Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাহাজের শিডিউল এলোমেলো

স্থবির চট্টগ্রাম বন্দর ডিপোতে আটকা রফতানি : পণ্যবোঝাই ১০ হাজার কন্টেইনার

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৯ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

পরিবহন ধর্মঘটে রফতানি পণ্য পরিবহন মারাত্মক বিঘ্নিত হচ্ছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত টানা চারদিন বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলো থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে রফতানি পণ্যবোঝাই কোন কন্টেইনার বন্দরে পৌঁছায়নি। ফলে দুটি জাহাজ বিপুল সংখ্যক রফতানি কন্টেইনার না নিয়ে শ্রীলঙ্কার কলম্বো বন্দরের উদ্দেশে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করেছে।

লাগাতার পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের ফলে কন্টেইনার বন্দরে না পৌঁছায় শিপমেন্ট করা যায়নি। এতে বন্দরে জাহাজের শিডিউল এলোমেলো হয়ে পড়েছে। গতকাল সাতটি জাহাজ রফতানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করার কথা ছিল। বিকেল পর্যন্ত দুটি জাহাজ বন্দর ছেড়ে গেছে। রাতে আরও একটি জাহাজ বন্দর ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। আরও চারটি জাহাজ রফতানি কন্টেইনারের জন্য অতিরিক্ত সময় বন্দরে অবস্থান করছে।

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতে ১০ হাজার ১২০ টিইইউএস রফতানিমুখী কন্টেইনার পড়েছিল। বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো মালিকদের সংগঠন বিকডার সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিকদার বলেন, গত চার দিনে বেসরকারি ডিপো থেকে একটি কন্টেইনারও বন্দরে যায়নি। ডিপোগুলোতে মজুদ ১০ হাজার ১২০ টিইইউএস কন্টেইনারের মধ্যে অন্তত ছয় হাজার কন্টেইনার চার দিনে বন্দরে পৌঁছার কথা ছিল। ডিপোগুলোতে সব মিলিয়ে গতকাল ৫৪ হাজার ৪০০ কন্টেইনার জমে ছিল। আমদানি কন্টেইনার আটকে আছে ৮ হাজার ৭০০ টিইইউএস। এসব আমদানি পণ্য খালাস করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৯ হাজার টিইইউএস কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা আছে। গত চার দিনে পাঁচ হাজারের বেশি কন্টেইনার জমে গিয়ে ইয়ার্ডে কন্টেইনার আছে ৩৮ হাজার ১০০ টিইইউএস। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ১৪টি ও বহির্নোঙরে ৬৫টি জাহাজ পণ্য নিয়ে অবস্থান করছে। জেটি থেকে দু’টি জাহাজ রফতানি পণ্যের কন্টেইনার না নিয়েই চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করেছে। বন্দর থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই কন্টেইনার এবং খোলা পণ্য পরিবহন সীমিত আকারে চালু হলেও রফতানিমুখী কন্টেইনার বন্দরে যাচ্ছে না। এতে রফতানি খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তৈরি পোশাক মালিকেরা। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতারা বলছেন, যথাসময়ে পণ্য জাহাজিকরণ করা না গেলে অর্ডার বাতিল হবে। এতে ক্ষতির মুখে পড়বেন তারা। সেইসাথে দেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষুণ্ন হবে।

জ্বালানি তেলের হঠাৎ মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে চার দিন ধরে বন্ধ পণ্যবাহী পরিবহন। আমদানি কন্টেইনার জাহাজ থেকে খালাস হলেও বন্দর থেকে বের হতে পারছে না। কন্টেইনার ও পণ্যবাহী ট্যাংক লরি, প্রাইম মোভার, ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দরের ইয়ার্ডে ও বেসরকারি ডিপোতে কন্টেইনারের স্তুপ জমেছে। তবে গতকাল সীমিত আকারে বন্দর থেকে খোলা পণ্য ও কিছু কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে। বন্দরের কর্মকর্তারা জানান, গতকাল তিন হাজার কন্টেইনার ডেলিভারির সিডিউল থাকলেও মাত্র কয়েকশ’ ডেলিভারি হয়েছে। বন্দরে ৩৮ হাজার ১০০ টিইইউএস কন্টেইনার রয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক বলেন, ডিপো থেকে রফতানি কন্টেইনার আসছে না বললেই চলে। গত চার দিনে তেমন কোনো রফতানি কন্টেইনার জাহাজে তোলা যায়নি। আমদানি কন্টেইনার খালাস চলছে। ইয়ার্ডে এখনও পর্যাপ্ত জায়গা আছে। তবে অবস্থা আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যাচ্ছে। দু’টি জাহাজ এক্সপোর্টের কন্টেইনার না নিয়েই বন্দর ছেড়ে গেছে।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্মকর্তা জানান, যে দুইটি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দর ছেড়ে গেছে সেগুলো তাদের ধারণক্ষমতার দশ ভাগের একভাগ কন্টেইনারও নিতে পারেনি। এভাবে কন্টেইনার ছাড়া যে জাহাজগুলো চলে যাচ্ছে, পরে তো জাহাজ মালিকরা জাহাজ পাঠাতে রাজি হবেন না অথবা ভাড়া বাড়িয়ে দেবেন। এছাড়া ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট যেগুলো আছে, সেখানেও প্রভাব পড়বে। ধর্মঘট উঠে যাওয়ার পর যখন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে জাহাজ যাওয়া শুরু করবে, তখন সেখানে জট দেখা দেবে।

সমুদ্রপথে রফতানি কন্টেইনারের ৯৮ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে হয়। প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে গড়ে এক হাজার ৯০০ কন্টেইনার পণ্য বিদেশে পাঠানো হয়। টানা চার দিন বন্ধ থাকায় কন্টেইনার জমছে বেসরকারি ডিপোগুলোতে। ধর্মঘটে শিল্প কারখানার কাঁচামাল যেমন কারখানায় যাচ্ছে না, তেমনি কারখানায় উৎপাদিত পোশাকসহ রফতানিমুখী পণ্য ডিপো বা বন্দরে নেয়া যাচ্ছে না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাহাজের শিডিউল
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ