পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের অন্যতম জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে গৃহবধূ থেকে আপোষহীন নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন তিনি। জনগণের ভোটে একাধিকবার প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। তার নেতৃত্বগুণেই নিজ দল বিএনপি এবং এর বাইরেও কোটি কোটি ভক্ত, অনুরাগী, সমর্থক তৈরি করেছেন। যারা তার সুখের সংবাদে খুশি হন, ব্যথিত হন কষ্টের খবরে। সেই নেত্রীই দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। এখনো তিনি রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন। এর আগে ২৬ দিন একই হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ শেষে বাড়ি ফেরার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে ফের হাসপাতালের সিসিইউতে ভর্তির খবরে উদ্বিগ্ন বিএনপি নেতাকর্মীরা। যদিও দলটির পক্ষ থেকে বার বারই দাবি করা হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার যে উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন সেটি দেশে সম্ভব নয়। বেগম জিয়ার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার সুযোগ আছে এমন সেন্টারে তাকে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন। এজন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপি প্রধানকে বিদেশে নিতে একাধিকার সরকারের কাছে আবেদন করা হয়। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে আইনি বাধ্যবাধকতার কারণে অনুমতি দেয়া যায়নি। তারপরও কয়েকদিন আগে আবারও খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি দিয়েছে তাঁর ভাই শামীম ইস্কান্দর। তাঁর বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এখন বিদেশে চিকিৎসা প্রয়োজন-চিকিৎসকরা এখন এই একটাই পরামর্শ দিচ্ছেন। সেজন্য ভাইবোনদের পক্ষ থেকে আবারও সরকারের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমাদের আবেদন এটাই, যে তাঁকে (খালেদা জিয়া) চিকিৎসার জন্য যাওয়ার অনুমতি ওনারা (সরকার) যেন দেয়।
সেলিমা ইসলাম বলেন, তারা যত দ্রুত সম্ভব খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। কোন দেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে চায় পরিবার-এই প্রশ্নে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুর কাছে হবে এবং সেজন্য সিঙ্গাপুরকে তারা অগ্রাধিকার দেন। তবে যে দেশেই অনুমতি মিলবে, সেখানেই তারা নেবেন।
খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে সেলিমা ইসলাম আরও বলেন, তাঁর হিমোগ্লোবিন অনেক কমে গেছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, হাঁটতে-চলতে পারছে না। সেজন্যই আমরা বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করতে চাই। কারণ এখানে তো ডাক্তাররা সেভাবে চিকিৎসা দিতে পারছেন না। কারণ তাদের আধুনিক যন্ত্রপাতি বা সুবিধা নেই।
৭৬ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত মাসেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে তার বায়োপ্সিসহ বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ২৬ দিন চিকিৎসা নেয়ার পর গত ৭ নভেম্বর তিনি বাসায় ফিরেন। বেগম জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের সূত্রে জানা যায়, তিনি বাসায় ফেরার কয়েকদিন পর থেকেই আবার জ্বরে আক্রান্ত হন, উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই গত ১৩ নভেম্বর আবারও সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। প্রথমে তাকে কেবিনে নেয়া হলেও পরবর্তীতে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকায় এবং জ্বরের কারণে তাকে হাসপাতালে সিসিইিউতে রাখা হয়েছে। রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়া, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, নিয়ন্ত্রণহীন উচ্চ রক্তচাপ আর বেশ কয়েকবার বমি করার কারণেই তৎক্ষণাৎ নেওয়া হয় সেখানে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, খালেদা জিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসেনি ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। এছাড়া রোববার রাতে কয়েকবার বমি হওয়ার কারণ জানতে ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে যুক্ত হয়েছেন আরও একজন পাকস্থলি বিশেষজ্ঞ। বেগম জিয়াকে দেশের বাইরে নেওয়ার বিকল্প নেই বলে মত তার ব্যক্তিগত চিকিৎসকের।
জানা গেছে, হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বেগম জিয়ার শরীরে দেওয়া হয়েছে দুই ব্যাগ রক্ত। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে তাকে ব্লাড সুগার চার্ট মেনে চলার পাশাপাশি দেওয়া হচ্ছে ইনস্যুলিন। অন্যদিকে নিয়ন্ত্রণহীন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আনতে দেওয়া হচ্ছে নানা ওষুধও।
বিএনপি নেত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলছেন, মেডিকেল বোর্ড তাকে প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করছেন। তাকে দেশের বাইরে নেওয়ার বিকল্প নেই বলেও মতামত দিয়েছেন চিকিৎসক দলের সদস্যরা।
বেগম জিয়াকে বার বার হাসপাতালে ভর্তি এবং তার অসুস্থতার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অনুরাগীরা। দলীয় প্রধানের সুস্থতার জন্য সারাদেশেই দোয়া মাহফিল করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। এছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে বেগম জিয়া হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই দোয়া মাহফিল করছেন অনেকে। এছাড়া প্রিয় নেত্রীর সুস্থতার জন্য কেউ কেউ মানতের রোজা রাখছেন, ব্যক্তিগত উদ্যোগে সদকাও দিচ্ছেন দেশে ও বিদেশের বিভিন্ন স্থানে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেই নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন, চাইছেন দোয়া। প্রতিনিয়তই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অসুস্থকার খোঁজ-খবর জানতে চাচ্ছেন তারা।
বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী এতোদিন ধরে অসুস্থ, কিন্তু তাকে তার চিকিৎসার সুযোগটুকুও দেয়া হচ্ছে না। একজন সাধারণ নাগরিক যে সুবিধাটা পায় সেটাও তাকে দেয়া হচ্ছে না।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিএনপির নেতাকর্মী হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার বিষয় হচ্ছে আমরা দলের প্রধানকে মুক্ত করতে পারিনি, পারিনি তার চিকিৎসার সুযোগ তৈরি করে দিতে।
বেগম জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল তার ফেসবুকে লিখেছেন, ম্যাডামের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে দায়িত্বশীলদের দিয়ে নিয়মিত বুলেটিন প্রচারের ব্যবস্থা রাখুন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বেদনার্ত হওয়া ও দোয়া করা ছাড়া আমার তেমন কিছু করার নেই। সেই সঙ্গে সবার কাছে মিনতি করি উনার জন্য অন্তরের সকল আকুতি ঢেলে প্রার্থনা করার। তিনি বলেন, ম্যাডামের ব্যাপারে উনার অসংখ্য অনুসারীর মতো অন্ধকারে ও দূরে থেকে আমি আজ বেদনার্ত কণ্ঠে আবারও সেই বাক্যটি উচ্চারণ করতে চাই, বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু এখনো অগণিত নেতা-কর্মীসহ কোটি কোটি মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার উৎস। কাজেই উনার যে কোনো ব্যাপার লুকিয়ে চুরিয়ে, গোপন করে, কুক্ষিগত করে রাখার চিন্তা ছাড়ুন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিন বছর তিনি (খালেদা জিয়া) জেলে ছিলেন, তার কোনো চিকিৎসা হয়নি। ইচ্ছা করে তার চিকিৎসা করেনি। চিকিৎসকরাই বারবার বলেছেন তার যে রোগগুলো আছে, সেগুলোর চিকিৎসা এখানে পূর্ণাঙ্গভাবে সম্ভব নয়। এটা মাল্টি ডিসিপ্লিনারি যেসব হাসপাতাল বা সেন্টার আছে অর্থাৎ সব রোগের একসাথে চিকিৎসা করতে পারে। এই ধরনের মানসম্পন্ন হাসপাতালে তাকে নেওয়া দরকার। চিকিৎসকরা পরিষ্কার করে বলেছেন বাংলাদেশে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই, বাইরেই তাকে যেতে হবে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার প্রাপ্য জামিন তাকে দিচ্ছে না? মির্জা ফখরুল দ্রুততম সময়ে বেগম জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়ার জন্য দাবী জানান। অন্যত্থায় এর দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।