পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : কলেজ পড়–য়া ছেলের মা সব সময় আতঙ্কে থাকেন। ছেলে ফেসবুকে আসক্ত। পড়ার ফাঁকে সময়-সুযোগ পেলেই ফেসবুক নিয়ে বসেন। ফেসবুকে মাঝে মাঝে যে নগ্ন ছবি আসে, মতামত-আবেদন-নিবেদন-প্রস্তাবনা আসে সেটাই মূলত আতঙ্কের কারণ। কোনো ভাবেই ফেসবুক আসক্ততা দূর করা যাচ্ছে না। ছেলের সহপাঠিদের মায়ের সঙ্গে দেখা হলে তারাও একই উদ্বেগের কথা জানান। ডিজিটালের যুগে কিশোর-কিশোরীর বাবা-মায়েরা যখন নগ্নাতা-বেলেল্লাপনা নিয়ে উদ্বিগ্ন তখন কিছু ব্যক্তি ফেসবুকে পশুত্ব ও হিংস্রতার বিষ ছড়াচ্ছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি তথাকাথিত বিশ্ব ভালবাসা দিবসে বাংলাদেশের দুই তরুণী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রেমিক প্রেমিকাদের প্রকাশ্যে ---। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির সেরা জীব। অথচ পশ্চাত্যের ইহুদি-খ্রিস্টানদের অপসংস্কৃতি চর্চার নামে শিক্ষিত মানুষের মধ্যে কেন এই পশুত্বের ভাবনা?
অদ্ভুত আমাদের ভাবনার জগৎ। উচ্চশিক্ষিত কিছু মানুষ পশ্চাত্যের সংস্কৃতি চর্চার নামে নিজের মনুষ্যত্ব হারিয়ে হয়ে যাচ্ছেন পশুত্বের ধারক ও বাহক। সেই স্রোতে গা ভাসাতে দেশের তরুণ-তরুণীদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে নানা প্রক্রিয়ায় ফেসবুকে ও মিডিয়ায়। প্রগতিশীলতা ও তথাকথিত আধুনিকতার নামে পশ্চিমা বিশ্বের সংস্কৃতিকে অনুকরণ করে বেহায়াপনা-বেলেল্লাপনায় মেতে উঠতে চান। সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ মানুষে ভালবাসা সেই আদিকাল থেকেই। সেই ভালবাসা নিয়ে চলছে ভেল্কিবাজি! এটা সত্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসা-বিদ্বেষ ও অপসংস্কৃতি চর্চার কারণে এদেশের মানব সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে ঘৃণা, হিংসা, দ্বেষ, অহঙ্কার আর আধিপত্যবাদ। সুবিধাবাদী মানসিকতার কারণে স্বার্থপরতা সব কিছুর ঊর্ধ্বে স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু প্রগতিশীলতা ও ভালবাসার নাম করে বর্ণনাতীত ভেল্কিবাজি চলছে। ১৪ ফেব্রুয়ারির নাম দেয়া হয়েছে ভালবাসা দিবস! হায়রে শিক্ষিত তরুণ-তরুণী? পশ্চাত্যের ঢং এ এতোই মাতোয়ারা! ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস হলে অন্যদিনগুলো কি হিংসা বিদ্বেষের দিবস? যারা তথাকথিত ভালবাসা দিবস নিয়ে মাতামাতি করছেন তারা ভালবাসা কারে কয় বোঝেন? দেশের কিছু মিডিয়ার ভালবাসা দিবস পালনের প্রচারণা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে কিছু ক্রিয়াকলাপ দেখে লজ্জিত হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। শিক্ষার্থীদের বাবা-মায়েদের আতঙ্ক সেখানেই।
ওরা বলে ভ্যালেনটাইন ডে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস পালনের প্রস্তুতি নিয়ে চলছে তুমুল প্রস্তুতি। পত্রিকায় খবর বের হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি পালনে জন্য ফুল ব্যবসায়ীদের মধ্যে ব্যস্ততা বেড়ে গেছে। খবরে প্রকাশ জার্মানিতে বসবাসকারী দুই বাংলাদেশি অ্যাক্টিভিস্ট শাম্মী হক ও অনন্য আজাদ নিজেদের ফেসবুক ইভেন্টে ভালোবাসা দিবসে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রকাশ্যে চুমু খাওয়ার জন্য প্রেমিক যুগলদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তারা ইভেন্টের নাম দিয়েছেন ‘ভালোবাসা দিবসে পুলিশি পাহারায় প্রকাশ্যে চুমু খাব’। এই আহ্বানের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আহ্বায়করা দুঃখ করে এই ইভেন্টের কারণ জানিয়ে বলেছেন, ‘প্রতিবছরই এই দিনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের পুলিশ বিভিন্ন রকম হয়রানি করে। এর প্রতিবাদে সকল জুটিকে স্ব-স্ব প্রেমিক প্রেমিকাকে প্রকাশ্যে চুমু খাবার আহ্বান জানানো যাচ্ছে।’ তাদের একজন শাম্মী হকের ওড়না ছাড়া ফেসবুক প্রফাইলে ছবি দিয়ে জানিয়েছেন এটা তার প্রতিবাদের ভাষা। ফেসবুকে এই ইভেন্ট নিয়ে ইতোমধ্যে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রকাশ্যে চুমুর ইতিবাচক, নেতিবাচক নানা দিকের আলোচনা হচ্ছে। কবে এক ক্যাথলিক ধর্মযাজক প্রেমের কারণে ভ্যালেন্টাইন মৃত্যুদ-ে দ-িত হয়েছে তাকে নিয়ে বাংলাদেশে এই তথাকথিত ভালবাসা দিবস? পাশ্চাত্যের খ্রীস্টান-ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের এই দিবস পালনের সংস্কৃতি আমাদের দেশের যুব সমাজের মগজ ধোলাই হচ্ছে এবং মাথা-মেধা পিষে খাচ্ছে। ইহুদী-নাছারাদের পশ্চিমা দেশগুলোতে নেই কোন পারিবারিক বন্ধন। ক্রমান্বয়ে উঠে যাচ্ছে বৈবাহিক সম্পর্ক। তাদের পুর্ণবয়স্ক ছেলেমেয়েদের মধ্যে যখন যাকে ভাল লাগে তখন তার। এসব অপবিত্র অনৈতিক কার্যকলাপে আমাদের দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের জড়াতে সাংস্কৃতির নামে তাদের মগজ ধোলাই করা হচ্ছে কেন? কারা এসব করছে? তাদের উদ্দেশ্য কি? পাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির শিকার হয়ে আমাদের দেশের তরুণ-তরুণীরা হারাচ্ছেন তাদের পবিত্রতা-নৈতিকতা। উচ্চশিক্ষার সার্টিফিকেট নিয়েও তারা হারাচ্ছেন সভ্যতা ভব্যতা, নীতি ও সামাজিক মূল্যবোধ। দেশের কিছু মিডিয়া তথাকথিত ভালবাসা দিবস নামে তরুণ তরুণীদের উন্মাদনায় উষ্কে দিচ্ছেন।
দেশে ডিজিলাইজেশন চলছে পুরোদমে। বিজ্ঞানের বদৌলতে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বসে বিশ্বের তাবৎ প্রভাবশালী প্রিন্ট মিডিয়া পড়া যায়; ইলেক্ট্রিক মিডিয়ার খবরও শোনা যায়। ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা, অস্ট্রিয়া, সুইডেন, মেস্কিকো, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যভুক্ত প্রভাবশালী দেশগুলোর মিডিয়াগুলো দেখে এবং খবর পড়ে জানা যায় ওই সব দেশের মিডিয়াগুলোর মাথাব্যথা নেই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইন ডে নিয়ে। বিচ্ছিন্নভাবে দু’একটি মিডিয়ার খবরে ‘১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইন ডে’ জায়গা পেলেও ছাপা হয়েছে গুরুত্বহীন ভাবে। সারাবিশ্বে সিনেমা বিক্রি করে কোটি কোটি ডলার আয় করা ভারতের মুম্বাইয়ের মিডিয়াগুলোয়ও এ দিবস নিয়ে মাতামাতি নেই। এমনকি কোলকাতার মিডিয়াও নেই। অথচ বাংলাদেশের স্যাটেলাইট টিভিগুলোতে চলছে তথাকাথিত ভালবাসা দিবস তথা ১৪ ফেব্রুয়ারি পালনের প্রস্তুতি নিয়ে অনুষ্ঠান, নাটক, গান, আলোচনা অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রতিযোগিতা চলছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে। মিডিয়াগুলোর প্রতিযোগিতায় ঢাকঢোল পেটানো দেখে মনে হচ্ছে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’।
এক সাগর রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেয়া জাতি আমরা। আমাদের রয়েছে হাজার বছরের নিজস্ব সংস্কৃতি। ৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশের সমাজ ব্যবস্থা পৃথিবীর যে কোনো দেশের সমাজ ব্যবস্থার চেয়ে শ্রেষ্ট। ধর্মীয় মূল্যবোধ, পারিবারিক বন্ধন, ছোট-বড় এর মধ্যে ভালবাসা, সহানুভূতি সহমর্মিতা শত শত বছর ধরে বিদ্যামন। ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা দেশের প্রধান সংস্কৃতি হয়ে গেছে। একটি জাতি তার নিজস্ব সংস্কৃতির মাধ্যমে বেড়ে ওঠে। কোনো জাতিকে নানান ভাবে চেষ্টার পরও ধ্বংস করা সম্ভব না হলে তার সংস্কৃতির ওপর আঘাত হানতে হয়। শিল্প স্স্কংৃতি ধ্বংস করতে হয়। সংস্কৃতি ধ্বংস করা গেলে সে জাতিকে অতি সহজেই বশে আনা যায়। আমরা কি বিদেশি অপসংস্কৃতি নিয়ে মাতামাতি করে সেই চেষ্টাই করছি? অপসংস্কৃতি চর্চার নামে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তরুণ তরুণীদের ধ্বংস করছি কেন? কেন এই অপচেষ্টা? কেনই বা আমরা পশ্চিমাদের এই ফাঁদে পা দিচ্ছি?
অপ্রিয় হলেও সত্য যে বাংলাদেশের তরুণ তরুণীদের মধ্যে ক্রিকেট নিয়ে পাগলামি আছে; আছে শিল্প সংস্কৃতির প্রতি ভালবাসা। ২০০০ সালের আগেও এদেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণী ও যুবকদের মাথায় ‘১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস’ পালনের চিন্তাও আসেনি। কিন্তু একজন জাতীয়তাবাদী ধারার বুদ্ধিজীবী এবং বৃদ্ধ সাংবাদিক একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার মাধ্যমে ছেলেমেয়েদের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস পালনের উদ্বুদ্ধ করেন। অতপর ওই সাপ্তাহিক পত্রিকা দৈনিক হয় এবং ওই বৃদ্ধ সাংবাদিক কর্মরত সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা না দিয়ে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার সময় বিমানবন্দরে ধরা পড়েন। পরে অবশ্য তাকে পত্রিকাটি হারাতে হয়। প্রশ্ন হলো জাতীয়তাবাদী ধারার বুদ্ধিজীবীর মাধ্যমে পশ্চিমা অপসংস্কৃতির ভুত আনা হলো দেশে! ওই বৃদ্ধ সাংবাদিক দেশের শিক্ষিত তরুণ তরুণীদের মগজ ধোলাই করে কি সুবিধা পেয়েছেন? আর আমাদের মিডিয়াগুলো পশ্চাত্যের ওই অপসংস্কৃতি চর্চায় কেন নতুন প্রজন্ম ও তরুণ তরুণীদের উৎসাহিত করছেন? ১৪ ফেব্রুয়ারি দিবস পালনে প্রেমিক প্রেমিকাদের ‘প্রকাশ্যে চুমুর’ (ছিঃ ছিঃ) যে ঘোষণা দেয়া হয়েছে তারা কি নিজেদের মানুষের বদলে নিজেদের পশু ভাবছেন? অদ্ভুত মানসিকতার মানুষদের প্ররোচনায় মিডিয়াগুলো কেন প্রভাবিত হচ্ছে? মানুষের ধর্ম মানুষকে ভালবাসা। মা-বাবা-ভাই-বোন-ছেলে মেয়ে-স্ত্রী-স্বামী-প্রেমিক-প্রেমিকা-ছাত্র-শিক্ষক-প্রতিবেশি-আত্মীয়-স্বজন একে অপরকে ভালবাসবেন সেটাই স্বাভাবিক। স্বামী স্ত্রীর পবিত্র সম্পর্ক কি সেটাও সবার জানা। কিন্তু পশ্চিমাদের অপসংস্কৃতি চর্চার নামে তথাকথিত ‘ভালবাসা দিবস’ পালনের নামে দেশে যে মাতামাতি চলছে; তা শুধু নিন্দনীয়ই নয় ঘৃর্ণিত বটে। জার্মানীতে বসবাস করা প্রবাসী শাম্মী হক ও অনন্য আজাদ ১৪ ফেব্রুয়ারি পালনের নামে যে কর্মসূচি ঘোষণা করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাতে তাদের রুচিবোধ পশুত্বকে হার মানিয়েছে। অতএব বিবেকবান বাবা-মায়েদের এখনই সতর্ক হওয়া উচিত। ওরা পশু হোক; কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে দেশীয় সাংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে নিজেদের যেন মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে সে চেষ্টাই কাম্য। পশুত্বের ভাবনা আর যাই হোক প্রকৃত মানুষ করতে পারে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।