পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মসলিন কাপড়ের মতোই এক সময় বিশ্বজুড়ে খ্যাতি ছিল বাংলাদেশের পাটের। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ পাট উৎপাদন হতো তার এক তৃতীয়াংশ হতো বাংলাদেশে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় পাটকল ‘আদমজী জুট মিল’ ছিল বাংলাদেশে। পাটকে বলা হতো ‘সোনালী আঁশ’। বর্তমানের তৈরি পোশাক রফতানি আর প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্সের মতোই কাঁচা পাট ও পাটপণ্য বিক্রি করে বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতো। অথচ নেতৃত্বে ব্যর্থতা, ভারতের ষড়যন্ত্র, দুর্নীতি, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ’র উপর অধিক নির্ভরশীলতায় বন্ধ হয়ে গেছে আদমজী পাটকল।
তবে দীর্ঘদিন পর পাটের দাম বাড়ায় কৃষকরা চাষও বাড়িয়েছেন। এমনকি সম্প্রতি পাট নিয়ে কৃষকদের সেই অনিশ্চয়তা দূর করার বার্তা দিয়েছেন ঢাকায় কর্মরত সউদী আরবের রাষ্ট্রদূত ইসসা ইউসেফ ইসসা আল দুহাআলান। তিনি বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)’র বন্ধ মিলগুলো চালু করে পাটপণ্য উৎপাদনে সউদী আরবের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। সউদী আরবের বিনিয়োগে আগ্রহ কিছুটা হলেও পাট শিল্পে আশার সঞ্চার করেছে।
শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নয়; পাটের সুদিন ফিরিয়ে আনতে বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত্ব পাটকলগুলোকে বেসরকারি খাতে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে পাঁচটি পাটকল ইজারা দিতে পাঁচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলোÑ ইউনিটেক্স গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, মিমু জুট মিল, বিদেশি বিনিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বে গ্রুপ এবং যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক। ইজারা দেয়া পাটকলগুলো হলো: চট্টগ্রাম অঞ্চলের হাফিজ জুট মিলস ও কেএফডি জুট মিলস, ঢাকা অঞ্চলের বাংলাদেশ জুট মিলস এবং জাতীয় জুট মিলস এবং খুলনা অঞ্চলের ক্রিসেন্ট জুট মিলস। পাটকলগুলোর মধ্যে কেএফডি জুট মিলসের অন্তর্ভুক্ত কর্ণফুলী জুট মিলস, কর্ণফুলী কার্পেট কারখানা এবং ডাইভারসিফাইড ডেকোরেটিভ ফেব্রিক্স- এই তিনটি ইউনিট রয়েছে। ইজারার চুক্তি পাঁচ থেকে ২০ বছর মেয়াদী হবে। পরবর্তীতে চুক্তির সময়সীমা বাড়ানো যাবে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কারখানার জমি, যন্ত্রপাতি এবং সুবিধাদি কেবলপাত্র পাট ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনে ব্যবহার করতে পারবে। ইজারার শর্ত অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণের জন্য পাটকলের সম্পত্তি বন্ধক রাখতে পারবে না।
জানা গেছে, তৈরী পোশাক শিল্পখাত বিকাশের আগে আশির দশকে সোনালী আঁশ পাট ছিল অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য। সরকারি পাটকলগুলো নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন ও পণ্য বৈচিত্র্যায়ন করতে না পারায় দিনে দিনে ব্যবসা হারিয়ে রুগ্ন হয়ে পড়েছে। প্রতিবছর লোকসান গুনছে, অন্যদিকে সরকারি পাটকলের বিশাল সম্পদ অব্যহৃত থাকছে। সর্বশেষ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১১৬ কোটি ১৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৮৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার। এ হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৩১ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে পাট রফতানি আয় ও লক্ষ্যমাত্রা দুটোই কমেছে। এই সময়ে রফতানি আয় এসেছে ৩২ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৩ কোটি টাকা।
বিজেএমসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে পাটকলগুলোর লোকসান ৫৭৩ দশমিক ৫৮ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭৬ কোটি টাকা বেশি। বিজেএমসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সক্ষমতা অনুসারে উৎপাদন না হওয়ায় লোকসান ৩৩৪ দশমিক ৪১ কোটি টাকা, যা মোট লোকসানের ৫৮ দশমিক ৩০ শতাংশ। অতিরিক্ত ৯১৭৭ জন অস্থায়ী শ্রমিকের জন্য ৪৫ দশমিক ১৪ কোটি টাকা এবং গেট মিটিং ও শ্রমিক আন্দোলনে ব্যয় ৬৫ দশমিক ৮৭ কোটি টাকা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে লোকসান ছিল ২৭৫ দশমিক ২৩ কোটি টাকা। ২০১০-১১ অর্থবছরে ছিল ১৭ দশমিক ৫৩ কোটি টাকা। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে লোকসান হয় ৭২৯ দশমিক ০১ কোটি টাকা, যা বিগত দশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পাটকলগুলোর চলতি দেনার পরিমাণ ২৩৮৭ দশমিক ৮৯ কোটি টাকা। খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর দেনার পরিমাণ ১০৭৯ কোটি টাকা, চট্টগ্রাম অঞ্চলের মিলে দেনা ২৭৯ দশমিক ৩৩ কোটি এবং ঢাকা অঞ্চলের কলগুলোর দেনা ৯১৫ দশমিক ৭২ কোটি টাকা। আর নন-জুট মিলের দেনা ১১ কোটি টাকা।
বিজেএমসির মতে, সরকারি পাটকলের মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৫২ দশমিক ৪৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে স্থায়ী সম্পদ ১৪ হাজার ৩২৯ কোটি টাকা। স্থায়ী সম্পদ হচ্ছে- ভূমি, ভূমি উন্নয়ন, দালান কোঠা ও অন্যান্য, স্থাপনা ও যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি, পরিবহন ও মোটরযান এবং অন্যান্য সম্পদ। ঢাকা অঞ্চলের মিলে রয়েছে সবচেয়ে বেশি স্থায়ী সম্পদ, এসব মিলে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৪ হাজার ৯৮৪ দশমিক ৪১ কোটি টাকা। চট্টগ্রাম অঞ্চলের স্থায়ী সম্পদ ৪ হাজার ৪৩৫ দশমিক ২৯ কোটি টাকা আর খুলনা অঞ্চলে স্থায়ী সম্পদের মূল্য ৪ হাজার ৬৬৬ দশমিক ১৯ কোটি টাকা। আর নন-জুট মিলের স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ ২৪৪ দশমিক ০৭ কোটি টাকা। নাম না প্রকাশের শর্তে বিজেএমসির এক মহাব্যবস্থাপক বলেন, পাটকলগুলোর স্থায়ী সম্পদ অনেক বেশি। বিশাল জায়গা থাকলেও অব্যবহৃত। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বন্ধ পাটকল চালু করা গেলে নতুন কর্মসংস্থান হবে। আবার যাদেরকে সরকার গোল্ডেন হ্যান্ডশেক দিয়েছে, তাদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে লোকসান গুনতে থাকা ২৫টি পাটকলগুলো গতবছর বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। ফলে প্রায় ২৫ হাজার কর্মী কাজ হারায়। পরবর্তীতে, ২০১৮ সালের বাংলাদেশ শিল্প প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন অনুযায়ী কলগুলো বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত এপ্রিলে বাংলাদেশ জুট মিল কর্পোরেশন (বিজেএমসি) সরকারি পাটগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। গত ১৫ জুন আগ্রহী প্রতিষ্ঠানের দরপত্র আবেদন জমা দেওয়া শেষ হয়েছে। গত ১৭ জুন ইজারা প্রস্তাব কমিটি দরপত্র খোলার পর প্রথম বৈঠক করে বিজেএমসি। ওই বৈঠকে জানানো হয়, বাংলাদেশ জুট মিলস ইজারা পেতে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে। এই মিলটি ইজারার জন্য ১১টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। মূলত, ঢাকার কাছাকাছি হওয়ায় এখানে বেশি আবেদন পড়েছে বলে মনে করছেন বিজেএমসির কর্মকর্তারা। দুইটি ভারতীয় ও একটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানসহ ২৪টি প্রতিষ্ঠান ইজারা গ্রহণে আগ্রহ প্রকাশ করে। ১৪টি কলের বিরপরীতে ৫৯টি প্রস্তাবনা জমা পড়ে। তবে, খুলনার তিনটি কল কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাড়া পায়নি। পরবর্তীতে বিজেএমসি টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করে চূড়ান্ত প্রস্তাবনা আহ্বান করে। তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো দুটি জুট মিল বাদ দিয়ে ১২টি কলের জন্য প্রস্তাবনা জমা দেয়। এর মধ্যে কমিটি ২৫টি প্রস্তাব বাছাই করে। বাছাইকৃত ২৫টি প্রস্তাবনা চূড়ান্তভাবে বাছাইয়ের জন্য বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়। এরপর অনেক যাচাই বাছাই শেষে পাঁচটি পাটকল ইজারা দিতে পাঁচ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্ত করে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলো হলো: ইউনিটেক্স গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, মিমু জুট মিল, বিদেশি বিনিয়োগপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বে গ্রুপ এবং যুক্তরাজ্যের জুট রিপাবলিক। ইজারার শর্ত অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণের জন্য পাটকলের সম্পত্তি বন্ধক রাখতে পারবে না। তবে পাঁচটি কলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও দরপত্রে তোলা বাকি ১২টি কলের বিষয়ে সরকার সিদ্ধান্ত নিবে বলে জানিয়েছে পাটকল করপোরেশন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।