Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ভয়াল সিডরের কালো রাত্রি আজ

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১৫ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৩ এএম

আজ ১৫ নভেম্বর সিডরের ভয়াবহ কালো রাত্রি। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে বঙ্গোপসাগর থেকে প্রায় পৌঁনে ৩শ’ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে এসে উপকূলের ১০টি জেলার বিস্তীর্ণ জনপদকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল ঘূর্ণিঝড় সিডর। প্রাক প্রস্তুতি ও আগাম সতর্কতা থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা থেকে প্রাণহানি হ্রাস করা সম্ভব হলেও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। সরকারি হিসেবে যা ১৬ হাজার কোটি বলে সেনা সমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারও স্বীকার করেছিল। সরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৩ সহস্রাধিক বলা হলেও আরো সহস্রাধিক নিখোঁজের কথা জানিয়েছিল প্রশাসন।

ঘূর্ণিঝড়টি দেশের উপকূলীয় ও দক্ষিণাঞ্চলের ৩০টি জেলায় কম বেশি আঘাত হানলেও প্রায় ২শ’ উপজেলার সাড়ে ১৭শ’ ইউনিয়ন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সংখ্যা ১৭ লাখ ৭৩ হাজার বলা হলেও বাস্তবে তা ছিল ২০ লাখেরও বেশি। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের সংখ্যাও ছিল প্রায় ১ কোটি। সরকারিভাবে ৩ হাজার ১৯৯ জনের মৃত্যু ও ১ হাজার ৭২৬ জন নিখোঁজের কথা বলা হলেও এ সংখ্যাও আরো অনেক বেশি ছিলো বলে সে সময় বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা দাবি করে। বেশিরভাগ নিখোঁজদের কোন সন্ধান না মেলায় তাদের সকলকেই সিডরের বয়ে আনা জলোচ্ছ্বাস সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ উপকূলের প্রায় ৪ লাখ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ও আরো প্রায় ১০ লাখ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। একই সাথে প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমির আমন ধান সম্পূর্ণ ও আরো ৫ লাখ হেক্টরের আংশিক ক্ষতি হয়। প্রায় ৫০ লাখ গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির মৃত্যু ঘটে সিডরের রাতে।

সন্ধ্যা ৬টার পরেই ঝড়টি উত্তর-পূর্বমুখী হয়ে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ সীমান্ত থেকে প্রায় ৩শ’ কিলোমিটার পূর্বে বরগুনা এবং বাগেরহাটের মধ্যবর্তী হরিণঘাটা-বুড়িশ্বর ও বিশখালী নদীর বঙ্গোপসাগর মোহনা দিয়ে প্রায় পৌঁনে ৩শ কিলোমিটার বেগে মূল ভূখণ্ডে আছড়ে পড়ে।

সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত দেড়টা পর্যন্ত পশ্চিমে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, রামপাল থেকে বরিশাল হয়ে মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও গোপালগঞ্জ পর্যন্ত সিডরের তাণ্ডব অব্যাহত ছিল। প্রায় ১৫-২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস বাগেরহাট, পটুয়াখালী, বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের বিশাল জনপদসহ ফসলী জমিকে লণ্ডভণ্ড করে দেয়।
প্রায় পৌঁনে ৭শ’ কিলোমিটার আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কসহ পল্ল­ী যোগাযোগ অবকাঠামো সম্পূর্ণ এবং প্রায় ৯০ হাজার কিলোমিটার সড়ক আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিধ্বস্ত এলাকার প্রায় ১৮শ’ সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ ও প্রায় সাড়ে ৬ হাজার আংশিক ক্ষতির কবলে পড়ে। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের ১ হাজার ৬৫৪টি সেতু এবং কালভার্ট সম্পূর্ণ ও প্রায় ৯০০টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভয়াল সিডরের কালো রাত্রি আজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ