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জলিল (আব্দুল জলিল) সাহেব কি করে সিঙ্গাপুর চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল? আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিমও বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি থাকাবস্থায়।
একাদশ জাতীয় সংসদের ১৫তম অধিবেশন শুরুর পর থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম জিয়াকে বিদেশে নেয়া ইস্যুতে বিতর্ক চলছে। উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সংসদ অধিবেশন। বিএনপির এমপিরা বেগম জিয়াকে আইনিভাবে বিদেশে নেয়া যায়, এমন আইনি প্রক্রিয়া বাতলে দিচ্ছেন। প্রয়োজনে মানবিক কারণে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার জোড়ালো দাবি তুলে ধরছেন। আর আইনমন্ত্রীসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক এমপি আইনের ৪০১ ধারা তুলে ধরে বেগম জিয়াকে বিদেশে নেয়া সম্ভব নয় মন্তব্য করছেন। গতকালও সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপির এমপি জিএম সিরাজ বলেন, খালেদা জিয়ার জামিন দিয়ে বিদেশে চিকিৎসার জন্য আবেদন করা হয়েছে। জামিন দিয়ে তাকে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক। প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছিলেন বিরাগের বশবর্তী হবেন না। সম্মান রেখেই বলছি ওনার বক্তব্যের সঙ্গে সেটার অসঙ্গতি দেখছি। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ নেতা সাজাপ্রাপ্ত মোহাম্মদ নাসিমকে জামিনে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আসম আব্দুর রবকে জামিনে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছিল। চিকিৎসার অভাবে খালেদা জিয়ার কিছু হয়ে গেলে সেই দায় আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে। এ সময় আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যরা হৈহুল্লর করে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। পয়েন্ট অব অর্ডারে জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার আইনগত সুযোগ নেই। ৪০১ ধারায় খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে জামিন দেওয়া হয়েছে। এই ৪০১ ধারায় কোনো বিষয়ে নিষ্পত্তির পর আবার সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আইন মোতাবেক অত্যন্ত পরিষ্কার মানবিক কারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে বাসায় থেকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যদিও তিনি সাজাপ্রাপ্ত, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। বাংলাদেশের আইনে এর বাইরে আর কিছু নেই। শেখ হাসিনাকে মামলা থাকার পরও বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, এটা অসত্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কখনো সাজাপ্রাপ্ত হননি। এটা সত্য তিনি বিদেশে গিয়েছিলেন, তাকে দেশে আসার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তারপও তৎকালীন সরকার দেশে আসার অনুমতি দিতে বাধ্য হয়েছিল। আসম আব্দুর রবকে আইনের কোন ধারায় বিদেশে চিকিৎসার জন্য তারা অনুমতি দিয়েছিল জানি না।
এদিকে বেগম খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন বলে জানিয়েছেন, দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, দেশে চিকিৎসা করে খালেদা জিয়াকে সুস্থ করা সম্ভব নয়, এমনটাই জানিয়েছেনÑ তার চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ড। তারা তাকে বিদেশে উন্নত কোনো মেডিক্যাল সেন্টারে দ্রুত স্থানান্তরের কথা জানিয়েছে। মেডিক্যাল বোর্ড স্পষ্টভাবে বলেছে যে, খালেদা জিয়া এমন একটি অবস্থায় আছেন, তা এখন সমাধানযোগ্য। কিন্তু সময়োপযোগী চিকিৎসা দেওয়া না হলে তার শরীরের অবস্থা যেকোনো মুহূর্তে ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারে। তিনি আরো জানান, করোনা আক্রান্ত হয়ে খালেদা জিয়া ৫৩ দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তখন তাকে পাঁচ ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে; যা তার মতো একজন বয়স্ক মানুষের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। গত ১২ অক্টোবর খালেদা জিয়া নতুন উপসর্গ নিয়ে আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন তার একটি বায়োপসি করা হয়। কিছুদিন বাসায় থাকার পর ১৩ নভেম্বর আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এবার রক্তদানের পাশাপাশি তার এন্ডোস্কপিও করা হয়েছে। তিনি জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি, সুচিকিৎসা ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে আগামী ২০ নভেম্বর সারা দেশে গণঅনশন কর্মসূচি পালিত হবে।
এর আগে গত ১৭ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সংবাদ সম্মেলনে জনৈক সাংবাদিক খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার আবেদন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমার মনে হয় এই প্রশ্ন করার জন্য আপনাদের লজ্জা হওয়া দরকার। যদি আপনার পরিবারকে কেউ হত্যা করত, আপনি কি তাকে ফুলের মালা দিতেন? আমরা অমানুষ নই। অমানুষ নই দেখেই আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটি দিয়ে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার। তাকেও আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে সাজা স্থগিত করে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।