Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লার অর্ধশতাধিক পুরনো ভবনে মৃত্যুর ঝুঁকি

প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সাত বছর ধরে নোটিশ চালাচালি
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : কোনটার নির্মাণ বয়স দুইশ’ বছর। আবার কোনটার দেড়শ, একশ বা তারও বেশি। এসবই পুরনো ভবন। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় স্থান করে নেয়া এরকম অর্ধশতাধিক ভবন রয়েছে প্রাচীন শহর কুমিল্লায়। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা বা টেকসই মানের সংস্কার করার নির্দেশনা দিয়ে বিলুপ্ত পৌরসভা থেকে শুরু করে এসময়ের নগর ভবন (সিটি কর্পোরেশন) কর্তৃপক্ষের প্রায় সাড়ে সাত বছর চলছে নোটিশ চালাচালির পথচলা। কিন্তু নোটিশের থোয়াই তোয়াক্কা করছেন না ভবন মালিকরা। এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে দিন মাস বছর ধরে চলছে ব্যবসা বাণিজ্য, চাকরির কর্মঘন্টা আর কারোর পারিবারিক জীবনের মূল্যবান সময়।
পরপর একাধিক ভূকম্পনের ঘটনায় দেশ কেঁপে উঠলেও কুমিল্লার অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন মালিকদের টনক নড়ছে না। আবার কুমিল্লা পৌরসভার শেষের আড়াই বছরের সময়কাল থেকে নবগঠিত সিটি কর্পোরেশনের প্রায় পাঁচ বছর সময়ে ভবন মালিকদের একাধিকবার নোটিশ দিয়েও অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলা ও কম ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কারের ক্ষেত্রে কার্যকর সাড়া মিলছে না। কুমিল্লা শহর এলাকায় ২০০৯ সালের মার্চ মাসে জরিপ চালিয়ে ১১টি ওয়ার্ডের ৬৬টি ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তালিকা করা হয়েছিল। ওই সময়েই কুমিল্লা পৌর কর্তৃপক্ষ এসব ভবন ভেঙে অপসারণের নির্দেশ দিয়ে ভবন মালিকদের নোটিশ দেয়। আড়াই বছরেও নোটিশপ্রাপ্তরা কোন সাড়া দেয়নি। সিটি কর্পোরেশন গঠিত হওয়ার পর নতুন তালিকায় আরও দশটি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন যুক্ত হয়ে তা দাঁড়ায় ৭৬টিতে। পৌরসভা ও সিটি কর্পোরেশন থেকে পাঠানো নোটিশের সাড়ে সাত বছরে ৭৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে মাত্র ৬/৭টি ভবন ভেঙ্গে ফেলা ও সংস্কার করা হয়। বাকিগুলোর দেয়াল ও ছাদ থেকে আস্তর খসে পড়েছে। বৃষ্টির সময় ছাদ চুকিয়ে ভেতরে পানি পড়ে. কোনটির দেয়াল ও ছাদের অংশে গাছ গাছালি গজিয়েছে। এসব ভবনে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে লোকজন কাজকর্ম ও বসবাস করছে।
সম্প্রতি নগরীর কান্দিরপাড়ে প্রায় দুইশ বছরের পুরনো দ্বিতল বিশিষ্ট পূবালী ব্যাংকের একটি অংশ ধসে পড়ে। সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু ভবনটি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। এনির্দেশ ঘিরে শুরু হয় পক্ষ-বিপক্ষের মতামত। তবে নগরবিদদের মতে, এটি খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভেঙ্গে ফেলার বিকল্প নেই। তবে ঐতিহ্যবাহী পূবালী ব্যাংকের বর্তমান স্থাপত্যশৈলীর অনুকরণে এটিকে নতুনভাবে নির্মাণ করা যেতে পারে। এদিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে সিটি মেয়র নির্দেশিত সতর্ককতা নোটিশ টানিয়ে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এটাও ভবন মালিকদের দৃষ্টিতে পড়ছে না। আর পড়লেও দেখছেন না। বর্তমানে নগরীতে ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে এমনসব ভবনের মধ্যে রয়েছে কান্দিরপাড়ে পূবালী ব্যাংক ভবন, মনোহরপুরে কৃষিব্যাংক ভবন, মনোহরপুর-রাজগঞ্জ সড়কে দ্বিতল বিশিষ্ট জাতীয় পার্টি অফিস (যার নিচতলায় ট্রাফিক পুলিশ বসবাস করে), রাণীর দিঘীর পূর্বপাড়ে ফুলার হোস্টেল, উজির দিঘীপাড়ে দুদুকের সাবেক কার্যালয়, অশোকতলায় এনএসআই অফিস ভবন, অশোকতলায় প্রয়াত শিল্পী নাছির উদ্দিনের সরকারি বন্দোবস্তীয় দোতলা ভবন ও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়, ধর্মপুরে জাতীয় মহিলা সংস্থার কার্যালয়, জেলা সমবায় ইউনিয়ন অফিস, বাগিচাগাঁও এলাকায় আনন্দকানন ভবন, গণপূর্ত বিভাগের কোয়াটার, রামঘাট এলাকায় বিএমএ কার্যালয়, মোগলটুলির তাজমহল বিল্ডিং, ঠাকুরপাড়ার মৃণালিনী দত্ত ছাত্রীনিবাস, ঝাউতলায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত রাজলক্ষী ভবন, বাদুরতলায় তিনতলা বিশিষ্ট চৌধুরী মার্কেট, বাদুরতলায় সাবেক সিংহ প্রেস, তারুমিয়া পৌর বিপনী, কাশারিপট্টি মোড়ে সাবেক মারুফ রেস্ট হাউজ, মুন্সেফ বাড়ি এলাকায় অ্যাডভোকেট হাবিব উল্লাহ চৌধুরীর বাসভবনসহ আরো কিছু ভবন রয়েছে যেখানে মানুষের অবস্থান মোটেই নিরাপদ নয়। কেবল তাই নয়, এসব ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের আশপাশের বাড়িঘরের মানুষও আতঙ্কে রয়েছেন।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ নুরুল্লাহ বলেন, ‘নগরীতে তালিকাভুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো মানুষের মধ্যে আতংক ছড়াচ্ছে, মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। ভবন মালিকদেরকে একাধিকবার ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে ফেলতে, সংস্কার করতে বা অপসারণ করতে নোটিশ দেয়া হয়েছিল। কয়েকজন ভবন ভেঙে নতুন করে নির্মাণ করছেন। কেউ সংস্কার করেছেন। কিন্তু বাকিরা তা ঝুঁকিতেই রয়েছেন।’
এদিকে নগরীর বিশিষ্টজনরা মনে করছেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলার ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনের বর্তমান পরিষদ এখন হার্ডলাইনে যাবে না। কেননা বর্তমান পরিষদের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। তাই নির্বাচনকালীন সময়ে এসে অর্ধশতাধিক ভবন ভেঙে ‘ভোটের রাজনীতি’র জালে আটকা পড়তে চাইবেন না বর্তমান পরিষদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লার অর্ধশতাধিক পুরনো ভবনে মৃত্যুর ঝুঁকি
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ