Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিজ গ্রামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলো না ডিসি জাহিদুলের

শুকতাইল গ্রামে শোকের ছায়া

প্রকাশের সময় : ১৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা : হৃদরোগে মৃত্যুবরণকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের শুকতাইল গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সৎ ও নির্ভীক সরকারি কর্মকর্তার অকাল মৃত্যুতে গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কেউ তার অসময়ের প্রস্থানকে মেনে নিতে পারছে না। আত্মীয়-স্বজনরা মুষড়ে পড়েছেন। ইউপি চেয়ারম্যান জানান, মঙ্গলবার সকাল ১০টায় শুকতাইল ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে শোকাবহ পরিবেশে তার লাশ দাফন করা হয়।
তার নামাজে জানাজায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মাহমুদ হাসান, ঢাকার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার এমডি আল-আমিন, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার, পুলিশ সুপার এস এম এমরান হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব আলী খান, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চুসহ কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসক, বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাজনৈতিক, সামাজিক ব্যক্তিবর্গসহ স্থানীয়রা অংশ নেন। বৈবাহিক জীবনে জাহিদুল ইসলাম ২ মেয়ে ও ১ ছেলে সন্তানের জনক। তার বড় মেয়ে জান্নাতুল ইসলাম মীম ঢাকা গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। ছোট মেয়ে ফাহেমা-তুজ-জোহরা দশম শ্রেণীতে ও মোহম্মদ ইয়াছিন দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থী।
জাহিদুল ইসলামের চাচাতো ভাই গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার শুকতাইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: শহীদুল ইসলাম জানান, ২০১৫ সালে তিনি গরিব, অসহায় ও মেধাধী শিক্ষার্থীদের আর্থিক অনুদান প্রদানের জন্য শুকতাইল গ্রামে মো: জাহিদুল ইসলাম নাসিম অ্যান্ড ফ্যামিলি ইনসেনটিভ নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করেন। এ ছাড়া গ্রামে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন জাহিদুল। ইতোমধ্যে ওই কলেজ নির্মাণের জন্য তহবিল সংগ্রহের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন তিনি। এবার বাড়িতে এলে কলেজের জন্য জায়গা নির্ধারণ করার কথা ছিল। মহৎ উদ্দেশ্য অপূর্ণ রেখেই পাড়ি জমিয়েছেন না ফেরার দেশে। বাড়িতে ফিরলেন লাশ হয়ে।
জাহিদুল ইসলামের পরিবার একটি শিক্ষানুরাগী পরিবার। ভাইদের মধ্যে আজিম মোল্লা গ্রামে স্টক ব্যবসা করেন। শামীম মোল্লা খুলনা বিএল কলেজের প্রভাষক। জসিম মোল্লা যশোর এমএম কলেজের প্রভাষক ও অসিম মোল্লা বিএল কলেজের প্রভাষক। বোনদের মধ্যে বড় বোন সাবানা বেগম খুলনা পুলিশ লাইন স্কুল ও ছোট বোন শিল্পী বেগম নিউজপ্রিন্ট হাই স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
অত্যন্ত বিনয়ী ও ভদ্র স্বভাবের এই মানুষটি বাড়িতে এলে এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজ নিতেন। তাদের উন্নয়নের মূল ¯্রােতধারায় শামিল করতে পরামর্শ ও সহায়তা করতেন। কর্মস্থল থেকে ফোনে এলাকার মানুষের খোঁজখবর রাখতেন। আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করতেন। দুঃখ-সুখের ভাগি হতেন।
জাহিদুল ইসলাম ১৯৬৮ সালের ২৫ এপ্রিল গোপালগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার শুকতাইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
জাহিদুল ইসলাম শুকতাইল গ্রামের সায়েদুল হক মোল্লার ছেলে। ৫ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে জাহিদুল ইসলাম ছিলেন সবার বড়।
১৯৯৪ সালের এপ্রিলে ত্রয়োদশ বিসিএসের (প্রশাসন) মাধ্যমে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন।
এরপর পিরোজপুরের ভা-ারিয়া, ঝিনাইদহের মহেশপুর, সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাহিদুল ইসলাম খুলনার এডিসি ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ছিলেন। চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিজ গ্রামে কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হলো না ডিসি জাহিদুলের
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ