Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিমসটেক মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল বাস্তবায়নে জোর শেখ হাসিনার

প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৪৯ পিএম, ১৬ অক্টোবর, ২০১৬

বিশেষ সংবাদদাতা : বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য বাড়াতে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল (এফটিএ) গঠনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটের আগে গতকাল রোববার বিকালে বিমসটেক নেতাদের রিট্রিটে অংশ নিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
বিমসটেক মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গঠনের আলোচনা শুরুর পর একযুগ পেরিয়ে গেলেও চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়ার বিষয়টি এ অঞ্চলের নেতাদের আন্তরিকতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। খবর বিডিনিউজ২৪।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এফটিএ বাস্তবায়নের পক্ষে আমাদের রাজনৈতিক সদিচ্ছা পুনর্ব্যক্ত করতে হবে। এটা আমাদের আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে এবং বিমসটেকের কার্যক্রম ও কর্মসূচিগুলো জোরদার করবে।আগামী বছর বিসমটেকের ২০তম বর্ষপূর্তির সময় এফটিএ সংক্রান্ত চারটি চুক্তি গ্রহণের জন্য লক্ষ্য স্থির করার আহ্বান জানান তিনি।
গোয়ার লিলা হোটেলে এই রিট্রিটের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিসমটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে একে একে সকলের সঙ্গে তিনি করমর্দন করেন এবং ছবি তোলেন। এরপর সবাই মিলে গ্রুপ ফটোসেশন হয়। বিসটেক রিট্রিটের আগে এই জোটের নেতাদের সম্মানে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারসেকারের দেওয়া মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতারা মধ্যাহ্নভোজের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
বিমসটেকের যাত্রা শুরুর পর গত প্রায় ২০ বছরে দুটি অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের কাজে অগ্রগতি খুব ধীরে হলেও সেই সংযোগের ভিত্তি দেওয়ার কাজ এখন শেষ হয়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।তিনি বলেন, এখন আমাদের যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
বিমসেটক অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবনযাত্রার মানোন্ননে ‘আঞ্চলিক প্রকল্প’ তৈরির প্রস্তাব দিয়ে এ জোটের নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এতে বিমসটেক যেমন জনগণের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত হবে, সংগঠন আরও স্থিতিশীল ও দৃশ্যমান হবে।
বিমসটেককে আরও কার্যকর ও ফলপ্রসূ করতে নেতাদের প্রত্যাশার পুনর্মূল্যায়নের সময় এসেছে বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।আগামী পাঁচ বছরে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, জ্বালানি, আঞ্চলিক সংযোগ ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের মতো প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে নজর দিতে বিমসটেক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহযোগিতার প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে নিয়মিত মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হলে তাতে কাজে গতি আসবে।
সড়কপথে যোগাযোগ বাড়াতে বিমসটেক ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংযোগ বাড়াতে আমরা এখন উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি করার কথা বিবেচনা করতে পারি। এখন আমরা চাই, উন্নততর উপ-আঞ্চলিক গ্রীড সংযোগ এবং জ্বালানি বাণিজ্যের বিষয়ে সমঝোতা চুক্তি ও তার বাস্তবায়ন দ্রুততর হবে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে পরাজিত করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলায় বিমসটেকের মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে আমরা সক্ষম হব।
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে ১৯৯৭ সালে বে অফ বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন- বিমসটেক গঠিত হয়। পরে ২০০৪ সালে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশ নিজেদের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়। তবে এ ধরনের অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় আইন ও নীতি এখনো চূড়ান্ত না হওয়ায় সেই উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
শনিবার গোয়ায় শুরু হওয়া অষ্টম ব্রিকস সম্মেলনে অংশ নেন এই জোটের সদস্য দেশ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট মিশেল টেমের, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আর বিসমটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, নেপালের প্রধানমন্ত্রী পুষ্প কমল দহল, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুথ চান-ওচা, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অং সান সু চি আউটরিচ সামিটে অংশ নিচ্ছেন।
গোয়ায় শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা :
ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গোয়ায় ব্রিকস-বিমসটেক আউটরিচ সামিটে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকাল ৮টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। ভারতের স্থানীয় সময় বেলা সোয়া ১০টায় বিমানটি গোয়ায় ভারতীয় নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে অবতরণ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সেখানে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ভারতের কেন্দ্রীয় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর, গোয়া রাজ্য সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়কমন্ত্রী এলিনা সালদানহা এবং ভারতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার সৈয়দ মোজাম্মেল আলী সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সশস্ত্র সালাম জানায়। আয়োজন করা হয় কালচারাল ডিসপ্লের। পরে মোটর শোভাযাত্রা করে প্রধানমন্ত্রীকে হোটেল দি লিলায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই সফরে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এই সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছেন। স্থানীয় সময় বেলা ১টায় বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের সম্মানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন শেখ হাসিনা
ব্রিকস-বিমসটেক নেতাদের আউটরিচ সামিটের আগে বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে বিমসটেক নেতাদের রিট্রেটে অংশ নিয়ে সেখানে বক্তব্য রাখেন তিনি। সম্মেলনের ফাঁকে রাত সাড়ে নয়টায় প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।



 

Show all comments
  • সুমন ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১:০৩ পিএম says : 0
    নেত্রী আপনি এগিয়ে যান, বাংলার জনগন আপনার সাথে আছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিমসটেক মুক্তবাণিজ্য অঞ্চল বাস্তবায়নে জোর শেখ হাসিনার
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ