পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্ষার মৌসুম শেষ হলেও কমছে না ডেঙ্গুর প্রকোপ। গত বছরের তুলনায় এবছর কয়েকগুণ বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত বছর এ সময়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আসলেও এ বছর নিয়ন্ত্রণে আসেনি; বরং মৃত্যু আতঙ্ক ছড়িয়েই যাচ্ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন থেকে নানা পদক্ষেপ নেয়া হলেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা সক্ষম হয়নি। তবে সিটি করপোরেশন বলছে, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে তারা সফল এবং যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই করপোরেশন এলাকার বাহির থেকে আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে আসছেন। কিন্তু এই সময়েও এডিস মশার বিস্তার ও ডেঙ্গু না কমায় বিব্রত তারা। ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হয়েছে দাবি করে বিশেজ্ঞরা বলছেন, ভুল পদ্ধতিতে সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ও জলবায়ু পরিবর্তন এজন্য দায়ী।
জনস্বাস্থ্য ও কীটতত্ত¡বিদরা বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিটি করপোরেশন যে ধরণের বক্তব্য দিচ্ছে তা হতাশাজনক। যে পদ্ধতিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে নেয়া তা বিশ শতাংশ কার্যকর। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্তের যে তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতর দিচ্ছে প্রকৃত পক্ষে সে সংখ্যাও অনেক বেশি। এই মুহূর্তে জনস্বাস্থ্যের জন্য ডেঙ্গু ভয়াবহ হুমকি কিন্তু এ বিষয়ে সরকার তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। দীর্ঘ মেয়াদী ও সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
তারা আরো বলছেন, বাংলাদেশে সাধারনত জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু বিস্তারের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। জুনের প্রথম থেকেই সিটি করপোরেশন ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হয়েছে। এতে পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। সিটি করপোরেশন তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে এত সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হতো না। এড়ানো যেত মৃত্যুর ঘটনাও। অক্টোবর থেকে মশা নিধনে মশক কর্মীদেরকে তেমন একটা মাঠে দেখা যায়নি। এছাড়া পরিবেশের কারণে অক্টোবর মাসেও বৃষ্টি হয়েছে। এতে ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটছে। ফলে নভেম্বরেও ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। চলতি মাসের শেষ দিকে পরিবেশের কারণে স্বাভাবিকভাবেই ডেঙ্গু কমে আসবে। এতে সিটি করপোরেশনের কোন সফলতা থাকছে না।
এদিকে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৯৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। এর মধ্যে নভেম্বরে ৪ জন, অক্টোবরে ২২ জন, সেপ্টেম্বরে ২৩ জন, আগস্টে ৩৪ জন এবং জুলাইতে ১২ জন। সরকারি হিসাবে দেশের হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৪ হাজার ছাড়িয়েছে। এর মধ্যে অক্টোবরে ৫ হাজার ৪৫৮ জন, সেপ্টেম্বরে ৭ হাজার ৮৪১ জন, আগস্টে ৭ হাজার ৬৯৮ জন, জুলাইয়ে ২ হাজার ২৮৬ জন এবং জুন মাসে ২৭২ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। নভেম্বরের প্রথম ৪ দিনে ৬২২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি ৪৬ টি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, চলতি বছরে এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। ৪৬ টি হাসপাতালের তথ্য বলে আসলেও বাস্তবে এসব হাসপাতালে করোনা রোগীও ভর্তি ছিল। ফলে নগরবাসী এসব হাসপাতালে তেমন একটা ভর্তি হয়নি। অনেকই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হননি। নগরবাসী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। যার তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকাশ করেনি। এতে চলতি বছরে ডেঙ্গু রোগীর সঠিক তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে না। এছাড়া ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে ডেঙ্গু রোগী বেড়েছে। অনেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজের (সিজিএস) চেয়ারম্যান ও কীটতত্ত¡বিদ ড. মঞ্জুর আহমেদ চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, এ বছর করোনার মধ্যেও ডেঙ্গু ভয়াবহ আকারে ছড়িয়েছে। বাস্তবে কয়েক লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। সরকারি হিসেবে সব তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন মশন নিধনে কাজের কাজ কিছুই করেনি। তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে, জনগণকে সর্তক করলে, এডিসের লার্ভা নষ্ট করলে এত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হতো না। এডিস নিয়ন্ত্রণে সিটি করপোরেশন ভুল ভাবে কাজ করেছে। কিউলেক্স মশার পাশাপাশি এডাল্ট মশাও মারতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত¡বিদ ড. কবিরুল বাশার ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি বছর অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু রোগী কমে আসে। এ বছর এর ব্যতিক্রম দেখতে পাচ্ছি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ বছর অক্টোবর মাসেও বৃষ্টিপাত দেখেছি। যা সচরাচর অন্যন্য বছরগুলোতে হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের তাপমাত্রা, আদ্রতা এবং বৃষ্টিপাতে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই সমস্যাগুলোর সঙ্গে এডিস মশার ঘনত্ব সর্ম্পকিত, সেটি পরিবর্তীত হচ্ছে। তাই এডিস মশার যে প্রজনন ও স্বভাব এগুলো পরিবর্তীত হয়েছে। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রনকে পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবটি মোকাবিলায় দুটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে এডাপ্টেশন, অন্যটি মিটিকেশন। মিটিকেশন যারা মশা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থাকে তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে এডাপ্টেশনটি করা সম্ভব। এডাপ্টেশনের মাধ্যমে মশার চারিত্রিক পরিবর্তন এবং সিজিনাল ডে পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে এডিস মশার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বা সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনা পরিবর্তন আনতে হবে। সমন্বিত মশক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সারা বছর ব্যাপি চলমান রাখতে পারলেই এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ১ নভেম্বর থেকে কিউলেক্স মশক নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। এডিস মশকের লার্ভার উৎসস্থল ধ্বংস করা, ব্যাপকাকারে চিরুনি অভিযান পরিচালনা ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে আমরা দ্রæততার সহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছি। বর্তমানে ডিএসসিসি এলাকায় একেবারে অনুল্লেখযোগ্য ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত হচ্ছে। কিন্তু শীত মৌসুম কড়া নাড়ছে। তাই ঢাকাবাসীকে কিউলেক্স মশকের উৎপাত হতে নিস্তার দিতে মশক নিধনের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে কীটনাশক মজুদ, প্রয়োজনীয় জনবল ও যান-যন্ত্রপাতি রয়েছে। মশক কর্মী ও সুপারভাইজারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও প্রদান করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, বৃষ্টিপাতের কারণে এখনো ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে। আগের চেয়ে এখন ডেঙ্গু রোগী কমেছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট নই। আমার চাই ডেঙ্গু নিমূল হোক। যাতে ডেঙ্গুতে কেউ আক্রান্ত না হয়। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এডিস মশা নিধণে সর্বোচ্চ কাজ করেছে। সামাজিক আন্দোলনের মাধ্যমেও কাজ হয়েছে। এখনো একই সঙ্গে এডিস ও কিউলেক্স মশা নিধনে কাজ চলমান রয়েছে। আশা করি কিছু দিনের মধ্যে ডেঙ্গু রোগী আরো কমবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।