পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : সামনে স্কুল বা হাসপাতাল-হর্ন বাজানো নিষেধ। ইউ টার্ন নিষেধ। সর্বোচ্চ গতিবেগ ৪০ কিলোমিটার। সাবধানে রাস্তা পারাপার হোন। ফুটওভারব্রিজ ব্যবহার করুন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও মহাসড়কে এরকম সাইনবোর্ড বহু আছে। কিন্তু সেগুলো খুব কমই মানা হয়। ‘একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না,’ ‘সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি’, ‘সাবধান: সামনে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা’-এরকম সতর্কবাণীও সাইনবোর্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এগুলো না মানলে আইন প্রয়োগের ব্যবস্থাও নেই। বরং আইন করে গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেটিও মানছে না অনেকেই। ঢাকাসহ সারাদেশেই চলছে এরকম নিয়ম না মানার খেলা। এতে করে দুর্ঘটনা ঘটেছে। বাড়ছে প্রাণহানি।
রাজধানীর নিউমার্কেট থেকে গাবতলীর দিকে যেতে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ের কাছেই ঢাকা সিটি কলেজ। এ কলেজের প্রধান ফটকের সামনেই তিন রাস্তার মোড়। দু’দিকের রাস্তায় ‘হর্ন বাজানো নিষেধ’ সাইনবোর্ড থাকলেও বাস্তবে সেখানে উল্টো চিত্র। গাড়ির হর্নের শব্দে কানে কিছু শোনাই যায় না। এমনিভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, স্কয়ার হাসপাতাল কিংবা শমরিতা হাসপাতালের সামনে কোনো গাড়ির হর্ন বাজানো হয় নাÑ একথা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু এর সঠিক প্রয়োগ নেই। আবার অনেক আইন সম্পর্কে মানুষ জানেও না। গাড়ির হর্ন বাজানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একদিন আগেও আমি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে রোগী দেখে রিকশাযোগে ফিরছিলাম। হাসপাতালের অভ্যন্তরেই একটা গাড়ি বিকট শব্দে বার বার হর্ন দিতে থাকলে বিরক্ত হয়ে আমি নেমে ওআ গাড়িটা থামাই। তখন চালক জানায়, এটা ডাক্তার সাহেবের গাড়ি। আবু নাসের বলেন, একজন ডাক্তারের গাড়ি চালক জানেই না যে, হাসপাতালের অভ্যন্তরে এভাবে হর্ন দেয়া যায় না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। এজন্য গাড়ির মালিকদেরকে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। একই সাথে সারা দেশেই সচেতনতামূক কার্যক্রম জোরদার এবং আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে আরও দায়িত্বশীল ও কঠোর হতে হবে।
রাজধানীতে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারের জন্য সাইনবোর্ড লাগানোর পর তা কোনো কাজে আসে না বলেই এখন ফুটওভার ব্রিজের নীচের অংশে রাস্তার মাঝখানে লোহার বেড়া দেয়া হয়েছে। উপায় না পেয়ে মানুষ ফুটওভারব্রিজ ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে। যেগুলোতে এখনও বেড়া দেয়া হয়নি, সেগুলো সহসা কেউ ব্যবহার করে না। রাজধানীর যানজট কমাতে কোনো কোনো রাস্তার মাথায় ‘ইউটার্ন নিষেধ’ লেখা সাইনবোর্ড থাকলেও সেগুলো মানা হয় না। এর সাথে ইদানিং উল্টো রাস্তায় ভিআইপিদের গাড়ি চলাচলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। ব্যস্ত সময়ে ভিআইপি সড়ক মিন্টো রোডে ভিআইপিদের গাড়ি উল্টোপথে চলে বলে অনেকেরই অভিযোগ। মন্ত্রী যাই বলুন না কেন পুলিশ এখানে অসহায়। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ।
বিপজ্জনক এই প্রবণতা রোধ করতে ২০০৭ সালে মোটরযান আইনের সংশোধন করা হয়। ওই বছর ১২ জুলাই গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা না বলার ব্যাপারে মোটরযান আইনের ১১৫(বি) ধারাটি সংশোধন করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষিদ্ধ করা হয়। এমনকি ওই আইনে এয়ার ফোন ব্যবহারও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ আইন অমান্য করলে ৫০০ টাকা জরিমানা ও কারাদ-ের বিধান রয়েছে। কিন্তু এ আইন এখন অনেকেই মানছে না। ঢাকাসহ সারা দেশেই মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, বাস এমনকি ভারি যানবাহন, লরি, কাভার্ডভ্যান চালাতে গিয়েও চালকরা মোবাইল ফোনে কথা বলে। ইদানিং আবার নতুন অনুষঙ্গ যোগ হয়েছে। তা হলো ফেসবুক চ্যাটিং এবং সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করা। দেশের মহাসড়কগুলোতে দ্রুতগতিতে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরাও চলন্ত গাড়িতে মোবাইল ফোনে কথা বলতে দ্বিধা করেন না। অনেকেই বলেন, প্রায়ই চোখে পড়ে বাস চালকরা চলন্ত গাড়িতে মোবাইলে ফোনে কথা বলছে। এ সময় নিরাপত্তার কথা বলে কেউ হয়তো নিষেধ করে। আবার নিষেধে কাজ হবে না জেনে অনেকে নিশ্চুপ থাকেন। মোবাইল ফোনে কথা কলতে বলতে রাস্তায় চলাচল ও পারাপার হওয়া এখন ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। অসংখ্য পথচারী মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতেই ব্যস্ত রাস্তা পার হন। বিশেষ করে রেল লাইন ধরে হাঁটতে গিয়ে মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে নিজেই নিজের বিপদ ডেকে আনে। অথচ রেলওয়ের আইনে রেল লাইন ধরে হাঁটা নিষিদ্ধ।
এ প্রসঙ্গে আলাপকালে অনেকেই বলেছেন, এসব ক্ষেত্রে আইনের প্রয়োগ খুব একটা দেখা যায় না। আইন মানার প্রবণতা কারো মধ্যে লক্ষ্য করা যায় না। শুধু দুর্ঘটনা ঘটলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তৎপর হতে দেখা যায়। কিন্তু অন্য সময় তাদের যেন কোনো দায়বদ্ধতা নেই। এ প্রসঙ্গে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, শতকরা ৯৫ জন মানুষ যদি আইন ভঙ্গ করে তাহলে পুলিশ একা কি করবে? এজন্য মানুষকে আগে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, আমরা নগরে বাস করছি কিন্তু নগরবাদ বলে যে একটা বিষয় আছে তা কেউই মানছি না। নগরে বাস করতে হলে মূল্যবোধসহ কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলা দরকার। অথচ আমাদের মধ্যে এক ধরনের গ্রাম্যতা রয়েই গেছে। যে কারণে আমরা আইন ভঙ্গ করে চলেছি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।