Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলছে ভাড়া নৈরাজ্য

সিএনজিচালিত বাসেও নেয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া হেলপারের সাথে যাত্রীদের বাগি¦তণ্ডা-হাতাহাতি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

জ্বালানি তেল ও ডিজেলের দাম বাড়ায় নতুন করে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে। আর এই বর্ধিতভাড়া নিয়ে রাজধানীতে এক ধরনের নৈরাজ্য চলছে। বাসচালক ও হেলপার ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ তেলের দাম বাড়ার অজুহাতে অনেক বাসে আগের চেয়ে দিগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, যেসব বাস সিএনজি গ্যাসে জ্বালিত, সেগুলোও যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। আর বেশি ভাড়া নিয়ে বাসে বাসে হেলপারের সাথে যাত্রীদের বাগবিতণ্ডা হচ্ছে।

তেলের দাম বাড়ানোয় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের টানা তিনদিনের ধর্মঘটের পর বাসের ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার। সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডিজেলচালিত বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া ৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে সিএনজিচালিত গণপরিবহনে ভাড়া অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে নতুন করে বাড়ানো ভাড়ায় চলছে গণপরিবহন। রাজধানীতে সেসব বাস সিএনজিচালিত সেগুলোও বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে। আগে রাজধানীতে বাসে সর্বনিম্ন ভাড়া ৫ টাকা ছিল। এখন আর বাসে ৫ টাকার ভাড়া নেই। রাজধানীর ফার্মগেট থেকে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের শেষে মাথায় আড়ংয়ের কাছে নেমেও ভাড়া দিতে হল ১০ টাকা। আগে এ জায়গাটুকু ৫ টাকায় যাওয়া যেত।

গতকাল মিরপুর, ফার্মগেট, শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, সদরঘাট, মৌচাক, মালিবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালি সবখানেই দেখা যায়, সিএনজিচালিত গণপরিবহনে ভাড়া বাড়ানোর নির্দেশনা না থাকলেও যাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় বাড়তি ভাড়া। সিএনজি না ডিজেলচালিত পরিবহন এই রকম দৃশ্যমান কোনো কিছু না থাকায় ড্রাইভার এবং হেলপাররা নিজেদের ইচ্ছেমতো বাড়তি ভাড়া আদায় করেন। এতে বিড়ম্বনায় পড়েন যাত্রীরা। অনেক স্থানে চালক ও হেলপারের সাথে যাত্রীদের তর্কাতর্কিও হয়েছে। অনেক জায়গায় যাত্রীরা বাস থেকে নেমে নিচে সিনএনজির সিলিন্ডার ঝুলতে দেখে হেলপারকে বলেছে এইতো এটা সিএনজি চালিত। হেলপার এবং চালক তখন এক সুরে বলেছে আগে ছিল এখন এটা নষ্ট। এখন এ গাড়ি তেলেই চলে। এভাবেই সিএনজিচালিত বাসকে ডিজেলচালিত বাস বলে চালানো হচ্ছে। রাজধানীর বেশ কয়েকটি পয়েন্টে এমন দৃশ্য দেখা যায়। সিএনজির সিলিন্ডার বাসের নিচে ঝুলতে দেখা গেলেও বাসচালক ও হেলপার তাদের গাড়ি সিএনজিচালিত বিষয়ে অস্বীকার করেছেন। চালকদের সঙ্গে কথা বললে কেউই বিষয়টি স্বীকার করতে চাননি। জানতে চাইলে সবাই দাবি করেন, তাদের তেলের গাড়ি।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের ২০১৯ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, রাজধানীতে চলা ২৫টি কোম্পানির বাসের মধ্যে ২০ কোম্পানির বাস সিএনজিতে রূপান্তর করা। এতে তখনই ছিল শতকরা ৮০ ভাগ বাস সিএনজিতে কনভার্ট করা। এ সংখ্যা বর্তমানে আরও বেড়েছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে গাবতলী এবং টঙ্গীসহ বিভিন্ন রুটে চলা বেশ কয়েকটি বাসে এমন চিত্র দেখা যায়। এসব রুটে লোকাল বাস হিসেবে পরিচিত ৮ নম্বর, অনাবিল, তুরাগসহ বেশ কয়েকটি ওয়েবিলে নিয়ন্ত্রিত বাস।

যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী রুটে চলাচলকারী তুরাগ পরিবহনের বেশ কয়েকটি বাস সিএনজিচালিত হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত নতুন ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া যাত্রাবাড়ী-গাবতলী রুটে ৮ নম্বর, উত্তরা রুটে রাইদাসহ কয়েকটি সিএনজিচালিত বাস চলছে। তবে চালকদের সঙ্গে কথা বললে কেউ বিষয়টি স্বীকার করেননি।
যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যাত্রাবাড়ী থেকে টঙ্গী পর্যন্ত আগের ভাড়া ছিল ৪৫ টাকা। সে ভাড়া এখন ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তবে কোনো কোনো গাড়ির চালক-হেলপার দাবি করেন তারা ৫৫ টাকা করে ভাড়া নিচ্ছেন।
সিএনজিচালিত বাসে কেন বাড়তি ভাড়া নিচ্ছেন এ প্রশ্নের জবাবে এক চালক বলেন, ভাড়া বাড়ছে মানে সব গাড়িতেই বাড়ছে। কোন গাড়ি সিএনজি আর কোন গাড়ি তেলের রাস্তায় নামলে তার কী আর হিসাব থাকে। শুধু কী তেলের খরচ নাকি। গাড়িতে আরও অনেক খরচ আছে।

গ্যাসের গাড়ি কয়টা আছে জানতে চাইলে তুরাগের একজন চালক বলেন, ১০০টা গাড়ি চেক করলে ৩০টা গ্যাসের গাড়ি বের হবে। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দাবি রাস্তায় এখন সিএনজিচালিত বাস নেই। তারা বলেন, ঢাকা শহরে এখন আর সিএনজিচালিত বাস নেই। যদি থাকে, সর্বোচ্চ ১ থেকে ২ শতাংশ হবে।
শুধু রাজধানী ঢাকায় নয়, বাস ভাড়া বৃদ্ধিতে সারাদেশেই যাত্রীদের বিড়ম্বনা বেড়েছে। বাড়তি ভাড়ার বিড়ম্বনা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন নিচে তুলে ধরা হলো।

শেরপুর ঝিনাইগাতী থেকে এস. কে. সাত্তার জানান, টানা তিন দিনের ধর্মঘট শেষে ভাড়া বৃদ্ধির শর্তে গতকাল সোমবার সকাল থেকে শেরপুরের পাহাড়ি অঞ্চল ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী ও নালিতাবাড়ি থেকে নতুন বর্ধিত ভাড়ায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোয় পাহাড়ি অঞ্চল থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। কোন কোন বাসে নতুন নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করছে বলে অভিযোগ অনেক যাত্রীর। এ নিয়ে বাকবিতন্ডাও হচ্ছে বলে জানা যায়। এতে যাত্রীরা অসহায়ভাবে বাড়তি ভাড়া দিয়েই গন্তব্যে পৌঁছছে। অনেক সাধারণযাত্রী ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। সকালে অনেক দূরপাল্লার বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। অনেক যাত্রী তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা বৃদ্ধিকে অযৌক্তিক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে ডিজেলের দাম একবারেই লিটারে ১৫ টাকা না বাড়িয়ে আস্তে আস্তে বাড়ানো উচিৎ ছিল। লিটারে ৪/৫ টাকা করেও বাড়ানো যেতো। একবাড়েই ১৫ টাকা বাড়ানোতে সাধারণ মানুষের ওপর প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্ত বেঁঁধে দিয়ে এক যাত্রী বলেন, ঝিনাইগাতী থেকে ঢাকা যেতে আগে ভাড়া লাগতো ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা। এখন গুনতে হচ্ছে ৪০০ টাকা। এটা কতো বড় অমানবিক। ভাড়া বাড়লে ১০-২০ টাকা বাড়াতে পারত। তাহলে কোনো কথা ছিল না।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাড়া বাড়ে, সব জিনিসের দাম বাড়ে, আমাদের আয়তো বাড়ে না। নতুন বাড়তি ভাড়ার টাকা আসবে কোত্থেকে। তিনি আরো বলেন, এমনইতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে, তার ওপর আবার যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি, এটা যেন ‘মড়ার ওপর খাঁরার ঘা’। তেলের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের ওপর বিরাট আঘাত করা হলো। যাত্রী আবুল কালাম বলেন, সীমিত আয়ের মানুষ, নিম্ন ও মধ্যআয়ের মানুষ যারা তাদের কথা ভেবে তেলের দাম বাড়ানো উচিৎ ছিল। আরেক যাত্রী ইন্তাজ আলী বলেন, আমরা বড়ই অসহায়। আমাদের দুঃখ কে দেখবে বা শুনবে। গরিব হয়ে জন্ম নেয়াটাই আমাদের অপরাধ!



 

Show all comments
  • ডালিম ৯ নভেম্বর, ২০২১, ২:২৪ এএম says : 0
    সকল সেক্টরেই চলছে নৈরাজ্য
    Total Reply(0) Reply
  • jack ali ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১:১৬ পিএম says : 0
    যতদিন পর্যন্ত আল্লাহর আইন দিয়ে দেশ চলবে না ততদিন পর্যন্ত দেশে যত ধরনের অপরাধ অত্যাচার হতেই থাকবে অবশ্য আমরা মুসলিম বলে দাবি করি কিন্তু আল্লাহর আইন চাই না...
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চলছে ভাড়া নৈরাজ্য

৯ নভেম্বর, ২০২১
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ