Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ক্লাসে ফিরে যান : শিক্ষকদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০৫ এএম, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিগুলো বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষক নেতারা। তিনি তাদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এখন সাধারণ সভা করে ধর্মঘটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন শিক্ষকরা। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন শিক্ষক নেতারা। মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
দেড় ঘণ্টা ধরে বৈঠক শেষে গণভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল। তারা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘসময় আমাদের কথা শুনেছেন। ধৈর্য সহকারে শোনার মধ্যদিয়ে একটি জিনিস পরিষ্কার হযেছে যে, আমাদের দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী আন্তরিক।
ফরিদ উদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। উনি বলেছেন, উনি নিজে বিষয়টা দেখবেন। তিনি বলেছেন, আমরা একটা সোপান তৈরি করে দেব যাতে করে শিক্ষকদের মধ্য থেকে একটি অংশ সর্বোচ্চ গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ পাান। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন, কারা সর্বোচ্চ গ্রেডে যেতে পারেন, কেন এটা দেয়া উচিত, সে বিষয়ে তিনি আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন।
আশ্বস্ত হলে কর্মবিরতি কর্মসূচি কী চলবেÑ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই বিষয়ে ফেডারেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতিগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন তারা।
শিক্ষক নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাছে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। পরে তিনি বলেছেন, এগুলো তো এখনই অর্থাৎ আজই দিয়ে দেয়া যাচ্ছে না। সরকারের একটা প্রসেস রয়েছে। সে অনুযায়ী হবে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট সচিবরা উপস্থিতি ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদেরকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বলেছেন। আমরা তাকে বলেছি, আমরা ফেডারেশনের বৈঠক ডেকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব। প্রধানমন্ত্রীর কথায় আশ্বস্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা
সপ্তাহব্যাপী কর্মবিরতির পর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের নেতারা কর্মসূচি থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
এদিকে শিক্ষকরা কর্মবিরতি ছেড়ে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম জানিয়েছেন। এক ঘণ্টা ১০ মিনিটের বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-তৃতীয় গ্রেড থেকে প্রথম গ্রেড পর্যন্ত পদোন্নতির সোপান তৈরি করা হবে। শিক্ষকরা বলেছেন- তারা ফোরামে আলোচনা করে যত দ্রুত সম্ভব ক্লাস শুরু করার ব্যবস্থা নেবেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামালসহ বুয়েট, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিগণ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আজকের বিকালের পিঠা উৎসবে অন্যান্যের সঙ্গে শিক্ষক নেতারাও যোগ দেন।
শিক্ষক নেতারা বলছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পাঁচ মিনিট বসতে পারলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তার সঙ্গে বসতে পারলেই আমরা তাকে বুঝাতে পারবো বলে মনে করছি। বেতন কাঠামোর বিষয়ে সুনির্দিষ্টি দু’টি লিখিত গত রোববার শিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনের কাছে দিয়েছেন ফেডারেশনের নেতারা। সচিবালয়ে শিক্ষা সচিবের কাছে লিখিত প্রস্তাবনা জমা দেন ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল। জানা গেছে, সপ্তম বেতন কাঠামোতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গ্রেড-১ থেকে গ্রেড-৩ এ উন্নীত হওয়াসহ যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে আসতেন তা বহাল রাখার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়।
গত ১১ জানুয়ারি সকাল থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শিক্ষকরা। ওইদিন বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শিক্ষকদের শ্রেণীকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু মর্যাদা প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে ফিরবেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।
সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অষ্টম পে-স্কেলে শিক্ষকদের অবনমনের প্রতিকার ও মর্যাদা রক্ষার দাবিতে এ কর্মবিরতির পালন করা হচ্ছে। সান্ধ্যকালীন কোর্সগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এই কর্মবিরতিতে যাওয়ার আগে আরো দু’দিন কর্মসূচি পালন করা হয়। ৩ জানুয়ারি একই দাবিতে শিক্ষকরা কালোব্যাজ ধারণ করে শ্রেণীকক্ষে প্রবেশ করেন। ৭ জানুয়ারি স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা।
গণভবনে পিঠা উৎসব
বিভিন্ন পেশাজীবীর জন্য প্রতিবারের মতো এবারও পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী বাসভবন গণভবনে এ আয়োজন করা হয়। প্রথমে গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এতে উপস্থিত আছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। এ এক অপূর্ব আনন্দ মেলা। গণভবন চত্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাড়িতে পিঠা-পুলির দাওয়াত খেতে আসেন বিশিষ্ট জনসহ অনেক মানুষ। তাদের মধ্যে কেউ শিক্ষক, কেউ সাংবাদিক, কেউ সাহিত্যিক, কেউ সাংস্কৃতিক কর্মী। এমন কয়েকশ’ বিশিষ্ট ব্যক্তি এই জমজমাট পিঠা উৎসব ও মেলায় অংশ নেন।
ঘাসের চত্বরে একদিকে প্যান্ডেল, অন্যদিকে ছোট্ট মঞ্চ সাজানো হয়। সেখানে চলে নানা পরিবেশনা। কেউ গান, কেউ নাচ পরিবেশন, আবার কেউ বা কবিতা আবৃত্তি করেন। প্যান্ডেলে বসেন বিশিষ্টজনরা। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ধুলার ওপর আসন পেতে শতরঞ্জিতে বসেন একদম মঞ্চের সামনে। তার পাশে ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়াও ছিলেন আরো অনেকে। সবার সঙ্গে আড্ডা জমিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন প্রধানমন্ত্রী। তার আগে প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
‘ও ধান ভানিরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’ গানটির মধ্য দিয়ে ছোটদের নৃত্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। নৃত্য পরিচালনা করেন মুনমুন আহমেদ। লাইসা আহমেদ লিসা পরিবেশন করেন ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। এরপর অভিনেতা মীর সাব্বির বরিশালের আঞ্চলিক ভাষায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। এরপর শুরু হয় রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে তাদের দলীয় নৃত্য পরিবেশনা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ক্লাসে ফিরে যান : শিক্ষকদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস প্রধানমন্ত্রীর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ