Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কওমী সনদের মান দেওবন্দের মূলনীতি ও আদলে হতে হবে -আল্লামা শাহ আহমদ শফী

হাজার হাজার উলামায়ে কেরামের উপস্থিতিতে জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত

প্রকাশের সময় : ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশের সভাপতি ও হাটহাজারী মাদরাসার মহাপরিচালক আল্লামা শাহ্ আহমদ শফী বলেছেন, এদেশে কওমী মাদরাসাসমূহ দেওবন্দের নীতি আদর্শ মতে পরিচালিত হয়, কওমী সনদের ইস্যুসহ যেকোনো বিষয়ে দেওবন্দের নীতি আদর্শের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ নেই। ভারতে দারুল উলূম দেওবন্দ যেভাবে পরিচালিত হয়, সনদের মান নির্ধারণে দেওবন্দের নীতিমালা যেরকম, এদেশে কওমী মাদরাসা পরিচালনা করা এবং সনদের মান নির্ধারণ সেভাবেই হতে হবে। তিনি বলেন, অন্য কোনো পন্থা মানা হবে না। বাংলাদেশে কওমী মাদরাসার সনদের স্বীকৃতি না থাকাটা নতুন সমস্যা নয়, এটা ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে, কিন্তু হঠাৎ করে বর্তমান ধর্ম নিরপেক্ষ সরকার কওমী সনদের সরকারি স্বীকৃতি দিতে অতি আগ্রহ প্রকাশ করছে। কোনো কোনো উলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে যেনতেন ভাবে এ স্বীকৃতি গ্রহণে অতিউৎসাহী অপতৎপরতা গভীর ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বহন করছে। গত কয়েক বছরের সংবাদ ও ঘটনা পর্যালোচনা করলে এ ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লামা আহমদ শফী বলেন, কওমী স্বীকৃতির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জোরদার ঐক্য গড়তে তুলতে হবে উলামায়ে কেরামকে।
প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে অদ্যাবধি দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসা দ্বীন ও ইসলামের বহুমূখী খেদমত আঞ্জাম দিয়ে আসছে, যার ফলে ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র হিসাবে সারাপৃথিবীতে দারুল উলূম দেওবন্দ একটি বহুল পরিচিত প্রতিষ্ঠান, সম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশের হাত থেকে এ উপমহাদেশকে মুক্ত করার পিছনে দেওবন্দের অবদান অবিস্মরণীয়। এদেশের কওমী মাদরাসাসমূহ সেই দারুল উলূম দেওবন্দেরই অনুসারী, দেওবন্দের মতই এসব প্রতিষ্ঠান ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি, ঈমান-আমল, আখলাক ও নৈতিক চিন্তাধারা গঠণে মৌলিক ভূমিকা পালন করে আসছে এবং কোরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী চরিত্রবান দেশপ্রেমিক সুনাগরিক তৈরি করা এবং ইসলামের মহানবাণী সর্বস্তরের জনসাধারাণের পৌছে দেয়াই কওমী মাদরাসার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য। এদেশে কওমী মাদরাসার সাথে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের আত্মার সম্পর্ক বিদ্যমান। এ মাদরাসাসমূহ সম্পূর্ণভাবে স্বায়ত্ব শাষিত। দেওবন্দের অষ্টক মূলনীতিই হলো এ প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্দেশিকা। এ মূলনীতির অন্যতম হলো- এসব প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা ও মৌলিকত্ব অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে সরকারি সাহায্য গ্রহণ না করা ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকা। তবে এটা রাষ্ট্র বা সরকারের কর্তৃপক্ষ হওয়া নয় বরং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করে ও সংবিধানের আনুগত্য প্রদর্শনী (কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী না হলে) কওমী মাদরাসা কখনো পিছপা হয়নি।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর আরজাবাদ মাদরাসা মাঠে ‘কওমী স্বীকৃতি’ বিষয়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় কওমী উলামা মাশায়েখ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সম্মেলন উপলক্ষে সকাল থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে শীর্ষ পর্যায়ের উলামায়ে কেরামগণ সম্মেলন মাঠে উপস্থিত হতে শুরু করেন। প্রধান অতিথি মঞ্চে আসার পূর্বেই সম্মেলন মাঠ, আশপাশের রাস্তা, মসজিদ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়।
আল্লামা আহমদ শফী আরো বলেন, গত দেড়শত বছর থেকে স্বাধীনভাবে চলে আসা কওমী মাদরাসা সমূহের শিক্ষা সনদের মান দেওয়ার লক্ষ্যে কওমী মাদরাসা শিক্ষা কমিশন গঠন, বাংলাদেশ কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন প্রনয়ণসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারীসহ সরকার নানান পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব প্রক্রিয়ার পিছনে কারো কারো অতি মাত্রায় আগ্রহ সম্পর্কে আমরা কম-বেশি অবগত। কিন্তু এ বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। তাই কারো কারো অতি উৎসাহমূলক তৎপরতা দেখে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা, শায়ত্ব শাসন অক্ষুন্ন রাখার বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। কিন্তু আমরা মনে করি যে, শত বছর ধরে চলে আসা কওমী মাদরাসার স্বকীয়নীতি আদর্শ, স্বাধীন শিক্ষাক্রম, পরিচালনা বিন্দু মাত্রও নষ্ট হবে না এবং সরকারের নিয়ন্ত্রণ থাকবে না এমন নিশ্চয়তা পেলেই আমরা সরকার থেকে দাওরায়ে হাদিসের সনদের মান নির্ধারণের বিষয়ে আলোচনায় বসতে পারি। অন্যথায় আমরা যেভাবে আছি সেভাবে থাকাই আমাদের জন্য নিরাপদ।
তিনি বলেন, ২০১৬ সালের প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের বেশ কিছু ধারা কওমী মাদরাসা স্বাধীনভাবে চলার পরিপন্থী, তারপরেও আমাদেরই কারো কারো অতি উৎসাহে সরকার একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েই চলছে। সঙ্গত কারণেই আমাদের সকলের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এসকল বিষয়ে চূড়ান্ত অবস্থান নির্ণয় ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ছে। আর এ প্রেক্ষিতেই আজকের জাতীয় কওমী উলামা মাশায়েখ সম্মেলন। তিনি আজকের সম্মেলনে আগত উলামা-মাশায়েখগণকে ধন্যবাদ দিয়ে আগামীতেও যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ঐক্যের ডাক আসলে সর্বাত্মক সাড়া দেওয়ার আহবান জানিয়ে দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মার কল্যাণ কামনায় দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
সম্মেলনে গৃহীত প্রস্তাবসমূহের মধ্যে রয়েছে: জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এবং তদালোকে প্রণীত শিক্ষা আইন ২০১৬ এর খসড়া অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে চক্রান্তমূলকভাবে বাদ দেওয়া ইসলামী ভাবধারার গল্প, রচনা ও কবিতাসমূহ পুনঃঅন্তর্ভূক্ত করতে হবে এবং হিন্দুত্ববাদী ও ইসলাম বিদ্বেষী কবিতা, গল্প ও রচনাবলী শিক্ষা সিলেবাস থেকে বাদ দিতে হবে। শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে হবে এবং ইসলামের বুনিয়াদী শিক্ষাকে (যা ফরজে আইন) বাধ্যতামূলক করতে হবে। পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন পর্যালোচনা কার্যক্রমে দক্ষ ও বিজ্ঞ আলেমগণের পরামর্শ নিতে হবে। প্রস্তাবিত কওমী মাদরাসা শিক্ষনীতি-২০১২ এবং এর আলোকে তৈরীকৃত কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন ২০১৩ এর খসড়া বাতিল করতে হবে। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ এর প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গঠিত ৯ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ও কমিটির সকল কার্যক্রম বাতিল করতে হবে। যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার নামে কওমী মাদরাসার স্বকীয়তা ও স্বাতন্ত্রতা বিলুপ্ত হয় এমন কোন সিদ্ধান্তগ্রহণ থেকে সরকারকে বিরত থাকতে হবে। পুরান ও নতুন মক্তব হাফেজিয়া ও কওমী মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা সরকারী নিবন্ধনের আওতামুক্ত থাকতে হবে।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন: শাইখুল হাদিস মাওলানা আশরাফ আলী, আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী, শায়খুল হাদিস মাওলানা তাফাজ্জুল হক হবীগঞ্জী, মাওলানা মোহাম্মদ তৈয়ব জিরী, মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ওয়াক্কাস, শায়খুল হাদিস মাওলানা নূর হোছাইন কাসেমী, মাওলানা জোনায়েদ বাবুনগরী, মাওলানা আনোয়ার শাহ, মাওলানা মোস্তফা আযাদ, মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলীপুরী, মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস ফরিদাবাদ, মাওলানা আবুল কালাম, মাওলানা আব্দুল হামীদ পীর সাহেব মধুপুর, মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী সহকারী সম্পাদক দৈনিক ইনকিলাব, মাওলানা আবদুল মালেক হালিম, মাওলানা মোবারক উল্লাহ বি-বাড়িয়া, মাওলানা আতাউল্লাহ হাফিজ্জী, মাওলানা হিফজুর রহমান, মাওলানা নূরুল ইসলাম খিলগাঁও, মাওলানা সাজেদুর রহমান, মাওলানা মাওলানা আবুল কালাম, মুফতি মীযানুর রহমান সাঈদ, মাওলানা সলীমুল্লাহ নাজীরহাট, মাওলানা আব্দুর রহমান হাফিজ্জী, মাওলানা মাহবুবে ইলাহী উজানী, মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ সাদী, মাওলানা আনোয়ারুল করীম যশোর, মাওলানা নূরুল হুদা ফয়জী, মাওলানা তাজুল ইসলাম পীর সাহেব ফিরোজ শাহ, মুফতি ফয়জুল্লাহ, মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা উবায়দুর রহমান মাহবুব, মুফতি কুতুব উদ্দীন নানুপুরী, মাওলানা ইসমাঈল নূরপুরী, মাওলানা জোনায়েদ আল হাবীব, মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমী, মুফতি হাবীবুর রহমান ফেনী, মাওলানা আব্দুল্লাহ সাভার, মাওলানা ইসমাঈল কিশোরগঞ্জ, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, মাওলানা আব্দুল আওয়াল, মাওলানা আব্দুল কাদের না:গঞ্জ, মাওলানা ফয়জুল্লাহ সন্দীপী, মাওলানা লোকমান মাযহারী ও মাওলানা আযহারুল ইসলাম প্রমুখ। এছাড়া সম্মেলনে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত উপস্থিত বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের নাম ঘোষণা করা হয়।
অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন, মাওলানা মাহফুজুল হক ও মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।



 

Show all comments
  • M.A. Kalam ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:১৪ এএম says : 0
    Thanks
    Total Reply(0) Reply
  • abu abdulah ১৮ অক্টোবর, ২০১৬, ১১:৫৪ এএম says : 0
    ALLAHU AKBAR KABIRA
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কওমী সনদের মান দেওবন্দের মূলনীতি ও আদলে হতে হবে -আল্লামা শাহ আহমদ শফী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ