Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জলবায়ুতে ২শ’ কোটি ডলার

সন্তুষ্ট বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে ৩ বছরে ঋণসহায়তা দেবে

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:২৮ পিএম, ১৮ অক্টোবর, ২০১৬

অর্থনৈতিক রিপোর্টার : জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে দুইশ’ কোটি ডলার ঋণসহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম।
গতকাল বিকালে বাংলাদেশ থেকে ফিরে যাওয়ার আগে সংস্থাটির ঢাকা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন কিম। দুই দিনের এই সফরে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের ঋণসহায়তার দ্বিতীয় ঘোষণা এটি। এর আগে তিনি বার্ষিক ঋণসহায়তা ৫০ ভাগ বাড়ানোর ও অপুষ্টি মোকাবেলায় ১শ’ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে কিম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আর যেহেতু দরিদ্র মানুষই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে, আমাদের এখনই এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে হবে।’
দুর্যোগ প্রশমন ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সামনের কাতারে রয়েছে মন্তব্য করে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এর ফলে সাম্প্রতিক সময়ে ঝড়, সাইক্লোন ও বন্যার ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ যাতে দুর্যোগ প্রশমনে আরো শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে, সেজন্য বিশ্বব্যাংক গ্রুপ সহায়তা করার পরিকল্পনা করেছে।’
২০১২ সালে মেক্সিকোয় জি-২০ বৈঠকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোর অর্থে একটি তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়। ২০২০ সালের মধ্যে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলার করে অর্থ দিয়ে এই তহবিল গঠনের অঙ্গীকার করেছিল উন্নত দেশগুলো।
কিন্তু ওই অর্থের বেশিরভাগই ছাড় না হওয়ায় চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের সভাপতিত্বে জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী মুহিত।
উন্নত দেশগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ওই বৈঠকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় গত ছয় বছরে বাংলাদেশ ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার খরচ করেছে। কিন্তু জলবায়ু তহবিল থেকে পেয়েছে মাত্র ৫ কোটি ডলার।
‘আরো ১ কোটি ডলার ছাড় করা হবে, হবে বলেও দেয়া হচ্ছে না।... তহবিল গঠন হয়, কিন্তু অর্থ মেলে না। এটা দুঃখজনক।’
বিশ্বব্যাংক জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলায় এ পর্যন্ত যে অর্থ বাংলাদেশকে দিয়েছে, তা এসেছে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসট্যান্স (আইডিএ) হিসেবে বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায়। আলাদাভাবে এই খাতে তহবিল জোগানোর ঘোষণা এবারই প্রথম।
বিশ্বব্যাংকের পঞ্চম প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে আসা কিম ঢাকায় নামেন রোববার বিকালে। সোমবার সকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি শিশু অপুষ্টি দূর করতে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার দেয়ার আশ্বাস দেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের জন্য ঋণসহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
এবার ‘বিশ্ব দারিদ্র্যমুক্ত দিবস’ কিম ঢাকাতেই পালন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে ‘দারিদ্র্যমুক্ত বিশ্বে বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন।
গতকাল সকালে হেলিকপ্টারে চড়ে কিম বরিশালে যান। সেখানে তিনি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত একটি প্রকল্পের আওতায় ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে গাভী পালন বা মাছ চাষ করে ‘স্বাবলম্বী হওয়া’ নারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। এছাড়া বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নির্মিত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও আশ্রয়ন কেন্দ্র তিনি পরিদর্শন করেন এবং সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করা একটি বাড়ি ঘুরে দেখেন।
বরিশাল সফরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিজের চোখে দেখার কথাও বিকালে সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংক প্রধান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি মোকাবিলায় স্থানীয় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ সতর্কতা প্রচার ব্যবস্থা, আশ্রয় কেন্দ্র, উদ্ধার পরিকল্পনা, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ও বনায়নের মতো উদ্যোগ নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আসার আগে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট কিম গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সফর শেষে গতকাল রাতেই তিনি ওয়াশিংটনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়েন।
বাংলাদেশের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে Ñবিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট
বরিশাল ব্যুরো জানায়, বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে এসে দক্ষিণের অবহেলিত জনপদ বরিশালের বাবুগঞ্জের রাকুদিয়া গ্রামের মানুষের স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার ঘটনা প্রত্যক্ষ করে অভিভূত হয়েছেন। তিনি এসময় বাংলাদেশের জন্য বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে এদেশের মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমী বলে মন্তব্য করেন। এদেশের মানুষ বসে থাকেন না বলেও প্রশংসা করেছেন বিশ্ব ব্যাংক প্রধান। জিম ইয়ং কিম এদেশের মানুষের কর্মকা- দেখে বলেন, আমি খুশি এবং মুগ্ধ, ভবিষ্যতেও আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করবো।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে উড়ে এসে বরিশাল বিমান বন্দরে অবতরণের পরে নিকট দূরের বাবুগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ রাকুদিয়া গ্রামের সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন-এসডিএফ নামের একটি এনজিও’র ‘নতুন জীবন’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন বিশ্ব ব্যাংক প্রধান। তিনি এখানে ছোট ছোট পরিবারগুলোর আস্তে আস্তে স্বাবলম্বী হবার কথা শুনে অভিভূত হন। পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশের নারীদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য বিশ্বব্যাংক সহায়তা করবে। ইতোপূর্বে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে বাংলাদেশের অনেক মানুষ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের সহযোগিতা নিয়ে এ দেশের উন্নয়নেরও আহ্বান জানান তিনি। প্রায় ৩০ মিনিট প্রকল্পটির সুবিধাভোগী নারীদের সাথে মতবিনিময় করেন তিনি। পরে ‘নতুন জীবন’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রমও পরিদর্শন করেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। এসময় নতুন জীবন প্রকল্পের জেলা প্রকল্প কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র সূত্রধর বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় উপকারভোগী পরিবারগুলোর বেড়ে ওঠার কথাও তুলে ধরেন।
জিম ইয়ং কিম উপজেলার ভরসাকাঠি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সাইক্লোন শেল্টার পরিদর্শন করেন। সেখানে গরু ও হাঁস-মুরগির ক্ষুদ্র খামার, পুকুরে মাছ চাষ, বাড়ির আঙিনা ও পতিত জমিতে সবজি ও ফসলের খামার পরিদর্শন ও স্থানীয় জনগণের সাথে মতবিনিময় করেন বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট। এসময় জিম ইয়ং কিম স্কুল প্রাঙ্গণে একটি নারকেল চাড়া রোপণ ও সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি বাড়ীও ঘুরে দেখেন। পরে বরিশাল বিমান বন্দরে এসে বেলা সাড়ে ১১ টায় ঢাকায় ফিরে যান জিম ইয়ং কিম। বিশ^ ব্যাংক প্রধানের সফরসঙ্গীসহ এ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বরিশাল-২ আসনের এমপি তালুকদার মোঃ ইউনুস ছাড়াও স্থানীয় উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
তিন দিনের বাংলাদেশ সফরে বিশ্ব ব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম সোমবার ঢাকা আসেন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 



 

Show all comments
  • Nadia ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১:১৭ পিএম says : 0
    একটা কথা মনে রাখতে হবে এগুলো আমাদের আয় নয়, ঋণ।
    Total Reply(0) Reply
  • Santa ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১:১৮ পিএম says : 0
    Thanks to world Bank
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জলবায়ুতে ২শ’ কোটি ডলার

১৯ অক্টোবর, ২০১৬
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ