Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিরাপত্তা নিয়ে আমরা ভীত নই, সতর্ক

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কূটনৈতিক সংবাদদাতা : নিরাপত্তা নিয়ে আমরা এখন ভীত নই, তবে সতর্ক। আগের চেয়ে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা মানে শুধু কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে চলবে না; সারাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। তাই সমন্বিত উপায়ে আরো কিছু পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদুন। গতকাল সোমবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে বাংলাদেশ কূটনৈতিক সংবাদদাতা সমিতি (ডিকাব) আয়োজিত ‘ডিকাব টক’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন। ডিকাব সভাপতি আঙ্গুর নাহার মন্টির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংলাপে সূচনা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক পান্থ রহমান।
পিয়েরে মায়াদুন বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠন নিয়ে আগামী ২০ ডিসেম্বরে ইইউ সদর দফতরে বাংলাদেশ-ইইউ যৌথ কমিশনের গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকে ভবিষ্যৎ নির্বাচন কমিশনের জন্য কারিগরি কোনো সহায়তার প্রয়োজন হবে কি না সেটিও আলোচনা হবে। কারণ, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বাংলাদেশ ও ইইউ সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা থাকতে হবে। আর নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ইইউর ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকায় এই সময়টাকে অনেক দূরে বলে মনে হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা খুব বেশি দূরে নয়। তাই এখনই এ নিয়ে উদ্যোগ নিতে হবে। গণতন্ত্র, সুশাসন ও মানবাধিকার সংক্রান্ত উপ-কমিটির বৈঠকে এটি এক নম্বর এজেন্ডা।
পিয়েরে মায়াদুন আরো জানান, নভেম্বরে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। ওই প্রতিনিধিদল মূলত বাংলাদেশ-ইইউ বাণিজ্য সম্পর্ক বিষয়ে আলোচনা করবে।
বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্লগার, প্রকাশক, সংখ্যালঘু, সমকামীসহ ৫০ জন লোক বিভিন্ন হামলায় নিহত হওয়ার পর গুলশানে হামলার ঘটনায় আমরা বিস্মিত হয়েছিলাম এমন নয়। কিন্তু গুলশানে হামলার ভয়াবহতার মাত্রা দেখে আমরা রীতিমতো হতবাক হয়ে পড়েছি।
এরপর সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে আস্থা ফিরেছে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে। ইংল্যান্ডের ক্রিকেট দলের সফর ও চীনের প্রেসিডেন্টের সফরের ফলে প্রমাণ হয় যে, নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছেÑ যোগ করেন ইইউ রাষ্ট্রদূত।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা নিয়ে আমরা এখন মোটেও ভীত নই, তবে আমরা সতর্ক। সন্ত্রাস দমনে বৈশ্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে মিলিয়ে সমন্বিত উপায়ে আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। নিরাপত্তা মানে শুধু কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবলে চলবে না; সারাদেশের নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় নিতে হবে। তবে সন্ত্রাস দমনে কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাই যথেষ্ট নয়। এ জন্য নাগরিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ অন্যান্য অধিকার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
ইইউর রাষ্ট্রদূত বলেন, ১ জুলাইয়ের হামলার পর বিভিন্ন দেশ নিরাপত্তা সহযোগিতা দেয়ার জন্য বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রও আছে। এগুলো সম্পর্কে আমি বিস্তারিত জানি না। তবে সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ প্রস্তাবগুলো দেয়া হয়েছে।
নিরাপত্তার জন্য বিদেশী কূটনীতিক মিশনগুলো আনসার নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ফরেন ডোনেশন অ্যাক্ট করায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি এনজিওবান্ধব দেশ হলেও এ আইন এনজিওদের মাধ্যমে বিদেশী সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করবে। নতুন এ আইনের ফলে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়বে।
চীনের প্রেসিডেন্টের সফর সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নতুন মাত্রায় কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্কের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আছে। সাধারণত কৌশলগত অংশীদারিত্বের সম্পর্ক ৩৬০ ডিগ্রি ক্ষেত্রে সম্পৃক্ততা বাড়ে।
তিনি বলেন, চীন বাংলাদেশের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করায় আমাদের সঙ্গে কোনো সংঘাতের সৃষ্টি হবে না, বরং চীনের অংশগ্রহণ সহযোগিতামূলক হবে। ইইউর সঙ্গেও চীনের কৌশলগত অংশীূদারিত্ব রয়েছে।
বিভিন্ন অভিযানে জঙ্গিদের নিহত হওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে পিয়েরে মায়াদুন বলেন, এসব অভিযানে যেসব জঙ্গি মারা যাচ্ছে, তাদের হত্যা করা পরিহার করা আদৌ সম্ভব ছিল কি না সেটা আমার জানা নেই।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রভাব বাড়ছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে ইইউর রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের প্রভাব যে কোনো সময়ের থেকে এখন অনেক বেশি। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও কানেকটিভিট বেড়েছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নিরাপত্তা নিয়ে আমরা ভীত নই
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ