Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মঘটে বিপর্যস্ত জনজীবন

তেলের দাম বৃদ্ধিতে বাস মালিকদের মাথাব্যথা নেই ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিকদের দাবি তেলের দাম কমাও, বাস মালিকরা চায় ভাড়া বৃদ্ধি ভাড়া বৃদ্ধির আলোচনা হবে বিআরটিএতে; রোববার পর্যন্ত চলতে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ নভেম্বর, ২০২১, ১২:০০ এএম

রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে জ্বালানি তেলের ২৩ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি এবং হঠাৎ সব ধরনের পরিবহন ধর্মঘটে চরম দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ মানুষ। বাস বন্ধ থাকায় সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা যেমন বিপর্যয়ের মুখে পড়েন; তেমনি সাধারণ মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে পড়ে যান বিপাকে। রাজধানী থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। মহানগরের সব রুটের চলাচল করা বাস বন্ধ। প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরিয়ে গন্তব্যে যেতে না পেরে বাসস্ট্যান্ড থেকে অনেকে ফিরে গেছেন। বাস বন্ধ থাকায় সিএনজি, উবার, ওভাই ও রিক্সায় তিন থেকে চারগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে হয়েছে। ডিজেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদ এবং ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সারা দেশের পরিবহন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়লেও গা করছেন না পরিবহন মালিক-শ্রমিকেরা। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিকদের দাবি তেলের দাম কমাতে হবে। আর বাস মালিক সমিতির দাবি ভাড়া বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারের একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী ধর্মঘট তুলে নেয়ার আহ্বান জানালেও ধর্মঘট বন্ধে সরকারের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। তবে পরিবহন মালিক সমিতি ও বিআরটিএ সুত্রে জানা গেছে রোববার বিকেলে সব পক্ষ নিয়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠকে বাস ভাড়া বৃদ্ধির প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা হবে।

হঠাৎ করে বাস মালিকদের ধর্মঘটে রাজধানীতে দেখা দেয় গণপরিবহনের তীব্র সঙ্কট। ঢাকার বেশিরভাগ গণপরিবহন যেহেতু ব্যক্তি মালিকানাধীন, তাই মালিকরা অতিরিক্ত অর্থে জ্বালানি কিনে পথে পরিবহন বের করেননি। বাস মালিক সমিতির বেশির ভাগ নেতা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও গৃহপালিত বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতা। ফলে তারা সরকার বিব্রত হয় এমন দায় এড়াতে কেন্দ্রীয়ভাবে ধর্মঘট না ডেকে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের শাখা কমিটিগুলোকে দিয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন। সকাল থেকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ি, সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, মতিঝিল, শাহবাগ, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, খামারবাড়ি, এলিফ্যান্ট রোড, কলাবাগান, ধানমন্ডি, আসাদগেট ও শ্যামলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পথে কোনো বাস দেখা যায়নি বললেই চলে। তবে মাঝে মধ্যে খিলগাঁও-মোহাম্মদপুর রুটে তরঙ্গ পরিবহন, চিটাগাং রোড টু মিরপুর, গুলিস্তান-ফার্মগেট-মিরপুর রুটে হাতে গোনা কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিআরটিসি বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। প্রতিটি বাসে ছিল উপচেপড়া ভিড়। অনেকেই আবার বাসের দরজায় ঝুলে ঝুলেও যাত্রা করেছেন। বিআরটিসির শাহরিয়ার রশীদ নামে একযাত্রী বলেন, গণপরিবহন বন্ধ হলে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। বাসে যেখানে ভাড়া ১০ টাকা, রিকশায় গেলে ৭০ টাকা। সিএনজি নিলে ১২০ টাকা। কী করার, তাই অনেকক্ষণ হেঁটে ফার্মগেট এসে গুলিস্তানের বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। পরে আধাঘণ্টা দাঁড়িয়ে একটি বাস পাওয়া গেলেও তাতে ঝুলে ঝুলে যাত্রা করা ছাড়া উপায় নেই।

হঠাৎ করে বাস বন্ধ থাকায় রাজধানী ঢাকা সিএনপি, রিক্সা আর বাইকের শহরে পরিণত হয়েছিল। হাজার হাজার সিএনজি ও রিক্সা রাজধানীর সব রাস্তায় চলাচল করেছে। মানুষকে নিরুপায় হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।
চরম ভোগান্তি চাকরি পরীক্ষার্থীদের : করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর শুরু হয়েছে সরকারি বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগের ভর্তি পরীক্ষা। বেশির ভাগ পরীক্ষা কেন্দ্র রাজধানীতে হওয়ায় সারা দেশ থেকে পরীক্ষার্থীরা ঢাকায় এসে পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন। এই ধর্মঘটে তারা সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। ঢাকার বাইরে থেকে রাজধানীতে আসা সরকারি চাকরির পরীক্ষার্থীদের অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। যারা অংশ নিয়েছেন তাদের একদিকে যেমন সকালে নির্দিষ্ট পরীক্ষা কেন্দ্রে যেতে গুনতে হয়েছে ভোগান্তি, ঠিক তেমনি পরীক্ষা শেষ করে বাসায় ফেরার জন্য প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়। মো. সোহেল হোসেন নামে এক পরীক্ষার্থী বলেন, আমার জাতীয় সংসদের একটি চাকরির পরীক্ষা ছিল মোহাম্মদপুর রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে। গত রাতে ঢাকাতে এলেও সকাল বেলা আত্মীয়ের বাসা থেকে রিক্সায় করে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাই। পরীক্ষা শেষ করে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি। কোনো বাস পাচ্ছি না। এখন কীভাবে ফিরব জানি না। এরপরে আবার গ্রামে ফেরার পালা তো আছেই। বাস বন্ধ হলেও ট্রেন চলছে। কিন্তু ট্রেনের সিট পাওয়া কঠিন। এরপর আবার অনলাইনে টিকিট করা আরও বেশি বিরক্তিকর। আর বাস বা অন্যান্য গণপরিবহন বন্ধ থাকায় স্টেশনে গিয়ে টিকিট করাও অসম্ভব প্রায়। সব মিলিয়ে বেশ বিড়ম্বনার মধ্যে পড়ে গেছি আমরা পরীক্ষার্থীরা।

বাস না থাকায় এবং সিএনজি ও রিক্সার ভাড়া চার-পাঁচগুণ বেশি হওয়ায় অধিকাংশ মানুষকেই দেখা গেছে হেঁটে যাত্রা করতে। রাজধানীর সব সময়ের ব্যস্ততম সড়কগুলোও ছিল থমথমে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পথে গণপরিবহন নামাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বেশির ভাগ গণপরিবহনের মালিক।

ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আসছে : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ফলে বাসের ভাড়া বাড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘট হলেও বাস্তবে সব যানবাহনের ভাড়া বৃদ্ধি মূল টার্গেট। এরই মধ্যে বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষে চিঠি দিয়েছে বাস মালিক সমিতি। আগামী রোববার ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্তের ওপর পরবর্তী অবস্থা বোঝা যাবে। পরিবহন মালিকরা অতিরিক্ত জ্বালানির খরচের কারণে পরিবহন বন্ধ রেখেছে। তা চলমান থাকবে। বাস মালিক সমিতির চিঠির সূত্র ধরে আগামী কাল রোববার বৈঠকে বসতে যাচ্ছে সব পক্ষ। সেই বৈঠক থেকেই বাসের ভাড়া বাড়ছে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেছেন, ডিজেলের দাম বাড়ায় আমরা বিআরটিকে বাসের ভাড়া বাড়ানোর জন্য চিঠি দিয়েছি। রোববার ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্তের ওপর পরবর্তী অবস্থা বোঝা যাবে। পরিবহন মালিকরা অতিরিক্ত জ্বালানির খরচের কারণে তারা তাদের পরিবহন বন্ধ রেখেছে। তা চলমান থাকবে। বাসের ভাড়া বাড়ানোর প্রসঙ্গে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, বাসের ভাড়া বাড়াতে বাস মালিকরা একটি চিঠি দিয়েছে। রোববার বিকেল ৩টায় এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটা বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই বৈঠক থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে। তবে একদিকে ধর্মঘট চলবে আর অন্যদিকে ভাড়া বাড়ানোর আলোচনা হবে; দুইটা একসঙ্গে হতে পারে না। বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার বলেন, আমাদের সিদ্ধান্ত মেনে না নেয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির পর ধর্মঘটের কারণে জনগণের কথা ভেবে তেলের দাম পূর্বমূল্যে নিয়ে যেতে পারে, তবে আমরা কেন পারব না! বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এরই মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন বাস পথে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি অযৌক্তিক। ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব সব কিছুর ওপর পড়বে। সাধারণের জীবন আরো নাজেহাল হয়ে যাবে। ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।
এদিকে লঞ্চ ভাড়া বাড়বে কি না বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এ বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির সভাপতি মাহাবুব উদ্দিন বলেন, লঞ্চের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি। এ বিষয় নিয়ে বৈঠক হবে। সেখান থেকে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার বাস : জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ ও ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে ধর্মঘটে সড়কে নামেনি গণপরিবহন। আর এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গন্তব্যের উদ্দেশে সড়কের বিভিন্ন মোড়গুলোতে অপেক্ষা করছেন শত শত যাত্রী। কিন্তু কোনো বাস না পেয়ে রিকশা-সিএনজি কিংবা প্রাইভেট কার ভাড়া করেই ছুটছেন অনেকে। আবার অতিরিক্ত ভাড়া না গুণতে পেরে অনেকেই পায়ে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন গন্তব্যে।

রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় সকাল থেকেই দূরপাল্লার যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে। সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় অনেকেই অপেক্ষা করছেন বিকল্প কোনো উপায়ের। আবার অনেকেই ফিরে গেছেন বাসায়। একই দৃশ্য দেখা গেছে সায়েদাবাদ, মহাখালি ও গুলিস্তান বাসস্ট্যান্ডে। এই চারটি যায়গা থেকে দূর পাল্লার বাস যাতায়াত করে। কথা হয় মো. আলাউদ্দিন আরিফ নামে এক যুবকের সঙ্গে। জানালেন, রংপুর যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছেন। কিন্তু কোনো বাস ছাড়ছে না। হোসেন আলী নামের আরেক যাত্রী সদরঘাট যাওয়ার উদ্দেশে টার্মিনালে এসে বাসের অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কোনো বাস পাননি। বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই সদরঘাটের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তার কথায়, ঘর থেকে বের হওয়ার পর জানতে পেরেছি, বাস চলছে না। জরুরি প্রয়োজন, তাই যেতেই হবে। দেখা যাক কী হয়! অতীতে ধর্মঘটের ডাক দিলে এক সাপ্তাহ আগে ঘোষণা দেয়া হয়। সাধারণ মানুষ সেভাবেই প্রস্তুতি নেয়। এবার হঠাৎ করে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটে চট্টগ্রামে জনজীবন অচল হয়ে গেছে। রাস্তায় নেমেই চরম দুর্ভোগের মুখোমুখি সাধারণ মানুষ। গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে নগরবাসী অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। হাট বাজারে পণ্যমূল্য বাড়ছে হু হু করে। গণপরিবহনের সাথে ট্রাক, কার্ভাড ভ্যান, লরিসহ ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেইনার উঠানামা ও খোলা পণ্য খালাস স্বাভাবিক থাকলেও পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে। জাতীয় অর্থনীতির লাইফ লাইন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ এই অঞ্চলের সব সড়ক, মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়ক প্রায় ফাঁকা।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে এবং পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে সারাদেশের মতো বৃহত্তর চট্টগ্রামেও বাসসহ বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহন ও পণ্যবাহী পরিবহন চলাচল বন্ধ আছে। নগরী ও আশপাশের ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোতেও কন্টেইনার পরিবহন হচ্ছে না। আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে পরিবহন ধর্মঘটে বাজারে ভোগ্য পণ্যসহ সবকিছুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। পরিবহন ধর্মঘটের অজুহাতে শাক-সবজির দামও বেড়ে গেছে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বেশি দাম আদায় করছে। হঠাৎ করে জ¦ালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি এবং সেই সাথে দেশব্যাপী আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটে সৃষ্ট অচলাবস্থায় সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। মূল্যবৃদ্ধির সাথে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ার আশঙ্কায় শঙ্কিত তারা। জনগণকে জিম্মি করার এমন ঘটনায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রাজশাহী ব্যুরো জানায় : ডিজেলের দাম কমানো বা ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে ঘোষণা না আাসা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে জানিয়েছেন রাজশাহী মটোর শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। ডিজেল ও কেরসিনের দাম লিটার প্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়।

বরিশাল ব্যুরো জানায় : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে সমগ্র দক্ষিণালের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও সাধারণ মানুষ দিনভরই ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। পথে পথে মানুষকে নাকাল হতে হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলার অন্তত ২৫টি রুট ছাড়াও রাজধানী ঢাকা ছাড়াও খুলনা ও রাজশাহী বিভাগ এবং চট্টগ্রামের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

খুলনা ব্যুরো জানায় : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও চলছে পরিবহন ধর্মঘট। সকাল থেকে দুরপাল্লার উদ্দেশ্যে খুলনা থেকে কোন গাড়ি ছেড়ে যায়নি। তবে রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছেড়ে আসা পরিবহণ ভোর পর্যন্ত খুলনায় ঢুকেছে। পরিবহণ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।

নারায়ণগঞ্জ : ধর্মঘটে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী গণপরিবহন বন্ধ। কিছু লোকাল বাস চলাচল করলেও সেগুলোতে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা টু চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনিরআখড়া, সাইনবোর্ড, শিমরাইল, মদনপুর এবং ঢাকা টু সিলেট মহাসড়কের ভুলতা ও গাউছিয়ায় এলাকায় বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। অনেকে বাধ্য হয়ে পিকআপ ভ্যানে, সিএনজি অটোরিকশা ও রিকশাভ্যানে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে দেখা যায়।
নারায়ণগঞ্জ-সুনামগঞ্জ রুটে বিআরটিসির কিছু চলাচল করতে দেখা গেছে। পণ্যবাহী কিছু ট্রাকও চলাচল করেছে। তবে সেটা অন্যান্য দিনের তুলনায় খুবই কম। শনির আখড়া থেকে শহীদুল হক নামের একজন যাবেন বারীধারা। সিএনজি ভাড়া হাকা হচ্ছে ৫শ’ টাকা। নিরুপায় হয়ে সিএনজিতে উঠতে উঠতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তেলের দাম বাড়ানোর নিম্ন মধ্যবিত্ত চরম বিপাকে পড়বে। অথচ বিরোধী দলের নেতারা নিজেদের দায়িত্ব শুধু বক্তৃতা বিবৃতির মধ্যে সীমাবন্ধ রাখছেন। সরকারি দল শুধু নয়; জনগণের সঙ্গে বিরোধী দলগুলোর সম্পর্ক নেই।
গাজীপুর : গাজীপুরের ঢাকা টু টাঙ্গাইল মহাসড়কের দূরপাল্লার কিছু বাস চলাচল করলেও যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় রাস্তায় ট্রাক ও কভার্ডভ্যানও দেখা গেছে। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানবাহন চলাচল কমতে থাকে। ধর্মঘটের প্রথম দিন সকালে কিছু পরিবহন শ্রমিক বিচ্ছন্নভাবে এসব গাড়িতে হামলা করলে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকার কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষার্থীরা বিপাকে পড়েন।
গাজীপুর মহানগরের ভোগড়া পেয়ারবাগান এলাকায় ঢাকা টু বাইপাস সড়কের উত্তরবঙ্গের বাস কাউন্টারে সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ৬টার উত্তরবঙ্গগামী কিছু বাস চলছে। এ সব বাসের যাত্রীদের দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি ভাড়া গুনতে হয়েছে।



 

Show all comments
  • মোহাম্মদ দলিলুর রহমান ৬ নভেম্বর, ২০২১, ২:৪৬ এএম says : 0
    আমলাতান্ত্রিক চৌরাচার দলীয় সংসদীয় পদ্ধতি বাতিল করে রাষ্ট্র পতি পদ্ধতি চালু করেন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tapos Raj Bongshi ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
    জনগনের মাথায় কাঠাল ডাব বেল কথবেল তরমুজ নারিকেল আরো কত কিছুই না ভাঙতেছে, মানুষের নাভীশাস তুংগে। চালাইয়া জান। জনগনের কথা ভাবার দরকার নাই। মানুষ এখন নিজের খাবারের রুচি বা চিরাচরিত অভ্যাস ও পাল্টাচ্ছে। চিকন চাল খাওয়া মধ্য বিত্ত আজ মোটা চাল খায়, তিন বেলার জায়গায় দুই বেলা খায়, আসলেই দেশ অনেক দূর আগাইয়া গেছে। কারো কাছে না, উপর ওয়ালার কাছে বিচার চাইলাম। কারণ এ ছাড়াতো কিছু করার নাই
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Talat Mahmud ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৫ এএম says : 0
    কাল বাড়ি যাবো।ভাবছি রংপুর থেকে নোয়াখালী পর্যন্ত কিভাবে যাবো?
    Total Reply(0) Reply
  • MD Kiron ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৬ এএম says : 0
    পরিবহন মালিকরা ধর্মঘট ডেকেছে তেলের দাম বাড়ানোর কারণে আর সরকার বাড়াবাড়িয়ে জনগণের উপর বোঝা চাপিয়ে দিবে। তেলের দাম বাড়ানোর দরকার ছিল না যদি দুর্নীতিবাজদের দুর্নীতি সরকার বন্ধ করতে পারতো?
    Total Reply(0) Reply
  • MD Mahbur Rashid ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৭ এএম says : 0
    আমাদের সব কিছুর মুল্য হবে পৃথিবীর সবার উপর। কারন বাংলাদেশ একমাত্র উন্নত দেশ । এদেশের দ্রব্য মূল্য কম এটা মেনে নেয়া যায় না। যেদেশে ঘুষ দুর্নীতি সর্ব উচ্চ আয়ের মাধ্যম এবং সন্মানের ।
    Total Reply(0) Reply
  • Sonjoy Kumar Barmon ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৭ এএম says : 0
    যত দাবী আসবে এক দিক দিয়ে,ঐ সাধারণ আমজনতাই বিপাকে বেশী পড়বে।পরিবহন মালিকদের খুশি করতে ভাড়া যদি সত্যি বাড়ে,ভাড়া কিন্তু সরকার দেবেনা,সাধারণ জনগণকে দিতে হবে।পরে যখন ডিজেলের দাম কমবে,তখন দেখা যাবে ভাড়া আর কমছেনা।কিন্তু তখন এর চাপ সরকারের তরফ থেকে কোন বিবৃতিও আসবেনা।ভাড়া নিয়ে কনডাক্টর আর যাত্রী শুরু হবে মারামারি।
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Samsuzzaman Sobuz ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৮ এএম says : 0
    তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে, দাম কমানোর দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট নয়।তেলের পর ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট।এবং তাদের দাবি পূরণ হওয়া শুধুই সময়ের ব্যাপার। যারা তেলের দাম বাড়ালো আর যারা ধর্মঘট করছে,তারা নিজেরা নিজেরাই। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পর নতুন গরীবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সোয়া ৩ কোটিরও বেশি।কাগজের হিসাবে তাদেরও নাকি মাথাপিছু আয় লাফিয়ে বেড়ে আড়াই হাজার ডলারের উপরে পৌঁছেছে!!! এখন এই টাকা তো খরচ করতে হবে,নাকি? ফলে তেল-গ্যাস-চাল-ডাল-তরকারি সবকিছুর দাম বাড়ানো হয়েছে!!! বাংলাদেশে যখন লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে,ভারতে তখন লিটারে ১০ রূপি কমানো হয়েছে। কারণ কী? কয়েক দফা তেলের দাম বাড়িয়ে নির্বাচনে বিপর্যয়ের ইঙ্গিত পেয়ে দাম কমিয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Jahed ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৯ এএম says : 0
    সরকার করোনা ভ্যাক্সিনের টাকা উসুল করতে কোমরে গামছা বেঁধে মাঠে নেমেছে। চাল, ডাল, তেল তো আছেই। সাথে টোলের খরচ হতে শুরু করে পেট্রোল ডিজেল হতে গ্যাসের দাম পর্যন্ত। রড সিমেন্টের দাম বেড়েছে কয়েকগুন। বলতে গেলেই সব খাতে ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু বেতন মজুরিটা বাড়েনি। করোনা ভ্যাক্সিনে সরকার খরচ করছে দুই টাকা, উসুল করবে হাজার লক্ষ কোটি টাকা। একটা ভ্যাক্সিনের দাম সারাটাজীবন ধরে দিয়ে যেতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim Mostofa ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:২৯ এএম says : 0
    তেলের দাম কমবে না বরং ভাড়া বাড়বে। বাংলাদেশে জনগণের কল্যাণে কিছুই হয় না। পরিবহণ মালিকেরা তাদের দাবি ঠিকই আদায় করে নিবে। আর ছাত্রসমাজ, জনগণ আমরা হলাম নপুংশক। আর তার থেকেও বড় নপুংশক, অথর্ব, মেরুদন্ডহীন দল হলো বিএনপি জোট। সরকারের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়ার, অথবা সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার এবং জনমত গড়ে তুলে দাবী আদায় করার মতো বিরোধীদল দেশে অনুপস্থিত
    Total Reply(0) Reply
  • Shaheen Hossen ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৩০ এএম says : 0
    ভাড়া বাড়বে কিন্তু তেলের দাম কমবে না, ছোট বেলা থেকে এটাই দেখে বড় হয়েছি।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহিন আহমেদ শুভ ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৩০ এএম says : 0
    দাম বাড়াক আর যাই করুক লাভ ব্যবসায়ী৷ আর পরিবহন মালিক দের।গত বছর গ্যাসের দাম বাড়াইলো ২ টাকা আর সিএনজি ভাড়া বাড়ালো ৫ টাকা জনপ্রতি । ক্ষতি সব সময় সাধারন জনগনের ।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহিন আহমেদ শুভ ৬ নভেম্বর, ২০২১, ৩:৩০ এএম says : 0
    দাম বাড়াক আর যাই করুক লাভ ব্যবসায়ী৷ আর পরিবহন মালিক দের।গত বছর গ্যাসের দাম বাড়াইলো ২ টাকা আর সিএনজি ভাড়া বাড়ালো ৫ টাকা জনপ্রতি । ক্ষতি সব সময় সাধারন জনগনের ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তেলের দাম বৃদ্ধি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ