Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দশ টাকার চাল বিতরণে অনিয়ম হলে মামলা, গ্রেফতার, জরিমানা ও ডিলারশিপ বাতিল : খাদ্যমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : হতদরিদ্রদের ১০ টাকা দরে চাল বিতরণ কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ১১টি ফৌজদারী মামলা ও ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একই সঙ্গে ৪৪ জনের ডিলারশিপ বাতিল, চালের ওজনে কম দেয়ায় ৯ জন ডিলারকে জরিমানা ও অভিযুক্ত খাদ্য কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।
গতকাল (মঙ্গলবার) সচিবালয়ে চলমান খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির সামগ্রিক চিত্র নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে খাদ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতির জন্য ১১টি ফৌজদারী মামলা হয়েছে। এতে আসামির সংখ্যা ২২ জন। এর মধ্যে ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, অন্যরা পলাতক রয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার ৬ জনের মধ্যে বীরগঞ্জে একজন, তিতাসে ২ জন, সিলেটে একজন, নীলফামারীর ডিমল্য়া একজন ও জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে একজন রয়েছেন।
তিনি বলেন, কর্মসূচিতে অনিয়মের জন্য নলিতাবাড়ী ও নান্দাইল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং কালোবাজারিতে সহায়তার অভিযোগে সরিষাবাড়ী ও মেলান্দহ গুদামের (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনিয়ম করা চেয়ারম্যান-মেম্বার, ডিলার ও কার্ডধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেছেন কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, (অনিয়মের মাধ্যমে) যারা তালিকা প্রণয়ন করেছেন তারা যে দলেরই হোক, সরকারি দলের হোক, বিএনপির হোক আর নিরপেক্ষ হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা সেভাবেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। আপনারা শুনে খুশি হবেন হতদরিদ্র নয় এমন যে সব ব্যক্তি ভুয়া কার্ড পেয়েছে বিভিন্ন স্থানে দলে দলে তাদের কার্ড জমা দেয়ার একটা হিড়িক পড়ে গেছে।
মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ের গঠন করা আটটি টিম সারাদেশে চষে বেড়াচ্ছে। কোথাও অনিয়ম হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। আঞ্চলিক খাদ্য পরিচালকদের নেতৃত্বেও অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের কাজ চলছে। মনিটরিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারদের কাছেও আধা সরকারি পত্র দেয়া হয়েছে।
কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ এ কর্মসূচিকে কোন অবস্থায়ই দলীয়করণ করতে দেব না। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ইউনিয়ন পর্যায়ে কার্ডের মাধ্যমে হতদরিদ্র পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে মাসে ৩০ কেজি চাল বিতরণ করছে সরকার।
কিন্তু হতদরিদ্রদের তালিকা করা, ডিলার নিয়োগ ও চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, হতদরিদ্রের নামে সচ্ছল ব্যক্তিরা এ চাল নিচ্ছেন ও কর্মসূচির চাল বাইরে বিক্রি হচ্ছে, ওজনে কম দেয়া হচ্ছে।
এ প্রেক্ষিতে খাদ্য মন্ত্রণালয় গত ৯ অক্টোবর এ সব অভিযোগ সরেজমিন যাচাই করে দেখতে আট বিভাগে আটটি তদন্ত টিম গঠন করেছে সরকার।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ওজনে কম দেয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নওগাঁর বাদলগাছীর একজন ডিলারকে ৫০ হাজার টাকা, রাণীনগর উপজেলায় একজন ডিলারকে ৫ হাজার টাকা, নওগাঁও সদর উপজেলার একজন ডিলারের ২ জন কর্মচারীকে ১০ হাজার টাকা এবং রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার একজন ডিলারকে ১০ হাজার টাকাসহ মোট ৫ জনের কাছ থেকে মোট ৭৫ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। কুমিল্লার চান্দিনায় ২ জন ডিলারকে ২৫ হাজার টাকা, যশোরের মনিরামপুরের ডিলার শহিদুল ইসলাম শাহিনকে ১০ হাজার টাকা, শরিয়তপুরের জাজিরার ডিলার মো. মোবারক চকদারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, কালোবাজারে চাল বিক্রির অভিযোগে বগুড়ার শাহজাহানপুরে ভ্রাম্যমাণ আদালত একজন ডিলার ও ২ জন ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে একজন, ময়মনসিংহের নান্দাইলে ২৪ জন, বরিশালের গৌরনদীতে ২ জন, কুমিল্লার তিতাসে একজন, পাবনার চাটমোহরে একজন, দিনাজপুরের বিরলে একজন ও খানসামায় একজন, গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও মুকসুদপুরে ৩ জন, শরীয়তপুর সদরে একজন, লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ২ জন, পটুয়াখালীর বাউফলে একজন, রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে একজন এবং জামালপুরের সদর উপজেলায় একজনের ডিলারের ডিলারশিপ বাতিল করা হয়েছে।
কামরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। এ কর্মসূচি চালু হওয়ার পরই বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়েছে আপনাদের (সাংবাদিক) সামনে। আমরা এ কর্মসূচিটাকে কোন রকম বিতর্কিত করতে চাই না। যারা এ অনিয়ম করছেন, যারা এ কর্মসূচিটাকে বিতর্কিত করছেন তাদের কাছে যাতে একটা ম্যাসেজ যায় সেজন্য এ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলায় এ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৫০ লাখ হতদরিদ্র পরিবারকে বছরের মার্চ, এপ্রিল, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর-এ পাঁচ মাস এ সহায়তা দেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দশ টাকার চাল বিতরণে অনিয়ম হলে মামলা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ