Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

গণপরিবহনে থামছে না নৈরাজ্য

অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবি বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির আশ্বাস পেয়ে সড়ক ছাড়ল শিক্ষার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০১ এএম

ডিজেলে দাম বাড়ার পর গণপরিবহণে বাড়তি ভাড়ার নৈরাজ্য যেন থামছে না। যাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও আদায় করছে অতিরিক্ত ভাড়া। এ নিয়ে বিভিন্ন রুটে যাত্রী, চালক ও হেলপারের সঙ্গে প্রতিনিয়তই বাকবিতণ্ডার পাশাপাশি ঘটছে অপ্রীতিকর ঘটনা। এছাড়াও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়কে অবরোধ করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন ছাড়া বাসে বাসে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতিও। একই সঙ্গে সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
তবে গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁও মহিলা কলেজে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
তিনি আরো বলেন, গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে আমরা মনিটরিং করছি। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে নিয়ে বিআরটিএ বৈঠক করে নতুন বাস ভাড়া নির্ধারণ করেছে। এটা নিয়ে কোন জটিলতা থাকার কথা নয়। গণপরিবহনে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে, হাফ পাসের দাবিতে গতকাল সকালে ঢাকা কলেজের সামনে সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষক ও নিউমার্কেট থানা পুলিশের আশ্বাসে সড়কের অবরোধ তুলে নেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে হাফ পাসের বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দেন তারা।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে হাফ ভাড়া না নেওয়ার প্রতিবাদে এবং পরিবহন শ্রমিকদের বাজে আচরণ বন্ধের দাবিতে ঢাকা কলেজের সামনের সড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বেশ কয়েকটি গাড়ি আটকও করেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মিরপুর রোডে চলাচল করা বাসগুলো ওয়েবিলের অজুহাতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অল্প দূরত্বের পথেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করে। শিক্ষার্থীরা হাফ পাস দিতে চাইলে জোরপূর্বক গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া, খারাপ আচরণসহ নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়। সম্প্রতি তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে সিএনজিচালিত বাসগুলোতেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব সমস্যার সমাধানে তারা রাস্তায় নেমেছেন বলে জানান শিক্ষার্থীরা। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে কোনো ঘোষণা না এলে পুনরায় কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সড়ক অবরোধে অংশ নেওয়া জাকির হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছে তারা হাফ ভাড়া নিশ্চিত করবে, এজন্য আমরা রাস্তা ছেড়েছি। শনিবারের মধ্যে হাফ ভাড়া নিশ্চিত না করলে আবারও কঠোর কর্মসূচি দেব।
এ বিষয়ে ঢাকা কলেজ শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ড. মো. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার বলেন, শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ আছে। তাদের থেকে হাফ ভাড়া নেওয়া হয় না। অনেক বাসের স্টাফরা সব সময় খারাপ ব্যবহার করেন। ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। তবে এসবের সমাধান তো গাড়ি আটকে, রাস্তা অবরোধ করে হবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছি, মালিক সমিতির সঙ্গে বসে এসব সমস্যার সমাধান করব।
মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনার কথা জানিয়ে নিউমার্কেট থানার পুলিশ পরিদর্শক গিয়াস উদ্দিন বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলে আমরা সমাধানে আসার চেষ্টা করব।
গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার দাবিতে সড়ক অবরোধ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তেলের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে হাফ ভাড়ার কোনো সম্পৃক্ততা নেই, এ দাবি তাদের পুরনো। যা ট্যাস্কফোর্সের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় গত ৭ নভেম্বর বাস ভাড়া বাড়িয়েছে বিআরটিএ। কিন্তু নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় করছে পরিবহন শ্রমিকরা-এমন অভিযোগে রাজধানীতে প্রায়ই যাত্রীদের সঙ্গে শ্রমিকদের বাগবিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘঠনা ঘটে। এছাড়া সিটিং সার্ভিস ও গেটলকের নামে যাত্রীদের হয়রানি আরও বেড়েছে।
অপরদিকে, মালিক-শ্রমিক-সরকার মিলেমিশে একচেটিয়াভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়িয়ে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন ছাড়া বাসে বাসে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সঙ্গে সিটিং সার্ভিসের নৈরাজ্য ও ভাড়া ডাকাতি বন্ধের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।
বাসে ভাড়ার তালিকা প্রদর্শন না করে মালিকদের মর্জিমতো ওয়েবিল অনুযায়ী যাত্রীর মাথা গুনে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়; সরকারি তালিকা অনুযায়ী ভাড়া দিতে চাইলে যাত্রীদের অপমান-অপদস্থ করা; জোর জবরদস্তি করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা এবং এসবের প্রতিবাদ করলে কোনো কোনো বাসে যাত্রীদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটছে বলেও অভিযোগ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।
গতকাল সকাল ১১টায় ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। এতে বলা হয়, ঢাকার পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা বারবার ঘোষণা দিয়েও কথিত সিটিং সার্ভিস বন্ধ-চালুর ইঁদুর-বিড়াল খেলায় মেতে উঠেছে। এতে বলির পাঠা হচ্ছে যাত্রী সাধারণ। নানা অনিয়ম ও অযৌক্তিক, ভুয়া হিসাব দেখিয়ে তেলের দামের চেয়েও কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া বাড়িয়ে নিয়ে এখন রুটে রুটে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের জিম্মি করে আরও ৩ থেকে ৪ গুণ বাড়তি ভাড়া আদায়ের পাঁয়তারা করছে তারা।
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য বন্ধ ও যাত্রীদের অপমান, অপদস্থ করার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের কাছে সাধারণ যাত্রীদের দীর্ঘ জিম্মিদশার অবসানের জন্য ১৩ দফা দাবি তুলে ধরে সংগঠনটি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গণপরিবহনে নৈরাজ্য
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ