পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এবারও দেশের সেরা করদাতা হলেন মো. কাউছ মিয়া। ২০২০-২১ করবর্ষে তিনি সবচেয়ে বেশি কর দিয়েছেন। এরই স্বীকৃতি হিসেবে বিগত কয়েক বছরের মতো এ বছরও তাকে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে ট্যাক্স কার্ড দেওয়া হবে। তিনি হাকিমপুরী জর্দা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের মালিক।
গুলশান-বনানী কিংবা মতিঝিলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেম্বার নেই কাউছ মিয়ার। পুরান ঢাকার আগা নওয়াব দেউড়ি রোডে হাকিমপুরী জর্দার কারখানার একটি কক্ষই তার ‘চেম্বার’। মৌলভীবাজার থেকে সরু এই গলিপথ ধরে কিছুটা পথ হাঁটলেই তার কারখানা। সেখানেই বসেন তিনি। গুলশান-বনানী, মতিঝিলের ডাকসাইটে ব্যবসায়ীদের পেছনে ফেলে পুরান ঢাকার ঘুপচি গলির এই ব্যবসায়ীই প্রতিবছর সর্বোচ্চ করদাতা হন। ২০০৮ সাল থেকে তিনি ব্যবসায়ী শ্রেণিতে সর্বোচ্চ করদাতার একজন।
কাউছ মিয়ার আদিবাড়ি চাঁদপুর জেলায়। এই ব্যবসায়ীর জর্দার পাশাপাশি শিপিংসহ অন্য ব্যবসাও রয়েছে। এর আগেও তিনি কয়েকবার শীর্ষ ১০ করদাতার তালিকায় ছিলেন। এবার তিনিসহ সেরা করদাতার হিসেবে ১৪১ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা ট্যাক্স কার্ড পাচ্ছেন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্তদের তালিকার গেজেট প্রকাশ করেছে। জাতীয় ট্যাক্স কার্ড নীতিমালা, ২০১০ (সংশোধিত) অনুযায়ী সম্প্রতি ২০২০-২১ করবছরে ব্যবসায়ী ক্যাটাগরিতে কাউছ মিয়া ছাড়াও সেরা করদাতা তালিকায় রয়েছেন নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মজুমদার, পলমল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাফিস সিকদার, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরী ও পুরান ঢাকার আনোয়ার হোসেন।
কাউছ মিয়া ৬২ বছর ধরে কর দিয়ে আসছেন। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দেন তিনি। কেন কর দেওয়া শুরু করলেন, এর ব্যাখ্যাও তিনি দিয়েছেন। ২০১৯ সালে এনবিআরের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, আগে টাকাপয়সা এখানে-সেখানে রাখতাম। এতে নানা ঝামেলা ও ঝুঁকি থাকত। ১৯৫৮ সালে প্রথম কর দিয়ে ‘ফ্রি’ হয়ে গেলাম। এরপর সব টাকাপয়সা ব্যাংকে রাখতে শুরু করলাম। হিসাবনিকাশ পরিষ্কার করে রাখলাম। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ১ নম্বর করদাতা হয়েছিলেন কাউছ মিয়া।
কাউছ মিয়ার বাবা চাইতেন না তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যে নামেন। তার বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে পড়াশোনা চালিয়ে যাবে। আর ব্যবসায় মন পড়ে থাকা কাউছ মিয়া ১৯৪৫ সালে অষ্টম শ্রেণি পাস করে নবম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হলে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দামামায় আর পড়াশোনা এগোয়নি। বাবার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তিনি মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ১৯৫০ সালে চাঁদপুরের পুরান বাজারে মুদিদোকান দেন। এরপর ধীরে ধীরে ১৮টি ব্র্যান্ডের সিগারেট, বিস্কুট ও সাবানের এজেন্ট ছিলেন। পরের ২০ বছর তিনি চাঁদপুরেই ব্যবসা করেন। ১৯৭০ সালে নারায়ণগঞ্জে চলে আসেন এবং তামাকের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে ৪০-৪৫ ধরনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি।
তবে তার মূল ব্যবসা তামাক বেচাকেনা। রংপুরে তামাক কিনে সেখানেই বিμি করেন। একবার তিনি আমদানির ব্যবসায় নামতে লাইসেন্স নিয়েছিলেন। এ ব্যবসায় কারসাজি না করলে টিকে থাকা মুশকিল, এটা চিন্তা করে আমদানির ব্যবসা ছাড়েন। বর্তমানে নদীপথে পণ্য পরিবহনের জন্য বেশ কিছু কার্গো জাহাজ আছে কাউছ মিয়ার। এই ব্যবসা তার ছেলেরা দেখাশোনা করেন।
কী চিন্তাভাবনা থেকে এত বছর সরকারকে কর দেন, দেশপ্রেম নাকি দায়িত্ববোধ। জানতে চাইলে কাউছ মিয়া বলেছিলেন, এভাবে কখনো ভাবি নাই। ১৯৫৮ সাল থেকে নিয়মিত কর দিই। স্বাধীনতার পরও সেটি অব্যাহত রেখেছি। তিনি বলেন, কর দিলে টাকা হোয়াইট (বৈধ) হয়। আমার যা মন চায় তা-ই করতে পারব। কেউ হামলা করবে না। হয়তো এ জন্যই আমি সব সময় কর দিয়ে আসছি।
ব্যক্তিপর্যায়ে ৭৫, কোম্পানি পর্যায়ে ৫৪ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ১২টিসহ মোট ১৪১টি ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করেছে এনবিআর। ব্যক্তিপর্যায়ে ট্যাক্স কার্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে বিশেষ শ্রেণিতে ক্যাটাগরি রয়েছে পাঁচটি-সিনিয়র সিটিজেন, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, নারী ও তরুণ। আর আয়ের উৎস বা পেশার মধ্যে ক্যাটাগরি ১৩টি-ব্যবসায়ী, বেতনভোগী, ডাক্তার, সাংবাদিক, আইনজীবী, প্রকৌশলী, স্থপতি, হিসাববিদ, নতুন করদাতা, খেলোয়াড়, অভিনেতা-অভিনেত্রী, শিল্পী (গায়ক-গায়িকা) এবং অন্যান্য। ব্যক্তিপর্যায়ের সিনিয়র সিটিজেন ক্যাটাগরিতে সেরা করদাতা হয়েছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, ট্রান্সকম গ্রুপের প্রয়াত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান। এছাড়া সিনিয়র সিটিজেন ক্যাটাগরিতে নাম এসেছে খাজা তাজমহল, ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার বদরুল হাসান ও ডা. মোস্তাফিজুর রহমানের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।