Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা টানা দুই বছর বৃত্তিবঞ্চিত

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা তিন দফা টাকা পেলেও দুই অর্থবছর ধরে আটকে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদরাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকা। মাদরাসার শিক্ষার্থীদের দাবি, কলেজ থেকে পাস করা যেসব শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন তারা ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে তিন ধাপে টাকা পেয়েছে। কিন্তু জিটুপি পদ্ধতি আসার পর বৃত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট সাবমিট করার পরও এই সময়ে আমরা বৃত্তিবঞ্চিত। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, একই অবস্থা চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চমাধ্যমিকে পড়া মাদরাসার শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠান প্রধানের সহযোগিতায় ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৪৮ শিক্ষার্থীকে ৩৫ কোটি ২৯ লাখ ৫২ হাজার ৮৭০ টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এমআইএস সফটওয়্যারে সঠিকভাবে এন্ট্রিকৃত ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৫৪৪ শিক্ষার্থীর ব্যাংক হিসাবে ২৩৮ কোটি ৮ লাখ ২৫ হাজার ৪০ টাকা পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পাস করা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা পেলেও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা কেন বঞ্চিত?

প্রতি বছর আলিম পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে ৭৫০ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তির জন্য মনোনীত করে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতর। যাদের মধ্যে ১৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ৭৫০ টাকা এবং বার্ষিক এককালীন এক হাজার ৮০০ টাকা মেধাবৃত্তি ও ৬০০ জন শিক্ষার্থীকে প্রতি মাসে ৩৫০ টাকা এবং বার্ষিক এককালীন ৭৫০ টাকা করে সাধারণ বৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠান ভেদে কোর্সের মেয়াদ অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ৩/৪/৫ বছর পর্যন্ত এই বৃত্তি পায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুদ দাইয়ান ইনকিলাবকে জানান, ২০২০ সালের আগে আমরা ঠিকমতই বৃত্তির টাকা পেতাম। কিন্তু ২০২০-২১ অর্থবছরে জিটুপি পদ্ধতি চালু হওয়ার পর প্রায় ২ বছর ধরে টাকা পাচ্ছি না। তিনি বলেন, আমরা প্রয়োজনীয় সব ডকুমেন্ট সাবমিট করেছি। আমাদের বলা হলো কিছু শিক্ষার্থীর অনলাইন লিস্টে কিছু ভুল আছে তাই তারা টাকাটা পাঠাতে পারছে না। পরবর্তীতে আমরা তিনবার সংশোধন প্রক্রিয়া মেনটেইন করেছি কিন্তু ২০২০ পেরিয়ে ‹২১ ও শেষ হতে যাচ্ছে, এখনো টাকা পাওয়ার বিষয়ে কোনো আপডেট পাচ্ছি না। অথচ আমাদের কলেজ বোর্ডের সহপাঠীরা এর মধ্যে তিন ধাপে টাকা পেয়েছে।

আল আমিন নামে ঢাবির প্রথম বর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, বৃত্তির রেজাল্ট দিয়েছে ২ বছর পার হয়ে গেল। অথচ এখন পর্যন্ত আমরা একবারও টাকা পেলাম না। কলেজের শিক্ষার্থীরা ২ থেকে ৩ ধাপে টাকা পেলেও মাদরাসা শিক্ষার্থীরা টাকা পায়নি। আমরা ২০২০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরপরই বৃত্তির সব তথ্য জমা দিয়েছি এবং ব্যাংক একাউন্ট খুলেছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মো. সাজ্জাদ হোসাইন খান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বৃত্তির টাকা নিয়ে আমাদের সাথে একটা গেম খেলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বারবার তথ্য নিচ্ছে আর আশ্বাস দিচ্ছে, কিন্তু ফল দিচ্ছে না।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ওবায়দুল হক জানান, ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঠিকঠাক টাকা পেয়েছে কিন্তু ২০২০ থেকে অনলাইন সিস্টেম করার পর এখনো কোনো টাকা পায়নি।

বিষয়টি নিয়ে মাদরাসা বোর্ডের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুল মাজিদ নামে ঢাবির আরেক শিক্ষার্থী বলেন, চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং ব্যাংক হিসাব নাম্বার সাবমিট করার পরও মাদরাসা বোর্ডের অবহেলা, অদক্ষতা ও অনীহার কারণে আমরা আমাদের বোর্ড বৃত্তির টাকা সময়মত পাচ্ছি না।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে ব্লেইম গেম খেলছেন সংশ্লিষ্টরা। একজন দোষ চাপাচ্ছেন অন্যজনের ওপর। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বলছেন, বিষয়টি আমাদের আওতায় নয়। এটি মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর দেখেন। আমাদের এতে কিছু করার নেই। অপরদিকে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর বলছেন, মাদরাসা থেকে সাধারণ শিক্ষায় ভর্তি হওয়া বৃত্তি প্রাপ্তদের টাকা অনলাইনে মাউশি’র মাধ্যমে দেওয়া হয়। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই। তবে সাধারণ শিক্ষা থেকে কেউ যদি মাদরাসায় আসে সেটা আমরা দেখব।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাবির রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, মাউশির চিঠি পাওয়ার পর বৃত্তিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষার্থীদের নাম এবং টাকার মোট হিসেব আমরা চলতি বছরের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে মিরপুর আঞ্চলিক অফিসে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আমাদেরকে কোন আপডেট জানানো হয়নি।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন তো হওয়ার কথা না যে কলেজ থেকে যারা এসেছে শুধু তারা টাকা পাবে আর মাদরাসা থেকে আসা শিক্ষার্থীরা টাকা পাবে না। আমি বিষয়টা জানি না, তবে যদি সত্যি এমন হয়ে থাকে তাহলে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নির্দেশনা ও পরামর্শদাতা দফতরের পরিচালক প্রফেসর ড. মেহজাবীন হক বলেন, আমি তো এমন কিছু জানিই না।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, যারা বৃত্তির টাকা পাচ্ছে না তাদেরকে প্রোপার অথরিটির সাথে যোগাযোগ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদরাসা শিক্ষার্থীরা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ