Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মজলিসের গুরুত্ব ও শিষ্টাচার

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুনশী | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

মানব জীবনে মজলিস, বৈঠক, সভা ও আলোচনার গুরুত্ব অপরিসীম। জীবন চলার পথে মজলিস, আলোচনা সভা ইত্যাদি জীবন ও জগতের প্রয়োজনীয় অনুসঙ্গ হয়ে আছে। আরবি মজলিস শব্দটি একবচন। এর অর্থ বসার স্থান, আলোচনার স্থান ইত্যাদি। এর বহু বচন হলো ‘মাজালিস’। আল কোরআনে মাজালিস শব্দটির ব্যবহার একবার লক্ষ্য করা যায়। ইরশাদ হয়েছে : ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমাদেরকে বলা হয়-মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান প্রশস্ত করে দিও। আল্লাহ তোমাদের জন্য প্রশস্ত করে দেবেন। যখন বলা হয় উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো। তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দেবেন। আর যারা জ্ঞানী ও প্রজ্ঞার অধিকারী আল্লাহ তাদের দারাজাত বুলন্দ করে দেবেন। আল্লাহ অবশ্যই খবর রাখেন যা তোমরা কর’। (সূরা আল্ মুজাদালাহ : আয়াত-১১)।

বস্তুত : মুমিন মুসলমানদের জীবনকে ও জীবন চলার পথকে সুন্দর ও সফল করে গড়ে তোলার জন্য ইসলাম সে ব্যাপকতর জীবন ব্যবস্থার আঞ্জাম দিয়েছে তার পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণ করা সকল মানুষের জন্যই অপরিহার্য। মজলিসের আদব ও শিষ্টাচার বজায় রাখা এরই অন্তর্ভুক্ত। কেননা মানুষ বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন সামাজিক জীব। তার জীবনের বৃহত্তর পরিমণ্ডলে দৈনন্দিন তাকে অগণিত কাজ-কর্ম সম্পাদন করতে হয়। এ সকল কর্মকাণ্ড দু’ভাগে বিভক্ত।

যথা : (ক) ব্যক্তি কেন্দ্রিক এবং (খ) সামষ্টিক বা বহুজন কেন্দ্রিক। মানুষকে এ দু’ধরনের কাজ কর্মে-অংশগ্রহণ করতেই হয়। সুতরাং এতদ সংক্রান্ত বিষয়াদিতে জীবনকে সর্বাঙ্গ সুন্দর করার জন্য ইসলামী শরীয়াহ অনুমোদিত বিষয়াদি সম্পর্কে জ্ঞান হাসিল করা একান্ত অপরিহার্য।

উপরোল্লিখিত আয়াতে কারীমায় মুসলমানদের সাধারণ মজলিস সমূহের আদব ও শিষ্টাচার সম্পর্কিত দুটি নির্দেশের কথা তুলে ধরা হয়েছে। যথা : (ক) ‘মজলিসে কিছু লোক পরে আগমন করলে উপবিষ্টরা তাদের বসার জায়গা করে দেবে এবং নিজেরা চেপে চেপে সামলে বসবে। এভাবে নির্দেশ পালন করলে মহান রাব্বুল আলামীন তাদের জন্য প্রশস্ততা সৃষ্টি করবেন বলে তিনি অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। এই প্রশস্ততা দুনিয়ার জীবনে হওয়া যেমন সম্ভব, তেমনি আখেরাতের জীবনের প্রশস্ততাও এরই অন্তর্গত। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষের যাবতীয় কর্মের সংবাদ রাখেন।’

(খ) মজলিসের আদব ও শিষ্টাচার সম্পর্কিত দ্বিতীয় নির্দেশটি হচ্ছে এই যে, যখন তোমাদের কাউকে উঠে যেতে বলা হয়, তখন উঠে যাবে। এই আয়াতে কে বলবে, তার উল্লেখ নেই। প্রয়োজন ও পরিবেশের কারণে এই নির্দেশ মজলিস প্রধান বা সভাপতি দিতে পারবেন বলে হাদীস শরীফে উল্লেখ আছে। তবে সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে যে, স্বয়ং আগন্তুক ব্যক্তি নিজের জন্য জায়গা করার উদ্দেশ্যে কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে দিতে পারবে না। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : একজন অপরজনকে দাঁড় করিয়ে তার জায়গায় বসবে না। বরং তোমরা চেপে চেপে বসে আগন্তুকের জন্য জায়গা করে দেবে। (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মোসনাদে আহমাদ)।

উপরোক্ত আলোচনার সার নির্যাস স্বরূপ আমরা নিম্নলিখিত সিদ্ধান্তগুলো গ্রহণ করতে পারি। যথা : (ক) মজলিসের যেখানে স্থান পাওয়া যায় সেখানেই বসে যাবে। লোকদের ডিঙ্গিয়ে জোর জবরদস্তিভাবে সম্মুখে যাওয়ার চেষ্টা করা অনুচিত। এতে করে যারা প্রথমে এসেছে, তাদেরকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়, অস্বস্তিকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সম্পর্কে লোকদের মধ্যে খারাপ ধারণার সৃষ্টি হয়। (আদাবে জিন্দেগী : ২০৭)।

(খ) সর্বদা মজলিসের প্রধান ব্যক্তির কাছে বসার চেষ্টা করা উচিত নয়; বরং যেখানে জায়গা পাওয়া যায় সেখানে বসাই শ্রেয়। আর খেয়াল রাখা দরকার যে, নিজের বসার কারণে যেন অন্য লোকদের অসুবিধা না হয়। আর যখন লোক সমাগম বেশি হয়ে যাবে তখন চেপে বসবে এবং উদার চিত্তে সমবেত জনদের জায়গা করে দেয়া উত্তম। (আদাবে জিন্দেগী : ২০৮)।

(গ) কোনো মজলিস যেন আল্লাহ, রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং আখেরাতের স্মরণ হতে শূন্য না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা খুবই জরুরি। আর যদি উপলব্ধি করা যায় যে, সমবেত জনগণ দ্বীনি আলোচনায় মনোযোগ দিচ্ছে না, তাহলে আলাপ-আলোচনার মোড় পার্থিব কথা বার্তায় দিকে নিয়ে আসা সমীচীন। অতঃপর যখন পরিস্থিতি অনুকূলে আসবে, তখন কথার গতি কৌশলে দ্বীনি বিষয় বস্তুর দিকে নিয়ে আসবে এবং পরিস্থিতি ঘোলাটে যেন না হয় সেদিকে নজর রাখবে। (আদাবুল মুয়াশারাত : পৃ: ২৩৪)।

(ঘ) মজলিসে কোনো কিছু বলতে চাইলে সভাপতির অনুমতি নিয়েই বলা উচিত। অন্যথায় মজলিসে বিশৃংখলা দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয়। এমনটি হতে দেয়া একান্তই অনুচিত। কথাবার্তা ও প্রশ্নোত্তর প্রদানের ভাষা সালীন ও সহজ বোধ্য হওয়া দরকার। কঠিন ও অপ্রাসঙ্গিক ভাষা ও ব্যঞ্জনার অবতারনা করা বুদ্ধিহীনতারই পরিচায়ক। (আল আদাবুল মুফরাদ : ৯৭)।



 

Show all comments
  • রুদ্র মোহাম্মদ শাকিল ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:০১ এএম says : 0
    মানুষ সামাজিক জীব। সমাজের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে নানা নিয়ম-রীতি মেনে চলতে হয়।
    Total Reply(0) Reply
  • তরিকুল ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    সমাজের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে সভা ও বৈঠকে উপস্থিত হতে হয়। দুনিয়া ও দ্বিনি যেকোনো বিষয়ে এ ধরনের মজলিস হতে পারে। তবে মুসলিমদের বৈঠকের কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্য ও শিষ্টাচার আছে। ইসলামের আদর্শ ফুটে উঠবে তাতে।
    Total Reply(0) Reply
  • কায়কোবাদ মিলন ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    মজলিসের নিয়ম হলো শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং রাসুল (সা.)-এর ওপর দুরুদ পড়া। যে মজলিস আল্লাহর জিকির ও রাসুূল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ না করে সমাপ্ত হয় তাকে মৃত গাধার দেহের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মামুন রশিদ চৌধুরী ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:০২ এএম says : 0
    সালাম ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিধান। বিভিন্ন হাদিসে সালামের গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। তবে মজলিসের শুরুতে এবং শেষে সালাম দেওয়া সুন্নত।
    Total Reply(0) Reply
  • নিলিমা জাহান তনুশ্রী ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১:০৩ এএম says : 0
    অনেক সময় আমরা মজলিস চলাকালীন মজলিসে উপস্থিত হই। তখন উপবিষ্ট ব্যক্তিকে ডিঙিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আদব হলো যেখানে মজলিস শেষ সেখানে বসে পড়া।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন