পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ মানুষের প্রত্যাহিত জীবনের সঙ্গে ওতপ্রতোভাবে জড়িত। এর একটার দাম বাড়লে যাপিত জীবনে ব্যাপকভাবে সে প্রভাব পড়ে। এমনিতে প্রতিটি পণ্যমূল্য মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে। তারপর আবারও তেলের দাম বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় লোকসান কমাতে দেশের বাজারেও তেলের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে পেট্রল, ডিজেল কিংবা ফার্নেস অয়েল। তুলনামূলক কম দাম হওয়ায় বাংলাদেশ থেকে তেল পাচারের শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আর এ অজুহাতেই বিশ্ববাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে দেশেও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি কথা ভাবছে সরকার।
জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে তেল বিক্রি করে সরকার লাভ করেছে। যখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম কম ছিল তখন দেশে বেশি দামে তেল বিক্রি করেছে। করোনাকালে দেশের মানুষের আয় কমেছে। এমনিতেই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এখন তেলের দাম বাড়লে ভয়ঙ্কর অবস্থা হতে পারে। এ মুহূর্তে সরকারকে জনগণের পাশে থেকে সুরক্ষা দেয়া দরকার। কিন্তু তা না করে সরকারকে অপ্রিয় করে তুলছেন সরকারের বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা। তাদের তৎপরতায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সড়ক ও নৌপরিবহন, কৃষির সেচ পাম্প এবং বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ক্ষেত্রে ডিজেলের ব্যবহার রয়েছে। তবে আগের মতো আর সাধারণ কৃষকরা কেরোসিন ও ডিজেল কৃষিকাজে ব্যবহার করছে না। কারণ এখন ৭০ ভাগ মানুষ কৃষিকাজে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। তবু বাড়ছে তেলের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয় করে ২০১৬ সালে লিটারপ্রতি ডিজেল ৬৫, কেরোসিন ৬৫, অকটেন ৮৯ ও পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা করা হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক ৫৯ ডলার। আর বাংলাদেশে লিটারপ্রতি এই ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। লিটারপ্রতি ১৩ দশমিক ৭৭ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিপিসি। ভারতে ডিজেলের দাম প্রতি লিটার ৯৯ দশমিক ৪৩ পয়সা, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১২৩ টাকা ২৪ পয়সা। সে হিসাবে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ডিজেলের দামের ব্যবধান লিটারপ্রতি প্রায় ৫৮ টাকা ২৪ পয়সা।
জানা গেছে, গত ২০১৪-২০১৫ অর্থবছর থেকে মূলত বিপিসি লাভের ধারায় ফিরে। এর আগে জ্বালানি তেল বিক্রি থেকে গত ২০১৩-১৪ অর্থবছর পর্যন্ত ২ হাজার ৩২২ কোটি টাকা লোকসানে ছিল সংস্থাটি। কিন্তু ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তারা লাভে চলে আসে। ওই বছরে তারা ৪১২৬ কোটি টাকা মুনাফা করে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯০৪০ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৬৫৩ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৫৬৪৪ কোটি টাকা মুনাফা হয়। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৭৬৮ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৫০৬৭ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৮৪০ কোটি টাকা লাভ করে বিপিসি।
করোনার সময়ে তেলের দাম কমলেও রাখার জায়গা ছিল না বলে আমদানি করা সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে ওই সময়ে চাহিদা ছিল কম। অনেক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, শিল্প-কারখানা ও যানবাহন বন্ধ ছিল। এয়ারলাইন্সগুলো বন্ধ থাকায় তেল বিক্রিতে পর্যাপ্ত চাহিদা ছিল না। তারপরও বিপিসি বিপুল পরিমাণ টাকা লাভ করেছে। তারপরও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করতে চায়।
এদিকে জ্বালানি তেলেরও চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়নি। এতে দাম বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে এর দাম বাড়ানো হলে বাজারে এর তীব্র নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাবে। করোনার কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। সেটা এখনো আগের অবস্থায় যায়নি। এ অবস্থায় সরকারের নীতির কারণে পণ্যমূল্য বাড়লে ভোক্তাদের জন্য তা অসহনীয় হয়ে উঠবে। এ বিবেচনায় এখন তেলের দাম বাড়ানো ঠিক হবে না। বরং কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা উচিত। এসব কারণে অর্থনীতিবিদরা জ্বালানি তেলের দাম না বাড়িয়ে ভর্তুকি দিয়ে বাজারব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখার পরামর্শ দিয়েছেন। জ্বালানি তেল হলো অর্থনীতির লাইফ লাইন। প্রায় সব ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জ্বালানি তেলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় সব পণ্যেই জ্বালানি তেলের ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে তেল। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ালে বাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে তার মোকাবিলা করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি তলের মূল্যবৃদ্ধি করতে চায় বাংলাদেশ পেট্রলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় লোকসান কমাতে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপিসি। সরকার নির্ধারিত আগের দরে ডিজেল বিক্রি করতে গিয়ে প্রতি লিটারে ১৩-১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের বাজারের চেয়ে বাংলাদেশের বাজারে তেলের দাম কম হওয়ায় পাচারের আশঙ্কার কথাও ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছে বিপিসি। চিঠিতে বিপিসি ডিজেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। শুধু তাই নয়, বিপিসি অন্য জ্বালানি তেলের মতো ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন ও পেট্রলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতাও চাচ্ছে। লোকসান এবং পাচার রোধে প্রতি মাসে দাম সমন্বয় করতে চায় তারা।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ইনকিলাবকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিকল্প নেই। আগের দামে বিক্রি করতে গিয়ে বিশাল লোকসান হচ্ছে। পৃথিবীতে তেলের দাম বেড়ে গেছে। কয়েক গুণ বেড়েছে। খুব খারাপ অবস্থা। করোনা মহামারির প্রকোপ কমার সঙ্গে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ৮৩ ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যা সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। তিনি বলেন, ভারত ইতোমধ্যে দুইবার তেলের দাম বাড়িয়েছে। আমাদের সঙ্গে তারতম্য থাকলে বর্ডার এলাকা থেকে তেল স্মাগল হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ ইনকিলাবকে বলেন, জুলাই থেকে ডিসেম্বরের যে ফেইজ, তাতে আমরা ডিজেল সরবরাহকারী বিদেশি সংস্থার সঙ্গে যে মূল্য নির্ধারণ করেছিলাম, সেই মূল্যেই এখনও আমরা তা পাচ্ছি। এ কারণে জনগণের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে এমন কোনো সিদ্ধান্তের দিকে আমরা এখনই যাচ্ছি না। তবে বর্তমান বাজারমূল্যকে কতটুকু বিবেচনায় নেয়া হবে, সেটা সরকারের পলিসির ওপর নির্ভর করে। তিনি বলেন, ভারতের বাজারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বেশি দরে ডিজেল-পেট্রল বিক্রি হওয়ায় দেশটিতে জ্বালানি পণ্য পাচারের শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, যা ঠেকাতে দর বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
বিপিসির পরিচালক (অপারেশন্স ও পরিকল্পনা) সৈয়দ মেহদী হাসান ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম যখন ৭০ ডলার ছিল, তখন থেকেই আমাদের লোকসান শুরু হয়েছে। দেশে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। তাতে লিটারে ১৩ থেকে ১৪ টাকা লোকসান হচ্ছে। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৭০ ডলার পর্যন্ত হলে দেশে ৬৫ টাকা লিটার ডিজেল বিক্রি করে ব্রেক ইভেনে থাকা যায়। আন্তর্জাতিক বাজারে এর চেয়ে দাম কমলে লাভ থাকে, বাড়লে লোকসান হয়।
বর্তমানে প্রতিদিন ডিজেল ও ফার্নেস তেল বিপণনে ২০ থেকে ২২ কোটি টাকার মতো লোকসান হচ্ছে। তেলের দাম আরো বাড়লে লোকসানটাও বাড়বে। বিপিসির তথ্য অনুযায়ী, চাহিদা পূরণে প্রতি বছর ৪০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয় বাংলাদেশকে। অকটেন আমদানি করা হয় এক লাখ থেকে এক লাখ ২০ হাজার টন। প্রায় সমান পরিমাণ পেট্রল উৎপাদন করা হয় দেশীয় উৎস থেকে। আগে পেট্রল ও অকটেন বিপণনে তাদের লাভ হতো। এখন লোকসান হচ্ছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) আইন অনুযায়ী সব পেট্রলিয়াম পণ্যের দাম নির্ধারণ করার কথা বিইআরসির। তবে এত দিনে এই কাজটি করে এসেছে সরাসরি জ্বালানি বিভাগ। এখন বিপিসি অন্য জ্বালানি তেলের মতো ডিজেল, অকটেন, কেরোসিন ও পেট্রলের দাম নির্ধারণের ক্ষমতা চাচ্ছে। বর্তমান সরকার আমলে সর্বশেষ ২০১৬ সালে যখন প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ টাকা ঠিক করে দেয়, তখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ ডলারের আশপাশে। বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে মূল্য সমন্বয়ের সময় প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রল ৯৬ টাকা, কেরোসিন ও ডিজেল ৬৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আবার ২০১৬ সালে লিটারপ্রতি ডিজেল ৬৫, কেরোসিন ৬৫, অকটেন ৮৯ ও পেট্রলের দাম ৮৬ টাকা করা হয়। গত ২০ অক্টোবর আন্তর্জাতিক বাজারে ডিজেলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৯৪ দশমিক ৫৯ ডলার। আর বাংলাদেশে লিটারপ্রতি এই ডিজেল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকায়। একইভাবে ফার্নেস অয়েলের দাম ছিল ব্যারেলপ্রতি ৪৮৭ দশমিক ২১ ডলার, দেশে বিক্রি হচ্ছে ৫৯ টাকা, এতে লোকসান হচ্ছে ৫ দশমিক ৭৩ টাকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।