Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শেখ হাসিনাসহ যে পাঁচজন জলবায়ু সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২১, ৫:৪৯ পিএম

গ্রেটা টুনবার্গ, স্যার ডেভিড অ্যাটেনবোরো এবং বিশ্ব নেতারা যখন জলবায়ু সম্মেলনে গণমাধ্যমের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকছেন, তখন বিশ্বের ১৯৭টি দেশকে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য আসল কাজটি করতে হচ্ছে কম পরিচিত কূটনীতিবিদ, মন্ত্রী কিংবা মধ্যস্থতাকারীদের।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য কোন চুক্তি কিংবা মতৈক্যে পৌঁছানোর জন্য আলোচনা বেশ দীর্ঘ হয়। অনেক সময় সারারাত ধরে চলে এবং সময়মতো শেষ হয়না। বিভিন্ন দেশের স্বার্থ এবং প্রাধান্য বিভিন্ন রকমের। আলোচনায় দরকষাকষির জন্য বিভিন্ন দেশ একে অপরের সাথে জোটবদ্ধ হয়। আবার দেশগুলো একই সাথে বিভিন্ন গ্রুপের বা জোটের সদস্যও হয়। স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে চলমান জলবায়ু সম্মেলনের সফলতা এবং ব্যর্থতার উপরে যাদের প্রভাব থাকবে সে রকম পাঁচজনের বিষয় এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা: দুর্গতদের কণ্ঠস্বর

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সেসব দেশের সমন্বয়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফোরামের কণ্ঠস্বর। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং বেশ সোজাসাপ্টা কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশগুলো কী ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়েছে সেটির অভিজ্ঞতা তিনি এই সম্মেলনের তুলে ধরেন। ব্রিটেনের কার্ডিফ ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞ ডক্টর জেন অ্যালান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতো ব্যক্তি জলবায়ু সম্মেলনের মানবিক প্রতিচ্ছবি। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি দেখতে কেমন হয় সেটি তিনি বিশ্ব নেতাদের বোঝাতে পারবেন।’

যদিও এসব দেশ দরিদ্র, তবুও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার ক্ষেত্রে তাদের ভালো রেকর্ড রয়েছে। জেন অ্যালান বলেন, এসব দেশ যে জোরালো ভাষায় কথা বলছে এর পেছনে তাদের শক্ত নৈতিক ভিত্তি রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো জাতিসংঘের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ভালো একটি চুক্তি আদায় করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের মতো দেশগুলো একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে গ্লাসগো সম্মেলনে গিয়েছিল।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য বিশ্বনেতাদের সামনে চার-দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হচ্ছে, ১. শিল্পোন্নত দেশগুলো যাতে তাদের কার্বন নি:সরনের ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা উপস্থাপন করে। ২. ক্ষতি মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের ফান্ড নিশ্চিত করা। ৩. উন্নত দেশগুলো যাতে কম খরচে এবং সহজে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে গ্রিন টেকনোলজি দেয়। ৪. জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, খরা এবং বন্যাসহ নানাবিধ কারণে যেসব মানুষ বাস্তু-চ্যুত হচ্ছে তাদের দায়িত্ব নেয়া।

শিয়ে জেনহুয়া: চীনের সব ঋতুর ব্যক্তি

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত চীনের বিশেষ আলোচক শিয়ে জেনহুয়া অবসরে গিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু চলতি বছরের শুরুর দিকে তাকে প্রধান আলোচকের ভূমিকায় আনা হয়। এর কারণ সম্ভবত তিনি আমেরিকার সেনেটর জন কেরির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। কেরি বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আমেরিকার বিশেষ দূত। ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তি তৈরির ব্যাপারে শিয়ে জেনহুয়া এবং জন কেরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সে চুক্তিতে শিল্পোন্নত দেশগুলো তাদের কার্বন নি:সরনের মাত্রা কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু ২০২১ সালের গ্লাসগো সামিটের উদ্দেশ্য ভিন্ন রকম। জন কেরি চায় চীন কার্বন নি:সরনের মাত্রা আরো ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনুক। কিন্তু চীনের বিশেষ আলোচক শিয়ে জেনহুয়া বলেছেন, গ্লাসগো সম্মেলন হচ্ছে প্যারিস চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা।

জলবায়ু সম্মেলনে চীনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, চীন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নি:সরনকারী দেশ। তাছাড়া কপ টোয়েন্টি সিক্স সম্মেলনে চীন বেশ কয়েকটি জোটের সদস্য। উন্নত দেশগুলোর জোট জি ৭৭ -এর সদস্য চীন। এছাড়া সমমনা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জোটেও রয়েছে চীন। তবে এই সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যোগ না দেয়ায় সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

অলোক শর্মা: সবার মাঝখানে

গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলনে সব পক্ষকে এক জায়গায় এনে সফল পরিসমাপ্তির দায়িত্ব অলোক শর্মার, যিনি কপ টোয়েন্টি সিক্স-এর প্রেসিডেন্ট। বর্তমানে বিশ্ব মিডিয়ার দৃষ্টিতে রয়েছেন শর্মা। বিভিন্ন দেশকে এক জায়গায় নিয়ে আসার যে চেষ্টা তিনি করছেন সেজন্য এরই মধ্যে তিনি প্রশংসিত হয়েছেন। তার প্রতিটি কথা এবং কাজের প্রতি সবার দৃষ্টি থাকবে।

শর্মার রোল মডেল হতে পারেন ফ্রান্সের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী লঁরো ফ্যাবিয়াস। ২০১৫ সালে প্যারিস জলবায়ু চুক্তির পেছনে তার বড় ধরণের ভূমিকা ছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলার জন্য যেসব দেশ তেমন কোন আগ্রহ দেখায়নি, সেসব দেশকেও একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন ফ্যাবিয়াস।

আয়মান সাসলি

বিভিন্ন আরব এবং উন্নয়নশীল দেশ জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আলোচনার জন্য সউদী আরবের কাছ থেকে ধারণা নেয়। তাদের মধ্যে ঐকমত্য ছাড়া গ্লাসগো সম্মেলন সফল হবে না। গত এক দশক যাবত সউদী আরবের আয়মান সাসলি ‘আরব গ্রুপ অব ক্লাইমেট নেগোশিয়েটরস’- এর চেয়ারম্যান। সউদী আরবের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানি সউদী আরামকোর সাবেক কর্মকর্তা সাসলির বর্তমানে অনেক পরিচয় রয়েছে। জাতিসংঘের আইপিসিসিতে সউদী আরবের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মি. সাসলি।

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবার পক্ষে ছিল না সউদী আরব। যদিও সম্প্রতি দেশটি তাদের সে অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় করেছে। ২০৬০ সালের মধ্যে গ্রিন হাউজ গ্যাস নি:সরণের মাত্রা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরিকল্পনা হাজির করেছে দেশটি। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে মিথেন গ্যাস নি:সরণ ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল রপ্তানিকারক দেশটি।

আলোচনার ক্ষেত্রে সউদী আরবের স্বার্থ জোরালোভাবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে সাসলির বড় ভূমিকা রয়েছে। ২০১৮ সালে এক সাক্ষাৎকারে সাসলি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্য দেশের তুলনায় সউদী আরব সম্ভবত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ‘আমরা একটি মরুভূমির দেশ এবং আমাদের আয়ের একটি মাত্র উৎস আছে। আমাদের অর্থনীতি ভঙ্গুর। তেল বিক্রি করে আমরা খাই, মানুষকে শিক্ষা-চিকিৎসা সবকিছুই দেই।’

টেরিজা রিবেরা: ইউরোপের সেতুবন্ধন

স্পেনের টেরিজা রিবেরা গত কয়েক দশক যাবত জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক আলোচনায় সম্পৃক্ত ছিলেন। বর্তমানে মিস রিবেরা স্পেনের একোলজিক্যাল ট্রানজিশন বিষয়ক মন্ত্রী। স্পেনে কয়লার ব্যবহার থেকে সরে আসার বিষয়ে তিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট না করে কিভাবে একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহার করা যায় সেক্ষেত্রে স্পেন একটি রোল মডেল।

ধনী দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপের দেশগুলো চায় সবচেয়ে বেশি কার্বন নি:সরন কমাতে। অভিজ্ঞ আলোচক মিস রিবেরা জানেন, এক্ষেত্রে অগ্রগতি করতে হলে সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে জোটবদ্ধ হতে হবে। গ্লাসগো সম্মেলন সফল হতে হলে দক্ষিণ আমেরিকা, চীন এবং আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এসব দেশের সাথে টেরিজা রিবেরার ভালো যোগাযোগ রয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Md Kamrul Hasan Tarek ৫ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১২ পিএম says : 0
    জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে সেসব দেশের সমন্বয়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ফোরামের কণ্ঠস্বর। তিনি একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং বেশ সোজাসাপ্টা কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেশগুলো কী ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়েছে সেটির অভিজ্ঞতা তিনি এই সম্মেলনের তুলে ধরেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Nadim Mostofa ৫ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৭ পিএম says : 0
    আমাদের প্রধানমন্ত্রী যেখানেই জান সেখান থেকে দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনেন
    Total Reply(0) Reply
  • হিম সাগর ৫ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৭ পিএম says : 0
    বিশ্বের ১৯৭টি দেশের ৫জন বিশ্ব নেতার মধ্যে একজন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য বাংলাদেশ আজ ধন্য। Congratulations mother of humanity and world's most successful PM. বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Marz Niyaz ৫ নভেম্বর, ২০২১, ৬:১৯ পিএম says : 0
    Enthusiasm and dedication made her greater president in this world and she has great speed to lead our country.she is great president no doubt .
    Total Reply(0) Reply
  • Md Mojibur Rahman ৫ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২০ পিএম says : 0
    দেশরত্ন জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সত্যিই আমাদের সকলের অহংকার। অভিনন্দন শুভেচ্ছা শুভকামনা। আজ বিশ্বময় শুধু জয় আর জয়, এজয় শেখ হাসিনার শুধু নয় সারা বাংলার মানুষের জয়
    Total Reply(0) Reply
  • প্রভাকর পাল ৫ নভেম্বর, ২০২১, ৬:২১ পিএম says : 0
    সারা বি‌শ্বের ম‌ধ্যে সৎ সফল ও সেরা রাষ্ট্র নায়কদের ম‌ধ্যে অন‌্যতম একজন হ‌চ্ছেন বাংলা‌দে‌শের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হা‌সিনা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ